Breaking News

পরী বউ । পর্ব -০২



হঠাৎ ফোনে কল এলো। দেখলাম নাম্বার ১১৫৭৪০.

আমি নাম্বার দেখেই বুঝতে পারলাম এটা পরীর নাম্বার। কল ধরলাম।

- হ্যালো

- হাই। আজ কিন্তু বাগানে আসবে আবার মনে করিয়ে দিলাম।

আর যদি না আসো তাহলে বুঝবে মজা।

টুট টুট টুট...

ফোন কেটে দিলো। এই ধরণের হুমকি দেওয়ার কোন মানে হয়? যাই হক আমি যাবো বাগানে।

পরীদের সাথে কথা বলতে অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করে।



রাত ১১টা। আমি বাগানে গেলাম। গিয়ে দেখলাম সে আসেনি। তাই বসে বসে চাঁদ দেখতে লাগলাম।

কী সুন্দর আলো দিচ্ছে চাঁদ টা। রাত বলে মনেই হচ্ছে না। আজ মনে হয় পূর্ণিমা।

তাই দিনের মতো আলো দেখা যাচ্ছে। অনেকক্ষণ হয়ে গেলো কিন্তু জান্নাতুল এখনো আসছে না।

ভালো লাগছে না। আমাকে আসার কথা বলে এখন নিজে আসছে না। কেমন লাগে?

.



ঘরে চলে যাবো নাকি?নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম।

পরে ভাবলাম না এখানে বসে থাকতে ভালোই লাগছে। বসে বসে চাঁদ দেখি।



হঠাৎ কানে নূপুরের ধ্বনি কানে এলো সাথে সেই পারফিউমের ঘ্রাণ। পরিবেশ টা কেমন শীতল হয়ে গেল। বুঝলাম সে এসেছে। সামনে তাকালাম। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। চারদিকে তাকালাম না কোথাও সে নেই। কিন্তু সেই পারফিউমের ঘ্রাণ, নূপুরের ধ্বনি জানিয়ে দিচ্ছে সে এসেছে।

- জান্নাতুল

- হুম বলো। (অদৃশ্য ভাবে উত্তর আসলো)

- তুমি কোথায়?

-এই তো তোমার সামনে।

- কোথায়?আমি তো দেখতে পাচ্ছি না।

- আমি অদৃশ্য হয়ে আছি, তাই দেখছো না।হিহিহি

- হুম। হয়েছে এখন সামনে আসো।

- ওকে আসছি।

.

সে আমার সামনে দৃশ্যমান হলো। আজ তাকে অপূর্ব লাগছে। নীল ড্রেস পড়েছে, সাথে ম্যাচিং করে নীল চুড়ি, নীল টিপ। ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক। যেন স্বর্গ থেকে আসা কোন হুরপরী। বুঝলাম না আজ এতো সাজবার কী দরকার ছিল?আমি এক পলকে তার দিকে চেয়ে আছি। সে বলল

- আমার দিকে তাকিয়ে কী দেখছো?হুম...

- তোমাকে দেখছি।

- আমাকে দেখার কী আছে?

- আজ এতো সাজগোজ করলে কেন?

- তোমাকে দেখানোর জন্য।

-মানে?

- মানে কিছু না। তোমার জন্য কয়েকটা পরীস্থানের ফল এনেছি খাবে?

- খাবো, কিন্তু আগে ভালো করে তোমার পরিচয় দাও।

- আমি তো পরিচয় দিলাম

আমি জান্নাতুল ইসলাম জান্নাত। পরীস্থানের রাজকন্যা। আমার বাবা হলেন পরীস্থানের রাজা। আমরা ২ বোন। আমি বড়। আর আমার ছোট আরেক টা বোন আছে, ওর নাম রিয়াশা জাহান রিপা।

- হুম কিন্তু তুমি আমার কাছে আসো কেন?

- তোমাকে আমার ভালো লাগে তাই তোমার কাছে আসি।

- তুমি আমাকে প্রথমে দেখলে কীভাবে?

- তুমি তো প্রতিদিন এই বাগানে আসো। আর আমি ও আমার বান্ধবীরা প্রতিদিন এই বাগানে আসি। এসে খেলা করি। আর এখানে এসেই তোমাকে দেখি এবং তোমাকে ভালো লাগে। তোমাকে দেখতাম প্রতিদিন একা একা চাঁদ দেখছো নতুবা মোবাইল ইউজ করছো।

.

- আচ্ছা তোমরা পরীদের দেশে কী কী আছে? (অনেক টা আগ্রহের সাথে প্রশ্ন টা করলাম)



- কী আর তাকবে। এইতো পৃথিবীর মতোই।নদূ, ঝর্ণা ইত্যাদি। তবে আমাদের পরীস্থানের সব কিছু খুব স্বচ্ছ। এই নাও তোমার জন্য পরীস্থানের ফল নিয়ে এলাম। খেয়ে দেখো তো কেমন লাগে?

- আমি দেখলাম ফল গুলো আপেলের মতো কিন্তু আপেল না। এই ধরণের ফল পৃথিবীতে নেই। একটা ফল মুখে দিলাম। আহ! কী মিষ্টি। খুব সুস্বাদু ফল। পৃথিবীর সব চেয়ে দামি ফল কেও হার মানাবে।

- কেমন লাগে ফল খেতে?

- হুম। খুব মজা আর মিষ্টি ফল।

এক এক করে সব ফল খেয়ে ফেললাম।

আমরা দুজন বসে আছি। ও বলল

- নীলাদ্র

- হুম বলো।

- তুমি না আগে এইখানে চাঁদ দেখে দেখে কল্পনা করতে এই চাঁদ আর পাশে একটা সুন্দরী রমণী তাকলে একটা কবিতা লিখা যেত।

- হুম। কিন্তু তুমি জানলে কীভাবে?

- আরে বুদ্ধু তোমাকে তো বললাম আমরা পরীরা মানুষের মনের কথা বুঝতে পাই।

.

- ওহ ভালোই।

- হুম। তা আমি কি সুন্দরী না?

- তুমি তো দেখতে অপূর্ব।

- তাহলে আমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখ।

- আচ্ছা লিখবো।

- না এখনই লিখবে।

-আচ্ছা আমাকে ভাবতে দাও।

-হুম ভাবো।

"আকাশের ঐ চাঁদ কে যেমণ,

আগলে রাখে তারা।

তেমনি আমি আগলে রাখবো,

তোমায় সারাবেলা।

বাগানের ঐ ফুল কে যেমণ,

আগলে রাখে মালি,

তেমনি আমি আগলে রাখবো,

ভালোবাসায় খালি(শুধু)

চাঁদ যেমন আলোকিত করে,

রাতের অন্ধকার,

তেমনি তুমি আলোকিত করো,

আমার মনেরই দোয়ার।

ফুল যেমন সুভাস দেয়

বাগানের মাঝে,

তেমনি তুমি প্রেম দাও,

আমার মনের মাঝে।

চাঁদ যেমন হারিয়ে যায়,

সূর্যের আলো পেলে।

তেমনি আমি হারিয়ে যাবো,

তোমায় না পেলে। "

- ওয়াও! খুব সুন্দর হয়েছে কবিতাটি। এতো সুন্দর কবিতা লিখতে পারো।

- জানি না। হঠাৎ মনে যা আসলো তাই দিয়েই বলে ফেললাম।

- হুম। খুব সুন্দর হয়েছে। জানো প্রথম যেদিন তোমায় দেখি সেদিনই তোমায় ভালো লাগে।

আর তোমার সাথে কথা বলে আরও বেশী ভালো লাগছে। আমি তোমায় ভালোবাসি নীলাদ্র

- কী বলো এইসব? আমি মানুষ, আর তুমি পরী। এটা কখনো হতে পারে না।

- কেন পারে না নীলাদ্র ?

- মানুষ আর পরীদের কি কখনো বিয়ে হয়?

- তুমি বললে আমি পরীস্থান ছেড়ে তোমার কাছে চলে আসবো। মানুষের মতো চলাফেরা করবো। দেখ, দেখও আমাকে। আমাকে দেখে কী কোন পরী মঅনে হচ্ছে। একদম তো মানুষের মতোই দেখা যাচ্ছে।

- হুম তা ঠিক, কিন্তু...

-কোন কিন্তু না। বলো ভালবাসো?

- হুম বাসি।

- হুম। আমার না এখন যেতে হবে। আব্বুজান-আম্মিজান চিন্তা করবে। আমি যাই?

- হুম। যাও।

-আই লাভ ইউ নীলাদ্র ।

- লাভ ইউ টু জান্নাতুল ।

- হুম গেলাম। বাই। কাল এমন সময় এখানে আসবে।

-ওকে। বাই।

জান্নাতুল চলে গেল। কেমন যেন একা একা লাগছে।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৩:৪৫ বাজে। ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।

.

সকালে প্রতিদিনের মতো আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙলো।

আম্মু বলেন রাতে না ঘুমিয়ে কী করিস?এতো লেইট হয় কেন?



- জানি না আম্মু ঘুম আসে না।

- মোবাইল কাছে রাখলে ঘুম আসবে কীভাবে?

- আরেহ আম্মু মোবাইলের জন্য না। ঐ পরী...

- কী পরী কী?

- না আম্মু কিছু না। খিধা লাগছে খাবো।

- আচ্ছা খেয়ে নেয়।

সকালের নাস্তা করে একটু বাহিরে বের হলাম। কিন্তু ভালো লাগছে না। শুধু পরীর কথা মনে হচ্ছে। শুধু ভাবছি কবে রাত হবে?



অবশেষে রাত হলো। আমি গিয়ে বাগানে বসে বসে চাঁদ দেখছি। হঠাৎ সেই নূপুরের আওয়াজ, মিষ্টি পারফিউমের ঘ্রাণ অনুভব করলাম। তার মানে সে এসেছে? আমি সামনে তাকাতেই খুব অবাক হলাম।

একটা ডানা ওয়ালি পরী আমার সামনে দাঁড়িয়ে। রাগি লোক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম।



- মিঃ নীলাদ্র , আপনার তো সাহস কম না। মানুষ হয়ে পরীদের সাথে প্রেম করেন।

আজ পরীদের সাথে প্রেম করার মজা দেখাবো। বলেই সামনে আসতে লাগলো।

আমি ভাবলাম আল্লাহ এ আবার কে? জান্নাতুল কোথায়? ও আজ এলো না কেন?

এই দুষ্টু পরী টাকি জান্নাতুল কে মেরে ফেললো নাকি। আমি ভয়ে পিছু যেতে লাগলাম।

.



চলবে.....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com