কবিতা - ক্ষুধার্ত
হোটেলের সামনেই শুধু অপেক্ষা থাকি,
কেউ ডাকবে, গরম ভাত অর্ডার করে।
ক্ষুধার্ত পেটের ভিতর আগুন জ্বলছে।
কিন্তু কারো কাছে হাত পেতে
ভাত খাবার টাকা চাইলেই সবাই
এড়িয়ে গিয়ে বলে - মাফ করেন!
দূরবীনের মতো যখন দূর থেকে
কারো প্লেট ভর্তি গরম ভাত থেকে
যখন স্পষ্ট দেখি ধোঁয়া বের হচ্ছে।
যেন এই পেটের ক্ষুধার বাষ্প
উর্ধ্বগগণে উড়ে যাচ্ছে।
বড় ইচ্ছে হয় এই পোড়া কপালে
চাঁপড়ে চেঁচিয়ে পাড়া মাতিয়ে দেই-
" খিদা লাগছে, আমারে একটু খাওন দে।
সেই সকাল থেইক্কা না খায়া আছি!
আমার কি হক নাই তিন বেলা খাওনের?
ক্ষুধায় খাইতে চাইলে সবাই ক্যান
আমারে তাড়াইয়া দেয়?
আমার লগে খারাপ ব্যবহার করে?
নীরবে এসব বিড়বিড় করে বলতে বলতে চোখ মুছতে মুছতে নতুন
অন্য কারো কাছে হাত পাতি।
ক্ষুধার্ত তাই কি আমার প্রতি
কারো ভালোবাসা নেই, যত্ন নেই।
এই ক্ষুধার্ত মানুষটার বেঁচে
থাকাটাই যেন সবার কাছে বোঝা।
কেউ এসে খোঁজ নেয়না।
পেটের কষ্টের চেয়ে মনের ভিতরের
এসব দ্বন্দ্বই যেন বেশি পীড়া দেয়।
দেহের চামড়ায় ভাজ পড়ছে।
চুল পাকছে, চোখ ঝাপসা।
বয়সের ভারে কুঁজা হয়ে হাঁটি।
পরনের জীর্ণ কাপড়ের আঁচলে মাথা ঢাকি।
শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।
নানা অসুখ বিসুখ লেগেই আছে।
ধীরে ধীরে সে যেন দ্রুত
মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছি।
তার কাছে বেঁচে থাকার একেকটা দিন
মৃত্যুর একেকটা সিঁড়ি।
মাথা জুড়ে শুধু কল্পনা
কেউ খেতে ডাকছে, তখন
প্রশান্তির দৃষ্টিতে খুঁজি
ফিরি আমার মৃত মা-কে।
যেন সে পাটি বিছিয়ে খাবার বেড়ে
বসে আছে ঠিক আমারই সামনে।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com