Breaking News

আড়ালে সত্যটা । পর্ব - ০৬



রাজের বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। তারই সামনে তার স্ত্রী অশ্লীল কাজ করছে।

কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। লোকটা টান দিয়ে তিশার শাড়ি খুলে ফেললো।

তিশা, তিশানকে জড়িয়ে ধরলো।

তাদের কারোরই সেন্স কাজ করছে না রুমে তারা দুজন না তিনজন।

তিশান , তিশার ঠোঁট দুটি নিজের করে নিলো। তিশা চোখ বন্ধ করে আছে।

হঠাৎ তিশার চোখ খুলতেই দেখলো রাজ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

ততক্ষণে তিশার পরণে কোন শাড়ি নেই!

তিশা ফ্লরে থাকা শাড়িটা তুলতে যাবে ঠিক তখনি তিশান বললো, " কি হলো?

হোটেলে খুব ভালো পারো আর এখানে ন্যাকামি করছো কেন সুইর্টহার্ট!

.

তিশান কি করছো? পঙ্গুটাকে দেখে মনে হচ্ছে জেগে আছে।
- আরে দেখলে কি হলো? সে তো আর পারে না।
জানো তিশা তোমার জন্য সত্যিই আমার খুব কষ্ট হয়।
এমন একটা পঙ্গুর জন্য তুমি আমার মতো ছেলেকে রিজেক্ট করেছিলে?
তিশান মেয়েরা মুখ ফুটে সব বলতে পারে না? সত্যি বলতে আমারো অনেক খারাপ লাগতো।
মনে হতো জীবনে অনেক বড় পাপ করেছিলাম। যারজন্য এমন একটা পঙ্গু স্বামী পেয়েছি।
যে কিনা নিজের খাবারটাও নিজে খেতে পারে না।
পারছি না মেরে ফেলতে যদি পুলিশ কেস হয়ে যায়। আচ্ছা চলো পাশের রুমে।
তিশা, তিশানকে চৌধুরীকে নিয়ে পাশের রুমে চলে গেল।
.
- রাজের চোখে বারবার অধরার মুখটা ভেসে উঠছে।
নিরাপরাধ মেয়েটাকে কলঙ্কের বোঝা চাঁপিয়ে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিল যার জন্য।
আজ সেই তিশায় তারই সামনে অন্য একটা ছেলের সাথে অসভ্যতামি করেছে।
তিশা তো তাকে ভালোবাসতো। তিশাও তো তাকে ভালোবাসতো কত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
কত রাত একসাথে কাটিয়েছে। কত জোছনা কত আঁধার পার করেছে।
এতটা ভালোবাসার এই প্রতিদান সে দিতে পারলো? একটু কষ্টও হলো না তার।
আজ তিশা যদি এমন অসুস্থ হতো তাহলে সে তিশাকে রেখে অন্য মেয়ে নিয়ে এমন করতে পারতো।
মন চাচ্ছে তিশাকে নিজে হাতে খুন করে ফেলি। রাজের খুব কষ্ট হচ্ছে।
বুকের ভেতরটা দুমড়ে -মুচড়ে যাচ্ছে।
যাবেই না কেন তারই ভালোবাসার মানুষ তারই সামনে অন্য একটা ছেলের সাথে নোংরামী করছে।
- রাজ খুব করে চেষ্টা করছে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারছে না।
নড়তেও পারছে না। বারবার মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে।
আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ করে দেয়। সে যে আর এই দৃশ্য মেনে নিতে পারছে না।
চোখের সামনে নিজের স্ত্রী অন্য পুরুষের সাথে! এটা দুনিয়ার কোন পুরুষ মেনে নিতে পারবে?
- রাজ উঠার চেষ্টা করছে পারছে না।
.
হাত দিয়ে চেষ্টা করতে গিয়ে খাট থেকে পড়ে যায়।
মাথা ফ্লরে বারি খাওয়ায় কপালের খানিকটা অংশ কেটে গিয়ে ফিড়কি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগে।
বাম হাতটা প্যারারালাইজড হয়ে গেছে শরীরের সাথে সাথেই।
ডানহাত দিয়ে কোনরকম কপাল চেপে ধরে, তিশাকে ডাকতে লাগলো।
ভেতরের রুম থেকে কোন কথা আসছে না।
রাজ ডানহাতে কপাল ধরে কাঁদতে লাগল। মাথাটা কেমন ব্যথা করছে।
চোখের পানি মোছার শক্তিটাও হচ্ছে না।
সব তার পাপের ফল। খুব করে ইচ্ছা করছে অধরার কাছে পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইতে।
মেয়েটা সত্যি তাকে অনেক ভালোবাসতো।
হীরাকে নে কাচ ভেবে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটাই করেছে।
আজ মা -বাবাও বেঁচে নেই যে এই পৃথিবী পাশে এসে দাঁড়াবে।
আল্লাহ যে মা -বাবাকেও তার কাছে নিয়ে নিয়েছে।
রাজের বুক ফেঁটে কান্না আসছে। ফ্লরের ঠান্ডায় শরীরের জ্বর বেড়ে যাচ্ছে।
কেউ নেই যে তাকে ফ্লরে থেকে বিছানায় তুলে শুইয়ো দিবে।
সারাটা রাত অগ্নি পরীক্ষার মতো চললো।
সকালের দিকে জ্বর বেশি হওয়াতে সেন্সলেস হয়ে যায় রাজ।
- এদিকে জানালার কাচ ভেদ করে সূর্যের আলো পড়তেই তিশা দেখে
তিশান তার বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে।
তিশার রাতের কথা যতটা না খারাপ লাগছে তার চেয়ে তিশানের সাথে
কাটানো ফিলিংসটা অনেক ভালো লাগছে।
.
- রাতে দুজনেই নেশাগ্রস্ত ছিল। এমনকিছু হয়ে যাবে ভাবতেই পারেনি সে।
তিশান তার আষ্ঠে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে সুয়ে আছে।
তিশা তিশানের মাথায় হাত ভুলাতে ভুলাতে বললো
এই যে নবাব এখন উঠেন। সারারাত তো আর ঘুমাননি। অফিসে যেতে হবে।
এছাড়া পঙ্গুটা দেখে ফেললে সমস্যা। ও হচ্ছে আমাদের সোনার ডিম দেওয়া হাস।
- বেবি আর একটু থাকো না।
খুব ভাললাগছে। তিশা, তিশানকে এক প্রকার জোর করেই তুলে দিল।
তিশা নিজের কাপড় ঠিক করে নিল।
এদিকে তিশান বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেল।
- সকাল বেলা কাজের মেয়েটা ঘর ঝাড়ু দিতে এসে চিৎকার করে উঠলো।
আর চিৎকার করে বলতে লাগলো আপা মণি কোথায় আপনে।
দেখে যান স্যার কথা বলছে না। ফ্লরে ছোপ ছোপ রক্ত।
-কাজের মেয়েটা রাজকে চোখে পানি দিয়ে বলছে,
স্যার ও স্যার কি হয়েছে কথা বলেন আপনে। কথা বলেন না কেন?
- এদিকে তিশা শাওয়ার শেষে।
ড্রেস চেঞ্জ করে বের হতেই কাজের মেয়েটার চিল্লাচিল্লি শুনে দেখে রাজ ফ্লরে পড়ে আছে।
তিশা মনে মনে ভাবছে মরে টরে গেল নাকি।
মরে গেলে অবশ্য ভালোই। ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবো।
- আপা মণি স্যার কোন কথা বলছে না কেন? স্যারের কিছু হয়ে গেল না 'তো?
-আরে তুই চুপ কর। আমি দেখছি।
- আগে বিছানায় তুল।
.
- দুজনে মিলে রাজকে বিছানায় তুলে রাজের গালে মৃদু হাত রেখে বললো,'
এই রাজ! রাজ! কি হয়েছে তোমার? কথা বলো প্লিজ?
কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। মনে মনো ভাবলো তাহলে মরেনি।
এখনো বেঁচে আছে। তিশা ডাক্তারকে ফোন দিল।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বলল, জ্বর সাথে কপালের আঘাত পাওয়ায় সেন্সলেস হয়ে গেছে।
তেমন কোন প্রবলেম না। ইনজেকশন দিয়ে দিছি। একটু পরেই জ্ঞান ফিরবে।
চিন্তার কোন কারণ নেই।
- আচ্ছা ধন্যবাদ ডক্টর।
- ডাক্তার চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই রাজেরর জ্ঞান ফিরে।
রাজের জ্ঞান ফিরতেই দেখে তার মাথার কাছে তিশা বসে আছে।
অন্যান্য দিন তিশাকে যতটা সুন্দর লাগে আজ রাজের কাছে তিশাকে তার চেয়ে শতগুণ বেশি কুৎসিত লাগছে।
- রাজ এখন কেমন লাগছে?
- রাজ কালকের রাতের কথা বলতে গিয়েই চুপ করে রইলো।
- কি হলো রাজ কথা বলছো না যে?
-এখন খানিকটা ভালো। আচ্ছা তিশা তোমাকে একটা কথা বলি?
- হ্যাঁ বলো,
- তিশা এখন পার্টিতে না গেলে হয় না? কাল অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিলাম।
তখনো তুমি আসোনি।
- রাজ বুঝই তো ব্যবসার জন্য কত কিছু করতে হয়।
আচ্ছা এর পর থেকে চেষ্টা করবো তাড়াতাড়ি ফেরার।
আমার অফিস আছে আমি এখন আসছি।
- আচ্ছা যাও। সাবধানে যেয়ো।
- তিশা চলে গেলে, কাজের মেয়েটা বললো,' স্যার মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিবো?
-আপনার শরীরে তো মেলা জ্বর!
- রাজ মাথা ন্যাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।
- মেয়েটা রাজের মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিল। ক্ষানিক পর পর জলপট্টি চেঞ্জ করছে।
এক পর্যায়ে মেয়েটা বললো,' স্যার একটা কথা কয়?
- হ্যাঁ নয়নতারা বল। ( মেয়েটার নাম নয়নতারা)
- স্যার আপা মণি এহন কেমন যেন হয়ে গেছে। আগে আপনার কত কেয়ার নিতো।
আর এখন কেমন যেন করে।
- ওহ্ আচ্ছা! বুঝিস না অনেক বড় ব্যবসা করে। হয়তো সেজন্য সময় দিতে পারে না।
- স্যার আগে ভাবতাম বড় লোক মানুষরা অনেক সুখী।
এখন মনে হয় আল্লাহ আমাকেই অনেক সুখী রাখছে।
টাকায় সুখ থাকলেই শান্তি পাওয়া যায় না।
- প্রকৃত শান্তি তো টাকায় পাওয়া যায় না।
- রাজ আর কিছু বললো না।
এদিকে যতই দিন গড়াতে লাগলো তিশা ততই পরির্বতন হতে লাগল।
আগের মতো ঠিক-ঠাক রাজের সাথে কথাও বলতে চায় না। রাত ভিরাতে ফিরে।
রাজ কিছু বলতে গেলেও পারে না।
.
- একদিন সকাল বেলা রাজ শুয়ে আছে।
তিশা নয়নতারাকে চা বানিয়ে আনতে বলে সোফায় বসতে যাবে।
হতাত মাথা ঘুরে পড়ে যায়। নয়নতারা তিশাকে নিয়ে হসপিটালে গেলে।
ডাক্তার তিশার প্র্যাগনেন্সি রির্পোট দেখে বললো পজিটিভ।
নয়নতারা সাথে সাথে রাজকে ফোন করে বললো,'স্যার আপনি মিষ্টি খাওয়াবেন আমাকে।
আমাদের আপামণি মা হতে যাচ্ছে।
- রাজের হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল! হাতটা কাঁপছে।
এটা কিভাবে সম্ভব তিশার সাথে প্রায় ছয়মাস হবে শারীরীক কোন সম্পর্ক হয়নি তার।
তার মানে তিশার গর্ভের সন্তানের বাবা সে নয়।
.
চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com