সিনিয়র লেডি ডন বউ। পর্ব - ০২
জানি এখন পালালে আর রক্ষা নেই।। তাই বন্ধুদের বললাম তোরা এইখানে থাক আমি শুনে আসছি কি বলে।। এরপর ওদেরকে রেখে মিম আপুর কাছে চলে আসলাম।।
এরপর মিম আপু যা বললেন তা শুনে তু আমি অবাক।। কারণ মিম আপু বললেন,,
মিমঃ ওই তোকে না গতকাল বলেছিলাম যে প্রতিদিন ভার্সিটিতে আসলে আমাদের এসে সালাম দিয়ে যাবি।। তাহলে আজ সকালে আমি ডাকার পর আসলি না কেন..?
আমিঃ না ইয়ে মানে আসলে সকালে দেখলাম আপনি একটা ছেলেকে মারছেন তাই ভয়ে আর আসি নাই।।
মিমঃ ভয় কিসের হে আর আসিস নাই যখন সেটার শাস্তি এখন তোকে পেতে হবে।।
আমিঃ মামানে কিকিসের শাস্তি আমি কি করেছি..?
মিমঃ আমার কথা শুনিস নাই এটাই তোর দোষ আর এখন এর জন্য তোকে শাস্তি পেতে হবে।।
আমিঃ কি শাস্তি..?
মিমঃ এখন তুই কান ধরে ৫০ বার উঠ বস করবি আর এটাই তোর শাস্তি।।
আমিঃ কিহহ, না আমি এটা পারব না কখনোই না (ভার্সিটিতে এখনও অনেক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।। আর এখন যদি কান ধরে উঠ বস করি তাহলে মান সম্মান পুরাই যাবে।। তাই বাচার জন্য সাহস করে কথাটা বললাম)।।
মিম ছেলেটা মনে হয় তোর ব্যাপারে ভালো করে জানে না একটু বুঝিয়ে দে তু তুই কে (মিম আপুর বান্ধবীদের মধ্যে একটা বলল কথাটা)।।
মিমঃ কিছু ভেবে কাজ হবে না যা বলছি সেটাই করতে হবে সো তারাতাড়ি কর।।
আমিঃ আপু প্লিজ আজকের মতো আমায় মাফ করে দেন।। আমি আর কখনোই আপনার কথার অমান্য করব না প্রমিস।।
মিমঃ কিছুক্ষণ ভেবে, আচ্ছা যা আজকের মতো তোকে মাফ করে দিলাম।। কিন্তু নেক্সট টাইম যাতে আর এমন ভুল না হয় মনে থাকে যেন।।
আমিঃ না না আর কখনো এমন হবে না, আচ্ছা এখন তাহলে আমি যাই..?
মিমঃ আচ্ছা যা।।
আর দেড়ি না করে ওদের কাছ থেকে সোজা বন্ধুদের কাছে চলে আসলাম।।
শুভঃ কিরে মিম আপু তোকে ডেকে নিয়ে কি বলল..?
আমিঃ তেমন কিছু না এমনিই জিজ্ঞেস করল আমি ভার্সিটিতে নতুন নাকি।।
শুভঃ দেখ আমাদের একদম মিথ্যা বলবি না।। আর ভার্সিটির প্রথমদিন না মিম আপু তোকে রেগিং না করেই ছেড়ে দিয়েছিল।। তাহলে আজ উনি তোকে এইসব প্রশ্ন করবেন কেন..? সত্যি সত্যি বল উনি তোকে কি বলেছেন..?
আমিঃ এই যা নিজের জালে নিজেই ফেসে গেলাম, এখন এদের কি বলব।। আচ্ছা শুন (তারপর ওদেরকে সব বলে দিলাম।। না বলে আর বাচার উপায় নেই তাই সত্যিটা বলতেই হলো)।।
রনিঃ কিহহ মিম আপু তোকে প্রথমদিন এই কথা বলেছিলেন আমাদের আগে বললি না কেন..?
আমিঃ এমনিই সরি রাগ করিস না প্লিজ।।
রহিমঃ কিন্তু মিম আপু তোর সাথে এমন করছেন কেন..? প্রথমদিন রেগিং না করেই ছেড়ে দিলেন আর আজকেও আবার মাফ করে দিলেন।। সবকিছুর মধ্যে কিছু তু একটা প্যাচ আছে।।
আমিঃ ভাই এইসব প্যাচ তুই বাসায় নিয়ে যা আর ওইখানে গিয়েই বের করিস এখন আমার বাসায় যেতে হবে আমি গেলাম।।
এরপর বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসলাম।। বাসায় এসে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবারটা খেয়ে একটু ঘুমিয়ে পরলাম।। বিকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বই নিয়ে পড়তে বসলাম।। পড়তে পড়তে অনেক রাত হয়েগেল।। কিছুক্ষণ পর আম্মু এসে রাতের খাবারের জন্য ডাক দিয়ে গেলেন।। আমিও উঠে খাবার খেতে নিচে চলে গেলাম।।
খেয়ে দেয়ে আবার রুমে চলে এলাম।। রুমে এসে কিছুক্ষণ ফেসবুকিং করার পর বিছানা ঠিক করে ঘুমিয়ে পরলাম।।
সকালবেলা
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলাম।। প্রায় কিছুক্ষণ পর ভার্সিটিতে এসে পৌছলাম।। ভার্সিটির গেইট দিয়ে ঢুকতে যাব তখনই নজর গেল মিম আপুদের আড্ডার দিকে।। ওরা সবাই দেখছি ওইখানেই বসে আছেন।।
এখন যদি আমি ক্লাসে যাই তাহলে ওদের পাশ কাটিয়ে যেতে হবে।। আর যাওয়ার সময় যদি সালাম না দেই তাহলে নিশ্চয় আজ কপালে দুঃখ আছে।। যাই ওদের কাছে গিয়ে আগে সালামটা দিয়ে দেই তারপর নাহয় ক্লাসে যাব।।
আমিঃ আসসালামু ওয়ালাইকুম আপু।।
মিমঃ সালামের জবাব দিয়ে, এইতু গুড বয় এইভাবে প্রতিদিন মনে করে আমাদের এসে সালাম দিয়ে যাবি।। এখন ক্লাসে যা।।
আমিঃ আচ্ছা বলে ক্লাসে চলে এলাম।।
ইরাঃ কিরে মিম তুই ছেলেটার সাথে এতো ফ্রি হয়ে কথা বলছিস কেন..? আর ভার্সিটির প্রায় সকল নতুন ছাত্রদেরই তুই রেগিং করেছিস কিন্তু এই ছেলেটাকে ছেড়ে দিলি কেন..? আর গতকালও তোর কথা শুনল না এর জন্যও মাফ করে দিয়েছিস।। আচ্ছা তোর কিছু হলো না তু হঠাৎ এতো পরিবর্তন এলো যে..? (মিমের একটা বান্ধবী কথাটা বলল)
মিমঃ আমার কিছুই হয়নি, আর এই ছেলেটা সবার থেকে আলাদা তাই ওর সাথে ফ্রি হয়ে কথা বলি।।
ইরাঃ আমার তু অন্যকিছু মনে হচ্ছে।।
মিমঃ অন্যকিছু মানে..?
ইরাঃ মনে হচ্ছে তুই ছেলেটার প্রেমে পরে গেছিস তাই এইসব করছিস।।
মিমঃ আরে দুরর ও আমার ২বছরের ছোট আমি কেন ওর প্রেমে পরতে যাব।।
ইরাঃ সেটা সময় হলেই বুঝা যাবে।।
এদিকে আমি ক্লাসে এসে দেখলাম সব হারামি গুলা আগে থেকেই ক্লাসে এসে বসে আছে আর গল্প করছে।। আমিও গিয়ে ওদের পাশে বসে পরলাম আর গল্প করতে লাগলাম।। কিছুক্ষণের মধ্যে স্যার ক্লাসে চলে আসলেন।।
তারপর এক এক করে সব স্যারেরা এসে ক্লাস নিতে লাগলেন।। সব ক্লাস শেষ করে ভার্সিটি ছুটি হয়েগেল।। আমিও বন্ধুদের নিয়ে বাহিরে চলে আসলাম।। এরপর সবাইকে বিদায় জানিয়ে বাসায় চলে আসলাম।।
এইভাবে দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে গেল।। এখন আমরা সব বন্ধুরা মিলে ভার্সিটির একটা গাছের নিচে বসে প্রায়ই আড্ডা দেই।। তু একদিন ভার্সিটিতে গিয়ে আমাদের আড্ডায় বসে ছিলাম কারণ হারামি গুলা একটাও আজ আসেনি।। একা একা বসে আছি এমন সময় একটা মেয়ে এসে আমার সামনে দাড়ালো।।
মেয়েটাঃ হাই আমি তমা তুমি..?
আমিঃ আমি তামিম..?
তমাঃ আচ্ছা আমরা যেহেতু এক ক্লাসেই পড়ি সো ফ্রেন্ড..? (হাত বাড়িয়ে)
আমিঃ সরি আমি পারব না (আসলে আমার মেয়েদেরকে একদমই ভালো লাগে না তাই ওর মুখের উপর না করে দেই)।।
তমাঃ কেন ফ্রেন্ড হলে সমস্যা কি..?
আমিঃ এমনিই আমার ইচ্ছা নেই।।
তমাঃ দেখ আমি তোমার কাছে অনেক আশা নিয়ে এসেছি যে আমরা ফ্রেন্ডশিপ করব।। প্লিজ আমায়
ঠাসস,ঠাসস
কি ভাবছেন কাউকে চড় মারা হয়েছে..? একদম ঠিক কিন্তু সেটা তমাকে মারা হয়েছে।। আর যে মেরেছে সে আর কেউ না মিম আপু।।
মিমঃ এই মেয়ে তোর সমস্যা কি হে..? দেখছিস না ও তোর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে চাচ্ছে না, তারপরও ওকে কেন বিরক্ত করছিস..?
তমাঃ গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে কোনো কথা বলছে না।।
মিমঃ যা এখন এইখান থেকে আর কখনো যেন ওর আশেপাশে না দেখি।।
তমাঃ মাথা নিচু করে চলে গেল।।
মিমঃ আর হে তুই এখন চুপচাপ ক্লাসে যা আর ভুলেও এদিক ওদিক তাকাবি না।। আর কখনো যেন কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে না দেখি যা এখন (ধমক দিয়ে)।।
আমিঃ উনার এরকম রাগি চেহারা দেখে ভয়ে ওইখান থেকে সোজা ক্লাসে চলে আসলাম।।
আল্লাহ কি গুন্ডি মেয়ে এইটা, আজ এই প্রথম আমি মিম আপুর রাগ দেখলাম।। একটা মেয়ের এতো রাগ আসে কত্তে।। কিন্তু একটা কথা ভেবে পাচ্ছি না মিম আপু হঠাৎ এসে তমাকে চড় মারলেন কেন..? আর আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে আসায় তমাকে এতো কথা কেন শুনালেন..? নাহ আর কিছু ভাবতে পারছি না।।
দেখতে দেখতে অনেকটা সময় কেটে গেল, কিছুক্ষণ পর সব হারামি গুলাও ক্লাসে চলে আসলো।। এরপর ওদের সাথে বসে কিছুক্ষণ গল্প করলাম।। কিন্তু ওদের তমার ঘটনাটা জানাই নি নাহলে ওরা কতো কি বলবে।। একটু পর ক্লাসে স্যারও চলে আসলেন আর ক্লাস শুরু করাতে লাগলেন।।
সব ক্লাস শেষ করে বন্ধুদের নিয়ে বাহিরে চলে আসলাম।। বাহিরে এসে দেখি মিম আপু ও উনার বন্ধুরা ওদের আড্ডায় দাড়িয়ে আছেন।। ওইদিকে নজর না দিয়ে আমি আমার বন্ধুদের নিয়ে হাটতে লাগলাম।। যখন ভার্সিটি গেইট পার হতে যাব তখনই পিছন থেকে মিম আপুর ডাক পরল।।
মিমঃ ওই এদিকে আয়।।
আমিঃ জানি না গেলে হবে না তাই বন্ধুদের রেখে উনার কাছে চলে আসলাম।। জি আপু বলুন আমায় কিসের জন্য ডাকছেন..?
মিমঃ দরকার আছে আগে বল তুই কি এখন বাসায় চলে যাবি..?
আমিঃ জি কিন্তু কেন..?
মিমঃ এখন বাসায় যাওয়া লাগবে না আমার সাথে চল।।
আমিঃ কোথায় যাব..?
মিমঃ সেটা গেলেই দেখতে পারবি, এখন কথা না বলে চল।।
তারপর একপ্রকার জোর করেই মিম আপু আমায় উনার গাড়িতে বসিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসলেন।। গাড়ি থেকে নেমে আমার হাত ধরে রেস্টুরেন্টের ভিতরে নিয়ে আসলেন।।
মিমঃ এখন বল কি খাবি..?
আমিঃ আমি কিছু খাব না আপনি খেয়ে নেন আমায় বাসায় যেতে হবে।।
মিমঃ ওই বাড়তি কথা বলিস কেন তোকে যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দে, কি খাবি তারাতাড়ি বল..?
আমিঃ আপনি যা ওয়ার্ডার দিবেন তাই খেয়ে নিব (বুঝেছি এটা না বললে আর উপায় নেই)।।
এরপর মিম আপু একটা ওয়েটারকে ডেকে উনার মন মতোন কিছু খাবার ওয়ার্ডার দিলেন।। কিছুক্ষণের মধ্যে ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে গেল।। ইচ্ছা না থাকা সত্তেও মিম আপুর ভয়ে উনার সাথে খেতেই হলো।।
খেয়ে দেয়ে বিল মিটিয়ে মিম আপু আমার হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে আসলেন।। গাড়িতে এসে আমার বাসার এড্রেস জিজ্ঞেস করলেন, আমিও বাসার এড্রেসটা বলে দিলাম।। এরপর আর কথা না বলে মিম আপু গাড়ি চালিয়ে সোজা আমাদের বাসার কাছে নিয়ে আসলেন।। গাড়ি থেকে নেমে বাসায় ঢুকতে যাব তখনই পিছন থেকে মিম আপু ডাক দিলেন।।
মিমঃ ওই আমি তোকে যেতে বলেছি..?
আমিঃ না মানে সরি, আর কোনো দরকার আছে নাকি..?
মিমঃ শুন, কাল সকালে তারাতাড়ি ভার্সিটিতে আসবি।। আর এসেই আমার সাথে দেখা করবি।। যদি আমার কথার বরখেলাফ হয় তাহলে তোকে মজা বুঝাব।। মনে থাকে যেন, এখন বাসায় যা।।
আমিঃ আচ্ছা।।
তারপর বাসায় ঢুকে সোজা রুমে চলে আসলাম।। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বসে আছি আর ভাবছি হঠাৎ মিম আপু আমায় কাল সকালে উনার সাথে দেখা করতে বললেন কেন..? এইভাবে আজকের ঘটে যাওয়া বিষয় গুলো ভাবছি তখনই আম্মু রুমে আসলেন।।
আম্মুঃ কিরে আজ এতো দেড়ি করে আসলি কেন আর এসে কিছু না খেয়েই রুমে বসে রইলি।।
আমিঃ আসলে আম্মু আমি বাহিরে বন্ধুদের সাথে খেয়ে এসেছি তাই আর খিদে নেই।।
আম্মুঃ ওহ আচ্ছা তাহলে তুই থাক আমি গেলাম।।
এরপর আম্মু চলে গেলেন আর আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে একটু ফেবুতে লগ ইন করলাম।। ফেবুতে ঢুকতেই হারামি গুলা মেসেজ দিয়ে জালাতে শুরু করল।।
মিম আপু তোকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিল, কেন নিয়ে গিয়েছিল ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন করতে লাগলো।। আমিও ওদেরকে বললাম কাল ভার্সিটিতে আসলে সব বলব।।
তারপর আরও কিছুক্ষণ ফেসবুকিং করার পর মোবাইলটা রেখে একটু পড়তে বসলাম।। পড়াশোনা শেষ করে রাতের খাবার খেয়ে আজকের মতো ঘুমিয়ে পরলাম।। কারণ কাল সকালে ভার্সিটিতে গিয়ে মিম আপুর সাথে দেখা করতে হবে।। যদি না যাই তাহলে নিশ্চয় কপালে দুঃখ আছে।। কারণ মিম আপু কেমন মেয়ে তা আমার জানা আছে।।
পরেরদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে হালকা নাস্তা করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়ে পরলাম।। প্রায় কিছুক্ষণ হাটার পর ভার্সিটি এসে পৌছলাম।। কিন্তু ভার্সিটিতে এসে এমন কিছু হবে তা আমি কখনোই আশা করি নি।।
.
.চলবে.....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com