Breaking News

শেষ বেলার তুমিটা । পর্ব -০৬



আপনি কি মেয়েটিকে চিনি? চিনলে তার বাড়ির লোকদের বিষয়টা জানান এবং দ্রুত জেনারেল ক্লিনিকে চলে আসুন........



আমি কথাগুলো শোনা মাত্র কিছু না ভেবে বাইক নিয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।



হাসপাতালে এসে জানতে পারলাম যে ডাক্তার জানিয়েছে রিমির বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম। বাসের সাথে ধাক্কা খেয়ে তার মাথার অনেক গুরুত্বপূর্ণ নার্ভস ছিঁড়ে গিয়েছে।



আমি কিছুতেই কথাটা মেনে নিতে পারলাম। আমি রিমির বাবা মার কাছে গেলাম এবং তাদের সান্ত্বনা দিলাম এই বলে যে রিমির কিছু হবে না।



রিমির মা হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞেস করায় যে আমি কে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খাই। আমি কিছু বলার মত খুঁজে না পেয়ে রিমি ফ্রেন্ড হয় একথা বলি ওর মাকে।

.



সেদিন সারাদিন ওখানে ছিলাম। সন্ধ্যায় ডাক্তার জানান রিমি মারা গেছে। আমি পুরোপুরি নিস্তব্ধ হয়ে যায়।

আমি একথা কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছি না। রিমি আমাকে কখনো ছেড়ে যেতে পারেনা।

সে তো আমার সাথে থাকার কথা ছিল। সে তো আমার সাথে আজকে ঘুরতে যেতে চেয়েছিল।

সেতো আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল।



আমি ছুটে গেলাম সেই অ্যাক্সিডেন্টের জায়গায়। রক্তে পুরো রাস্তা লাল হয়ে আছে।

আমি রাস্তার উপর বসে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলাম।

হঠাৎ লক্ষ্য করলাম রাস্তার পাশে একটা খামে মোড়ানো রক্তাক্ত বক্স পড়ে আছে।



আমি কিন্তু রেগে বক্সটা নিয়ে খুলে ফেলাম।

বক্স টাতে একটা ঘড়ি, পাঞ্জাবি-পায়জামা রয়েছে।

একটা চিরকুটে দেখতে পেলাম। আমি তাড়াহুড়ো করে চিরকুট টি খুলে পড়তে শুরু করলাম:



প্রিয়তম হৃদয়,

সেই প্রথম যেদিন প্রপোজ করেছিল সেদিনই তোমাকে আমার মনটা দিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু কোন এক অজানা বাধার কারণে তা বলতে পারেনি। কিন্তু আজ তোমায় সকল বাধা পেরিয়ে বলতে চাই আমিও তোমায় ভালবাসি। তোমার হাতটি ধরে সারা জীবন কাটিয়ে দিযতে চাই। তুমি থাকবে তো সারা জীবন আমার পাশে? দেবে কি তোমার হাতটা শক্ত করে ধরা আর অধিকার?



ইতি,

তোমার রিমি।

.



আমি চিঠিটা পড়ে নিজেকে আটকাতে পারলাম না। রাস্তার পাশে চিৎকার করে কাদতে থাকলাম।



পরদিন দুপুরে রিমির মাটি দিতে গিয়ে নিজেকে আরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে ফেললাম।



এরপর কিছুদিন কেটে গেল। আমি দিন দিন আরো রিমির মাঝে ডুবে যেতে লাগলাম।



কলেজে আর যাই না। রাতে কখন বাসায় ফিরি তাও ঠিক থাকেনা।



সারাদিন শুধু সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে যেখানে আমার রিনি টার এক্সিডেন্ট হয়েছিল।



আমার বাবা-মা বিষয়টা বুঝতে পারল। আমি একদিন রাতে বাড়ি ফিরতেই বাবা আমাকে বলল:



বাবা: এত রাতে কেন?কই ছিলি এতক্ষন?



আমি বাবা কে ছোট থেকেই খুব ভয় করি।আমতা আমতা করতে করতে বললাম:



হৃদয়: না মানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেছিলাম তো।



বাবা: এখন থেকে সন্ধ্যায় বাসায় আসবি।



হৃদয়: আচ্ছা বাবা।



বাবা: আর শোন কাল সারাদিন গাড়ি থেকে বের হবি না।



হৃদয়: কিন্তু কেন?



বাবা: কাল তোর বিয়ে।



হৃদয়: মানে! কিভাবে? কার সাথে?



বাবা: নীলিমার সাথে।



হৃদয়: ও তো আমার চাচাতো বোন। আর পিচ্চি একটা মেয়ে।

কেবল ইন্টারে পড়ে। আমারও তো পড়াশুনা শেষ হয়নি!

.



বাবা: ওসব নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। কার বাসায় থাকবে বাছ!



হৃদয়: কিন্তু বাবা..



বাবা: চুপ! আর একটাও কথা শুনতে চাই না!



হৃদয়: হুমম।



আমি আর কিছু না বলে আমার রুমে চলে এলাম। রাগে মাথাটা ঝিমঝিম করতেছে। সোজা নীলিমার রুমে গেলাম।



গিয়ে দেখে নীলিমা ঘুমিয়ে আছে। আমি তাই কিছু না বলে আমার রুমে চলে আসলাম।



আমি আর এসব কিছু দেখতে পারছিনা। তাই ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।



পরদিন সকালে দরজায় ধাক্কা ধাক্কির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।



দরজা খুলতেই দেখি বাড়ি ভর্তি মেহমান। ছোট মামা এসে বলল:



ছোটমামা: আজ তোর বিয়ে আর তুই এভাবে ঘুমাচ্ছিস!



হৃদয়: আমি বিয়ে করতে চাই না।



ছোটমামা: কি বলছিস এসব! তোর বাবাকে তো চিনিস! এসব শুনলে তোকে আস্ত রাখবে না। যা জলদি রেডি হ।



হৃদয়: হুম।



আমি আর কিছু না বলে হাজারো অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রেডি হলাম।



সব নিয়মকানুন মেনে বিয়েটা শেষ পর্যন্ত হয়েই গেল। আমি আমার ফ্রেন্ডের সাথে ছাদে আড্ডা দিচ্ছি। তাদের সাথে হাসি তামাশা করতে করতে রাত দশটা বেজে গেল।

.

রিয়াজ বলে উঠলো:



রিয়াজ: ওই শালা সারারাত কি আমাদের সাথে কাটাবি নাকি! ঘরে বউ আছে যা।



হৃদয়: না আমি যাব না। আমি শুধু রিমি কে ভালোবাসি। আমি যেতে পারব না।



সিরাজ: যে নেই তার কথা ভেবে কি আর লাভ আছে? যা নীলিমা অপেক্ষা করছে।



হৃদয়: তোরা বেশি কথা বলে তোদের কেউ এখান থেকে পাঠিয়ে দেবো। চুপ কর।



এভাবে আরো তিনটা ঘন্টা কেটে গেল। রাত একটা বাজে হঠাৎ পেছন থেকে বাবা বলে উঠলো:



বাবা: হৃদয়! তুই এখনো রুমে যাস নি। ওখানে নীলিমা তোর জন্য বসে আছে।



হৃদয়: হ্যাঁ বাবা এক্ষুনি যাচ্ছি।



আমি কথাটা বলেই দ্রুত রুমে চলে আসলাম।



এসে দেখি নীলিমা একহাত ঘোমটা টেনে বসে আছে। আমাকে দেখে সালাম করতে এগিয়ে আসলো।



আমার কাছে আসতেই আমি বললাম:



হৃদয়: সালাম করতে হবে না। আর তোকে প্রথমেই বলে দিই আমি শুধু আমার জীবনে একজনকেই ভালবেসেছি। সেটা হলো রিমি। আর কাউকে ভালোবাসতে পারবো না। সো,আমার থেকে দূরে দূরে থাকবি। কাছে আসার চেষ্টা করবি না ভুলেও।



নীলিমা কথাগুলো শুনে রুম থেকে বের হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর নীলিমা একটা দা নিয়ে এসে বলল.....

.


No comments

info.kroyhouse24@gmail.com