বখাটে ছেলে আর রাগী মেয়ের প্রেম কাহিনী । পর্ব -০৫ এবং শেষ
রাত ২ টাই আমরা সবাই চলে আসলাম অবন্তিকার বাসা থেকে।
আজ অবন্তিকা বার বার আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকাচ্ছিলো।
বাসায় এসে আমি শুয়ে আছি।সত্যি আজ অবন্তিকা কে অনেক সুন্দর লাগছিলো।
এতো সুন্দর করে সেজে ছিলো বলার মতো না।
বার বার আমার চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছিলো।
সত্যি কি আমি তার প্রেমে পড়ে গেলাম নাকি।অবন্তিকার কথা ভাবলেই অনেক লাগে।
না আমি তার উপহার টা অবশ্যই দিবো।আজ থেকে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিবো।
আমি বুঝতে পারিনা অবন্তিকার কথা মনে হলেই আমার ভিতর অন্য রকম অনুভূতি কাজ করে কেন।
দেখতে দেখতে প্রায় ৬ মাস হয়ে গেছে।
আমি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।
আমার সাথে সাথে আমার বন্ধুরাও ছেড়ে দিয়েছে সিগারেট খাওয়া।
এই ছয় মাস এর মধ্যে প্রতি টা রাত ই আমি ঘুমাতে পারিনাই অবন্তিকার কথা ভেবে।
অনেক ভালবেসে ফেলেছি অবন্তিকা কে।আমি জানি অবন্তিকাও আমায় অনেক ভালবাসে।
প্রতিদিন ই আমি আমি অবন্তিকার বাসার সামনে দিয়ে ঘুরাঘুরি করি অবন্তিকা কে এক নজর দেখার জন্য।তাকে না দেখলে এক মূহুর্ত থাকতে পারিনা।
তাকে দেখলেই আমার মন টা ভরে যায়।অবন্তিকাও,প্রায় প্রতিদিন ই আমাদের বাসায় আসে।
আমি বুঝতে পারি আসলে অবন্তিকা আমাকে দেখতেই আসে।
প্রতিদিন ই অনেক কথা হয় অবন্তিকার সাথে।কিন্তু তাকে যে আমি ভালবাসি এই কথা টা বলতে পারিনা।
খুব ভয় করে।কিন্তু আমি আর না বলে থাকতে পারছিলাম না।
আজ আমি আর আবির এক সাথে বসে আছি।
আসলে এখন আর আগের মতো আড্ডা দেওয়া হয়না।সবাই যার যার মতো ব্যস্ত হয়ে পরেছে।
আমি আর আকাশ বাদের আমার সব বন্ধুরা চাকরি পেয়েছে।
আমি আর আবির ই এখনো বেকার।
আবির ও চাকরি খুজছে কিন্তু আমি তো অবন্তিকার চিন্তা ভাবনাই মগ্ন তাই আর অন্য
কোনো দিকে আমার মন টা নেই।
---দুস্ত অবন্তিকার সাথে তো ভালোই চলছে তোমার।
প্রতিদিন ই এক সাথে ঘুরতে যাও আর কত কি।....(আবির)
----ধুর বেডা আর কথা বলিস না।......(আমি)
----কেন কি হয়ছে।......(আবির)
---আমি যে তাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি কিন্তু বলতেই পারছিনা।.....(আমি)
---আরে তুই প্রপোজ করে দে।.....(আবির)
---আরে প্রপোজ করলে যদি সে আর কথা না বলে, তুই তো জানিস আমি তার সাথে কথা না বলে থাকতে পারিনা।......(আমি)
---আরে প্রপোজ করলে কথা বলা বাদ দিবে কেন।অবন্তিকা ও তো তোকে ভালবাসে।......(আবির)
---তরে কইসে না যে অবন্তিকা আমায় ভালবাসে।......(আমি)
----আরে বলবে কেন এমনিতেই তো বুঝা যায়।.....(আবির)
---যদি আমাদের ভাবনা টা যদি ভুল হয়।সে যদি শুধু আমায় বন্ধু ই ভাবে।তাইলে প্রপোজ করার পর তো বন্ধুত্ব টাও নষ্ট হয়ে যাইবো।......(আমি)
---আরে অবন্তিকা ও তোকে ভালবাসে।ভাল না বাসলে কি আর তোর এতো গুলো বদ অভ্যাস সে ত্যাগ করাইতো।তুই প্রপোজ করে দে।......(আবির)
---করে দিবো।.....(আমি)
---আরে বেডা কইরা দে।.....(আবির)
---প্রপোজ করার পর যদি উল্টা পাল্টা কিছু হয় তাইলে কিন্তু তরে?......(আমি)
---হ আমারে যা খুশি তাই করিস।.......(আবির)
---কিন্তু কিভাবে করবো।.....(আমি)
----কাল তুই অবন্তিকা কে বিকেল বেলা এই ঐ রাস্তার ওখানে ডাকবি।কারন বিকেল বেলা ঐ খানে পাবলিক থাকেনা।.....(আবির)
----তারপর।......(আমি)
---তার পর আর কি সিনেমা তে দেখস না নায়কের ফিল্মে নায়িকাদের প্রপোজ করে সে ভাবে প্রপোজ করে দিবি।..(আবির)
----ওকে কাল ই করবো।আমি আর না বলে থাকতে পারছিনা।.....(আমি)
---হ দুস্ত তুই থাক আমি যাই।.....(আবির)
---কই যাবি।....(আমি)
---আমি একটা চাকরির জন্য খুব দৌড়া দৌড়ির মধ্যে আছি।...(আবির)
---ওকে যা।....(আমি)
আবির চলে গেলো,আর আমি ও আমার বাসাই চলে আসলাম।
আমি রাতে শুয়ে আছি আর ভাবছি।কাল কিভাবে তার সামনে গিয়ে মনের কথা টা বলবো।আমি ছিলাম কি আর হয়ে গেছি কি।
★অবন্তিকা আমি তোমায় ভালবাসি।
ঠাসসসসসসসসস
উফফফফ কি বাজে স্বপ্ন।আমি রাতে অবন্তিকার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেছি নিজেও জানি।স্বপ্নে দেখলাম আমি অবন্তিকা প্রপোজ করার সাথে সাথেই অবন্তিকা আমায় থাপ্পড় মারলো।এমনিতেই খুব ভয়ে আছি তারপর এই স্বপ্ন টা আরো ভয় ঢুকিয়ে দিলো মনের ভিতর।
আমি বিকেল বেলা একটু সাজুগুজু করে আমার গোলাপ গাছ থেকে একটা গোলাপ ছিড়লাম।ও সরি গোলাপ গাছ টা আসলে আমার না।এই গোলাপ গাছ টা ছিলো আমাদের এলাকার মেম্বার এর।প্রায় অনেক দিন আগে আমি মেম্বার এর বাড়িতে যেয়ে একটা গোলাপ ফুল চাইছিলাম।কিন্তু মেম্বার এর মেয়ে আমারে দেই নাই।তাই আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে রাতে যেয়ে মেম্বার এর পুরো ফুল গাছ টাই তুলে এনেছে।আর তুলে এনে আমার বাড়িতে লাগিয়ে দিয়েছি।এখন থেকে এটা আমার।
আমি ফুল টা হাতে নিয়ে রওনা দিলাম।তারপর আমি অবন্তিকা কে ফোন দিয়ে সেখানে আসতে বললাম।আমি যেয়ে দেখি অবন্তিকা সেখানে এসে দাঁড়িয়ে আছে।
আমাকে দেখেই অবন্তিকা বলে উঠলো।
----এই যে মি. হৃদয় খান, কিসের জন্য জুরুরি তলব করলেন আমায়।......(অবন্তিকা)
আমি কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছিলাম না।আমি এতো কিছু না ভেবে ফিল্মি স্টাইলে বসে অবন্তিকার দিকে ফুল টা দিয়ে অবন্তিকা কে বলে দিলাম।
----অবন্তিকা আমি তোমায় ভালবাসি।.....(আমি)
আমার ভেতর টা কাপছে।
----আমি তো আপনাকে ভালবাসতে পারবো না।......(অবন্তিকা)
অবন্তিকার এই কথা টা শুনে যেন আমার ভিতর টা ফেটে যাচ্ছিলো।কেন জানি অনেক কান্না আসছিলো।কি করবো বুঝতাছিনা।তাই আমি উঠে অবন্তিকার সামনে থেকে চলে আসতে লাগলাম।
এমন সময় অবন্তিকা পিছন থেকে বলে উঠলো।
---ঐ কোথাই যাচ্ছেন।......(অবন্তিকা)
----জানি না।....(আমি)
---এখন তো ঐ আড্ডা খানায় যাবেন আর আবার সিগারেট খাওয়া শুরু করবেন তাই তো।....(অবন্তিকা)
হু ঠিক বলছে অবন্তিকা এখন আবার সিগারেট খাওয়া শুরু করবো।কারন এই টা খাইলে কষ্ট টা অনেক কম লাগবে।আর যার জন্য সিগারেট খাওয়া ছাইড়া দিছি সে তো আর আমার হবেনা।
----হুম তাতে আপনার কি।.....(আমি)
----আমার অনেক কিছু।আমি এখন কেন আপনাকে ভালবাস তে পারবো না আপনি কি তা জানেন।.....(অবন্তিকা)
----কেন। .... (আমি)
---আমি যা বলি মন দিয়ে শুনুন।আপনি তো এখন বেকার।ধরেন আমি ও আপনাকে ভালবাসলাম।কিন্তু আমার তো বিয়ের বয়স হয়েছে।তাই আমার বাবা চেষ্টা করছে আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য।আমি যদি আমার বাবা কে আপনার কথা বলি তাহলে তিনি রাজি হবে না।কারন কোনো বাবা ই চাইবেনা তার মেয়ে কে কোনো বেকার এর হাতে তুলে দিতে।তখন আমার বাবা আমায় জোর করে অন্য কারো কাছে বিয়ে দিয়ে দিবে।তখন আপনি এ কষ্ট পাবেন আর আমি ও পাবো।তাই আমি এখন আপনাকে ভালবাসতে পারবো না।......(অবন্তিকা)
অবন্তিকার কথা শুনে মাথা টা কেমন জানি লাগতে লাগলো।
----তো কি করবো আমি।.....(আমি)
----কি আর করবেন গোলাপ ফুল দিয়ে আমায় প্রপোজ করা বাদ দিয়ে একটা চাকরি খুজুন আর সেই চাকরির কনফার্মেশন লেটার দিয়ে আমায় প্রপোজ করুন।.......(অবন্তিকা)
এই বলে অবন্তিকা চলে গেলো।
আমি কি করবো বুঝতাছিনা।অবন্তিকা তো ঠিক কথায় বলেছে।
আমার মাথা টা পুরাই নষ্ট।আমি সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে গেলাম।যেয়ে দেখি আবির বসে আছে।
-----এই দুস্ত আজ ভাবি কে প্রপোজ করছিস।.....(আবির)
আমি আবির কে সব খুলে বললাম।
---দুস্ত কি করবো বুঝতাছি না।....(আমি)
---আরে চিন্তা করিস না মনে কর তর চাকরি হয়ে গেছে।.....(আবির)
---ঐ চাকরি কি মামার বাড়ির মুয়া যে চাইলাম আর পাইলাম।....(আমি)
---আরে আমি যে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলাম সেটা পেয়ে গেছি।আর আমি চাকরি টা তকে দিয়ে দিবো।......(আবির)
----মানে।... (আমি)
.
মানে চাকরি টা আমি করবো না চাকরি টা তকে দিয়ে দিবো।
দুস্ত পরে আমি অবশ্যই অন্য কোন চাকরি পাবো কিন্তু তুই যত দিন চাকরি না পাবি
আমি জানি তর ঠিক মতো ঘুম হবে না অবন্তিকার কথা ভেবে ভেবে।
আমি কাল ই চাকরি টা তকে দিয়ে দিবো।
তুই কাল সকাল ১০ টাই প্রয়োজনীয় সব কাগজ পত্র নিয়ে আমার সাথে দেখা করবি।......(আবির)
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা।
---দুস্ত তুই আমার খুব বড় উপকার করলি।....(আমি)
---ঐ আমি না করলে কে করবে রে।.....(আবির)
-----ওওও তাই তো।....(আমি)
---হ যা এবার বাসাই যেয়ে ফ্রেশ হয়ে লম্বা একটা ঘুম দিবি।আর কাল ১০ টা আমার সাথে দেখা করবি।....(আবির)
---ওকে দুস্ত তরে অনেক ধন্যবাদ।....(আমি)
---হয়ছে হয়ছে এবার বাসায় যা।.....(আবির)
আমি বাসায় চলে আসলাম।সত্যি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে এদের মতো বন্ধু পেয়ে।
উফফফফফফফফ কি যে শান্তি লাগতাছে।আমার হাতে চাকরির কনফার্মেশন লেটার টা।আবির এর জন্য চাকরি টা পেলাম। সালা নিজের চাকিরি টা আমায় দিয়ে দিলো।সত্যি এদের মতো বন্ধু হয়না।
---এই তুই এখনো দাঁড়িয়ে আসছিস যা তাড়াতাড়ি অবন্তিকার কাছে যা।......(আবির)
----দুস্ত তরে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো।....(আমি)
---ধুর সালা তর ধন্যবাদের গুষ্টি খিলাই।যা তাড়াতাড়ি যা।....... (আবির)
আমি অবন্তিকা কে ফোন দিয়ে কাল যেখানে আসতে বলেছিলাম সেখানেই আসতে বললাম।
আমি সেখানে গিয়ে অবন্তিকার জন্য দাড়িয়ে আছি।অবন্তিকা এখনো আসতাছেনা কেন।আমার তো আর দেরি সইতাছেনা।
.
অবশেষে অবন্তিকা আসলো সেখানে।
----এই যে কিসের জন্য ডাকলেন এখানে আমায়।......(অবন্তিকা)
---এই যে নেন।.....(আমি)
এই বলে আমি চাকরির কনফার্মেশন লেটার টা অবন্তিকা কে দিলাম।
---আরে আপনি এক দিনের ভিতরে কিভাবে চাকরি পেলেন।.....(অবন্তিকা)
আমি এবার একটু ভাব নিয়ে।
---ভালবাসার জন্য মানুষ কত কি করতে পারে আর আমি এই টুকু পারবোনা।......(আমি)
----ওওও তাই।....(অবন্তিকা)
-----আই লাভ ইউ।.....(আমি)
---আই লাভ ইউ টু।....(অবন্তিকা)
----এক সাথে সারা জীবন আমার পাশে থাকবে তো।.....(আমি)
---হুম সারা জীবন এক সাথে থাকার জন্যই তো এতো কিছু করলাম।....(অবন্তিকা)
---মানে।..... (আমি)
---মানে এই যে তোমাকে বখাটে থেকে ভালো মানুষ বানালাম।...... (অবন্তিকা)
---ও তাই।..... (আমি)
---হুম আমি চাই আমাদের ভালবাসা টা যেন পূর্নতা পায়।এখন আমার ফ্যামিলি ও তোমায় মেনে নিবে কারন তুমি এখন প্রতিষ্ঠিত।
----হুম।... (আমি)
---তো কোনো এক দিন তোমার বাবা মা কে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দিও।...... (অবন্তিকা)
---কিন্তু কেন।....(আমি)
----আপনার বাবা মা আমার বাবা মা মিলে আমাদের দুজন কে এক ফ্রেমে এ বেধে দিবে।.....(অবন্তিকা)
---ওওও তাই।..... (আমি)
ঠিক এমন সময় আবির কোথাই যেন এসে।
---দুস্ত অনেক হয়ছে এবার তোমরা দুই জনে সুন্দর করে দাড়াও আমি একটা তোমাদের ফডো তুলি।.....(আবির)
---আরে দুস্ত তুই।...... (আমি)
---হ আমি।দাড়া ভালো করে আমি তদের দুই জন রে এক ফ্রেমে বেধে দেই।... (আবির)
হুম আবির তো আমাদের দুজন কে ফটো তে এক ফ্রেমে বেধে দিলো।
আবার দোয়া করবেন আমাদের বাবা মা কে আমাদের দুজন কে বিয়ে নামের ফ্রেমে
আমাদের দুজন কে বেধে দেই।
এই ছিলো বখাটে ছেলে আর রাগী মেয়ের প্রেম কাহিনী।
<>সমাপ্ত<>
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com