তোমাতে মাতোয়ারা
টি-শার্ট ভেদ করে, উদরে কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শে কেঁপে ওঠলাম আমি।বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে যে কাপড়গুলো ভাজ করছিলাম হাত থেকে সেটা বিছানাতেই ফেললাম। নিজেকে সামাল দিয়ে চাপা অভিমান নিয়ে শান্ত গলায় বললাম,
"আমি আপনার উপর রেগে আছি ডক্টর!"
তিনি নিজের মতোই কাঁধে ঠোঁট বুলাতে বুলাতে বললেন,
রাগার কোনো কারণ দেখছি না তো অনুপাখি"!
ছাড়ুন আমায়!
বলেই পেট থাকা হাতটা সরানোর চেষ্টা করতে শুরু করলাম। কিন্তু এই খাটাশটা নিজের শক্ত হাত দিয়ে এমনভাবে চেপে ধরে আছে যে ছোটানো মুশকিল! এবার আমি রেগে আবারো বললাম,
___" ছাড়ছেন না কেনো? সরুন আপনি!!"
___"কি হয়েছে বলবা তো!রাগ কেনো?"
(কাঁধে থুতনি রেখে)
___" কিছু না! ছাড়ুন আমায়"(শান্ত কন্ঠে)
___"আরে কিছু না তবে এমন বিহেভিয়ার কেনো?"( কানের কাছে ঠোঁট লাগিয়ে বললেন উনি)।
___ " বললাম তো কিছু না।আপনি মাত্র হাসপাতাল থেকে এলেন। না ফ্রেশ হয়েছেন আর না এপ্রোন খুলেছেন,হুট করে জড়িয়ে ধরার মানে কি?"
ওনার দিকে ঘুরে বললাম আমি।উনি ততক্ষণে কোমড়ে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে নিলেন অনেকটাই। আমি ওনার দিকে না তাকিয়ে গলার কাছে থাকা শার্টের বোতামটার দিকে তাকিয়ে আছি।বোতামটা খোলা!যার দরুন তার সাদা বুক স্পষ্ট। উনি এবার চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিতে দিতে বললেন,
এই কাজ তো আমি প্রতিদিনই করি। তখন তো বকো না। তো আজ কি হলো?
"কিছু না।" (নাক টেনে)
"কিছু তো একটা।বলো! রাগ কেনো?"
"রাগ করিনি।"
"করেছো অনুপাখি।বলো! কি হয়েছে? " (গালে হাত রেখে)
"যান ফ্রেশ হন।আমার জন্য ভেবে লাভ কি?"
" মানে?"(অবাক হয়ে)।
___"আপনি ওয়াশরুম যাবেন কিনা?"
___" আচ্ছা যাবো তো। শুনো না!"(দাঁত কেলিয়ে)
___ "বলুন।"
বলতে বলতে ততক্ষণে ওনার থেকে সরে ভাজ করা কাপড়গুলো হাতে তুলে নিয়েছি আমি। আলমারির সামনে গিয়ে কাপড়গুলো তুলে রাখলাম। অনুভব করলাম,উনিও আমার পিছন পিছন চলে এসেছেন। আলমারির দরজা লাগাতেই আবারো পিছন থেকে কোমড় জড়িয়ে পেটে হাত রেখে বললেন,
___ "শুনো!"
___"যা বলার বলে ফেলুন।আর হুটহাট না ধরে ছাড়ুন।কাজ আছে!"(বিরক্ত হয়ে)
___"এতোরাতে কিসের কাজ?"(ভ্রু কুঁচকে)
___"আপনার না জানলেও চলবে। যা বলার বলে আমায় যেতে দিন।"
___"এখন এই মুহূর্তে কোথাও যাওয়া হবে না।"
___"কেনো?"(ভ্রু কুঁচকে)
___"চলো একসাথে ফ্রেশ হই।"(দাঁত কেলিয়ে)।
___"কখনোই না।"(নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে)
___"আরে শুনো না!"
___"আমার কিছু শুনতে হবে না। যান, ফ্রেশ হন।"
নিজেকে ছাড়িয়ে দূরে এসে দাঁড়ালাম আমি। উনি এখনো ওখানেই দাঁড়ানো। সাদা শার্টের উপর এপ্রোনটা এখনো গায়ে। চুলগুলো এলোমেলো।শরীরটা যে ক্লান্ত সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তবুও তাকে থামানো দায়।উনি এবার ঠোঁট উল্টালেন। ঠোঁটের নিচে থাকা তিলটা যেনো মুহুর্তেই কুঁচকে গেলো।
___" ওই অনুপাখি!"
___" কি?"
___"এমন করছো কেনো আমার সাথে।" (অসহায় কন্ঠে)
___"কেমন করলাম?"(মলিন হেসে)
___"দোষটা তো বলো এটলিস্ট।তোমার এমন রাগ করাটা যে বেশ কষ্ট দেয় সোনা!"
___" কোনো দোষ নেই কারো।আপনি গিয়ে ফ্রেশ হন।রাত ১০ টা বেজে গেছে। আমি ডিনার আনছি। "
___" আমি ফ্রেশ হবো না।"
বলেই মুখ ফুলিয়ে বিছানায় বসে পড়লেন উনি।আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুম থেকে বের হয়ে কিচেন থেকে খাবার গুলো উপরে নিয়ে এলাম।ভেবেছিলাম, হয়তো উনি ততক্ষণে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসেছেন। কিন্তু না।উনি এখনো গোস্সা করে বসে আছেন।আমি খাবারগুলো সোফার সামনে টি-টেবিলে রেখে ওনার সামনে দাড়িয়ে বললাম,
___"এখনো ফ্রেশ হননি?"
___" হতে হবে না।"
___" নাটক কম করে গিয়ে ফ্রেশ হন।"
___" কি বললা তুমি?"
___"ভুল কি বললাম? রাত-বিরেতে নাটক করছেন কেনো? আমি এখন এই রাত ১০ টায় আপনার জন্য ভিজতে পারবো না।ঠান্ডা লাগলে দেখার মতো তেমন কেউ নেই। ফুপি যে আপনার দাদার বাড়ি গেছেন বাবাকে নিয়ে সেটা তো জানেনই।"
___" এমন করো কেনো? একদিনই তো।আর আমি তো আছিই তোমাকে সুস্থ করার জন্য।"(চোখ টিপে)
___ "প্রয়োজন নেই।আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।আমি খাবার নিয়ে ওয়েট করছি।"
___ "বাল!খাবো না আমি।"
বলেই সামনে থাকা আরেকটা টি-টেবিলে লাত্থি দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলেন উনি।আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাপড়গুলো এগিয়ে দিলাম।উনি ছো মেরে নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলেন।
খানিকক্ষণ পর চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হলেন সাদি ভাই মানে ডক্টর। প্রতিদিন চুল মুছে দেওয়ার জন্য বায়না করলেও আজ তা করেননি।নিজে নিজেই চুল মুছে টাওয়ালটা বারান্দায় মেলে দিলেন।বাহ! রাগ করার তে ভালোই ফায়দা। কাজ করানো যায়।উনি বিছানায় এসে শুয়ে পড়লেন।আমি এবার সামনে দাড়িয়ে বললাম...
___" খাবেন না?"
___"ইচ্ছে নেই।"(মুখ ঘুরিয়ে)
___"আমি কিন্তু আগেই বলছিলাম যে এই রাত ১০ টায় কোনো নাটক এলাউ করবো না আমি।"
___" ভালো।"
___"উঠুন।"
___ "উঠুন ডক্টর।নয়তো আমি আবার আপনাকে আগের মতো 'সাদি ভাই' বলে ডাকবো।"
___" ভালো।"
___ " এই রাতেরবেলা আপনার ভীষণ শখ জেগেছে বকা খাওয়ার।তাই না?"(মুচকি হেসে)
___" তুমি তো আমার সাথে এটাই করো।সবসময়ই করো।ছোটবেলায় আমি যা করতাম তা এখন উসুল করছো। "(মুখ ফুলিয়ে)।
___" ক্ষুধা লাগেনি?"
___" কি হয়েছে? "(উনার সামনে বসে)।
___" আমি তো আপনাকে বিরক্ত করছি না।এবার আপনি গিয়ে খেয়ে নিন।
আমি আর বিরক্ত করবো না।"
___"ফালতু কথা বলবেন না ডক্টর।আমি খুব ভালো করেই জানেন যে আমি আপনাকে ছাড়া খাই না।"
___" এখন থেকে সবই করবে।দূরে সরিয়ে রাখতে শিখে গেছো!"(মলিন হেসে)
___" আসবেন না? "
___" না,সারাদিন কাজ করার পর রাতে শান্তিমতো খেতে না পারলে এমন খাওয়ার দরকার নেই।"
___ " না খেয়ে আছি আমি।"
___" আমার মতো বিরক্তিকর মানুষের জন্য না খেয়ে থাকাটা সাজে না।
খেয়ে নাও।আমি জড়িয়ে ধরবো না বললাম তো।"
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাবারের একটা প্লেট ওনার সামনে এনে পাশের টি-টেবিলে রাখলাম।
ওনাকে টেনে তুলে মুখ চেপে খাবারটা সম্পূর্ণ খাইয়ে দিলাম।
উনি মুখ চেপে খাচ্ছেন।কিছু বলতেও পারছেন না।
পানি খাইয়ে দিয়ে হাতটা ধুয়ে নিলাম।
উনি আমার ওড়নার আঁচলে মুখ মুছতে মুছতে বললেন,
রাত ১০ টার সময় এসেও রাগের সম্মুখীন হতে হয়!
১০১ টা বকা দিয়ে তারপর ভাব দেখিয়ে খাইয়ে দেয়।হুহহ!
আগে খাইয়ে দিলে কি হতো? নেহাতই আমার অস্বস্তি লাগছিলো।
নয়তো আজ ওয়াশরুম নিয়েই যেতাম।না হলেও ২ ঘন্টা আটকে রাখতাম হুহ।"
"স্বপ্ন দেখে লাভ নেই জনাব। ঘুমান।"
" বলতে হবে না কারো।"
আমি আর কিছু বললাম না। উনিও শুয়ে পড়লেন।তবে ফোন চালাচ্ছেন।
আমি এখনো পায়চারী করছি।তা দেখে কিছু বলতে গিয়েও বললেন না উনি।
১২ টা বাজতে আর মাত্র ২ মিনিট বাকি।
আমি ওনার সামনে গিয়ে ফোনটা ছো মেরে নিয়ে নিলাম।
উনি ভ্রু কুঁচকে উঠে বসলেন।
আমি দুষ্টু হেসে চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে কপালে গভীর চুম্বন এঁকে বললাম,
"হ্যাপি বার্থডে ডক্টর।"
উনি চুমুটা চোখ বন্ধ করে অনুভব করলেন।
পরের কথাটা শুনে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন।
আমি তখন একগাল হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছি তার মুখপানে।
"আজ তো ১৫ই মে।"
"হু।জন্মদিন আপনার।"
"এটার জন্য এতক্ষণ ধরে আমার সাথে ওমন বিহেভিয়ার করলে?"
" বুঝলো তবে পাগল।"(আড়চোখে তাকিয়ে)।
"কি বললা তুমি?আবার বলো তো"( ভ্রু কুঁচকে)।
" কই?কিছু না তো।"
" তুমি আজ আমার সাথে ভীষণ অন্যায় করেছো।চুল মুছে দাওনি।
আর ফ্রেশ হওনি আমার সাথে।রুড বিহেভও করেছো।
জোর করে মুখ চেপে খাইয়েছো।কথা নেই।"(মুখ ফুলিয়ে)।
" উফফ ডক্টর! এমন মুখ ফুলাবেন না তো।
আমি এখন ২৭ বছরের বুড়ো বুঝছেন! এমন বাচ্চাদের মতো ফেস করবেন না।"
উনি কিছু না বলে টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দিলেন আমায়।
আমি উঠবার চেষ্টা করেও পারলাম না।
গলদেশে গরম নিঃশ্বাসের উপস্থিতি টের পেয়ে যেনো দম যায় যায়।কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
" কি করছেন ডক্টর!"
"হুশশশ"
" কেক কাটবেন তো। কতো কষ্ট করে বানালাম।"
"তোরে চুপ থাকতে বললাম অনু।বহুত জ্বালাচ্ছিস বাসায় আসার পর থেকে।"
"তো আমি এখন কেক না কেটে কি করছেন বলুন তো।"(মুখ ফুলিয়ে)
" কাম অন অনুপাখি!সকালে কেক কেটে নিবো।"
" অসভ্যা খাটাশের মতো কথা না বলে চলুন কেক কাটবেন।"
" ছাড়তে ইচ্ছে করছে না অনুপাখি।পরে কেটে নিবো।"(গলায় ঠোঁট বুলিয়ে)
"এক্ষুণি।"( মাথা ঠেলে সরানোর চেষ্টা করছি)।
"উফফ।"
উনি আমায় ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।আমি কেকটা সামনে দিতেই একসাথে কাটলাম। কেকটা নিয়ে খাইয়ে দিয়ে বললাম,
" কেমন লাগলো?"
উনি কিছু না বলে কেকটা নিয়ে সোফায় বসে নিজে নিজে কেটে খেতে শুরু করলেন।
আমি তো অবাকের চরম পর্যায়ে। আমার কেক আর আমাকেই দিলো না।
এতক্ষণ তো কেক কাটতে পাঠাতেই পারছিলাম না।
আর এখন আমাকেই দিচ্ছে না।আমি সামনে দাড়িয়ে কোমড়ে হাত রেখে বললাম,
" এসব কি হু?"
" কোনটা কি?"
" একা একা কেক নিয়ে বসলেন যে? আমি খাবো তো।"
" এই কেক আমি একাই খাবো বুঝছো।
আর এটা আমার অনুপাখি,আমার বউ আমায় গিফট করেছে। অন্নেক মজা!তুমি যাও গিয়ে ঘুমাও।
___" আপনি তো ভারী..."
___" তুমি কি চাচ্ছো আমি আসি?"(ভ্রু কুঁচকে)।
___"নন..না।ল..লাগবে না।আপনি একাই খান।"
___ "এখন বললে তো আমি শুনবো না বউ।"(এগুতে এগুতে)
___" এগুতে না করলাম।"(আঙুল উঁচিয়ে)
আমি পালানোর আগোই খপ করে আমায় ধরে ফেললেন উনি। চকোলেট মাখানো ঠোঁট আমার গালে স্পর্শ করে বললেন,
___"তুমি জানো না?তোমাতে মাতোয়ারা আমি। তবুও কেনো এতো কষ্ট দাও হু? আলাবু না?
___" হু!আলাবু।"
বলেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলাম আমি।সাদি ভাইও শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলেন আমায়।চোখ বন্ধ করে অনুভব করছি মুহুর্তটা!
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com