প্রতিটি মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়া দরকার
বউ : এই যে আপনার ঈদের পাঞ্জাবী.
বর: নিবো না।যা এখান থেকে।
কেন নিবেন না?
তোর ভাব বেড়েছে তাই নিবোনা।
দুই টাকার টেইলারিং দোকান দিয়া তোর সাহস বেড়ে গিয়েছে।
কাল রাতে আমার মুখে মুখে তর্ক করেছিস।
মারতে গেছি হাত ধরে ফেলেছিস। তুই আমার চোখের সামনে থেকে যা।
এতো তুই তুকারি করবেন না। এখন আর মার ধরের দিন নাই।
এখন আমি কি কি বলি আপনি শুধু শুনে যান।
ওহ্ আমার ইনকাম কমে গিয়েছে বলে তুই আমাকে এতবড় কথা বললি।
তোর হাতের রান্না করা কোনো খাবারই খাবো না আমি।
আগামি কাল ঈদ কোনো নাটক করবেন না।
বাবুর আনন্দ মাটি করবেন না।
আমাকে ধমক দিস।
কই ধমক দিলাম। আপনি মনে করে দেখেনতো কবে আমার সাথে ভালো ব্যবহার করেছেন।
১৮ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়েছে। আপনি আমার চেয়ে বার বছরের বড়।
আপনি মালেয়েশিয়া থেকে একেবারে চলে আসলেন।
আপনার আগের বউটা আপনাকে ফেলে চলে গেলো।
থামবি, বেশি কথা বলছিস।
আজ আমি বলবোই। চুপ করে শুনেন আপনি।
আপনার বউ চলে যাওয়ার পর আপনার মা আপনার জন্য পাত্রী খুজে পাচ্ছিলো না।
আপনার মা তার ভাইয়ের বাড়িতে যেয়ে আমাকে দেখে পছন্দ করে।
আমরা দশভাইবোন আমি সবার বড়। বাবা ছোট খাটো ব্যবসা করে।
আমাদের চারিদিকে শুধু অভাব আর অভাব।
আপনার মা এই সুযোগটাই নিলেন।
তার বয়স্ক ছেলের জন্য ১৮বছরের এক বাচ্চা মেয়েকে পছন্দ করলেন।
মেট্রিক পাশ করে সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি।
আপনার মা আমার বাবাকে কত প্রলোভন দেখালেন। কত কি আছে আপনাদের।
আমার বাবা সংসার আর টানতে পারছিলেন না,
ভাবলেন একজন কমলেও তো ভাতের খরচ কমবে।
মেয়ে বিয়ে দিয়ে ভাতের খরচ কমাতে চাইলেন।
পাত্র একবার বিয়ে করেছে, বউ চলে গিয়েছে তাতে কি। আমি ভালো ছাত্রি ছিলাম।
ভালোভাবে এস এস সি পাশ করেছি। পড়তে চাইলাম।
বাবা পড়াতে নারাজ। মা বাবা দুজনেই আমাকে ধরে কান্না শুরু করলো,
তারা বিয়েতে রাজি হতে বলে। এখানে কোনো যৌতুক লাগবে না।
বরং তারা গহনা দিয়ে সাজিয়ে নিয়ে যাবে।
মা, বাবা, ও ভাইবোনের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের স্বপ্ন চাওয়া পাওয়াকে
জলান্জলি দিয়ে বিয়েতে রাজি হলাম। বিয়ে হলো।
আপনাদের বাসায় আসলাম।
যত গল্প আপনার মা করছে তার সিকি ভাগও কাজে প্রমাণ পেলাম না।
বাসর রাতে কি করলেন আপনি?
কি করলাম? মনে নাই।
আমার কাছে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি চাইলেন।
আমি নতুন মানুষ ফ্রীজ থেকে পানি আনতে যেয়ে দেরি হলো।
কেন দেরি হলো এই অপরাধে এমন চড় মারলেন হাত থেকে গ্লাস পড়ে ভাংগলো
আমার ঠোঁট কেটে গেলে। এরপর আপনি ঘুমিয়ে গেলেন।
আমি সারারাত বসে কাঁদলাম। আপনি ফিরেও তাকালেন না।
সকাল বেলা আপনার মামাতো ভাবি আসলো ঠোঁট কাটা দেখে বুঝলো আপনি মেরেছেন।
আপনার ভাবি বললো, তোমার স্বামীর এই বদমেজাজের জন্য আগের বউ চলে গিয়েছে।
তুমিও থাকতে পারবে না। তোমার বাবা মা কেমন খোঁজ খবর না নিয়ে বিয়ে দিলো।
দুদিন পর আমার বাবা আসলো ।
আমাকে নেওয়ার জন্য ঠোঁটের উপর কালছে দাগ দেখে বাবা বললো কিভাবে ব্যাথা পেলি।
বাবার সাথে এ বিষয়ে অভিমান করে আর কোনো কখা বলি নি।
বাবার সাথে বাড়িও যাইনি ।
কস্টের নদী বুকের মধ্যে চেপে আপনার সাথে থাকলাম।
দিন যেতে থাকলো আপনি মাসনিক শারীরিক নির্যাতন চালাতেই থাকলেন।
আপনার মা সব দেখে কিন্তু আপনাকে কিছু বলে না।
আমাকে বলে স্বামীদের এসব সহ্য করেই সংসার করতে হয়।
আর না করে কি করবা? তোমার বাবার যা অবস্হা ।
তোমার আর ভাইবোনদের ভাত দিতে পারছে না। তুমি যেয়ে বোঝা হবা।
এসব শুনে আপনার নির্যাতন সহ্য করে কাঁদতে কাঁদতে দিন যেতে যেতে এক ছেলের মা হলাম ।
সংসারের পাঁচ বছর চলে গেল।
এবার থাম। আর শুনবো না। সব জানি আমি।
আপনি সব জানেন না। আপনি চুপ করে বসে থাকেন।
আমাকে এতো কথা বলতে কোনোদিন দেখেছেন?
মৃতপ্রায় হয়ে আমি আপনার সাথে সংসারে করেছি।
ঈদের পরের দিন আমি একবারে চলে যাবো। আগেই চলে যেতাম।
আপনার মা তার নাতিনেরসাথে ঈদ করতে চেয়েছে।
বাবুর শার্ট কিনতে গিয়েছি, বাবুর বায়না বাবার জন্য নতুন কাপড় কিনো তাই কিনেছি।
আপনার জন্য কিছু কেনার ইচ্ছে কখনো ছিলো না।
আমার ইচ্ছে গুলে আপনার যন্ত্রনার শিকল দিয়ে পেচিয়ে শ্বাস রুদ্ধ করে মেরেছেন।
বাবুর মা এসব কি বলো? চলে যাবে মানে কি?
বাব্বা তুই থেকে তুমিতে চলে গেছেন। ভালো। চলে যাবো আপনার জীবন থেকে।
তারপর শুনেন। পাশের বাসার মৌরি ভাবি বলল, এভাবে পড়ে পড়ে মার না খেয়ে উঠে দাড়াও।
কিছু করার চেস্টা করো। ভাবিকে বললাম তেমন কিছুপারি না।
শুধুসুই সুতার কাজ ভালো পারি। ভাবি বললো, সাথে টেইলারিং কাজটা শিখে ফেলো।
আমি ভাবির পরামর্শে ভাবির পরিচিত মহিলার কাছে দুইদিন টেইলারিং কাজ শিখতে থাকলাম ।
বাবুকে স্কুলে নিয়ে যেয়ে ঐ সময় টা কাজে লাগালাম।
আপনার মাকে বলেছিলাম। টেইলারিং শিখছি। উনি মত দিলেন না।
তাই না জানিয়ে টেইলারিং শিখতে থাকলাম।
মৌরি ভাবি টুকটাক টাকা দিয়ে সাহায্য করতে থাকলো।
আবার কিছু কিছু অর্ডার এনে দিতে থাকলো।
আপনি ঘুমিয়ে গেলে এসব কাজ করতাম।
এদিকে আস্তে আস্তে আমার অর্থনৈতিক অবস্হা ভালো হতে থাকে।
আপনার অর্থনৈনিক অবস্হা দিন দিন খারাপ হতে থাকে।
আপনার অবস্হার দৈন্যতার সাথে আপনার মনের দৈন্যতাও দেখা দিলো ভীষন ভাবে।
আপনি ছেলের সামনে মারধর করা শুরু করলেন অশ্লীল কথা বলা শুরু করেলেন।
আমি শুধু কাঁদি। ঘৃনা হয় আপনার সাথে কথা বলতে।
সেদিন বাবুর মিস নালিশ করলো বাবু তার বন্ধুদের বাজে বাজে গালি দেয় আর মারামারি করে।
বাবু তো জন্ম নিয়েই দেখছে তার বাবা তার মাকে মারছে।
স্কুলের মিস বাবুর নামে নালিশ দেওয়ার পর চিন্তা করলাম।
এখানে থাকলে বাবু মানুষ হবে না। তাই বাবুকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাওয়ার চিন্তা করলাম।
চলে যাওয়ার আগে সব পরিস্কার করে বললাম।
আপনি আর আপনার মা নিজেদের দোষ কখনো দেখেন না।
পানজাবী টা দাও। খুব সুন্দর হয়েছে।
মনে মনে বলি যতো কথা বলিস মুখের কথায় আর চিড়ে ভিজবে না।
আমার শরীরের ভাজে ভাজে তোর নির্যাতনের দাগ লেগে আছে।
আজ আমি স্বাবলম্বী। ছেলেকে মানুষ করতে আর অসুবিধা হবে না।
ছেলেকে নিয়ে এগিয়ে যাবো নতুন জীবনে।
# প্রত্যেকটা মেয়েকেই স্বাবলম্বী হওয়া দরকার নিজের পায়ে দাঁড়ানো দরকার।
অন্যের মার খেয়ে মুখ বুজে সহ্য আর কত করবে মেয়েরা??
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com