ওসির অহংকারী মেয়ে । পর্ব -১২
হেনার আব্বুর কথা শুনে আকাশ লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়ে...
আকাশের যেন দুনিয়াদারী পুরো ঘোলাটে হয়ে গেছে হেনার আব্বুর কথা শুনে,আকাশের নিশ্বাসটাও যেনো এখনি বের হয়ে যাবে শরীর ছেড়ে,
আকাশ,তাড়াতাড়ি করে শার্টটা গায়ে দিয়ে আরুকে ফোন করে,আরু হেনা নাকি সুইসাইড করেছে...?
আরু,জানি না আমিও এমনটা শুনলাম,তুই তাড়াতাড়ি চলে আয় দুজনে মিলে হেনার বাসায় যাবো,
আকাশ,আচ্ছা তুই দ্বারা আমি কিছু সময়ের মধ্যে আসছি,আকাশ কোনো মতে তাড়াহুড়ো করে গাড়ির চাবিটা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসে,চোখে মুখে হতাশার ছাপ,গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে আরুর কাছে চলে যায়,তারপর দুজন মিলে হেনার বাসায় যায়,
হেনার বাসার সামনে মানুষ দিয়ে ভর্তি,আকাশ যত এগোচ্ছে ভয়ের মাত্রা ততই বাড়ছে,আল্লাহ হেনার যেনো কিচ্ছু না হয়,আমি ওকে খুব ভালোবাসি,
আকাশরা আস্তে আস্তে করে ঘরের ঘরের দিকে এগোতে থাকে,একটু সামনে যেতেই দেখে সাদা কাপড় মোড়ানো একটা লাশ মাটিতে শুইয়ে রেখেছে,এটা দেখে আকাশের কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠে,আল্লাহ হেনার কিছু হলে আমিও মরে যাবো
আকাশকে দেখতে পেয়ে হেনার বাবা এগিয়ে আসে,
এই যে আকাশ মাহমুদ ওরফে বিল্লাহ ভাউ,আমার কলিজার টুকরো মেয়েটা মাটিতে ঘুমিয়ে আছে
হেনার আব্বুর কথা শুনে আকাশের কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে,ওর যেনো বিশ্বাস এই হচ্ছে না,নাহ এটা হেনা না,আমি এটা বিশ্বাস করি না,হেনার কিচ্ছু হতে পারে না,আকাশ দৌড়ে গিয়ে লাশটার মুখ থেকে কাফনের কাপড়টা সরিয়ে ফেলে,আকাশ লাশটাকে দেখে সজোড়ে এক চিৎকার দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে,হেনা ছোট বাচ্চার মত ঘুমিয়ে আছে,
আকাশ,কলিজা তুমি এটা কি করলে,আকাশ সজোড়ে চিৎকার করে কান্না করছে,কলিজা আজ আমি তোমার সাথে সমস্ত কিছু ঠিক করে নিতাম,কলিজা একটু ধৈর্য ধরলে না তুমি,পাগলের মত এটা কি করে বসলে,আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো,কাকে কলিজা বলে ডাকবো,কে আমাকে ভালোবাসবে তোমার মত করে,মানুষ বলতেই ভুল,তুমিও না হয় না যেনে শুনে কিছুটা ভুল করেছো,কলিজা শাস্তি তো আমি তোমাকে দেওয়ার কথা ছিলো,কিন্তু আমি যেখানে শাস্তি দেই নি সেখানে তুমি নিজেকে নিজে শেষ করে দিলে কলিজা,
কলিজা এটা কেন করলে,এখন আমায় কে ভালোবাসবে,নাহ তুমি মরতে পারো না,আমার কলিজা মরতে পারে না,এই যে আপনারা সবাই বিশ্বাস করেন আমার কলিজা মরে নাই,ও কলিজা উঠো না বলে হেনার দেহটাকে পাজকোল করে ঝড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে.....
আরু,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে,ওর চোখ দিয়েও বৃষ্টির ফোটার মত পানি ঝড়ে পড়ছে,আকাশের কান্না যেনো ওর কলিজাটাকে ছিদ্র করে দিচ্ছে,
একটু হেয়ালির জন্য দু'টো জীবন আজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে,হেনা এমন ধারা কাজ করেছে আরুর ও যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না,হেনা কেন তুমি এমনটা করলে,আকাশের চোখে তোমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি আমি,ছেলেটা তোমায় পাগলের মত ভালোবাসে,এখন ওর কি হবে!তুমি যে তাকে ছেড়ে চলে গেলে,ছেলেটা যে এখন পাগলের মত কান্না করছে,ওর চোখের পানি যে আমার সহ্য হয় না,সবটাই হয়তো আমার দোষ,আমি তোমাদের মাঝে কেন এসেছি,না হয় আজ হয়তো তুমি এমনটা করতে না
হেনার আব্বু-আম্মু সবাই কান্না করছে,
আকাশ,এখনো হেনাকে পাজকোল করে জড়িয়ে ধরে আছে,
হেনার আব্বু,এই যে আকাশ ভাই আর কান্না করে কোন লাভ নাই,
আপনি আমার নয়নের মনি টাকে আমাদের থেকে কেঁড়ে নিয়েছেন,
এই যে ধরেন হেনার হাতে একটা চিঠি ছিলো,যেটাতে লিখা ছিলো তোমরা এই চিঠিটা আকাশের হাতে পৌঁছে দিবে প্রিয় মা-বাবা...
আকাশ,চিঠিটা হাতে নিয়ে খুলে পড়তে আরম্ভ করে,
হে কলিজার টুকরা আমি জানি তুমি কাঁদছো,
প্লিজ কেঁদো না..
কলিজা আমি অন্যায় করেছি তাই নিজেকে ছোট্ট একটা শাস্তি দিলাম
কলিজা আমি জানি আমার মধ্যে অহংকারে ভরা ছিলো,কিন্তু বিশ্বাস করো সেই খেয়াল তোমার সাথে মিশবার পড়ে উধাও হয়ে গিয়েছে,কলিজা মানুষ বলতেই তো ভুল আমিও না হয় ভুল করেছিলাম,তোমায় ভরা মজলিসে অপমান করেছি,কিন্তু বিশ্বাস করো তোমায় অপমান করার ইচ্ছা ছিলো না আমার...
তোমার জন্য সত্যি আমার মনে ভালোবাসা ছিলো,শুরুতে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ভালোবেসেছিলাম,কিন্তু পরে কি ভাবে যেনো তোমায় ভালোবেসে ফেলেছে।
কলিজা বিশ্বাস করো তোমাকে অন্যের সাথে দেখে নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না,তোমার সাথে অন্য কাউকে দেখলে গা জ্বলে যেতো,মনে হতো আমার জিনিসে কেউ হস্তক্ষেপ করছে,তাই রাগ সহ্য করতে পারিনি তোমায় অপমান করে বসেছি,তার মধ্যে তোমায় নিয়ে পুরোনো একটা ক্ষোভ ছিলো,যে আমায় থাপ্পড় খাইয়েছো আমায় অপমান করেছো তার প্রতিশোধ নিব,সমস্ত কিছু মিলিয়ে তোমার উপরে একটা ক্রোধ ছিলো,তাই জেদের বসে তোমার উপরে ঝাল মিটিয়েছি...
এসব করার সময় আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না,কিন্তু পড়ে ঠিকই আমি এর জন্য অনুতপ্ত হয়েছি,কলিজা বিশ্বাস করো তুমি শহরের নাম করা কোটিপতির ছেলে এটার প্রতি আমার কোন লোভ ছিলো না,বরং এটা শুনার পর আরো ভালোভাবে রিয়েলাইজ করেছি,যে তুমি শহরের নাম করা কোটিপতির ছেলে হওয়ার পরেও তোমার মধ্যে বিন্দু পরিমান অহংকার নাই,আর আমি দুই টাকার ওসির মেয়ে হয়ে আমার এত অহংকার,
তাই নিজেকে শুধরে নিয়ে তোমার কাছে ফিরে গিয়েছিলাম।
কিন্তু কলিজা আমার কপালে মাফ জুটেনি
জানো কলিজা সেদিন চারটা ঘন্টা মাটিতে বসে কেঁদেছিলাম,ভরসা ছিলো কলেজ শেষ হলে তুমি এসে যখন আমার ঐ অবস্থায় দেখবে,তখন তুমি সব ভুলে গিয়ে আমায় বুকে টেনে নিবে...
কিন্তু এমহ কিছুই করো নি
কলিজা তোমার হয়তো বিশ্বাস হবে না,যে আমার ভালোবাসা তোমার বড়লোক নামটার উপরে,বিশ্বাস করো তোমায় সত্যি ভালোবাসতাম কলিজা,এই যে তার প্রমাণ ও দিয়ে গেলাম নিজেকে শেষ করে দিয়ে
বিষের বোতল পুরোটা খেয়ে ফেললাম...
লোভ থাকলে নিজেকে শেষ করতাম না
কলিজা টাকা পয়সা নিয়ে কেউ কবরে যেতে পারে না,এই যে যখন তুমি চিঠিটা পড়বে তখন হয়তো আমি এই দুনিয়ায় থাকবো না,যদি তোমাকে দেখানোর জন্য হতো এইসব কিছু,তাহলে অন্তত নিজেকে শেষ করতাম নাযাদের টাকা পয়সার লোভ আছে তাদের জীবনের লোভ নাই এটা কি করে হতে পারে
জীবন এই যদি না থাকে তাহলে টাকা পয়সার লোভ করে কি হবে
এর পরেও যদি তোমার মনে হয় তোমার কোটিপতি নামটার উপরে আমার লোভ ছিলো তাহলে কলিজা আমি ব্যর্থ
কলিজা অনেক অন্যায় করেছি তোমার সাথে মাফ করে দিও আমায়,
তোমায় হয়তো আর কখনো দেখতে পাবো না,কারন আমার দুচোখ বন্ধ হয়ে যাবে
কলিজা জীবিত থাকতে কখনো একবার জড়িয়ে ধরে চুমুও দাও নি,কলিজা চিঠির এই লাইনটা যখন পড়বে তখন তো আমি মরা লাশ হয়ে গেছি,এখন কি একটা বার বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিবে...
তাহলে উপরে গিয়ে শান্তি পেতাম....
কলিজা ভালো থেকো..
ইতি
তোমার ভালোবাসা না পাওয়া অভাগিনী...
আকাশ,হেনাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কলিজা গো তুমি এটা কেন করলে,তোমায় একটা না হাজারটা চুমু দিব আমি,আকাশ বুক ফাটিয়ে কান্না করতেছে আর হেনার মৃত দেহটাকে জড়িয়ে ধরে ওর চোখে মুখে কপালে পাগলের মত চুমু খাচ্ছে...
আকাশের কান্না দেখে আরুর কান্নার মাত্রা যেন আরো বেড়ে গেছে,
আরু সহ্য করতে না পরে সে সেখান থেকে চলে আসে,
হেনার আব্বু,এই আকাশ ভাই আপনি এবার এখান থেকে চলে যান,আমার মেয়েটাকে তো বাঁচতে দিলেন না,মৃত বানিয়ে দিয়েন এখন আফসোস করে লাভ কি...
আকাশ,এই ওসি একদম চুপ..
আমার কলিজা মৃত না,আমার কলিজা আমার বুকে ঘুমিয়ে আছে,একদম একটা সাউন্ড ও করবি না,সাউন্ড করবি তো গলার কন্ঠনালি সোজা টেনে বের করে ফেলবো...
হেনার আব্বু,ভাই আপনার যা করার আমার সাথে করেন,কিন্তু আমার মেয়ের লাশ আমি আপনাকে স্পর্শ করতে দিব না,থানা থেকে কিছু পুলিশ আসছে,হেনার আব্বু এই তোরা কি দেখছিস? উনাকে নিয়ে গিয়ে বাহিরে রেখে আয়,আমার মেয়ের আসেপাশেও আসতে দিব না আমি...
আকাশ,তো কোন মতেই হেনাকে ছেড়ে উঠবে না,সে শক্ত করে হেনাকে জড়িয়ে ধরে আছে,ওসির কথা মতো পুলিশ গুলো জোর করে আকাশকে বাড়ির বাহিরে রেখে আসে,
--এই তোরা কি করছিস..?
প্লিজ আমাকে ভিতরে যেতে দে আমার কলিজাটা যে ঘুমিয়ে আছে..
থানার পুলিশ গুলো,ভাই মাফ করবেন স্যারের ওর্ডার আমরা অমান্য করতে পারবো না...
আকাশ,ঘরের বাহিরে বসেই কান্না করছে,আর মাটিতে বসে বসে সে পাগলের মত প্রলাপ করছে,আকাশের যেন পুরোপুরি মাথা নড়ে গেছে..
একটু পর পুলিশ গুলো হেনার লাশটাকে গাড়িতে করে কোথায় যেন নিয়ে চলে যায়...
আকাশের মাথা পুরো আউট হয়ে গেছে,
সে গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে আরুকে ডাকতে থাকে,কিন্তু আরুর কোন খোজ খবর নাই,তাই সে একাই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চালাতে আরম্ভ করে,কিন্তু সে কোথায় যাচ্ছে তার কোন হুঁশ নাই,তার ভিতরটা যেন ফেটে যাচ্ছে,হেনার মায়াভরা মুখটা তার চোখের সামনে এখনো ভেসে উঠছে,আকাশ গাড়িটা ড্রাইব করে নিয়ে একটা দোকানের সামনে দাঁড় করায়,পরে দোকানের ভিতর থেকে দুইটা মদের বোতল কিনে আনে,
একদিকে গাড়ি ড্রাইভ করছে আরেকদিকে মদ পান করা শুরু করে....
নাহ আমার কলিজা কেনো মারা গেলো,আজ আমি নিজেকেও শেষ করে দিব,গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি আসতে আসতে দুইটা বোতল শেষ করে ফেলে,
আকাশ বাসায় ঢুকতেই ওর আম্মু জিগ্যেস কিরে বাবা তোর কি হয়েছে তোকে এমন হতাশ লাগছে কেনো...?
আর তোর মুখে দিয়ে কি সব বাজে গন্ধ আসছে..?
আকাশ,এই মহিলা চুপ..
একদম চুপ একটা সাউন্ড ও না,আমার কলিজা মরে গেছে আজ আমিও নিজেকে শেষ করে দিব...
আকাশের আম্মুর তো কিছুই মাথায় কাজ করছে না,কি সব বলছে আকাশ উল্টা-পাল্টা,কলিজা মরে গেছে,নিজেকে শেষ করে দিবে...
আকাশ,ঢুলতে ঢুলতে নিজের রুমে চলে যায়,রুমে গিয়ে ব্লেড খুজতে আরম্ভ করে,খু্ঁজতে খুঁজতে পেয়েও যায়,ব্লেডটা রগ বরাবর চেপে ধরে কলিজা আমিও তোমার কাছে চলে আসতেছি বলে রগের উপরে চালিয়ে দেয়,সাথে সাথে হাত থেকে ফুলকি দিয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়.....
.
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com