Breaking News

আড়ালে সত্যটা । পর্ব - ০৭

ডাক্তার তিশার প্র্যাগনেন্সি রির্পোট দেখে বললো পজিটিভ।

নয়নতারা সাথে সাথে রাজকে ফোন করে বললো,'স্যার আপনি মিষ্টি খাওয়াবেন আমাকে।

আমাদের আপামণি মা হতে যাচ্ছে।

🤷‍♀️
- রাজের হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল! হাতটা কাঁপছে।
এটা কিভাবে সম্ভব তিশার সাথে প্রায় ছয়মাস হবে শারীরীক কোন সম্পর্ক হয়নি তার।
তার মানে তিশার গর্ভের সন্তানের বাবা সে নয়।
হঠাৎ মনে পড়ে গেল সেদিনের কথা যেদিন সারারাত তিসা আর তিশান একসাথে রাত কাটিয়েছে।
তাছাড়া না জানি আরো কত ছেলের সাথে কুর্কম করেছে।
অন্যের অবৈধ সন্তানের বাবা হতে হবে।
কথাটা ভাবতেই বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠলো।
বারবার অধরার কথাগুলো কানে বারি খাচ্ছে নিরাপরাধ মেয়েটাকে
কলঙ্কের বোঝা চাপানোর এই শাস্তি যে আল্লাহ এতটা করুণভাবে ভোগ করাবে সে ভাবতেও পারেনি।
.
- এদিকে সন্ধ্যায় নয়নতারা তিসাকে নিয়ে বাসায় ফিরলেই।
নয়নতারা দৌড়ে রাজের কাছে এসে বলে, ' স্যার আমার অনেক খুশি লাগছে। ''
আপনাদের প্রথম বাবুটা মারা গেলে আপামনি আর আপনি অনেক কান্না করছেন।
আমার কাছে অনেক খারাপ লাগছে। জানেন স্যার আমি যতবার নামায পড়তাম।
ততবারই আপনার আর আপামনির জন্য দোআ করতাম।
যেন আল্লাহ আপনাদের ঘরে আরেকটা বাবু দেয়। আল্লাহ আমাদের দোআ কবুল করছে। 😘🥰
-নয়নতারার কথা শুনে রাজের চোখ থেকে নীরবে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
সে কি করে বলবে তিশানের গর্ভের বাবা সেই নয়। অন্য কেউ। 🥀
- স্যার আপনি কাঁদছেন কেন? নয়নতারা রাজের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো।
- নয়ন তুই আমাকে স্যার নয় ভাইয়া বলে ডাকবি কেমন? আজ থেকে আমি তোর ভাই।
- না স্যার আপনি কত বড় লোক? আপনাকে কিভাবে ভাইয়া ডাকি?
আর আমি আপনাদের বাসার সামান্য কাজের মেয়ে।
- কাজের মেয়েরা কি মানুষ না তাদের কি আল্লাহ সৃষ্টি করেনি?
তুই আজ থেকে আমাকে ভাইয়া ডাকবি। ঠিকআছে?
- নয়নতারা রাজের কথা শুনে খুশি হয়ে যায়। চোখ থেকে খুশিতে অশ্রু ঝরতে থাকে।
- কি হলো কাঁদছিস কেন?
.
- জানো ভাইয়া ছোট বেলায় মা মারা যায়। বাবা আমাকে রেখে আরেকটা বিয়ে করে।
সৎমা আমাকে একটু বড় হতেই মানুষের বাড়িতে কাজে লাগিয়ে দেয়।
জীবনে মায়ের মমতা বাবার স্নেহ পায়নি কোনদিন।
আর তুমি সেই অভাগীকে বোন বানিয়েছ। সত্যিই ভাইয়া আমি অনেক খুশি হয়েছি অনেক। অনেক।
- আচ্ছা এবার তাহলে হাসই।
- রাজ যখন নয়নতারার সাথে কথা বলছে এমন সময় তিশা এসে রাজের পাশে বসলো।
-নয়নতারা রুম থেকে বের হয়ে গেল।
- নয়নতারা রুম থেকে বের হতেই রাজ বললো,' আচ্ছা তিশা আমাকে তুমি সত্যিই ভালোবাসতে? ''
- হঠাত এমন কথা বলছো কেন?
- না আমার মনে হচ্ছে। আচ্ছা বাদ দাও নয়নতারা যা বললো তা কি সত্যি?
- কিসের কথা বললো?
- তুমি নাকি মা হতে যাচ্ছো?কথাটা কি সত্যি?
- হুম মিথ্যার কি আছে। আমি মা হতে যাচ্ছি আর তুমি বাবা!
- তিশা প্লিজ চুপ কর! এটা কিভাবা সম্ভব? তোমার সাথে গত ছয়মাসে আমার কোন শারীরীক সম্পর্ক হয়নি। তুমি মা হও কিভাবে?
.
- রাজ তুমি কিন্তু বেশি বলছো?
- কি বেসি বলছি? তুমি বলো তোমার গর্ভের সন্তানের বাবা কে?
- কেন আবার তুমি।
- চুপ! নষ্টা লজ্জা করে না আমার সন্তানের কথা বলতে? এই তোর ভালোবাসা? আমি কো মরে যায়নি। এসব দেখতে হবে কখনো ভাবিনি।
- শোন মিঃ রাজ তুমি মানলেও আমার গর্ভের বেবির বাবা তুমি আর না মানলেও।
- চুপ আর একটা কথাও না। তোমার মতো নষ্টা মেয়ে যেন আমার সাথে কথা না বলে।
- বাহ! অধরার গর্ভে স্বপ্নে সন্তান আসতে পারলে, আর তোমার স্ত্রী হওয়াই আমার গর্ভে সন্তান হলেই দোষ?
- প্লিজ চুপ কর! তোমার মতো নষ্টার চেহারা আমার দেখার ইচ্ছা নাই।
তোমার জন্য অধরার মতো নিষ্পাপ মেয়েকে কষ্ট দিয়েছি। আল্লাহ এজন্যই আমাকে শাস্তি দিচ্ছে।
আচ্ছা তিশা তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে?আমরা দুজনে ভালোবেসেই তো বিয়ে করেছিলাম।
আজ তোমার যদি আমার মতো কোন অবস্থা হতো তাহলে আমি তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।
আমি সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবাসি তিসা।
কিন্তু তুমি আমার অসুস্থতার সুযোগে অন্য ছেলের সাথে অসভ্যতামি করছো।
লজ্জা করে না, অন্য ছেলে তোমার শরীর স্পর্শে করতে?
প্লিজ তুমি আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলো। তবুও এভাবে শাস্তি দিয়ো না।
.
- রাজ তোমার ভালোবাসা রাখো।
তোমার মতো পঙ্গুকে আমার স্বামী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছি এটাই তোমার ভাগ্য।
তুমি কি জানো একটা মেয়ের শারীরীক চাহিদা থাকে।
আর তোমার কি আছে? তিশানের যা আছে তার অর্ধেক সম্পদ ও নেই তোমার।
- বাহ! প্লিজ তুমি আমার চোখের সামনে থেকে যাও। সত্যিই তোমাকে দেখে ঘৃণা করছে।
- তিশা আর কিছু বললো না।
- এদিকে রাতে রাজ তিশাকে দেখলো কার সাথে যেন ফিশফিসিয়ে কথা বলছে।
ক্রমেই কথা স্পর্ষ্ট হতে লাগল।
- এক পর্যায়ে তিসা বললো,' তিশান আমরা কবে বিয়ে করছি? আমার আর ভালো লাগে না।
- আরে বেবি আর কয়েকটা দিন যাক।
- আচ্ছা তিশান জানো তোমার সন্তানের মা হতে যাচ্ছি! রাজ বেচারার সাথে ঝগড়া হলো।
- তাই বুঝি! ওলে বেবিতা।
- হুমম রাজ কান্না করে দিয়েছে।নিজের কিছু করার মুরদ নেই অন্য কিছু করলে জ্বলে।
- বেবি বাবুটা নষ্ট করে দিবে?
.
- কেন নষ্ট করবো? বাবু তো তোমারি? আমরা তো বিয়ে করছি।
আচ্ছা আমরা কবে বিয়ে করবো জানেমন তোমাকে ছাড়া আর আমার তো ভালো লাগছে না।
খুব করে তোমাকে কাছে পেতে মন চাচ্ছে।
- আমারো ভালো লাগছে না।
- তাই বুঝি তাহলে জানেমন এসে পড়ো?
- যেতে তো মন চাচ্ছে। কিন্তু পঙ্গুটা কি মনে করবে?
- আরে তুমি আসো পঙ্গুটা কি মনে করবে আবার? সে পারে না কি কিছু?
নিজে তো খেতেই পারে না।
- আচ্ছা তুমি ওয়েট করো আমি আসছি।
- আচ্ছা।
- প্রায় ত্রিশ মিনিট পর রাত এগারোটার দিকে কলিং বেলটা বেজে উঠে।
রাজ তিশার দিকে তাকায়। তিশা আজ খুব সুন্দর করে সেজেছে।একদম নতুন বউয়ের মতো।
- রাজের চোখের সামনে তিসান আর তিসা দুজনে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।
রাজের বুক ফেঁটে কান্না আসছে। এ কান্না তিশার জন্য না।অধরার জন্য।
সত্যিই অধরার সাথে সে অনেক অন্যায় করেছে।
মিথ্যা প্রেমের অভিনয়। সবকিছু চোখের সামনে ভাসছে।
.
- অন্যদিকে তিশান সারা রাত তিশার সাথে থেকে সকাল বেলা ব্রেকফার্স্ট করে বের হয়ে যায়।
নয়নতারা সবকিছু বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকে।
- এদিকে মাসখানেক এর মাঝে রাজের সব সম্পত্তি কৌশলে নিজের করে নেয়।
ফলে রাজের বাড়ি নিলাম হয়ে যায়।
- তিশা আর তার মা বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আগে রাজের মুখে ডির্ভোস লেটার ছুড়ে ফেলে যায়।
রাজ শুধু তিশার চলে যাওয়ার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে।
নতুন বাড়িওয়ালা রাজকে বাসা থেকে বের করে দেয়।
সবাই ছেড়ে গেলেও নয়নতারা রাজকে ফেলে যায়নি।
-নয়নতারা রাজকে নিয়ে কোথায় যাবে।
কিভাবে চিকিৎসার খরচ জোগাবে কিছু ভাবতে পারছে না।
রাস্তায় একটা হুইল চেয়ারে করে রাজকে নিয়ে যাচ্ছে।
- নয়ন এখানে দাঁড়া।
- কেন ভাইয়া?
- কোথায় নিয়ে যাবি বোন আমাকে? তুই বরং আমাকে রাস্তায় ফেলে চলে যা।
- ছিঃ ভাইয়া কি বলছো।
- আমি ঠিকই বলছি। আচ্ছা নয়ন আমার অনেক ক্ষুধা পেয়েছে। একটু পানি খাওয়াবি?
- নয়ন রাস্তার পাশ থেকে খাবার আনতে গেলে। হঠাৎ রাজের চোখ আটকে যায় একটা মেয়ের দিকে।
পিছন থেকে ডাকছে শুনতে পাচ্ছে না।
রাজ উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে হুইল চেয়ার থেকে পড়ে যায়।
সবে মাত্র স্কুল ছুটি হয়েছে।
ছোট্ট একটা মেয়ে তার মায়ের হাত ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে রাজের সামনে এসে
তার মাকে ডাক দিয়ে বলে,' মম দেখে যাও।
আঙ্কেলটা পড়ে গেছে চেয়ার থেকে।''
- অধরা রাফিয়ার কথা শুনে তার মেয়ের পাশে এসে দাঁড়াতেই বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে।
রাজকে সে এভাবে দেখবে কল্পনাও করতে পারেনি।
হাতের ব্যাগটা কাঁপতে কাঁপতে পড়ে যায়।
- মম দেখ এটা আমার '''

.
চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com