Breaking News

জ্বীনের প্রেম । পর্ব -১০

তারপরেই মৃত্যু, কি যন্ত্রণার মৃত্যু। শুভ্র আমাকে বুকে নিয়ে চিৎকার করে কাঁদছে।

আমি প্রত্যেকটা ঘটনা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। ঠিক তখনই কারো কথার আওয়াজ শুনতে পেলাম।

আমাকে শুভ্র টান দিয়ে কূপের অন্য পাশে নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে পরলো।

এই লোক গুলো সম্ভবত পাহারাদার ছিল।

পাহারাদাররা ঘুরে ফিরে আবার নিজের জায়গায় গিয়ে বসলো।

আমাকে শুভ্র জঙ্গলের মধ্য দিয়ে রাজ্যের সিমানার বাইরে নিয়ে আসলো।

যা করতে হবে এখান থেকেই করতে হবে আমাদের। শত্রুপক্ষ টের পেয়ে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো হুযুরকে খুঁজে বের করা।
তিনি নিশ্চয়ই আমাকে দেখে খুব খুশি হবেন। তিনি এখনো জেলে নাকি বুঝলাম না।
আশ্চর্য এই ভাবনা গুলো তো শুভ্রের ভাবার কথা, আমি ভাবছি কি করে?
"তুমি সবসময় আমার থেকে জিনিয়াস ছিলে জ্বীনকন্যা।
আমার কপালের ভাগ্য তোমাকে পেয়েছি বুঝলে?
তোমার আগের জিনিয়াস ভাবটা এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
কতো দিন পরে বেচারা গুলো বাইরের হাওয়া খেলো বুঝতে পারছো তুমি?"
বলেই শুভ্র ভুবন ভোলানো একটা হাসি দিলো।
এই হাসিটা আমার খুব চেনা, কত দিন কত রাত এই হাসির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।
শুভ্র যখন একটা জিনিস একেবারে নিজের করে পেয়ে যায় তখন এমন হাসি দেয়।
আজও দিচ্ছে, কেনো দিচ্ছে বলতে পারছি না।
শুভ্র চিন্তিত মুখে আমাকে বললেন "জ্বীনকন্যা তুমি তো অনেক কিছুই পারো,
তুমি মন্ত্রবলে একবার হুযুরকে নিয়ে এসো তো।
তুমি পারবে, একবারের জন্য হলেও হুযুরকে আনতে হবে।"
আমি মুখটা ছোট করে বললাম "আমি ঠিক পারবো তো?"
শুভ্র আমাকে আশ্বাস দিয়ে বললেন "অবশ্যই পারবে জ্বীনকন্যা, ভরসা রাখো মনে জোর রাখো।"
আমি আগের শক্তি গুলো মনে করে ঠিক তেমন ভাবেই শক্তি প্রয়োগ করলাম।
সাথে সাথেই হুযুর হাজির হলো সামনে। আমাকে দেখে একবার শুভ্রের দিকে তাকালো।
শুভ্র মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতেই হুযুর আমার মাথায় হাত রাখলো।
.
আমি সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করলাম। আমি হুযুরের কাছে কৃতজ্ঞ,
অনেক করেছে আমার জন্য। এদের স্বপ্ন আমাকে পূরন করতেই হবে।
হুযুর আমাদের দুজনকে দুটো পোশাক এবং দুটো তরবারী দিলেন।
এইগুলো সবই যাদুর, শত্রুপক্ষরা খুবই শক্তিশালী তাই এই ব্যবস্থা।
এই পোশাকের জন্য প্রথমবার শরীরে আঘাত লাগলে কিছু হবে না।
কিন্তু পরের বার কাজ করবে না, একবার ব্যবহার করার জন্যই এটা দেওয়া হয়েছে।
হুযুর চলে যেতেই, হঠাৎ শুভ্রের মুখের ভাব-গতি পরিবর্তন হয়ে গেলো।
বারকয়েক ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নিয়ে চিন্তিত মুখে বললেন "জ্বীনকন্যা আমি একবার তোমাকে হারিয়েছি
কিন্তু এবার হারাতে পারব না। চলো আমরা অন্য কোথাও চলে যাই।
মানুষের মতো জীবন যাপন করি।"
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম "কেনো এমন হবে কেনো?
আর আমাদের নিজের কথা ভাবলেই তো চলবে না,
আমাদের রাজ্যের সবার কথাই ভাবতে হবে।
আপনাকে যারা এতোটা বছর কষ্ট দিয়েছে তাদের শাস্তি দিতে হবে।"
.
"আহা তুমি বুঝতে পারছ না, ওরা অনেক শক্তিশালী। ওরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।"
বলেই শুভ্র দু হাত দিয়ে চুল গুলো উপরের দিকে ঠেলে দিলো।
আমি অভয় দিয়ে বললাম "কিচ্ছু হবে না, আমার উপর ভরসা রাখুন।"
-জ্বীনকন্যা তুমি সবার থেকে আলাদা কেনো যানো? কারন তুমি স্পেশাল,
তুমি ভবিষ্যতের জ্বীনদের রানী হবে।
দেখো আমাদের সবার চোখের রং বাদামী, শুধু তোমারটা নীল।
আমাদের সবার চুলে বাদামী রংয়ের আভাস আছে। তোমার চুলে আছে নীলচে আভাস।
আমার নীলাদ্রি জ্বীনকন্যা, তুমি আমার জ্বী-নীলাদ্রি।
একমাত্র তুমিই এদের ধ্বংস করতে পারবে, এটাই লেখা আছে।
ওর কথা শুনে আমি হো হো করে হেসে দিলাম,
আমার হাতের আঙুল গুলো ওর চুলের মধ্যে ছড়িয়ে দিলাম "তুমি পারোও বটে?
কি অদ্ভুত নাম দিলে বৈকি। কোনো প্রেমিক তার প্রেমিকার এমন উদ্ভট নাম দিতপ পারে?
তুমি তো বিশ্ব প্রেমিকের খাতায় নাম লেখাবে দেখছি।"
ও হেসে ভ্রু কুঁচকে বুকে হাত দিয়ে ঢলে পড়ে বললো
"এমন ভাবে বলো জ্বী-নীলাদ্রী, তুমি বলো তো এই নামটা সুন্দর নাকি নীকন্যা নামটা সুন্দর?"
আমি আবারও হেসে দিলাম বললাম "তোমার যেটা মন চায় বিশ্বপ্রেমিক, তুমি যদি মানুষ হতে না?
তবে ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তোমার নাম আমি রাখতামই।
ইসসস সব মেয়েরা আমার প্রেমিকের দিকে তাকিয়ে ক্রাশ খেয়ে উপচে পড়ছে
আর আমি সেই মেয়েদের সাথে আমার বিশ্বপ্রেমিককে নিয়ে ঝগড়া করি।
বিষয়টা ইন্টারেস্টিং না বলো?"
শুভ্র ভাবার চেষ্টা করে বললো "
ভেবে দেখতে হবে, তবে তুমি যদি ঝগড়া করতে তবে তোমার নাম অবশ্য এমন থাকতো না ,
তোমার নাম হতো ঝ-রানী, মানে ঝগড়ার রানী। আরে এতো এতো মেয়েরা
আমাকে দেখে ক্রাশ খাবে, বিষয়টা হবে প্রাউডের। আর তুমি বলছো ঝগড়া করবে?
এই জন্যই আগে বিয়ে করতে নেই, ক্রাশ- ব্রাশ খাওয়ার বয়স শেষ হয়ে যাবে
তারপর বিয়ে করতে হয়।"
"আরে বাহ্ তুমি তো দারুণ কথা শিখেছো দেখছি, আমার খুব হাসি পাচ্ছে।
তোমাকে দেখে ক্রাশ খাবে? হাউ ইস ইট পসিবল?
তোমার কপালে আমি ছাড়া কোনো মেয়ে জুটবে নাকি? আমার এমন হাসি পাচ্ছে বুঝলে?
মানে ফিলিং হেসে কুটি কুটি" বলেই আবারও হাসতে লাগলাম আমি।
শুভ্র বুকে হাত দিয়ে আবারও ঢলে পরলো বললো "হয়েছে হয়েছে অনেক কথা হয়েছে,
এভাবে প্রেম করলে হবে? চলো রুপ বদলাও, ভেতরে ঢুকতে হবে।
আমি বলবো তুমি আমার খালাতো বোন, আমি আমার রুপেই যাবো।
তুমি ঘোমটা দিয়ে রাখবে, খুলবে না। খুললেও চোখ বন্ধ করে রাখবে,
নইলে নীল চোখ দেখেই ওরা টের পেয়ে যাবে বুঝলে?"
আমি দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললাম "কি বলছো প্রেম করতে পারব না?
আরে যুদ্ধে প্রেম বিরহ সব থাকতে হয়, তুমি বইতে পড়োনি?
কোনো কালে একা হয়নি ক' জয়ী পুরুষের তরবারী,
চেতনা দিয়েছে শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষ্মী নারী।"
শুভ্র খিলখিল করে হেসে বললো "তুমি? তুমি আমাকে চেতনা দিচ্ছো? আই মিন শক্তি দিচ্ছো?
আমাকে অপমান করে, আমাকে মজা করে চেতনা দিচ্ছো, লাইফ ইস গুটগুইট্টা আন্দার।"
আমি রেগে কোমড়ে হাত দিতেই শুভ্র কান ধরে বললো "সরি সরি নীকন্যা, এবার চলো।"
আমি রুপ বদলে সাদা মাটা একটা সুতির শাড়ি পরে নিলাম।
রাজ্যের মেইন গেটে গিয়ে দাড়াতেই দুজন পাহারাদার আসলো।
ওরা দুজন শুভ্রের সাথে আলাদা কিছু কথা বলে আমাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো।
ভেতরে পা রাখতেই আমার চোখ দুটো জ্বলে উঠলো,
সাথে নীলচে চুল গুলো আলো ছড়াতে লাগলো।
আমি শুভ্রকে এক হাত দিয়ে খামচে ধরলাম, অন্য হাত দিয়ে ঘোমটা।

শুভ্র আমাকে ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো, একটা ছোট্ট টিনের ঘরে থাকার জায়গা করলাম আমরা।
আমাদের প্ল্যান হলো, কোথায় কতোজন সৈন্য আছে,
ওদের কি কি শক্তির উৎস আছে সেটা জানা এবং আস্তে আস্তে ওদের সৈন্যদের শেষ করে দেওয়া।
সকাল আটটা বাজে, ক্ষুধায় পেট চো চো করছে।
এই রাজ্যের বর্তমান রাজা খবর পেয়ে গেছেন রাজ্যে
নতুন মানুষ ঢুকেছে তাই তিনি রাজ্য ভ্রমনে বেরিয়েছেন আমাকে দেখতে।
সাথে সাঙ্গ পাঙ্গ তো আছেই, আছে কিছু বখাটে মেয়ে।
শুভ্র জানতো এমনই হবে তাই আগে ভাগেই পাশের রুমে গিয়ে বসে রইলো
আর আমি শুভ্রের পাশের রুমে। টিনের ঘরটাতে দুটো রুম থাকায় বেশ সুবিধাই হয়েছে।
এখন অপেক্ষা শুধু রাজার আগমনের।
রাজা এসে আমাদের ঘরের সামনে তার ঘোড়া থামিয়ে দিয়েছে,
পাশ থেকে একজন হাক ডেকে শুভ্রকে ডাক দিলো।
শুভ দরজা খুলে বেরিয়ে রাজাকে সালাম দিলো, রাজা অবশ্য সালাম নিলেন না।
কারন তারা শয়তানকে পূজা করেন। রাজা তাড়াহুড়ো করে আমাকে বের করতে বললেন।
শুভ্র আমাকে ডাক দিলো, "নীকন্যা একবার দরজা খুলে এদিকে আসো তো।
" আমি একটু দেরি করেই বের হলাম। রাজা আমাকে ধমক দিয়ে বললো
"এই মেয়ে এতো দেরি হলো কেনো? দেখি ঘোমটা সরাও মুখ দেখবো!
" শুভ্র বললো "মহারাজ ঘোমটা না সরালে হয় না?" রাজা আবারও শুভ্রকে ধমক দিয়ে বললো
"তুমি চুপ করো, আমাকে দেখতে হবে। এই মেয়ে সরাও গোমটা সরাও। "
আমি তৎক্ষনাৎ রুপ বদলে একটা কালো মেয়ের বেশ ধরে নিচের দিকে
তাকিয়ে রইলাম যাতে চোখ দেখতে না পারে। রাজা আমাকে দেখে বললো
"আচ্ছা ঠিক আছে থাকো, তবে এখন থেকে শয়তানের পূজা করবে।
আমি প্রতিদিন লোক পাঠিয়ে খবর নিবো।"
.
পাশ থেকে একজন মেয়ে বললো "হুযুর আপনি যদি অনুমতি দেন তবে আমি এদের পাহারা দিতে পারি।
সারাদিন পাহারা দিবো আর রাতে চলে যাবো।" রাজা মত দিলেন।
মেয়েটা কেনো এখানে থাকতে চাইলো বুঝলাম না। মেয়েটা অসম্ভব সুন্দরী,
যে কোনো ছেলে দেখলেই মুহুর্তেই প্রেমে পরে যাবে।
রাজা চলে গেলেন, থেকে গেলো মেয়েটি। মেয়েটি গিয়ে শুভ্রর সাথে হেলেদুলে কথা বলছে।
মেয়েটির নাম মায়া, ইয়া বড় বড় চুল,তবে আমার থেকে ছোট।
শুভ্রও দেখছি হেসে হেসেই কথা বলছে, আমি রুমে ঠাস করে দরজা আটকে দিলাম।
এজন্যই কোন মহাপুরুষ বলেছিলেন, পুরুষদের বিশ্বাস নেই।
কোন মহাপুরুষ বলেছে না কে বলেছে জানিনা। তবে কথাটা ১০০% সত্যি।
.
চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com