বৌ এর ভালোবাসা । পর্ব -০৩
বাসার ভেতরে গিয়ে তো আমি অবাক, কারণ আমি যাওয়া মাত্রই আমার শ্যালিকারা ঘিরে ধরল ।
একটা আর দুইটা নয় পুরো এক হালি । (অবশ্য এগুলো আমার শ্বাশুরির না।মৌ এর কাজিন হয়)
তো আমি বসে পড়লাম আড্ডা দিতে ।
ওদের সাথে যখন আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন খেয়াল করে দেখলাম মৌ আমার দিকে হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে ।হয় তো ওদের সাথে কথা বলা দেখে জ্বলছে ।কিন্তু কিছু বলতে পারছে না ।
—–একটু পর আমাদের কাছে মৌ আসলো ।
মৌ:- আপনার আড্ডা দেওয়া হলে খেতে আসেন ।
।।।আর তদের খেয়ে কোন কাজ নেই, মানুষ টা আসছে একটু রেস্ট নিতে দিবি তি নয় এখানে বসে বসে ঢং করছে (মৌ বললো তার কাজিনদের উদ্দেশ করে)
আমি:- আহ্ মৌ ওদের সাথে এমন করছো কেন ।
মৌ :- আপনি চুপ করোন।
কাজিন:- আপু এমন করছো কেন, আমাদের জিজু কত্ত ভালো আর তুমি শুধু বকা দাও।
—-তারপর ওরা চলে গেলো—-
.
আমিও খাওয়া দাওয়া করে বসে আছি ।ওরা চলে যাওয়াতে একদম একা হয়ে গেছি।
কিন্তু না একটু পর দেখি শয়তানের দল সবগুলো হাজির ।রাত দশটা পর্যন্ত আড্ডা দিলাম ।মৌ আমাদের 3 বার দেখে গেছে, কিছু বলেনি ।
তারপর রাতে খাওয়া দাওয়া করে সেদিনের মতো ঘুমিয়ে পড়ি ।
সকালে নাস্তা করে আমাদের বাসার উদ্দেশে রওনা দেই ।
মাঝ পথে দিনা কে দেখলাম অন্য এক ছেলের সাথে রিকশায় করে যাচ্ছে ।
তাই মৌ কে বললাম
আমি:- মৌ কিছু শপিং করবে।
মৌ:- না আমার কিছু কেনার নেই ।আপনি নিলে নিতে পারেন।
আমি:- ওকে চলো মার্কেটের দিকে যাই।
তারপর মৌ কে সাথে নিয়ে মার্কেটে এসে বললাম
আমি:- মৌ তুমি কেনা কাটা করো আমি একটু আসছি ।
মৌ:- হুম জলদি আইসেন ।
আমি মৌ কে রেখে একটু দূরে সরে দিনা কে কল দিলাম।দুই বার দেওর পর দিনা কল ধরল ।
দিনা:- হ্যালো বাবু কেমন আছো।
.
আমি:- হ্যালো দিনা কল কেন ধরছিলেনা ।হে আমি ভালো, তুমি এখন কোথায় ।
দিনা:- কেন বাবু আমি তো এখন বাসায় আর ওয়াসরোম ছিলাম ।
আমি:- কিন্তু আমি তো দেখলাম তুমি একটা ছেলের সাথে রিকশায় ।
দিনা:- ককই বাবু না তো, মা মানে ওটা তো আমার কাজিন ছিল ।
আমি:- ওহ্, কিন্তু তোমার কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন ।কি হয়েছে তোমার ।
দিনা:- ককই না তো কিছু হয় নি ।আচ্ছা বাবু এখন রাখি বাবা আসছে। বাই
দিনা কল কেটে দিল,আমি আর মেয়েটা কে নিয়ে কি সব ভাবছিলাম ।
তারপর মৌ এর কাছে গিয়ে দেখি মৌ কিছু একটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
আমি:- কি কি কিনলে মৌ ।
মৌ:- আপনার জন্য পাঞ্জাবি ,পায়জামা আর দুইটা টিশাট।
আমি:- আর তোমার জন্য ।
মৌ:- আমার লাগবে না,তারাতারি চলুন তো।
আমি :- মৌ একটু ধারাও আমি এখুনি আসছি ।
মৌ:- হুম জলদি আইসেন ।
আমি আর কিছু না বলে লেডি মলে চলে গেলাম ।
মৌ এর জন্য কালো রঙের একটি শাড়ি আর শাড়ির সাথে যা যা লাগে সব নিয়ে মৌ এর কাছে আসলাম ।
এসে দেখি মৌ মুখ গুমরাহ করে বসে আছে ।
আমি:- কি হয়েছে মৌ এভাবে মন খারাপ করে বসে আছো কেন ।
মৌ:- আপনার এখন আসার সময় হলো,
আমি সেই কখন থেকে একা একা বসে আছি, আমি যদি হারিয়ে যেতাম ।
আমি:- আরে তুমি হারাবে কেন, তুমি কি পিচ্চি নাকি ।
মৌ:- যদি কেউ জোর করে নিয়ে যেত ।
আমি:- আমার বৌ কে ,কে নিয়ে যাবে হুম ।
.
মৌ তো রীতিমতো অবাক আর খুশিও হচ্ছে Arean তাঁকে আজ বৌ বলেছে।
আর মনে মনে ভাবছে মিস্টার Arean Khan তুমি তো আমাকে বৌ হিসেবে মানবে।
just একটু সময়ের ব্যাপার ।
আমি:- আআসলে মৌ কে নিতে পারবে না ।
মৌ:- হুম আমি বুঝতে পারছি । আর চলেন দেরী হয়ে যাচ্ছে ।
আমি:- হুম । আগে চলো রেস্টুরেন্ট কিছু খেয়ে আসি ।
মৌ:- না তাহলে চলুন ফুচকা খাবো
আমি:- ওকে চলেন ।
আমি তো মৌ এর আচরণ দেখে মুগ্ধ হচ্ছি ।মেয়ে টা কত সহজ সরল ।
অন্য কোন মেয়ে হলে দামি রেস্টুরেন্ট ছাড়া খেতেই চাইতো না।
তারপর মৌ কে সাথে নিয়ে ফুচকার দোকানে গেলাম।
আমি:- মামা এক প্লেট ফুচকা দেন তো ঝাল কম দিয়ে ।
দোকানি মামা:- আচ্ছা মামা বহেন।
.
মৌ:- না না মামা ঝাল বেশি করে দুই প্লেট দেন।
আমি:- কি ঝাল বেশি ।আর দুই প্লেট কার জন্য ।
মৌ:- কেন একটা আপনার আর একটা আমার ।
আমি:- এই না না আমি ফুচকা খাই না।
মৌ:- ওকে আমিই দুই প্লেট খাবো ।
আমি:-
মৌ:- অবাক হবার কিছু নেই আমি একাই পাঁচ প্লেট খেতে পারি।
আমি:- একাই
মৌ:- হুম
তারপর ফুচকাওলা মামা ফুচকা দিয়ে গেল
মৌ:- নিন হা করেন ।
আমি:- না না তুমি খাও।
মৌ:- আপনি হা করুন তো।
আমি বাধ্য হয়ে মৌ এর হাতের ফুচকা খেয়ে নিলাম ।
তারপর আরো অনেক ঘোরাঘুরি করে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল ।
বাসায় এসে রাতের খাবার খেয়ে মৌ আর আমি শুয়ে পড়লাম।
মধ্যে খানে দুই দেশের বর্ডার । মানে কোল বালিশ । অবশ্য বালিশটা আমিই দিয়েছি।
তারপর দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লাম ।
মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।মনে হচ্ছে আমার বুকের উপর আঁটার বস্তা।
মোবাইলের আলোতে দেখি মৌ আমার বুকের উপর শুয়ে আছে ।
একি আমার বর্ডার কই গেল ।
মেয়েটা যে কি করে না।
.
মৌ কে ওর বালিশে রেখে আমি শুতেই মৌ এসে আমায় জড়িয়ে ধরল ।
হালকা আলোতে তাকিয়ে দেখি মৌ কে বড্ড বেশি মায়াবী লাগছে ।
মৌ মেয়েট দেখতে অনেক সুন্দরী। দিনার মতো মডার্ন না,কিন্তু আমার মনের মতো ।
আমি মৌ এর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়েতেই মৌ আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ।
আমিও মৌ কে জড়িয়ে ধরেই আবার ঘুমিয়ে পড়ি ।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি- মৌ মিট মিট করে হাসছে ।
আমি:- কি ব্যাপার পাগলের মতো এভাবে একা একা হাসছো কেন ।
মৌ:- কিহ্ আমি পাগল ।
আমি:- sorry sorry পাগল না পাগলী ।
মৌ:- আপনি কিন্তু সকল সকল আমাকে অপমান করছেন ।
আমি,:- যা সত্যি তাই বলছি ।
মৌ:- একে তো নিজে অপরাধ করেছে আবার বড় বড় কথা বলছে ।
আমি:- আমি আবার কি অপরাধ করলাম ।
মৌ:- কি করছেন জানেন না ।
এই যে বর্ডার ক্রসিং করে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছেন ।
বলি আপনার জায়গায় কি হিসু করেছেন
.
আমি:- এই যে ম্যাডাম কে হিসু হা ,আর কে কার জায়গায় একটু ভালো করে দেখুন তো।
——–তারপর মৌ ভালো করে দেখলো
মৌ:- (ঠিকিত ওনি তো ওনার জায়গাতেই আছেন তাহলে আমিই )
তারপর মৌ আর কিছু না বলে তারাতারি করে ওয়াসরোমে চলে গেলো ।হয় তো লজ্জা পেয়েছে।
আর আমিও লক্ষি ছেলের মতো ঘুমিয়ে পড়লাম ।
কারণ আজকে আবার চলে যেতে হবে । বুঝলেন না তো কই যেতে হবে, বলছি!
আমি যেখানে জব করি সেই অফিস টা আমাদের বাসা থেকে অনেক দূরে তাই আলাদা ফ্ল্যাটে থাকতে হয় ।
ভাবছি মৌ কেও সাথে নিয়ে যাবো তাহলে আর বাহিরের খাবার খেতে হবে না ।
যেই ভাবা সেই কাজ, অর্ধ দিন এভাবে পার করে বিকেলের দিকে মা-বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি আলাদা ফ্ল্যাটে।
বাসায় আসার পর মৌ বললো ।
মৌ:- বাসায় তো রান্নার জিনিস বলতে কিচ্ছু নেই , এতো দিন খেয়েছেন কী?
আমি:- কেন হোটেলে ।
মৌ:- বুঝতে পারছি ,এখনি বাজারে জান রান্নার সকল জিনিস পত্র এবং সবজি নিয়ে আসেন
আমি:- আচ্ছা তুমি এক কাজ করো,কি কি বাজার লাগবে তার একটা লিস্ট দাও।
মৌ:- আচ্ছা আপনি একটু ধারন আমি লিখে দিচ্ছি
আমি:- হুম ।
তারপর মৌ লিস্ট দিলে বাজারের দিকে রওনা দিলাম ।
কিছু দূর যাওয়ার পর যা দেখলাম তাতে আমি অবাক হয়ে গেলাম, দেখি দিনা
কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না ।
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com