Breaking News

ভালবাসার প্রথম ছোঁয়া । পর্ব -৩২



আমার সাথে মার্কেটে চলো ঘুরে আসলে তোমার মন ভালো হয়ে যাবে।
শাশুড়ি এই প্রথম বার তার ছেলে বউয়ের রুমে এসে তাকে এতো সুন্দর করে কথা বলছে
আবার সাথে করে মার্কেটে ঘুরতে যাবে এটা শুনে অনু অবাক শাশুড়ির দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে।
সারা ওর চাওনি দেখে বলে,, কি হলো এভাবে হা করে তাকিয়ে আছো কেন, আমার সাথে মার্কেটে যাবে চলো।
— আমাকে বলছেন আপনি? ( অনু একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে)
— এখানে তুমি ছাড়া তো আর কাউকে দেখছিনা,, এখন তুমিই যখন এখানে আছো তাহলে তোমাকেই বলছি।
আর জলদি করো রাত হয়ে যাবে ডিনার একসাথে বাসায় এসেই করবো।
— আচ্ছা দাড়ান আমি বোরকাটা পড়ে নেই,,,
— আরে বোরকা পড়া লাগবে না, ওড়না নিয়ে নাও তাহলেই হবে,,,
অনু শাশুড়ির কথা মতো ওড়না গায়ে দিয়ে টেবিলের উপর থেকে মোবাইল হাতে নিতেই সারা বলে এই মোবাইল নিয়ে কি হবে, আমরা একটু পরেই তো চলে আসবো তাই মোবাইলের কোন প্রয়োজন নেই।
— আচ্ছা ঠিক আছে আমি প্রথমে অভিকে ফোন করে বলে নেই,,
— আরে পাগলি তুমি কি এখানে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছ নাকি যে অভিকে ফোন করে যেতে হবে,,আজ ওর মিটিং চলছে তাই ওকে ওর কাজ করতে দাও।
সারার কথায় অনু মোবাইল টেবিলে রেখে দেয়,, আর কিছু না বলে সারার পিছে চলে যায়,, কিছু সময়ের মধ্যে মার্কেটে চলে আসে।
সারা বেগম ড্রাইভারকে গাড়িতেই থাকতে বলে অনুকে মার্কেটের ভেতর নিয়ে যায়,, এক ঘন্টা ধরে একের পর এক শপে যেতে থাকে কিন্তু ওনার কিছুই পছন্দ হচ্ছে না।
— আম্মু রাত হয়ে আসতেছে কিছু তো পছন্দ করে নেন, আমরা তো বাসায় যেতে হবে।
— কি সব ফালতু জিনিস দোকানে রেখে বসে আছে দেখো,, একটা জিনিসও পছন্দ হয়নি আমার। ( সারা দুই ঘন্টার মাঝে পুরা মল ঘুরে দেখে ফেলেছে,, কাপড় হাতে নিয়ে কোনটার রং পছন্দ হয়না কোনটার সুতা কোনটার কোম্পানি ভালো না এসব করতে করতে রাত হয়ে গেছে।)
.
— আম্মু আমার মনে হয় আমরা কাল সকালে অন্য কোন মলে গিয়ে পুরো দিন কাপড় চয়েজ করবো,
আজ আমরা বাসায় চলে যাই রাত অনেক হয়ে যাচ্ছে। ( অনু রাতের অন্ধকার নামতেই সারাকে বলে)
— এখন খালি হাতে বাসায় গেলে হবে নাকি,, শপিং করতে যখন এসেছি কিছু না কিছু তো নিয়েই যাব,
খালি হাতে তো যাব না,,, এখানে তো কিছু দেখছি না, চলো অন্য মার্কেটে যাই।
দুজন মার্কেট থেকে বের হয়ে, অনেক দুর চলার পর রাস্তায় একটি ছোট মোট বাজার দেখতে পায়,
কিছু দোকান বন্ধ হয়ে গেছে, আর কিছু বন্ধ করতেছে,,
আর দুই তিন দোকান পর একটা দুইটা দোকান খুলা রেখে
দোকানের লোকটি চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে।
.
হয়তো এই এলাকায় রাত ঘনিয়ে এলে লোকজন চলে কমে যায়। এই বাজারের সামনে কোন লাইট নেই,,
দোকানের ভেতর একটা করে লাইট জ্বলছে,
সেই লাইটের আলো যতটুকু সম্ভব তার আলোয় আলোকিত করে রাখে দোকানের সামনের দিকটা।
এই দোকান গুলাতে এই রাতের বেলা কোন পুরুষ দেখা যাচ্ছে না,,
যারা খরচ করতে আসে ওরা সবাই মেয়ে।
অনু এমন বাজারের সামনে দিয়ে যাচ্ছে দেখে জিজ্ঞেস করে
আম্মু এদিকে কোথায় থেকে কি কিনতে যাচ্ছেন, আমি তো সামনে কোন শপিংমল দেখতে পাচ্ছি না।
( অনু দোকান গুলার দিকে তাকিয়ে মেয়ে মানুষ ঘুরাঘুরি করছে দেখে সারাকে প্রশ্ন করে বসে)
গাড়ি বাজার পার করে একটু সামনে গিয়েই সারা হঠাৎ বলে ওঠে,,
ওহ সিট, আমি তো জুয়েলারির দোকান ফেলে এসে গেছি,
আমি ডায়মন্ড রিং ওর্ডার দিতে হবে ,,
আচ্ছা অনু তুমি এখানে থাকো আমি জুয়েলারি দোকানে যাব আর
আসবো তারপর তোমাকে নিয়ে সামনে একটা বড় মার্কেট আছে সেখানে গিয়ে শপিং করবো।
— কি বলছে আপনি, আমি এখানে থাকবো. আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি, এখানে তো কেউ নেই আমি এখানে কি করে থাকবো, আমি আপনার সাথেই যাব।
আমার সাথে গিয়ে কি করবে, এখানে থাকলে কেউ খেয়ে ফেলবে নাকি তোমাকে। এখানেই থাকো আমি এখনি আসছি।
অনুকে গাড়ি থেকে নামিয়ে সারা ওর পাশপ গিয়ে বুঝিয়ে বলছে,
খুব জলদি চলে আসবে এই কথা।
— আম্মু এখানে আমার ভয় হচ্ছে, ঐ দেখেন লোক কিভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে,
তার মাঝে এখন রাত হয়ে আমি এখানে থাকবো না, আমি আপনার সাথেই যাব কি হবে আমি জানিনা।
— হ্যা হ্যা তুমি তো মনে হয় আসমানের কোন এক পরী যাকে লোক চোখ বড় বড় করে দেখছে,,
লোকের খেয়ে দেয়ে আর কোন কাম নাই মনে হয়,,
থাকো এখানেই আমি আসছি,ঐ দেখো ওখানে আমি ড্রাইভারকে দাড় করিয়ে যাচ্ছি তুমি ভয় পেও না।
অনুকে ধমক দিয়ে এখানে দাড় করিয়ে সারা চলে যায়,,,
সারা এখান থেকে গেছে আধা ঘণ্টা হয়ে গেলো এখনো আসার কোন নাম নেই।
অনু বার বার পিছে ফিরে তাকাচ্ছে কিন্তু সারার আসার কোন নাম নিশানা নেই।
এই রাস্তা ছেড়ে পাশের রাস্তায় গিয়ে দাড়ায় যেখানে ড্রাইভারকে রেখে গেছে বলল।
কিন্তু ওখানেও কোন ড্রাইভার রেখে যায়নি।
.
এরকম রাস্তা আর গলি অনু আজ পর্যন্ত সে দেখেনি আজ সারা তাকে নিয়ে এসেছে এই গলিতে।
রাস্তার লাইট মাঝে মাঝে জ্বলে আবার বন্ধ হয়ে যায়।
কিছু কিছু বখাটে ছেলেরা দল বেধে অনুর পাশ দিয়ে যায় আবার কেউ অনুকে ঘুরে ঘুরে দেখে চলে যায়।
ভয়ের কারণ অনুর চোখ দিয়ে জল বেয়ে পরছে কিন্তু জোরে জোরে কাঁদতে পারছে না।
অন্ধকার চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে,,
দুই ঘন্টা হলো সারা বেগম এর আসার কোন নাম নেই। আজ এক এলাকা শুধু অন্ধকার।
এই সময় তো শহরের সব জায়গায় লাইটের আলো থাকে আর এখানে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার,,,
–হে আল্লাহ আম্মু কোথায় রয়ে গেছে, এমন কিসের ওর্ডার যে দুই ঘন্টাও দিতে পারছে না।
ঐ ছেলে গুলা হাতে বুতল নিয়ে আবার অনুর দিকে আসছে,, কাছে এসে একজন বলে ওঠে —-
ও আমার বুলবুলি সেই কখন থেকে এখানে অপেক্ষা করছো কাউকে পাওনি বুঝি আজ,,
আমার মনে হয় তুমি আর কিছু দুর গেলে ভালো হবে সেখানে তো আজ মেলা হচ্ছে,,
চলো আমাদের সাথে আমরা তোমাকে ওখানে নিয়ে যাব।
ওদের মাঝে একজন অনুর দিকে এগিয়ে আসতে
দেখে অনু ফোল স্পিডে এক দিকে দৌড়তে শুরু করে দেয়।
ঐ ছেলে গুলা জোরে জোরে হাসতে হাসতে ওর পিছনে ছুটছে,
ছেলে গুলার অবস্থা দেখে বুঝাই যাচ্ছে যে ওরা নেশা করে
এসেছে তার মাঝে ওদের এক জনের হাতে মদের বুতল ছিলো।.
.
অনু জানে ছেলে গুলা খুব জলদি তার কাছে পৌঁছে যাবে তারপরেও
যতটুকু সম্ভব নিজেকে বাচানোর জন্য পিছে না দেখেই জোরে দৌড়াতে থাকে।
বুতল হাতে থাকা ছেলেটি তার বুতল ছুড়ে মারে অনুর পায়ে,
অনুর পায়ে শু ছিলো বলে বুতলটা তেমন আঘাত করতে পারেনি।
এবার ছেলে গুলা বাজে ভাবে গালাগালি করতে থাকে।
কিছু দুর দৌড়ানোর পর অনু দেখতে পায় একটি ফ্যামিলি পায়ে হেটে আসছে।
অনু জলদি গিয়ে তাদের পিছনে গিয়ে লুকিয়ে বলে প্লিজ আমাকে বাচান ওদের থেকে।
অনু কাঁদতে কাঁদতে একটু মহিলার পিছনে গিয়ে লুকায়, এই ফ্যামিলিতে তিন জন ছেলে ছিলো আর ছোট ছোট বাচ্চা ছিলো, আর মহিলা দুজন ছিলো।
ওদের দেখতেই অনুর পিছনে থাকা ছেলে গুলা ফিরে যায়।
— কে আপনি, এতো রাতে এখানে কি করছেন তাও আবার আপনি একা।
এই মহিলা কথা শুনে অনু কাপতে কাপতে মাটিতে বসে যায় আর একটু শ্বাস নিয়ে তারপর বলে — আমিও আমার ফ্যামিলির সাথে ছিলাম, হঠাৎ ওরা সামনে চলে যায় আর পিছনে রয়ে যাই।
— কোন দিকে গিয়েছে আপনার ফ্যামিলির লোকজন,,, এখানে দুই রাস্তা দুই দিকে গিয়েছে।
অনু দুই রাস্তার দিকে খেয়াল করে দেখে, এক রাস্তার সামনের দিকে আলো জ্বলছে আর অন্য রাস্তার দিকে অন্ধকার,, এখন সে কোন দিকে যাবে কিছু না বুঝেও এক দিকে ইশারা করে বলে দেয়।
ইশারা দেখতে মহিলাটি অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে বলল — আপনি, আপনি ওখানে থাকেন?
— না না না আমার ঘর সিটির ঐ সাইটে,, আ আপনার কাছে ফোন আছে, প্লিজ আমাকে একটা কল দিতে দেন, আমি আমার স্বামীর কাছে ফোন করবো প্লিজ একটু মেবাইলটা দিন।
মহিলাটি কিছুটা অবাক হয়ে মোবাইল অনুর হাতে দেয়।
.
অনুর কাপতে থাকা হাতে মোবাইল নিয়ে অভির নাম্বার মিলিয়ে কল দেয়,, ওদিকে রিং হচ্ছে কিন্তু অচেনা নাম্বার দেখে কল কেটে দিচ্ছে।
অভি মিটিং এ ছিলো, মোবাইলে ব্রাইব্রেট হচ্ছে দেখে অভি স্ক্রিনে তাকিয়ে নাম্বার অচেনা বলে লাইন কেটে অভি ম্যানেজারের দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
মহিলাটি চলে যাওয়ার জন্য বলে,, – প্লিজ জলদি করেন, এই জায়গাটা ভালো না, এখানে তো দিনের বেলাও মানুষ আসে না আর আপনি রাতের বেলায় চলে আসছেন,,, আমরা তো আসছি বাচ্চারা আইসক্রিম খাওয়া জন্য কান্না করছে তাই নিয়ে এলাম আইসক্রিম আর আমরাও একটু হাটতে এলাম, বাচ্চাদের আইসক্রিম শেষ হলে আমরা চলে যাব। আমরা ঘুরতে ঘুরতে এখানে এই দোকানে আইসক্রিম কিনতে চলে আসছি নয়তো এখানে কেউ আসে নাকি।
ঐ ছেলে গুলা আবার ওদের সামনে দিয়ে যাচ্ছে,,,
অনু আবার নাম্বার লাগায় কিন্তু এবার কাটেনি এমনি বাজতে বাজতে কেটে বন্ধ হয়।
অনু কাঁদতে কাঁদতে আবার নাম্বারে কল দেয়,, অনু এখনো বুঝতে পারছে না সে এখন কোথায় বসে আছে, এই রাস্তার সামনে কি আছে। একবার সে এই জঙ্গল থেকে ভালো ভাবে ফিরে এসেছে, এবার গেলে কি আর ফিরবে।
এবার অভির মোবাইলে দুই বার রিং হওয়ার পর অভি না চাইতেও রিসিভ করে বলে — হ্যালো, কে বলছেন?
— অভি আ আমি অনু বলছি আমি আম্মুর সাথে বাজার এসেছি এখন আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি আম্মু কোথায় যেনো চলে গেছে, আমার খুব ভয় লাগছে প্লিজ অভি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।
— কোথায় তুমি, কোথায় থেকে কথা বলছো,, ( অভি সিট থেকে জলদি দাড়িয়ে যায়, আসেপাশে থাকা সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে)
.
— আমি জানিনা এই জায়গার নাম কি, দাড়াও আমি জিজ্ঞেস করে বলছি।
অনু তাদের কাছ জায়গার নাম জেনে অভিকে বলে,, জায়গার নাম শুনতেই অভির পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যায়।
অভি আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে মোবাইল কানে রেখেই দৌড় দিয়ে বলছে আমি এখনি আসছি দশ মিনিটের মধ্যে, ঐ লোক গুলাকে বলো তোমার পাশেই থাকতে আমি এখনি আসছি।
অভি অনুর মুখে এই কথা শুনে ওর চোখে যেনো অন্ধকার সামনে যেনে অন্ধকার নেমে আসে,, সে ভুলে গেছে এই মিটিং এ তার কুটি টাকার লাভ হতে যাচ্ছিলো।
ম্যানেজার তাকে পিছন থেকে অনেক বার ডেকেছে কিন্তু অভির কাছে এসব কিছুই মনে হচ্ছে না।
অভি এখন এটুকুই ভাবছে যে তার জীবন তার দুনিয়া তার ইজ্জত এখন
বিপদে আছে তাকে বাচানোর জন্য এমন মিটিং কেন তার সব কিছু দিয়ে দিতে পারে।
অভি যে জায়গার নাম বলেছে সে জায়গাটা রেড লাইট এরিয়া থেকে ৫ মিনিট দুরের এলাকা,
এখানে রাত যত গভীর হবে নারী পুরুষের লিলা ততো বাড়বে।
অভি এখন যেখানে ছিলো সেখান থেকে এই জায়গায়
আসতে আধা ঘণ্টা লাগে কিন্তু অভি ১০ মিনিটের মধ্যে চলে আসে…
.
চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com