গল্পঃ আমি ফুলি । পর্ব - ০২
চিৎকার দিয়ে বললাম কে আপনি?
আমি বললাম: কোন ফুলি?
জবাব আসলো: জমিদার বাড়ির ফুলি।
ভয়ে আমার শরীরে কম্পন সৃষ্টি হলো। প্রচন্ড শীতের মধ্যেও আমি ঘেমে একাকার।
তবে আমি সাহস হারালাম না।
কারণ অদৃশ্য জাতিকে ভয় পেলে তারা সেই সুযোগে মানুষের ক্ষতি করে বসে।
স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলাম:
আপনি এখানে কিভাবে আসলেন?
আর আমি আপনাকে দেখতেন পাচ্ছি না কেনো?
সে বলল: আমাকে তো সাধারণ মানুষ দেখতে পাই না।
যদি আমি নিজ থেকে তাদের সামনে না আসি।
আমি বললাম: আপনি দয়া করে আমার সামনে আসেন।
আপনাকে দেখার আমার খুব ইচ্ছে।
পিছন থেকে মেয়েটি আমায় ডাক দিলো। আমি পিছন ঘুরে তাকালাম?
একটা টগবগে সুন্দরী যুবতী মেয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে।
মেয়েটিকে দেখার পর অনেকটা ভয় দূর হলো আমার।
এটাই তাহলে সেই ফুলি। যার কথা কালু আমাকে বলেছিলো।
কিন্তু কালু বদমাইশ টা গেলো কই?
ফুলি আমায় বলল: আপনি এতো রাতে জঙ্গলে একা একা কি করছেন?
জানেন না, এই জঙ্গলটা ভালো না।
আমি জবাব দিলাম: আমি একা না, আমার সাথে আমার বন্ধু কালু আছে।
ফুলি: আমি তো আপনাকে ছাড়া আর কাউকে দেখছি না।
আমি: আরে আমি আর আমার বন্ধু কালু একসাথে এই জঙ্গলে ঘুরতে আসছিলাম।
কিন্তু কিছুক্ষণ যাবৎ তাকে খুঁজে পাচ্ছি না।
.
ফুলি বলল: তাকে আর খুঁজে পাবেন না।
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম: কেনো?
ফুলি: এই জঙ্গলে যারা হারিয়ে যায় তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
ফুলির কথা শুনে একটু ভয় পেলাম কিন্তু সেটা প্রকাশ করছি না।
আমি বুঝতে পারছি কালুর কি হয়েছে।
আমি তাকে প্রশ্ন করলাম: আপনিই কি সেই ফুলি,
যাকে জমিদারের ছেলে ও তার বন্ধুরা ধর্ষণ করে মেরে ফেলেছে।
ফুলি বলল: হুম, কিন্তু এটা আপনি কেমনে জানেন?
আমি: এটা তো সবাই জানে! কিন্তু ফুলিকে যদি মেরে ফেলা হয় তাহলে আপনি কে?
ফুলি মুখ গোমড়া করে জবাব দিলো: কাল সন্ধ্যার পরে জমিদার বাড়িতে আসবেন।
সব বলবো আপনাকে! কিন্তু আপনি একা আসবেন।
একথা বলেই মেয়েটি চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে গেলো।
কি সব বলে গেলো কিছুই মাথায় ডুকলো না।
মনে হচ্ছে আমি অন্যকোনো জগতে হারিয়ে গেছি।
মেয়েটি যাওয়ার পরে পেছন থেকে কালু আমাকে জোরে জোরে ডাকছে।
কালুর কণ্ঠ শুনে আমি এক মূহুর্তের জন্য ভড়কে গেলাম।
কি হচ্ছে এসব আমার সাথে।
কালু হাঁপাতে হাঁপাতে আমার সামনে এসে বলল,
কিরে মিরাজ তোকে কতোক্ষণ ধরে খুঁজছি! কোথায় হারিয়ে গেলি তুই।
আমি বললাম: তুই কোথায় গিয়েছিলি, তোকে খুঁজতে খুঁজতে আমি হয়রান।
কালু বলল: আরে কাজ সারতে একটু নদীর ঘাটে গিয়েছিলাম।
আমি: তুই একা একা নদীর ঘাটে গিয়েছিলি,
তোর ভয় করে নি।
কালু: আরে ভয় করবে কেনো?
আমি এসবে ভয় পাই না।
.
কালুর কথা শুনে আমার কিছুটা খটকা লাগলো। চোখ গুলো তার কেমন ঘোলাটে দেখাচ্ছে।
আর এই মেয়েটাই বা কে?
সে তো বললো কালুকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাহলে এখন সে আসলো কৈত্থকে?
মেয়েটিকে আমায় মিথ্যে বললো, নাকি আমি হেলুসেলোশন এ ভুগছিলাম।
ঘোর ভাঙ্গল কালুর ডাকে?
আমি বললাম: চল কালু বাড়ি যাই, এতো রাতে এখানে থাকা ঠিক হবে না।
বাড়ি ফিরার পথে কালু আমার সাথে আর একটা কথাও বললো না।
বাচাল ছেলেটা কেমন চুপচাপ হয়ে গেলো।
সকালে ঘুম ভাঙ্গল গ্রামে একটা হৈ চৈ শুনে।
গতকাল রাত থেকে নাকি কালুকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না।
তাই তাকে খুঁজতে খুঁজতে সবাই ঐ জঙ্গলে দিকে যায়,
তখন নদীর ঘাটে কালুর ক্ষত বিক্ষত লাশটা পাওয়া যায়।
ঘটনা শুনে আমি ছুটে গেলাম সেখানে।
কালুর ক্ষত বিক্ষত লাশটা দেখে আমার চোখ দিয়ে দুফোঁটা গরম জল গড়িয়ে পড়ল।
শরীরটা একেবারে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়ে আছে।
শরীরের হাড়ের সাথে অল্প ক'খানা মাংস লেগে আছে।
পুরো শরীরে বিন্দু মাত্র রক্ত নেই। মাথাটা খুঁজে পায় জঙ্গলের মাঝখানে।
ভয়ে কেউ তার সামনে যাচ্ছে না।
সবাই বলাবলি করছে, তাকে নাকি জ্বিনে মারছে। তাই বলে এতো নির্মম ভাবে।
আমার শরীরে কাঁপুনি দিয়ে আমি সেখানেই জ্ঞান হারাই।
কেউ হয়তো জানে না, গতকাল রাতে কালু আমার সাথে এই জঙ্গলেই ছিলো।
একটা জিনিস কিছুতেই বুঝলাম না,
কালু যদি মারা যায় তাহলে কাল রাতে আমার সাথে বাড়ি ফিরল কে?
তাহলে কি ফুলির কথায় সত্যি নাকি ফুলিই কালুকে মেরেছে।
আরেকটা বিষয়, ফুলিকে তো জমিদারের ছেলে ধর্ষণ করে মেরে ফেলেছে,
তাহলে গতকাল রাতের মেয়েটা কে?
রহস্য যেন আমার মাথায় গিজগিজ করছে।
সে আরো বলেছে- আজকে সন্ধ্যার পরে জমিদার বাড়িতে যেতে তাও আবার একা।
সেকি আমাকেও মারার ফাঁদ পেঁতেছে।
তার এই সুন্দর রূপের আড়ালে কি অন্য কেউ আছে। এই রহস্য আমাকে জানতেই হবে।
গ্রামের মানুষ একেবারে সহজ সরল।
তারউপর কালুর এমন মৃত্যুতে সবাই ভয়ে চুপসে গেছে।
এখন কি সন্ধ্যার পরে ঐ জমিদার বাড়িতে যাওয়া আমার উচিৎ হবে।
নিজের সংশয় দূর করতে আমাদের মসজিদের ঈমাম সাহেবের (হাফেজ) সাথে গতকাল
রাতের ঘটনা শেয়ার করলাম।
ঈমাম সাহেব একটু ঘাবড়ে গেলেন এবং আমার দিকে ঢ্যাবঢ্যাব নয়নে তাকিয়ে আছে।
শান্ত গলায় বললেন:
আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো, কাল রাতে তুমি নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এসেছো।
আমি বললাম: কি হয়েছিলো আমার।
আর ঐ মেয়েটি কে? কালু মারা গেলো কেমনে আর আমার সাথে রাতে বাড়ি ফিরলো
যে সেই ছেলেটি কে?
ঈমাম সাহেব বলতে লাগলেন:
তুমি কাল যে মেয়েটিকে দেখেছো সে ঘৌল নামক এক ধরনের দুষ্টু জ্বিন।
সে সবসময় মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করে।
যারা যাদু মন্ত্র সাধনা করে তারা এই জ্বিনকে মন্ত্র পড়ে বশ করে তাদের সিদ্ধি হাসিল করে।
মানে বশ করা ব্যক্তি এই জ্বীনকে নিজের কাজে লাগাই। জ্বীনদের মধ্যে
এই প্রজাতির জ্বীন গুলো সবচেয়ে খারাপ ও শক্তিশালী।
এরা মানুষকে মেরে শরীরের রক্ত মাংস খেয়ে ফেলে।
তাছাড়া এটা মাঝে মাঝে কবর থেকে মৃত মানুষের লাশ তুলে রক্ত মাংস খেয়ে থাকে।
আর যারা এই জ্বীনকে বশ করে তারা কঠিন সাধনা করতে হয়। মূলত শত্রুদের ধ্বংস
করতেই এই জ্বীনকে মন্ত্র পড়ে ডাকা হয়।
শুধু তাই নয়, এই জ্বীন যে ব্যক্তিকে মেরে ফেলে, সে ব্যক্তির রূপ ধরে
সাধারণ মানুষের মাঝে মিশে থাকে। যার কারণে কেউ তাদের অস্তিত্ব ধরতে পারে না।
ফুলি নামের যে মেয়েটিকে জমিদার বাড়িতে মারা হয়,
সে নিশ্চয় কোনো উপায়ে এই জ্বিনকে বশ করে ফেলছে।
এবং তার শত্রুদের মারার নির্দেশ দিয়ে গেছে।
যার কারণে ফুলি মারা যাওয়ার পরেও ঐ জ্বিনটি এখনো ফুলির রূপ ধরে
ঐ পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িতে পড়ে আছে।
হয়তো তার কোনো শত্রুকে এখনো মারার বাকি আছে এজন্য।
তবে ঘৌল নামক জ্বীনটা এমনিতে কারো কোনো ক্ষতি করে না।
যদি কেউ তাকে সচোক্ষে দেখে ফেলে কিংবা কেউ তার সমস্যার কারণ
হয় তাহলে সে তাকে মেরে ফেলে।
আর এজন্যই কালুর মৃত্যু হয়। তুমি বেঁচে গেছো কেমনে সেটা বলতে পারি না।
তবে তোমার সাথে রাতে বাড়ি ফেরা ঐ ছেলেটা কালু না। কালুর রূপ ধরে থাকা ঘৌল জ্বিন।
তবে তুমি এখন থেকে সাবধানে থাকবা।
যেকোনো সময় তোমার উপর বিপদ আসতে পারে।
তোমাকে একটা রক্ষা কবজ দিচ্ছি যেটা তোমাকে বিপদে সাহায্য করবে।
তাবিজ নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম আমি। মনে মনে আল্লাহ অনেক ধন্যবাদ দিলাম।
বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছি আমি।
সন্ধ্যার পর থেকেই আকাশটা মেঘলা হয়ে আছে।
রাতে মনে হয় বৃষ্টি নামবে। একটু পর অনেক ঝড় উঠল। হঠাৎ পরিবেশ শান্ত হয়ে গেলো।
মাঝরাতে কারো ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার।
কণ্ঠটা বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে। ঘুমের ঘোরে দরজা খুলে দেখি,
আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কালু!!
.
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com