Breaking News

বিচ্ছেদ। পর্ব - ০৫ এবং শেষ



এর মাঝে হুট করে শাহেদ মানে আমার চাচা শ্বশুরের ছেলে কি করে যেন জেনে গেলো রিপোর্ট টা ভুল ।
ও খোঁজ খবর লাগিয়ে জানলো মূল সমস্যা আমার মাঝে নয় ইয়াসিরের মাঝে ।
ওর আমার ওপর দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন হলো ।
সবসময় কেমন কামনার চোখে দেখতে লাগলো আমাকে ।
সবার সামনে ঠিকঠাক কিন্তু সবার অলক্ষে আমার কাছে আসতে চাইতো । ছোঁয়ার বাহানা খুঁজতো ।
আমি ইয়াসিরের সাথে শেয়ার করলাম ব্যাপারটা ।
ও বললো তোমার ভুল ধারণা এটা , শাহেদের ওয়াইফ আছে বেবী আছে ও কেনো করবে এটা?
আমি বুঝলাম প্রমাণ ছাড়া পসিবল না ।
শ্বাশুড়ি মা কথায় কথায় ঝগড়ার বাহানা খুঁজতে শুরু করলেন ।
প্রতিদিন বাড়িতে ঝামেলা লাগতোই একপ্রকার ।
ইয়াসির শুরু শুরু তে কিছু বললেও এখন চুপচাপ হয়ে গেলো ।
আমাদের মাঝে একটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়ে গেছিলো আমি বুঝতাম ।
শাহেদের অত্যাচার বাড়লো ।
.
ও আমার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতো সুযোগ পেলেই ।
একদিন আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেলো আমি শাহেদ কে থাপ্পড় মারলাম , চেঁচামেচি করলাম ।
সবাই ছুটে আসলো চেঁচামেচি শুনে ।
সবটা খুলে বললেও কেউ বিশ্বাস করলো না বরং উল্টো আমাকেই কথা শোনালো ।
শাহেদ ব্যাপারটা অন্যভাবে প্রেজেন্ট করলো ।
আম্মা তো রাগে আগুন ।
আমি ইয়াসির কে বললাম চলো আলাদা হয়ে যাই ।
আলাদা হবার কথা শুনে ও আমার ওপর চড়াও হলো ।
বললো আই থিংক উই নিড আ ব্রেইক ।
বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড এর সম্পর্কে ব্রেইক হতে পারে হাজবেন্ড ওয়াইফ এর সম্পর্কে এমন কিছু কি আদৌ আছে ??
আমি বিশ্বাস করতে ই পারছিলাম না ওর কথা ।
তবে এটা বুঝতে পারছিলাম বাবা হওয়ার চাহিদা ওকে ওর ভালোবাসা ভুলিয়ে দিয়েছে ।
ওর মা নতুন বিয়ে করানোর যে চিন্তার বীজ ওর মাথায় ঢুকিয়েছেন তা অঙ্কুরিত হতে শুরু করেছে ।
নিজের জীবনের ওপর হাসি আসছিলো আমার ।
তবে আমি নিজেকে প্রমিস করেছিলাম শাহেদের অত্যাচার আমি আর সহ্য করবো না ।
এতে আমাদের আলাদা হতে হোক সমস্যা নেই ।
.
ও তো একটা পাপেট হয়ে গেছিলো ওর মায়ের হাতের , এর পরেও আমাকে কত অপমান সইতে হয়!
ও দ্বিতীয় বিয়েতে মত না দিলেও না ও করেনা ।
আমি জানতে চাই ও আসলে কি চায়?
ও বলে তোমাকে ছাড়া তো আমার থাকা সম্ভব না কিন্তু মা..
বুঝে যাই ওর মন কি চায়!
আনোয়ার সাহেব একটা সংসার কখনোই ছোটখাট কারণে ভাঙে না ।
আমার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তো আমার ওপর শারিরীক নির্যাতন করেনি
ওরা আমাকে মানসিক ভাবে ভেঙে দিয়েছে।
আমি যাকে ভালোবেসেছিলাম সে একটা ব্রেইক চেয়েছে সম্পর্কে ।
জীবনে প্রথমবার সে কিছু চাইলো আর আমি দেবোনা তা কি হয়?
ও ব্রেইক চাইছিলো দিচ্ছি ব্রেইক ।
— আর শাহেদের শাস্তি?
ওর শাস্তি তো সৃষ্টিকর্তাই দিয়েছেন আনোয়ার সাহেব ।
গত একমাস আগে ওর একটা আ্যাক্সিডেন্ট হয় এবং ও প্যারালাইজড হয়ে যায় ।
— আপনার হাজবেন্ড কি কখনো জানতে পারবেন না মূল সমস্যা ওনার মাঝেই?
— সে তো জানে ।
— জানে?
.
— জ্বী । শাহেদ এবার আসলেই ওর ভুলটা বুঝতে পেরেছিল হয়তো ।
ও ই সবাইকে আসল সত্যিটা জানায় ।
— মা তা’হলে সব তো ঠিক হবার পথে । বিচ্ছেদ টা কি জরুরী?
— আনোয়ার সাহেব সম্পর্কে যখন তিক্ততা আসে তখন সম্পর্ক বয়ে বেড়ানোর থেকে বের হয়ে আসা ভালো ।
বিশ্বাস স্বচ্ছ কাঁচের মতো , এটা একবার ভেঙে গেলে ভালোবাসাও পারেনা জোড়া লাগাতে ।
আমার হাজবেন্ড কে আমি অন্ধের মতো বিশ্বাস করতাম ,
কখনো মাথায় আসেনি সে খারাপ সময়ে আমার হাত ছেড়ে দেবার চিন্তা মাথায় আনবে
কিন্তু আমি ভুল প্রমাণিত হলাম ।
আমার অন্ধবিশ্বাসের এবং ওর আমার বিশ্বাস ভাঙার শাস্তি একমাত্র বিচ্ছেদ ।
— মা তবুও যদি একটু ভাবতেন?
.
— আনোয়ার সাহেব কথার ভেতরও কথা থাকে । কিছু জিনিস ব্যক্তিগত থাকে ।
ব্যক্তিগত কিছু জিনিস থাকে যেগুলো কাউকে বলা যায় না ।
সম্পর্ক সহজ করতে যখন একজন উপায় হিসেবে ব্রেইক বেছে নেয়
এমনকি অপরজন চেষ্টা করার পরেও সে তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে
তখন আসলে আর চেষ্টার নয় বিচ্ছেদের দরকার পড়ে ।
আমার হাজবেন্ড ঘোর থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে কিন্তু বড্ডো দেরি হয়ে গেছে ।
শ্রদ্ধা, সম্মান আর ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখতে বিচ্ছেদ দরকার ।
হয়তোবা কখনো সৃষ্টিকর্তা চাইলে আলাদা পথে হাঁটতে হাঁটতে একটা গন্তব্যে দেখা হয়ে যাবে আমাদের ।
রুশরা অনেক শক্ত থাকার চেষ্টা করলো কিন্তু তার অজান্তেই তার চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো ।
আনোয়ার সাহেব চুপচাপ মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন ।
একটু ভালো করে লক্ষ করলেই দেখা যায় এই মায়াবী মুখটাতে অসহনীয় কষ্ট , যন্ত্রণার ছাপ ফুটে উঠছে!
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পেপারে কলম বসালেন আনোয়ার সাহেব ।
ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখতে হয়তো কখনো বিচ্ছেদও দরকার ।
<>সমাপ্ত<>

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com