Breaking News

দুলাভাই

আমার একমাত্র ছেলে আমাকে বাবা না ডেকে দুলাভাই ডাকে। সে যখন বাবা ডাক শিখবে তখন আমার চার শালিকা বেড়াতে এসে আমাকে দুলাভাই ডাকতে ডাকতে সেও এখন দুলাভাই ডাকে। বয়স আট হলো, তবুও দুলাভাই ডাক চেঞ্জ হলো না।

কতবার ছেলেটারে বুঝালাম আমি বাবা, দুলাভাই না, কিন্তু সে আমাকে শুধু দুলাভাই ডাকে।
ওইদিন অফিসের বস এলে, আমার কোলে ছেলেটাকে দেখে বলল: কে এটা?
আমি বললাম: এটা আমার ছেলে আরিয়ান। কিন্তু আরিয়ান বলল," এটা আমার দুলাভাই!"
স্যার, আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমার বউ এলে," বললাম, এটা আমার বউ।
আরিয়ান বলল: এটা আমার মা, আর এটা আমার দুলাভাই।
তা শুনে বুকে হাত দিয়ে রাখলেন অফিসের বস। উনি কি ভেবেছেন, আল্লাহই ভালো জানেন।
ছেলেটার বয়স আস্তে আস্তে প্রায় ১০ বছর হয়ে গেল কিন্তু সে আমাকে দুলাভাই ডেকেই চলেছে।
স্কুল রেজাল্টের দিনে গার্ডিয়ান আনতে বলা হয়েছিল।
আমি প্রিন্সিপাল ম্যাডামকে বললাম," আমি আরিয়ানের বাবা।
কিন্তু আরিয়ান বলল," না, উনি আমার দুলাভাই।
" উনি আমাকে বললেন, " লজ্জা লাগে না, শ্যালকের বাবা হতে।
আপনাদের জন্যই আজ দেশের এ অবস্থা।
পরে আমাকে রেজাল্ট রিপোর্ট ছাড়া তাড়িয়ে দিলো।
এমন অপমান জীবনেও পাই নি। কাঁদতে কাঁদতে বাসায় এসেছিলাম।
আরেকবার স্কুলে আরিয়ানের উপস্থিত বক্তৃতা ছিল। বিষয় ছিল, "প্রিয় বাবা।"
কিন্তু আরিয়ানতো বাবা ডাকতে পারে না। তাই সে বাবার, জায়গায় দুলাভাই লাগিয়ে দেয়।
.
আরিয়ান স্টেজে উঠে বলল,
"পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুলাভাই আমার দুলাভাই।
যে আমার মায়ের সাথে রাতে থাকে। এক বিছানায় আমি, মা, আর আমার দুলাভাই থাকি।
আমাকে ও আমার মাকে আমার দুলাভাই খুব ভালোবাসেন।
আমাকে ও আমার মা'কে দুলাভাই রোজ চুমু খান।
আমার কাছে খুব ভালো লাগে।
দুলাভাই আর আমার মায়ের কারণে আমি এ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছি।
আমার মাকে যখন দুলাভাই জড়িয়ে ধরে আমার হিংসা হয়,
তখন দুলাভাইকে বলি আমাকেও জড়িয়ে ধরতে, তিনি ধরেন।
আমার দুলাভাই আমি যেটা চাই সেটায় দেই। আমার মাকেও দেন।
আমার মাকে নিয়ে রাতে দুলাভাই হাত ধরে ছাদে হাঁটাহাঁটি করেন,
কসাথে বৃষ্টিতে ভিজেন এবং একসাথে দুলাভাই আর আমার মা এক বাথরুমে গোসল করেন।
আমার দুলাভাই পৃথিবীর সেরা দুলাভাই। আই লাভ ইউ দুলাভাই।"
তার কথাশুনে স্টেজের সবাই হা করে স্টাচু হয়ে গেছে। আমি বেঞ্চের নিচে লুকায় থাকলাম।
সে থেকে স্কুলে আর যেতে পারি না।
.
একদিন রাস্তায় আরিয়ান আইসক্রিমের জন্য বায়না ধরল। খুব কান্না করছিল,
আশেপাশে দোকান না থাকায় কিনে দিতে পারছিলাম না।
তখন সন্দেহের দৃষ্টিতে এক পুলিশ এসে জিজ্ঞাসা করল, এ ছেলেটা কার?
আমি বললাম আমার।
আবার, কনফার্ম হওয়ার জন্য ছেলেটাকে পুলিশ জিজ্ঞাসা করল,"
বাবা! এটা কি তোমার বাবা?"
আমি আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম।।
যদি দুলাভাই ডাকে, আমার আর রেহায় নেই।
কিন্তু আরিয়ান বলল," না, এটা আমার বাবা না, এটা আমার দুলাভাই।"
আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম। কান্না মাখা কণ্ঠে বললাম,
-- প্লিজ আরিয়ান সত্যি বলো বাবা! (আমি বললাম)
- দুলাভাইকে দুলাভাই বলব না তো কী বলব!
.
পুলিশ বলল," ইদানিং এক ক্রিমিনাল দুলাভাই পরিচয় দিয়ে ছেলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে,
পাচার করা হচ্ছে শ্যালক বানিয়ে। বুঝছি, তুই সে কু-খ্যাত দুলাভাই?"
আমি বললাম," আমি দুলাভাই না, আমি বাবা। আল্লাহর কছম। "
আরিয়ান রেগে বলল: মিথ্যা কেন বলছ, তুমি আমার দুলাভাই।
ঘাড় ধরে আমাকে কু-খ্যাত দুলাভাই ভেবে তারপর হাজতে নেয়া হলো।
আমারে বড় কালো লাঠি দিয়ে পিছে লাল বানিয়ে দিলো হারামজাদারা।
হায়রে ব্যাথা!
পুলিশ দু'ঘন্টা মেরে আরিয়ানকে দেখিয়ে বলল," বল, এটা কে?"
আমি বললাম," এটা আমার ছেলে। "
দিলো আবার দুইঘন্টা মাইর। তারপর, আবার জিজ্ঞাসা করলে আমি বললাম," আমি বাবা না,
আল্লাহর কছম আমি এ পৃথিবীর সবার দুলাভাই! দুলাভাই।"
এবার তা শুনে, এমন মাইর দিলো যে আমি আর সোজা হতে পারছি না।
শেষে বউ আইডিনটিটি রিপোর্ট এনে আমাদের কাবিননামা দেখিয়ে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
ছেলের দুলাভাই ডাকার জন্য আমার জীবন জিন্দেগি শেষ। ওইদিন এক বন্ধু ছেলেকে বলল,"
তুমি কি শাওনের ছেলে? সে বলল, " না! উনি আমার দুলাভাই।
আমার আম্মাকে বিবাহ করেছেন মাত্র।"
বন্ধু বলল," বাঃ শাওন! তুই শালিকাকেও বিবাহ করলি?"
.
কথাটা শুনে আমার বুকে চিনচিন ব্যাথা করছে।
এ ছেলেটাকে নিয়ে ভুলেও আমি বাইরে যাই না।
বাইরে গেলেও সবাইকে আমার শ্যালকের পরিচয় দিতে হয়।
শেষমেশ বাংলা স্যার রাখলাম তার দুলাভাই ডাক চেঞ্জ করার জন্য।
বাংলা স্যার, আমাকে আর আমার ছেলেকে পাশে বসিয়ে পড়াতে লাগলেন,"
শাওন, তোমার বাবা! দুলাভাই না। " কিন্তু আরিয়ান পড়ছে," শাওন আমার বাবা না, দুলাভাই।"
স্যার বলেন," বাবা দুলাভাই না, দুলাভাই বাবা না!
ছেলে পড়ছে," বাবা দুলাভাই, দুলাভাই ই বাবা।"
-- শাওন তোমার বাবা, বাবা, বাবা।
-- শাওন আমার দুলাভাই, দুলাভাই, দুলাভাই।
মেজাজ আমার এতই বিগড়ে গেল যে নিজের মাথার চুল ছিড়ে বেল মাথা হয়ে গেলাম।
দুলাভাই ডাক শুনতে শুনতে দুঃখে মদ খাওয়া ধরলাম।
সবাই আমার দুঃখ দেখে, ঘরের সবাই এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো।
সবাই আমাকে বাবা ডাকবে, যাতে আরিয়ান শিখে।
বউ আমাকে বললঃ বাবা, আমাকে এ মাসের টাকাটা দাও নি যে?
.
শালিকা আমাকে বলল," শাওন বাবা, আমাকে ইদের সালামি দাও।
দারোয়ান চাচা বলল," আব্বা, আমার কিছুদিন ছুটি দরকার।"
কাজের বুয়া রমিজা খালা বললেন," বাবা, আপনার ময়লা কাপড়গুলা দেন, ধুয়ে দেই।"
পাশের বাসার ভাবী এসে বলল," আব্বু, দুইটা ডিম হবে?
আমার বেস্টফ্রেন্ড "সম্রাট"এলে সেও আমাকে ডাক দিলো: বাবা, বাইরে আয় তো।
তখন আমি আর আমার আব্বা বাইরে আসি।
সে বলল," আংকেল আপনি না, শাওন বাবার কথা বলছি।
তাদের বাবা ডাক শুনতে শুনতে কেউ আমাকে আমার নাম জিজ্ঞাসা করলে, আমি বলি:
আমার নাম আজিজুল হক শাওন বাবা।
কিন্তু তবুও আরিয়ান আমাকে দুলাভাই ডেকেই চলেছে।
শেষমেশ বড় এক ডাক্তার কাছে গেলাম, আরিয়ানের দুলাভাই ডাক চেঞ্জ করার জন্য।
তিনি অনেকগুলো ব্লাড টেস্ট,
ম্যালেরিয়া টেস্ট, ডায়বেটিস ও হিমোগ্লোবিন টেস্ট আরিয়ানকে করাতে বললেন।
করালাম।
অনেকদিন চিকিৎসার পরে সে আস্তে আস্তে ভালো হয়ে গেল। একদিন সে ডেকে বলল, "
তুমি আমার দুলাভাই না।"
.
আমি খুশিতে কান্না করে দিলাম। ম্যাজিক ওয়ার্ডটি শুনতে আমার কান ঝালাপালা করছে।
কিন্তু সে আমাকে বলে কি-না," তুমি আমার খালা।
তা শুনে, আমি ওমাগো বলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কোমায় চলে গেলাম।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com