আমার কালো পরী । পর্ব - ০২
কাকির কথায় বড় আপু বলতে লাগল,,
দেখেন ভাবি ছেলে বিবাহিত ছেলের একটা বাচ্চা আছে তাতে আমার কোন আপত্তি ছিল না কিন্তু ছেলে তাসনিয়া কে পর্দা করতে দিবে না তার জন্য আমার আপত্তি আছে,
তাসনিয়া ক্লাস সিক্স থেকে পর্দা করে। তাসনিয়া পর্দা ছাড়তে পারবে না। তাই আমি এই ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারব না তাসনিয়া কে।
আপুর কথায় কাকি বলতে লাগল,
এমনিই তাসনিয়া কালো তারপর বয়সও বেশি হয়ে গেছে।
এত বয়সের মেয়ে তারপর আবার কালো কোন ছেলে দেখেই তাসনিয়া কে পছন্দ করবে না।
তারপর যদি জানে পর্দা করে কারো সামনে যায় না তাহলে তো আরও কেউ বিয়ে করতে চাইবে না।
এখনকার ছেলেরা চাই বউ নিয়ে ঘুরবে ফিরবে,
তারপর বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন সবাই কে দেখাতে পারে যেন এমন মেয়ে বিয়ে করতে চাই।
সেখানে তো তাসনিয়া দেখতেও অসুন্দর আবার কারো সামনেও যাবে না।
এগুলো জানলে তো আরও বিয়ে হবে না।
ভালো বুঝে তোমার কাকা একটা ছেলে আনতে চাইছিলো দেখাতে তাদের পছন্দও হতো
নাকি সন্দেহ তবুও দেখাতে চাইছে তোমার কাকা তাসনিয়া কে।তবুও তোমরা আপত্তি করলে।
বোন কে কোন জমিদারের সাথে আর কোন হুজুরের সাথে বিয়ে দাও
দেখব তো বলেই কাকি এক মুহুর্তে দেরী না করে চলে গেল।
কাকি যাওয়ার পরই বড় আপু আমাকে বলতে লাগল,,
তাসনিয়া কস্ট পাস না কারো কথায়। আল্লাহর পর ভরসা রাখ।
উত্তম জীবন সঙ্গী পাবি তুই। তবুও কখনো বেপর্দা হস না।
এখনো যেমন পর্দা করিস সারাজীবন এভাবেই পর্দা করবি।
নাহ আপু আমি কস্ট পাবো কেন? আমি কাকির কথায় কস্ট পায় নেই।
আর আমি কখনো বেপর্দা হয়ে চলাফেরা করি নাই, যখন থেকে বুঝতে শিখছি।
আমি সারাজীবন পর্দা করে যাবো।
.
বলেই রুমে আসলাম। ভালো লাগছে না কিছু। এভাবে ঘরে বসে থাকলে জব যোগাড় করতে পারব না।
আর লোক ছাড়াও জব সহজে পাওয়া যায় না। কি করব না করব কিছুই বুঝতে পারছি না।
কপালে হাত দিয়ে এগুলো ভাবতে লাগছি তখনই আমার মেজো ভাইয়ের মেয়ে রুমি আসল আমার রুমে।
রুমি কিছু বলবি?
ফুপু তুমি কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছো কেন? জানো না কপালে হাত দিয়ে রাখলে দূঃখ হয়।
আমার আর দূঃখ কস্ট।জীবন টাই কস্টের আমার।
কালো হয়ে পৃথিবীতে আসায় তো সব থেকে কস্ট। বিরবির করে বলতে লাগলাম।
ফুপু কিছু বলছো নাকি বিরবির করে?
নাহ কিছু বলছি না। তুই কি বলতে আসছিস তাই বল।
ফুপু আমাদের স্কুলের হেড স্যার তোমাকে যেতে বলছে।
তোমাকে অনেকদিন ধরে দেখে না।
তারপর তোমার সাথে বলে স্যার এর কি কথা আছে তাই তোমাকে যেতে বলছে।
রুমি যে স্কুলে পড়ে সে স্কুল থেকে আমি এসএসসি পাস করছি।
হেড স্যার আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসত। স্কুলে পর্দাসহকারে যেতাম দেখে।
কেউ বোরকা পড়ে স্কুলে যেত না শুধু আমি ক্লাস সিক্স থেকে বোরকা পড়ে যেতাম।
তারপর চুপচাপ থাকতাম সবসময়। তাই স্যার অনেক ভালোবাসত আমাকে। কিন্তু
হেড স্যার হঠাৎ করে আমাকে যেতে বলছে কেন বুঝলাম না।
ফুপু আমি যায় বলেই রুমি রুম থেকে বের হয়ে গেল।
তারপর আমি বড় আপুর কাছে যেয়ে স্যার যেতে বলছে এই কথা বললাম।
আপুও বলল একবার স্যার এর সাথে কথা বলে আয় হয়ত কোন জরুরি দরকারে যেতে বলছে।
তারপরের দিন,,
হেড স্যার এর রুমের সামনে দাড়িয়ে আছি। স্যার বসে বসে কি কাজ যেন করছে।
ভিতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না তখনই স্যার ডাক দিল,,
তাসনিয়া মা ভিতরে আয়। ভয় পাচ্ছিস কেন?
আমি স্যার কে সালাম দিয়ে ভিতরে গেলাম।
স্যার আমাকে বসতে বলে জিগাসা করল কেমন আছি, আরও টুকটাক কথা বলল।
তারপর আবার বলতে শুরু করল,,
তুই বলে একটা জবের জন্য অনেক ঘুরছিস তবুও একটা জব পাচ্ছিস না। রুমি আমাকে বলল।
হুম স্যার। আজকাল তো টাকা পয়সা ছাড়া জব হয় না।
মাস্টার্স শেষ করে বাসায় বসে আছি কিন্তু একটা জব যোগাড় করতে পারছি না।
এখন তো প্রাইমারি স্কুলে টিচার নিয়োগ দিচ্ছে। তুই পরীক্ষা দে।
যদি কোন একটা প্রাইমারি স্কুলে জব হয়ে যায়।
আমি কেমনে কি করব।প্রাইমারি স্কুলে টিচার হতে গেলেও এই যুগে লোক লাগে,
টাকা লাগে। আমাকে কে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্তা করে দিবে?
আর আমি টাকা দিয়েও জব পেতে চাই না।
তুই চিন্তা করিস না। পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা আমি করে দিচ্ছি।
দেখ পরীক্ষা দিয়ে যদি টিকে যাস। টাকা ছাড়া যদি জব হয়ে যায় তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ।
আচ্ছা স্যার।
কাল তোর সব সার্টিফিকেট, কাগজ পত্র নিয়ে আসিস।
আমি তোকে সাথে করে নিয়ে জমা দিয়ে আসবানি।
তারপর স্যার এর সাথে টুকটাক কথা বলে বাসায় চলে আসলাম,
বাসায় আসার পর শুনি ছোট ভাইয়ার জন্য কাল মেয়ে দেখতে যাবে,
মেজো ভাইয়া, বড় ভাইয়া, আব্বু, সেজো আপুর স্বামীও যাবে।
মেয়েদের বাড়ি আমাদের পাশের গ্রামে। ভাইয়ার আগে থেকেই মেয়েটাকে পছন্দ।
শুনলাম কালই মেয়ে নিয়ে আসবে যদি বড় ভাইয়া মেজো ভাইয়ার পছন্দ হয়।
মেয়েরা আমাদের মতই গরীব।
পাশাপাশি গ্রাম হওয়ায় মেয়েদের বাড়ির সবাই ভাইয়াকে দেখছে
আর আমাদের বাড়িও দেখছে আগে থেকেই। মেয়েদের পছন্দ আছে আগে থেকেই।
কাল যদি ভাইয়াদের পছন্দ হয় তাহলে মেয়ে নিয়ে আসবে।
আমি এসব কথা শুনে রুমে যেয়ে বোরকা খুলে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
তারপরের দিন ভাইয়ারা মেয়ে দেখতে চলে গেল আর আমি স্কুলে চলে গেলাম স্যার এর কাছে।
তারপর স্যার আমাকে নিয়ে টিচার্স ট্রেনিং কলেজে নিয়ে গেল।
সব কিছু জমা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
যাওয়া আসা যত খরচ হয়ছে স্যারই দিয়ে দিছে। স্যার এর ফোন নাম্বারও দিয়ে দিছে।
বাড়িতে আসতেই দেখি ছোট ভাইয়া বউ নিয়ে হাজির।
আর তখনই আমাকে সবাই দেখতে বলতে লাগল,,
.
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com