ডেঞ্জারাস মামাতো বোন । পর্ব -০৭
আমি শান্ত গলায় রিমিকে বললাম,
-- শিলার ফোন নাম্বার'টা তোর কাছে আছে.?
থাকলে দে তো, প্লিজ.! (আমি)
.
শিলার কথা শুনে রিমি কিছু সময় আমার দিকে চেয়ে রইলো।
তারপর হুট করে আমার শার্টের কলার চেপে ধরলো।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।
কিছু বলার আগেই রিমি চোখ পাকিয়ে বলল,
.
-- কেন রে, শিলার নাম্বার দিয়ে কি করবি.? (রিমি)
.
আমি মিনমিন করে বললাম,
.
-- কিছু না। এমনি-ই একটু দরকার ছিল। (আমি)
.
-- সত্যি করে বল কি দরকার, না হলে খবর
আছে কিন্তু.! (চোখ লাল করে)
.
-- আসলে দরকার'টা আমার না, আমার বন্ধু রিফাতের.! রিফাত শিলাকে পছন্দ করে.!
শিলার সাথে কথা বলার জন্য আমার কাছে নাম্বার চাইল।
কিন্তু আমার কাছে নাম্বার নেই।
ভাবলাম তোর কাছে হয় তো আছে, তাই নিতে আসলাম। (আমি)
.
রিমি এবার আরো শক্ত করে আমার শার্টের কলার চেপে ধরলো।
মুখের কাছে মুখ এনে ধমক দিয়ে বলল,
.
-- কুত্তা, মিথ্যা বলার জায়গা পাইস না.?
কি ভাবছিস, আমি তোকে চিনি না.?
আমি নিশ্চিত নাম্বার নিয়ে তুই শিলার সাথে কথা বলবি.!
ওর সাথে টাংকি মারবি। লুইচ্ছা একটা.! (রিমি)
.
আমি রিমির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিরীহ গলায় বললাম,
.
-- তওবা, তওবা.! নাউযুবিল্লা.! তুই আমাকে এমন মনে করিস.?
আমার সম্পর্কে তোর এমন ধরণা.? ছিঃ.!
তোর কি মনে হয় আমি নাম্বার নিয়ে শিলার সাথে কথা বলবো.? (আমি)
.
-- অবশ্যই। (রিমি)
.
-- নাউযুবিল্লা.! আল্লাহ, এটা শোনার আগে আমার মরণ কেন হলো না.! (আমি)
.
-- এই বান্দর ঢং একটু কম দেখা। (রেগে)
.
-- আমি সত্যি বলছি। তাছাড়া তুই ভাবলি কেমন করে আমি শিলার মত একটা পেন্তীর সাথে
কথা বলবো... (আমি)
.
-- সত্যি তো, শিলার সাথে কথা বলবি না.? (রিমি) .
-- ১০০% সত্যি.! (আমি)
.
-- আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, তুই আমার মাথা ছুঁয়ে বল... (রিমি)
.
রিমির কথায় ওর উপর রাগ উঠলো।
ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে এমন করছে কেন.?
আমি রাগী স্বরে বললাম,
.
-- তুই এত সিরিয়াস হচ্ছিস কেন, বল তো.?
সামান্য একটা ফোন নাম্বার চাইছি আর তাতেই তুই শুরু হয়ে গেছিস।
কেন, ফোন নাম্বার দিলে কি সমস্যা শুনি.?
আর আমি যদি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলিও তাতে তোর কি.? তোর এত সমস্যা কিসের.? (আমি)
.
-- সমস্যা আছে আর সেটা অনেক বড় সমস্যা.!
যেটা তোর মত গাধা বুঝবে না।
আবুল কোথাকার.! (রিমি)
.
-- আলতু-ফালতু কথা রাখ। নাম্বারটা দে... (আমি)
.
-- আগে আমার মাথা ছুঁয়ে কসম খা তারপর... (রিমি)
.
আমি আর কোনো উপায় না পেয়ে রিমির মাথায় হাত দিয়ে বললাম,
.
-- শিলার ফোন নাম্বারটা আমি সত্যি-ই রিফাতের জন্য নিচ্ছি।
আমার ওই মেয়ের প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই.!
এবার বিশ্বাস হলো নাকি আরো কিছুর কসম খাওয়া লাগবে.? (আমি)
.
রিমি আর কিছু না বলে ওর মাথা থেকে আমার হাত সরালো।
তারপর ফোনটা দিয়ে বলল,
.
-- ঠিক আছে, শিলার নাম্বারটা নে... (রিমি)
.
আমি শিলার নাম্বারটা নিয়ে চলে আসতে লাগলাম।
হটাৎ আমার মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি উদয় হলো।
ভাবলাম, রিমিকে একটু রাগিয়ে দিলে কেমন হয়.?
যেই ভাবা সেই কাজ। আমি দরজার কাছে গিয়ে রিমিকে ডাক দিলাম,
.
-- রিমি.... (আমি)
.
-- হুমম, কি.? (রিমি)
.
-- একটা কথা বলবো.? (আমি)
.
-- বল... (রিমি)
.
আমি দুষ্টু হাসি দিয়ে বললাম,
.
-- আসলে, শিলার ফোন নাম্বার'টা আমি আমার জন্যই নিলাম.!
শিলার সাথে প্রেম করবো তো, তাই।
ভালো করছি না.?
তাছাড়া শিলা মেয়েটা যথেস্ট সুন্দরী.!
ওর সাথে প্রেম করলে মন্দ হয় না। কি বলিস.? (আমি)
.
আমার কথা শুনে মুহূত্বেই রিমির মুখ অন্ধকারে ছেয়ে গেল। সেই সাথে মুখে ঈষৎ লাল আভা
ফুটে উঠলো। ঠিক যেন সূর্যাস্তের আগ মুহূত্ব.!
আমি বেশ বুঝতে পারছি, রিমি রেগে গেছে।
শুধু রেগে নয় মাত্রারিক্ত পরিমাণে রেগে আছে।
.
কিন্তু আমি ভয় পেলাম না।
রিমির রাগত চেহারাকে বেশ উপভোগ করতে লাগলাম।
এদিকে, রিমি রেগে গিয়ে সমানে হাত কচলাচ্ছে।
চোখ দু'টো লাল হয়ে গেছে। রাগে ওর শরীর রীতিমত কাঁপছে.!
ভাবলাম, আগুনে একটু ঘি ঢেলে দেই, দারুণ জমবে.!
আমি দুষ্টু হাসি দিয়ে রিমিকে বললাম,
.
-- কথা বলছিস না, কেন.?
শিলার সাথে রিলেশনে জড়ালে কেমন হবে.?
আমি ভাবছি, কাল শিলাকে প্রপোজ করবো.!
তুই কি বলিস.? (আমি)
.
রিমি এবার এক লাফে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
তারপর টেবিলের উপর রাখা স্কেলটা হাতে নিয়ে চিৎকার করে বলল,
.
-- তুই শিলার সাথে প্রেম করবি, না.?
তাকে প্রপোজ করবি.? (রিমি)
.
আমি হাসিমুখে উত্তর দিলাম,
.
-- অবশ্যই। আর তুই শিলাকে নাম ধরে ডাকছিস কেন.? শিলা তোর হবু ভাবি.!
আর ভাবিকে কি কেউ নাম ধরে ডাকে.?
আজ থেকে শিলাকে ভাবি বলে ডাকবি.! (আমি)
.
আমার কথা শুনে রিমি চোখ বড়-বড় করে তাকালো।
দেখলাম, রিমি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
আমি এখান থেকে ওর নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি।
শ্বাস নেওয়ার সময় রিমির সরু নাকের পাটি বারবার ফুলে যাচ্ছে।
চেহেরায় এক অপরূপ সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে।
কিন্তু সেই সৌন্দর্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।
রিমি প্রচন্ড রেগে গিয়ে সাপের মত হিসহিসিয়ে বলল,
.
-- আজ তোকে আমি মেরেই ফেলবো রে, কুত্তা.!
তুই প্রেম করবি, তাই না.? দাঁড়া তোর প্রেম করার শখ আমি মিটাচ্ছি... (রিমি)
.
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে রিমি আমার দিকে তেড়ে আসলো। আমিও আর দাঁড়ালাম না।
দিলাম ঝড়ের বেগে একটা দৌঁড়.! এক দৌঁড়ে ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম।
রিমি আমার ঘরের সামনে এসে চিৎকার করে বলতে লাগলো,
.
-- এখন দরজা বন্ধ করলি কেন.? সাহস থাকলে দরজা খোল...
তোর প্রেমের ভুত মাথা থেকে নামিয়ে দিচ্ছি।
বাঁদর কোথাকার.! এই চেহেরা নিয়ে প্রেম করবে রে...
আয়নায় নিজের চেহেরা দেখেছিস কখনো.?
তোর দিকে কোন মেয়ে ফিরেও তাকাবে না.! (রিমি)
.
-- কে বলছে তাকাবে না.? আরে, কলেজে সব মেয়ে আমার জন্য পাগল।
আমাকে এক পলক দেখার জন্য বারবার ছুটে আসে।
দেখিস, কাল তোর সামনে শিলাকে প্রপোজ করবো আর
শিলাও আমার প্রপোজ এ্যাক্সেপ্ট করবে.! (আমি)
.
-- আমিও দেখবো কেমনে এ্যাক্সেপ্ট করে।
তোকে যদি শিলার হাতে মাইর না খাইয়েছি তো আমার নাম রিমি না.! (রিমি)
.
তারপর রিমি আরো কিছুক্ষণ বকবক করে চলে গেল।
আমি একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে শুয়ে পরলাম।
যাক, বাঁচা গেল।
.
.
.
রাতে সবাই মিলে খেতে বসেছি হটাৎ রিমি আমার পা'য়ে ঠুয়া মারলো।
আমি চমকে উঠে রিমির দিকে তাকালাম।
দেখি, রিমি মাথা নিচু করে খাবার খাচ্ছে আর মুচকি হাসছে। আমি কিছু বললাম না।
মা-বাবা পাশে আছে, খামোখা ঝামেলা করে লাভ নেই।
রিমিকে পরে দেখে নিবো।
.
আমি এসব ভাবছিলাম, হটাৎ রিমি আবার
আমার পা'য়ে ঠুয়া মারলো।
এবার বেশ জোরেই মেরেছে পেন্তীটা।
আমি ব্যাথা পেয়ে মৃদু স্বরে চিৎকার দিলাম।
.
-- কি হলো.? (মা)
.
-- কিছু না, মা। পা'য়ে মশা কামড়াচ্ছে। (আমি)
.
-- কই ঘরে তো একটাও মশা নেই। (মা)
.
-- এটা সেই মশা না মা, এটা হচ্ছে মানব মশা.! (আমি)
.
-- কি.? (মা)
.
-- কিছু না, বাদ দাও। (আমি)
.
আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ খেতে লাগলাম।
একটুপর খেয়াল করলাম, কে যেন আমার পা'য়ে
সুড়সুড়ি দিচ্ছে। আমি মাথা নিচু করে আড় চোখে নিচের
দিকে তাকালাম।
.
দেখি, রিমি আমার পা'য়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে।
আমি জানতাম এটা রিমির-ই কাজ হবে।
আমার রিমির উপর খুব রাগ উঠলো। পেন্তীটা শান্তিমত
খেতেও দিচ্ছে না।
আমি রাগী লুক নিয়ে রিমির দিকে তাকালাম।
আর তখন-ই রিমি আচমকা আমাকে চোখ টিপ মারলো। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম।
.
মনে মনে বললাম, "দাঁড়া পেন্তী তোর
ব্যবস্থা করছি।"
কথাটা বলে আমি খুব জোরে রিমির পা'য়ে
ঠুয়া মারলাম।
রিমির নরম, মসৃণ পা'টা জোরে চেপে ধরলাম।
.
রিমি ব্যথা পেয়ে বেশ জোরে চিৎকার দিল।
ওর চিৎকার শুনে মা-বাবা চমকে উঠলো।
মা হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
.
-- কি হয়েছে রিমি.? এভাবে চিৎকার
দিলি কেন.? (মা)
.
রিমি আমতা আমতা করে বলল,
.
-- ইয়ে... মানে... সেরকম কিছু না, আম্মু।
আসলে খুব মশা কামড়াচ্ছে তো, তাই। (রিমি)
.
-- তোদের দু'জনকেই শুধু মশা কামড়াচ্ছে...
কই আমাকে আর তোর আব্বুকে তো
কামড়াচ্ছে না... (মা)
.
-- সেটা আমাকে বলছো কেন.?
মশাকে গিয়ে বলো, তোমাকে আর আব্বুকে সে
কামড়াচ্ছে না কেন... (রিমি)
.
রিমির কথা শুনে সবাই হেসে উঠলাম।
তারপর সবাই খাওয়া শেষ করলাম।
.
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ছাদে গেলাম সিগারেট খেতে।
আজ সারাদিনে একটাও সিগারেট খাওয়া হয় নি।
এখন যদি না খাই তাহলে ঘুমাতে পারবো না।
মাথাটা এমনিতেই প্রচন্ড ব্যথা করছে।
সিগারেট-ই এখন একমাত্র ব্যাথা কমানোর ঔষধ.!
.
আমি ছাদের রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে সিগারেটে আগুন ধরালাম।
সিগারেট টানছি আর আকাশের দিকে তাকিয়ে ধোঁয়া ছাড়ছি।
এখন বেশ ভালো লাগছে। মাথা ব্যাথাটাও একটু
কমে গেছে।
.
-- কোন ব্র্যান্ডের সিগারেট খাইস.? (রিমি)
.
মনের আনন্দে সিগারেট টানছিলাম হটাৎ কে যেন পেছন থেকে কথাটা বলল।
আমি থতমত খেয়ে তাড়াতাড়ি পিছন ফিরে তাকালাম।
দেখি, রিমি দাঁড়িয়ে আছে আর ওর হাতে একটা ঝাটা.!
রিমিকে এভাবে দেখে আমার গলা শুকিয়ে গেল।
হাটু কাঁপতে লাগলো.!
.
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com