দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে হবে তাহলেই জীবন ও সংসার সুখের হবে
পাত্রীপক্ষের সামনে বসে আছি।
সামনে আনা হলো পাত্রীকে।
পাত্রী দেখে সবাই অবাক।
পাত্রীর এক পায়ে সমস্যা আছে।
খাবার সামনে।
পাত্রী দেখে খাবার কেউ মুখে দিলো না।
পাত্রীপক্ষের বুঝতে আর বাকী রইলো না যে পাত্রী আমাদের পছন্দ হয়নি।
আমি ইশারা দিয়ে খেতে বললাম।
মা খাবার মুখে নিলো।
আর আমার ছোট মামা খাবার খেতে রাজী না।
আমাদের ভাব লক্ষন দেখে পাত্রীর চোখে পানি আসলো।
যেটা আমার চোখ থেকে আড়াল হয়নি।
আমি সবার অনুমতি নিয়ে পাত্রী নিয়ে ছাদে গেলাম।
দুজনেই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি।
নীরবতা ভেঙে পাত্রী-ই কথা বলতে শুরু করলো।
চোখের পানিতে কাজল গলে গিয়েছে।
কিন্তু নিচে পড়তে পারছে না মেয়েটির আটকে রাখার আপ্রান চেস্টায়।
কথা বলার আগে ঠোঁট হাজারবার কাঁপছে।
গলাটাও কান্না চেপে রাখার জন্য কাঁপছে।
আমি মেয়েটাকে পর্যবেক্ষণ করছি।
.
- দেখুন আমি জানি এইবারেও আমি রিজেক্টেড হবো।
এই পর্যন্ত আমাকে ২৮ বার রিজেক্ট করা হয়েছে।
- কি কি রান্না পারেন আপনি??
- জি?
- বলেছি আপনি কি কি আইটেম রান্না পারেন?
মানে আমি অনেকটা ভোজনরসিক মানুষ।
তাই জিজ্ঞেস করছিলাম আর কিহ।
রান্না করতে পারেন?
মেয়েটা কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
- জি আমি সব ধরনের রান্না পারি।
ইভেন আজকে আপনাদের দেয়া খাবার গুলোও আমার নিজ হাতে বানানো।
এইবার আমিই অবাক হলাম।
এত সুন্দর করে খাবার বানিয়েছে আমি তো ভেবেছিলাম সব অর্ডার করে আনা।
- বাহ!
আচ্ছাহ শাড়ি কি নিজে পরতে পারেন নাকি অন্যের হেল্প লাগে?
এইবার কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেল।
- জি পারি।
কিন্তু কুচি ঠিক করার জন্য কারো হেল্প দরকার হয়।
- ভেরি গুড।
আচ্ছা আপনার নাম টা তো জানা হলো না।
- সুইটি।
.
- বাহ সুন্দর নাম।
এখন চোখ মুছে নিচে চলুন।
আর হ্যাঁ কাজল যেন মুছে না যায়, সাবধানে।
এটা বলে আমি নিচে চলে আসলাম।
আসার আগে সুইটির চোখের দিকে একবার তাকিয়ে বিস্ময় আর খুশি দেখতে পেলাম।
আমি নিচে এসে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দিলাম।
আমাদের পরিবার মামার কথায় চলে।
কিন্তু আমি এইবার মামার বিপক্ষে গেলাম।
সমস্ত আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হলো।
কিন্তু বিয়ের দিন মামা আসেননি।
বিয়ের দিন সুইটি আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
"আচ্ছা আপনি আমাকে বিয়ে করলেন কেন?
করুনা করেছেন?"
আমি সুইটির দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলাম।
- আচ্ছা আমাকে এমন একটা মানুষ দেখাও যে সবদিক থেকে পারফেক্ট।
পারবে দেখাতে??
- না। কিন্তু....
- কিন্তু কি?
প্রতিটা মানুষই কোন না কোন দিক থেকে অপূর্ণ।
কেউই পারফেক্ট হয়না।
শুধু এডজাস্ট করে চলতে হয়।
সম্পর্ককে গুরুত্ব দিতে হয়।
তাহলেই সবাইকে সুন্দর আর পারফেক্ট মনে হয়।
আর ভালো থাকা যায়।
- সেটা তো ঠিক।
কিন্তু আমাকে কি দেখে পছন্দ করলেন?
.
তোমার চোখ দেখে৷
তোমার চোখে আমি শ্রদ্ধাবোধ আর একটা চাপা কষ্ট দেখেছি।
জানিনা কেন তার মায়ায় পড়ে গেছি৷
আর তাছাড়া যে মেয়েটা সব প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গেছে
সে সব রকম সমস্যায় আমার পাশে থাকবে৷
আর তাছাড়া তোমার পায়ের সামান্য সমস্যা
কখনোই তোমার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের মাপকাঠি হতে পারে না।
তোমার আরো সে সব প্রতিভা আছে সেটা তোমাকে উচ্চতায় নিয়ে যাবে৷
আর এ লড়াইয়ে আমি তোমার পাশে থাকবো আজীবন।
সেদিন সুইটি আমার বুকে মাথা রেখে কেঁদেছিলো অনেক সময়।
সে এখন কলেজের শিক্ষিকা।
তার অনেক সন্মান।
আজ আমাদের প্রথম বাচ্চা পৃথিবীতে এসেছে।
আমার প্রিয়তমা আমাকে অনেক ভালোবাসে।
আমার প্রতি তার ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ আর সম্মান দেখে আমি বারবার অভিভূত হই৷
একজন আদর্শ স্ত্রীর এতগুলো গুন কখনোই একটা সমস্যার কাছে ঠুনকো হতে পারে না।
সমস্যা তো আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে।
সমাজে কিছু মামা খালু, চাচার কারনে মাথা উচু করে কিছু করা যায় না।
তারা বাধা দিবেই।
তাদের এই বাধাকে ইনগোর করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
মানুষকে মানুষের মত সন্মান করতে হবে।
বড় কথা হলো আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com