আড়ালে সত্যটা । পর্ব - ১০
আর ভাইয়া অসুস্থ হওয়ার পর ব্যবসায় একের পর এক লোকসান হওয়ার কারণে ভাইয়ার
সব সম্পত্তি বাড়ি সহ নিলাম হয়ে যায়।
শুনেছি সবকিছু তিশা ম্যাডাম আর তিশান মিলে করছে। জানেন ভাইয়া প্রতিরাতেই কান্না করে।
অধরা নামে একটা মেয়ের ছবি বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমায়।
- অধরা কান্না করছে!
- নয়নতারা অধরার কান্না দেখে সবটা বুঝেও না বুঝার ভান করে বললো,'
আপু আপনি কেন কান্না করছেন?''
- আপু রাজ যার ছবি বুকে নিয়ে কান্না করে সেই মেয়েটাই যে আমি।
- সত্যি আপনিই সেই অধরা।
- হুম বোন। আমার একটা উপকার করতে হবে।
- কি উপকার?
- আমি রাজের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো। যদি দেশে ভালো না হয় সিঙাপুর নিয়ে যাবো।
তুমি শুধু আমাকে হেল্প করবে। ওকে হসপিটালে ভর্তি করবে।
ও কিছু জানতে চাইলে বলবে এক স্যারে তোমার সবকিছু শুনে চিকিৎসা করাতে চেয়েছে।
- সত্যি বলছেন আপু? কিন্তু ভাইয়ার নাকি ভালো হওয়ার চান্স খুব কম।
- সেটা আল্লাহ ভালো জানে ভালো হবে কি হবে না।
তুমি শুধু বলো না রাজকে কখনো যে চিকিৎসাটা আমি করাচ্ছি।
এটা রাজ শুনলে কখনোই চিকিৎসা করাতে চাইবে না।
আর হ্যাঁ আজকের কোন কথাই রাজ যেন জানতে না পারে।
আর তুমি চিন্তা করো না তোমার সব দায়িত্ব আমার।
- আচ্ছা আপু আমি কাউকেই বলবো না। আপনি সত্যিই অনেক মহান।
আপনাকে এতটা কষ্ট দেওয়ার পরও আপনি ভাইয়ার জন্য এতকিছু করতেছেন।
- আপু বাদ দেও এসব। চলো তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেয়।
রাজ আবার তোমাকে না দেখলে পেলে চিন্তা করবে।
- আচ্ছা আপু।
.
- অধরা নয়নতারাকে বাসায় পৌঁছে দেয়।
নয়নতারা অধরার কথা মতো রাজকে সবকিছু বলে চিকিৎসার জন্য রাজি করায়।
- দুদিন পরেই একটা লোক এসে এ্যাম্বুলেন্সে করে জাতীয় আর্থোপেডিক হসপিটালে নিয়ে যায়।
ডাক্তার রাজের কন্ডিশন বুঝে অধরাকে জানায় এখানে যে চিকিৎসা এতে ভালো
হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষিন্ন! তাই সিঙাপুরে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করালে ভালো হতেও পারে।
- অধরা ডাক্তারের কথা শুনে দু'সপ্তাহের মাঝেই রাজকে সিঙাপুর পাঠিয়ে দেয়।
আর অফিসের কাছে অধরাও রাফিয়াকে নিয়ে সিঙাপুর যায়।
দুর থেকে মা মেয়ে রাজকে দেখে আসে।
রাফিয়া বার বারর অধরাকে বলে মম তুমি আমাকে বাবার কাছে যেতে দাও না।
- অধরা রাফিয়ার গালে মুখে চুমু দিয়ে বলে,' মারে এখন গেলে যে তোর বাবাই ভালো হবে না।
আর হাটতে পারবে না।
- আচ্ছা যাবো না।
- অধরা প্রতি ওয়াক্ত নামায শেষে রাজের সুস্থতার জন্য দোআ করে।
- আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনমাস পরেই রাজ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়।
সুস্থ হয়ে সপ্তাহখানেক এর মাঝেই দেশে ফিরে।
- দেশে ফিরেই রাজ অধরার সাথে দেখা করে। অধরার কাছে ক্ষমা চায়।
রাজ জানতে পারে অধরার হাসবেন্ড মারা গেছে।
তাও নয়নতারার কাছে সবটা যেনে রাজ ভাবে অধরা যদি তাকে ক্ষমা করে বুকে টেনে নেয়।
- কিন্তু অধরা রাজকে অপমান করে বের করে দেয়।
আর এটাও বলে নেক্সট টাইম তাকে যদি তার আশে -পাশে দেখে তাহলে পুলিশে দিবে।
- অধরার এসব কথা শুনে রাজ বলে অধরা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
আমি জানি আমি তোমার সাথে বড্ডবেশি অন্যায় করছি।
তবে এটাও সত্যি এখন তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।
.
- হা হা ভালোবাসা? যেদিন আপনার পায়ে পড়ে একটু আশ্রয় চেয়েছিলাম
সেদিন কোথায় ছিল আপনার ভালোবাসা?
আপনি নিজেই আমার সাথে রাত কাটিয়ে আমার গর্ভে থাকা আপনার সন্তানকে অস্বীকার করেছিলেন। তখন কোথায় ছিলো আপনার ভালোবাসা?
- আপনি ভালোবাসলেও আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
আমি আপনাকে জাস্ট হেট করি।
- তুমি যতই হেট কর বাট আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর ত্রমাকেই ভালোবাসবো।
তুমি আমার হার্ট। তুমি আমার জীবন। একটু বুকে জড়িয়ে নিবে?
- রাজ প্লিজ তুমি আমার সামনে থেকে চলে যাও। তোমার ওই মুখ দেখতে চায় না।
- অধরা আমি কি কখনোই ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য না?
আমাকে কি শেষবারের মতো সুযোগ দেওয়া যায় না?
জানো অধরা আমার একসিডেন্ট হওয়ার পর বুঝেছি তুমি আমার জীবনে কি ছিলে।
প্যারালাইজড হওয়ার পর বুঝতে পারি তুমিই আমার ভালোবাসা।
তিশা আমার আর তোমার সাথে যা করেছে সব আমার আর তোমার সম্পদের জন্য।
যেদিন তোমাকে রাস্তায় দেখি সেদিন অনেক খুশি হয়েছিলাম।
কিন্তু সেদিন বলিনি তোমার করে নিতে। কারণ আমি পঙ্গু ছিলাম।
চায়নি তোমার করুণা পেতে। বাট আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।
তাই তোমার কাছে আমার ভালোবাসা ভিক্ষা চাই।
আমি সত্যিই তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না অধরা।
আমার প্রতিটা মুহূূর্ত কাটে তোমার কথা ভেবে।
না পারি ঘুমাতে না পারি খেতে।সারাক্ষণ তোমার স্মৃতিগুলো আমাকে বড্ড জ্বালায়।
.
- অধরা রাজের কথা শুনে ঠাস করে তার গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল,' বাহ!
কি সুন্দর ড্রামা এখন আমার সম্পত্তি দেখে তোমার ভালোবাসা উতলিয়ে পড়ছে।
আমি জানি তুমি আমাকে নয় আমার সম্পত্তিকে ভালোবাসা।
আর হ্যাঁ রাজ তোমাকে একটা পরামর্শ দেয় তুমি আমার পিছনে না ঘুরে অভিনয়ে নাম লিখাও।
অনেক জনপ্রিয়তা পাবে। আমি গ্যারান্টি। আর লাস্ট ওয়ানিং আমি তোর মুখ দেখতে চাই না।
তুই আমাকে ভালোবাসলে আর কোনদিন আমার সামনে আসবি না।
- রাজ বাম হাতে গালটা ধরে অধরার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো। অধরা মাথা নিচু করে আছে।
রাজ কোনরকম কান্না চেপে বললো,' ভালো থাকবেন।
এই রাজ আর কোনদিন ভালোবাসার দাবি নিয়ে আপনার সামনে আসবে না।
আর বললেন না টাকার জন্য? ছিহ!
কিভাবে বললেন আপনার টাকার জন্য আমি আপনাকে ভালোবাসি?
যাই হোক আমার ব্যবহারে কষ্ট পেলে আমাকে ক্ষমা করবেন।
কথাগুলো বলে রাজ অধরার বাসা থেকে বের হয়ে যেতেই।
- পাশের রুম থেকে রাফিয়া দৌড়ে এসে অধরাকে জড়িয়ে ধরে বললো,'
মামনি তুমি বাবাইকে মারলে কেন? অধরা কিছু বলছে না।
রাফিয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।
.
- সেদিনের পর রাজ আর অধরার সামনে যায়নি। বাসা চেঞ্জ করেছে।
নয়নতারা বাসায় থাকে। রাজ গামেন্টেসে কাজ করে।
একদিন অফিস থেকে আসলে,
নয়নতারা একটি অফিসের কার্ড দিয়ে বলে ভাইয়া যে লোকটা তোমার চিকিৎসা করেছে।
উনি এই কার্ডটা দিয়ে বলছে যোগাযোগ করতে। তিনদিন পর ভাইবা পরীক্ষা।
তুমি যাও আশা করি চাকরিটা হয়ে যাবে।
রাজ নয়নতারার কথা মতো দুদিন পর কার্ডের ঠিকানা অনুযায়ী সে অফিসে যায়।
সবার ভাইবা শেষে রাজের ডাক পড়লে, ' রাজ ভেতরে ডুকেই অধরাকে দেখে চমকে যায়।
অধরার কুলে রাফিয়া বসে আছে।
- রাজ অধরাকে দেখেই রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছে যখন তখন অধরা রাফিয়াকে বলে,'
মামনি তোমার বাবাই চলে যাচ্ছে। তোমার বাবাইকে আঁকটাও।
.
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com