Breaking News

আড়ালে সত্যটা । পর্ব - ০৯

 


এদিকে রাজকে নিয়ে নয়নতারা গলীর মুখে টিনের ছাউনি দেওয়া একটা বাড়িতে ঢুকল।

- অধরা ড্রাইভারকে গাড়ি ঘুরিয়ে বাসায় নিতে বললো।
বাসায় এসেই ফ্রেশ হয়ে রাফিয়াকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে রাজের ছবিটা বুকে নিয়ে হাও মাউ করে কাঁদতে লাগল।
- এমন সময় কলিং বেলটা বেজে উঠল!অধরা কলিং বেলটা খুলেই চমকে গেল! মিঃ নিয়ান এখানে?
- নিয়ান অধরাকে দেখে মুচকি হেসে বললো,' কেন আসতে পারি না আমি?''
- আপনার সাথে আমার ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাট কিছু না জানিয়ে হঠাৎ বাসায়?
- ভয় পাবেন না। আজ ভালোবাসা চাইবো না। আমাদের বাসায় সন্ধ্যায় পার্টি আছে আমার ছোট বোনের বাগদান অনুষ্টান উপলক্ষে আসা করি আসবেন।
- আচ্ছা চেষ্টা করবো।
- চেষ্টা করলে হবে না। আপনি আমার স্পেশাল গেস্ট। আপনাকে যে আসতেই হবে।
- মিঃ নিয়ান আপনি মরিচীকার পিছনে ঘুরছেন। যেটা শুধু আপনাকে কষ্টই দিবে।
- আমার কষ্টের কথা আপনাকে ভাবতে হবে না।
কষ্ট করে আইসেন তাহলেই হবে। আর রাফিয়া কোথায় ওকে তো দেখছি না?
- রাফিয়া ঘুমাচ্ছে স্কুল থেকে এসে।
.
- ওহ্ আচ্ছা আমি তাহলে আসি পড়ে কথা হবে।
- নিয়ান চলে যেতেই অধরা আবারো তার রুমে চলে গেল।
রাফিয়া এখনো ঘুমিয়ে আছে। আর রাফিয়ার বুকে রাজের ছবি।
- অধরার অজান্তেই তার চোখের জল টুপ করে গড়িয়ে পড়ল।
অধরা রাফিয়ার কপালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে কাদঁতে লাগল।
অধরার কান্না শব্দে রাফিয়ার ঘুম ভেঙে যায়।
মাকে কান্না করতে দেখে রাফিয়া বলে, 'মম তুমি কাঁদছিলে কেন?
কি হয়েছে মম? আচ্ছা মম আমার বাবাই কবে আসবে বিদেশ থেকে?
আজকে রাস্তায় যে আঙ্কেলটাকে দেখলাম। আঙ্কেলটাকে দেখতে ঠিক আমার বাবাই এর মতো।
আচ্ছা মম শুনেছি বিদেশ গেলে কথা বলা যায়।
নানু ভাই এর সাথে আমার তো প্রায়ই কথা হয়। বাবার সাথে কেন হয় না?
.
- জানো মম আমার না অনেক কষ্ট হয় বাবাই এর জন্য।
সবার বাবাই আছে শুধু আমার বাবাই নেই।
স্কুলে আমার সব বান্ধবীরা বাবাইকে নিয়ে অনেক গল্প করে।
তাদের বাবাই কুলে নিয়ে আদর করে। খাইয়ে দেয় বেড়াতে নিয়ে যায়।
আর আমার বাবাই পচা বাবাই। আমাকে আদর করতে আসে না।
আমার সাথে কথা বলে না। তাই না মা?
- অধরা রাফিয়াকে কি বলবে বুঝতে পারছে না।
ছোট্ট মেয়েকে কিভাবে মিথ্যা বলবে? সত্যিটা কি বলে দিবে?
সবকিছু ভেবে অধরা মনে মনে স্থির করলো রাফিয়াকে সব বলে দিবে।
তাই রাফিয়াকে বুকের মধ্যে নিয়ে বলল,' মারে তোকে একটা কথা বলি?
- হ্যাঁ বলো।
- আজ সকালে যে লোকটাকে দেখলি মা। সেই লোকটাই তোর বাবাই।
- সত্যি! মম? চলো না বাবাইকে বাসায় নিয়ে আসি। বাবাই এর খুব কষ্ট হয়।
আমার বাবাই হাটতে পারে না। চলো না মম বাবাইকে নিয়ে আসি বাসায়?
- না মা আমাকে প্রমিজ কর আমি যখন বলবো তোর বাবাইকে বাবাই বলে ডাকতে তখন ডাকবি?
- আচ্ছা মম প্রমিজ তুমি বললো বাবাইকে বাবাই বলে ডাকবো।
- এইতো আমার লক্ষী মামনি।
অধরা রাফিয়াকে বুকের মধ্যে নিয়ে গালিমুখে চুমু দিয়ে বললো
মামনি তুমি বাসায় তোমার স্নেহা আন্টির সাথে খেলা করো আমার একটু বাহিরেরে যেতে হবে কাজ আছে।
- আচ্ছা মামনি।
- এদিকে রাজ বিছানায় শুয়ে আছে মাথাটা এখনো ব্যথা করছে।
নয়নতারা রাজের মাথায় হাত ভুলাতে ভুলাতে বললো,'
ভাইয়া তুমি রাস্তায় আপুটাকে সবকিছু বললে না কেন? ''আর আপুটাই বা কে?
- আপুটার নাম অধরা। আমার স্ত্রী ছিলো।
- কি বলছো ভাইয়া এসব?
.
- হ্যাঁ সত্যি। আমি আর তিশা আমেরিকায় থাকতে বিয়ে করি।
আর অধরা ছিলো তিশার সৎ বোন। তিশা তার বাবার সমস্ত সম্পত্তির জন্য অধরাকে বিয়ে করতে বলে।
এবং তার কথা মতো অধরার সাথে রাত কাটাই যেটা অধরা স্বপ্ন মনে করেছিল।
আর সেই জন্য অধরা অন্তঃসত্ত্বাও হয়। জানিস নয়ন অধরা আমাকে অনেক ভালোবাসতো।
কিন্তু আমি ভালোবাসার বিনিময়ে তার গায়ে কলঙ্কের কালি আর কষ্টই দিয়েছি।
নিরাপরাধ, সতি একটা মেয়েকে কলঙ্কিনী বানিয়েছি।
জানিস বোন সত্যি আমি অধরাকে এখন অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।
তিশা অামার ভালো লাগা ছিল। আমি ভালোবাসা শিখেছি অধরার কাছ থেকে।
তুই অধরাকে সব বলতে বললি না? আমি কিভাবে বলবো?
অধরা যে অন্য জনের। অন্য জনের ঘরের রানী।
আর আমি চাই না অধরা আমাকে করোনা করুক।
.
আমি না হয় নিরবেই ভালোবেসে যায়।
আর আমার এখন যে অবস্থা এজন্য আমি মোটেও আফসোস করিনা।
আমি আমার পাপের ফল ভুগ করছি।
আমার আরো কষ্ট হওয়া দরকার আমি যে অধরার অবুঝ মন নিয়ে খেলা করছি।
আমি যে তার চোখে অশ্রু ঝরিয়েছি। জানিস নয়ন আমার অধরা আমার পা পর্যন্তও ধরেছিল।
একটু আশ্রয়ের জন্য। আমি দেয়নি। আমার সাথে ঠিকই হয়েছে।
যতদিন বাঁচবো ততদিন আল্লাহর কাছে একটা প্রার্থনাই করবো অধরা যার বুকেই থাকুক না
কেন সে যেন ভালো থাকে। কথাগুলো বলতে বলতে রাজ ঘুমিয়ে গেলে,
নয়নতারা রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় বের হতেই দেখলো একটা গাড়ি তার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো।
গাড়ি দেখে যতটা না বিস্মিত হয়েছে তারচেয়ে বেশি বিস্মিত হয়েছে গাড়ি থেকে অধরাকে বের হতে দেখে। অধরা গাড়ি থেকে বের হয়েই ইশারাই নয়নতারাকে ডাক দেয়।
.
- নয়নতারা অধরার কাছে যেতেই অধরা বললো গাড়িতে উঠো।
-নয়নতারা গাড়িতে উঠলে, অধরা নয়নতারাকে নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে বসে।
খাবার অর্ডার দিয়ে বলে, ' বোন তোমাকে একটা কথা বলি?''
- হ্যাঁ ম্যাডাম বলেন? আর এটাও বলেও কেন আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন?
- আমাকে ম্যাডাম ডেকো না। আপু বা বোন ডেকো তাহলেই হবে।
আর হ্যাঁ রাজ তোমার কি হয়?
- আমার ভাই হয়।
- ওহ্ তোমার সাথে কিছু কথা বলি এসব কথা তুমি আর কাউকে বলতে পারবে না।
প্রমিজ করো আমার কাছে।
- আচ্ছা আপু বলবো না। আপনি বলেন কি কথা?
- রাজের এ অবস্থা কিভাবে হলো? আর সেই বা প্যারালাইজড কিভাবে হলো? আর তিশা কোথায়?
- তিশা ম্যাডাম নাকি তিশান নামে একটা ছেলেকে বিয়ে করবে।
আর রাজ ভাইয়া কয়েকমাস আগে গাড়ি একসিডেন্ট করে প্যারালাইজড হয়ে যায়।
প্রথম কিছুদিন তিশা ম্যাডাম ভাইয়ার সেবা যত্ন করলেই তার কয়েকদির পর রাত করে বাড়ি ফিরত।
আর মাঝে মধ্যে তিশান ছেলেটাকে নিয়ে সারারাত নোংরামী করতো।
সব কিছু রাজ ভাইয়ার সামনেই। রাজ ভাইয়া শুধু কাঁদতো আর কিছু বলতে পারতো না।
একদিন তিশা আপু সেন্সলেস হয়ে গেলে হসপিটালে নিয়ে যায়।
পরে জানতে পারি তিশা আপু মা হতে যাচ্ছে।আর বেবি নাকি রাজ ভাইয়ার না।
রাজ ভাইয়া খবরটা শুনে অনেক কান্না করছে।
আপুরে বলেছিল বেবি নষ্ট করতে।
আপু বেবি নষ্ট না করে রাজ ভাইয়াকে বাসা থেকে বের করে দিছে।
আর ভাইয়া অসুস্থ হওয়ার পর ব্যবসায় একের পর এক লোকসান হওয়ার কারণে
ভাইয়ার সব সম্পত্তি বাড়ি সহ নিলাম হয়ে যায়।
শুনেছি সবকিছু তিশা ম্যাডাম আর তিশান মিলে করছে। জানেন ভাইয়া প্রতিরাতেই কান্না করে।
অধরা নামে একটা মেয়ের ছবি বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমায়।
- অধরা কান্না করছে!
- নয়নতারা অধরার কান্না দেখে সবটা বুঝেও না বুঝার ভান করে বললো,'
আপু আপনি কেন কান্না করছেন?''
- আপু রাজ যার ছবি বুকে নিয়ে কান্না করে সেই মেয়েটাই যে আমি।
.
চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com