ভালবাসার প্রথম ছোঁয়া । পর্ব -৩০
গাড়িতে সবাই দুষ্টুমি করতে করতে আলির বাসায় এসে পৌঁছে যায়,,
সারিম রুবিকে দেখেই সব গুলা দাঁত বের করে হেঁসে দেয়।
রুবি মুখ ভেংচি কেটে কিচেনে চলে যায়,,
সবাই এসে ড্রয়িং রুমে বসে কিছু সময় গল্প করার পর সারিম রুবির
কাছের যাওয়ার জন্য বুদ্ধি বের করে কিভাবে আলিকে বুঝিয়ে অফিসে পাঠানো যায়।
— আলি তুমি আজ অফিসে যাচ্ছো না কেন, যাও অফিস থেকে ঘুরে
আসো আমরা আছি রাত পর্যন্ত তুমি আমাদের নিয়ে টেনশন কইরো না।
আমরা তুমি আসা অব্দি যাব না।
— আমি তো ভাবছি তোমরা চলে যাবে তাই তো যেতে চাইনি আজ অফিসে,
এখন তোমরা যখন বলছো থাকবে তাহলে একবার অফিস থেকে ঘুরপ আসি,
তবে দুপুরে একসাথে লান্স করবো, আমি এক ঘন্টার ভেতর চলে আসবো তোমরা থাকবে কিন্তু।
— ওকে আমরা আছি তুমি একদম টেনশন কইরো না আর বাসায় আসার জন্য বেশি
তাড়াহুড়া কইরো না, আস্তেধীরে আসলেও হবে৷
.
আলি চলে যায়, সারিম পানি খাওয়ার নাম করে কিচেনে চলে যায়।
তালাল সাহেব এখানে বসে ওদের দুজনের বিয়ের কথা বলে,
ছালমা বেগম এই কথা শুনে রাজি হয়ে যায় কারণ এক কথায় এটা নিজেদের এক বাড়ি মনে করে।
ছালমা বেগম রাজি হওয়ার সাথে সাথে এটাও বলে দেয়,
বিয়ে যেনো এক মাসের ভেতর হয়ে যায় তারপর ওদের জলদি ইংল্যান্ড পাঠিয়ে দিবে।
সারিম কিচেনে গিয়ে রুবির পিছে গিয়ে গলার আওয়াজ দেয়,
রুবি পিছনে ফিরে বলে তোমার আর কোন কাম নেই সব সময় আমার পিছেই পরে থাকো।
— আমার জন্ম হয়েছে তোমার পিছে পরে থেকে তোমাকে ডিস্টার্ব করার জন্য,
তাই তো তোমাকে আপন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি,
তারপর দেখবে কিভাবে তোমার জীবনটা জ্বালিয়ে পুরিয়ে ছাই করি।
— তার মানে তোমরা কি আজ আমার বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে এসেছো,
খবরদার আমি বলে দিচ্ছি আমি ভুলেও তোমাকে কোনদিন বিয়ে করবো না,,
তোমার মতো মেন্টালকে বিয়ে করে আমার লাইফ নষ্ট করতে চাই না।
— আরে আরে পাগলি কয় কি, যার জন্য এতো কিছু সে বলে না,,
তুমি জানো আমি তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কতো কষ্ট করি,,
গানও মুখস্থ করি, এই দেখো আমার গান,,, আমি এসেছি তোমার দরজায়,
খালি হাতে দিওনা ফিরিয়ে,,
.
সাথে নিয়ে যাব তোমায়,
দুর কোন এক অজানায়।
সারিমের এই গান শুনে রুবি হাসি লুকানোর জন্য ফ্রিজের দরজা খুলে মুখ লুকিয়ে হেসে দেয়,,,
এর মাঝেই অভি দরজায় দাঁড়িয়ে গান শুরু করে দেয়,, ভাই তোমারি এহি গান শুনিয়া,
রুবি মুখ লুকাইয়াছে,
ফ্রিজের দরজা খুলিয়া,
আর একটু গাহিলে গান,
যাবে ওনি মরিয়া।
অভির এসব শুনে রুবি নিজের হাসি আর ঠামাতে পারেনি,,
হাসতে হাসতে পেটে হাত দিয়ে বসে গিয়ে বলে,
এই গান গুলার শিল্পি কে একটু নামটা বলো তো, আমিও শুনবো ওর গান।
সারিম অভির উপর প্লেট ছুড়ে মারে, অভি দৌড় মেরে চলে আসে।
— তুমি জানো রুবি আমি সেই কখন থেকে ওখানে বসে আছি,
সেই তখন থেকেই একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম এখানে তুমি
একা কাজ করতেছো কেউ তোমার একটুও খবর নিতে আসেনি তাই আমি নিজেই চলে আসলাম।
অভি ওখানে রাখা চককেট আর কেক মিক্সি করে খেতে খেতে বলে।
— আমার খবর নেয়ার দরকার নেই, আমি এমনি ঠিক আছি, তুমি ইংলেন্ড যাচ্ছো না কেন,,
সারাদিন বাড়িতে পরে থাকতে থাকতে খারাপ হয়ে যাবে তো।
.
— আরে পাগলি আমার বাড়িতে থাকাটা বেকার যায়নি,
আমি যা করার জন্য রয়ে গেছি তা আজ সফল হতে চলেছে,
তাছাড়া এই বাড়িতে আমার কথা কেউ ভাবেনা একমাত্র তুমিই ভাবো তাই তো
তুমি বলেছো আমি বাড়ি থাকলে নষ্ট হয়ে যাব, এমন করে শুধু ভালবাসার মানুষ ছাড়া আর কেউ ভাবেনা।
— ভালবাসা না ছাই, আমি তো তোমাকে আমার পিছু ছুড়ানের জন্য বলছি।
— আমি চলে গেলে তোমার হাতের চকলেট কেক খাবে কে গো,,
সত্যি তোমার হাতের চকলেট কেক অনেক মজা,, তুমি কি করে জানো এটা আমার খুব প্রিয়,,
লোকে সত্যিই বলে যার সাথে যার ভাব, তাকে কিছু না বললেও লাভ, এমনি এমনিই সব জেনে যায়।
রুবি ওর সামনে থেকে টান মেরে কেক নিয়ে ফ্রিজে রেখে দেয়।
— রুবি তোমার জন্য আরেকটা গান মনে হয়ে গেছে, শুনাবো নাকি আরেকটা,,,
— না থাক আর শুনাতে হবে না, এখান থেকে চলে যাও নয়তো আমি ভাইয়াকে ডাক দেবো।
— এমনি এমনি চলে যাব নাকি,, তোমাকে না রাজি করিয়ে আমি কোথাও যাব নাকি।
শুধু দোয়া করো এই সপ্তাহে যেনো আমাদের বিয়েটা হয়ে যায় তারপর আমরা ইংল্যান্ড ও তো যেতে হবে।
( সারিম এসব বলতে বলতে বিরিয়ানির পাতিলের ঢাকনা তুলে ঝুকে ঘ্রাণ নেয়) বাহ কি ঘ্রান তোমার হাতের বিরিয়ানির, মন তো চায় তোমার হাতের আঙুল এক এক করে চুষে খেয়ে ফেলি।
রুবি একটু রাগি শুরে বলে, আমি জানি তোমার নিয়ত যে খারাপ, জলদি বিরিয়ানির ঢাকনা লাগাও।
সারিম ডাকনা লাগাতে লাগাতে আবারও গাইতে থাকে…
(মাঝে মাঝে তোর কাছে ফেলে আসি মন…
.
কেনো এতো চাই তোরে জানি না কারণ…।)
দুচোখের কার সাজি মন বলেছে রাজি…কি করে আমি আর করব বারণ…
মাঝে মাঝে তোর কাছে ফেলে আসি মন…কেনো এতো চাই তোকে জানি না কারণ….
এটা শুনে এই প্রথম বার রুবির বুকের বাম পাশটায় সারিমের জন্য নড়ে উঠে,,
নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে একেবারে শিল্পী হয়ে গেলে নাকি তুমি,,।
— ধন্যবাদ রুবি, আমাকে এক দিক থেকে বাচিয়েছো,
এমনিতেই আমি গান পারিনা তারপরেও আজ অভি গাড়িতে এটা শিখিয়ে দিয়েছিলো
তাই তো তোমাকে শুনালাম,, অভি বলেছে এসব গান নাকি মেয়েদের মনে জায়গা করে নেয়।
আমার ভাই কতো ভালো, আমাকে তার মোবাইল থেকে এসব শিখিয়ে দেয়,
এমন ভাই লাখে একটা পাওয়া যায়।
এই গানের কথা অভি বলে দিছে শুনে রুবি নিজের অনুভূতির উপর আফসোস করে।
হায় এই গাধারে বিয়ে করে কি করবো আমি।
রুবি আর এক মূহুর্ত দেরি না করে সামনে থেকে ছুরি হাতে নিয়ে বলে,,
সারিম তুমি এই মূহুর্তে এখান থেকে বের হয়ে যাও নয়তো আমি এখানেই তোমাকে
কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবো।
.
রুবি হাতে ছুরি নিয়ে সারিমের দিকে এগুতেই সারিম দুই লাফে
কিচেন থেকে বের হয়ে আসে। রুবি তুমি কি এই গানটা পছন্দ করোনি,
তুমি দাড়াও আমি ওর মোবাইল থেকে আরেকটা মুখস্থ করে আসি।
এখন তুমি বিয়েতে রাজি আছো তো, আমি কি তোমার জবাব হা মনে করে নেবো।
রুবি ছুরি নিয়ে ওর দিকে দৌড়ে আসে,, সারিমও দৌড়ে গিয়ে অভির ওপর পড়ে।
অভি — কি ভাই তুমি কি করছো, রুবি তোমাকে ছুরি নিয়ে দৌড়াচ্ছে কেন,,
রুবি তুমি আমার ভাইকে এভাবে দৌড়াচ্ছে কেন,,,
.
— অভি ভাই আপনি আপনার এই ভাইকে সাথে করে নিয়ে যান নয়তো
আমি ওনার টুকরো টুকরো করে ফেলবো।
— কি হয়েছে সারিম ভাই?
— কি আর হবে, তুই যে আমাকে গান শিখিয়ে দিয়েছিস সেটা আমি ওরে বলে দিয়েছি তাই
আমাকে ছুরি নিয়ে দৌড়াচ্ছে। আমার মনে হয় এটা
ওর পছন্দ হয়নি, তুই একটা ভালো কিছু শিখাতে পারলি না আমাকে।
অভি সারিমের কথা শুনে হাসতে হাসতে সোফায় বসে যায়,,
ওর হাসি শুনে অনু চলে আসে,,, অনুকে দেখে সারিম বলে,
অনু তোমার বর আমার বিয়ে করাতে চায় না, সে চায় আমি সারাজীবন বিয়ে ছাড়া থেকে যাই।
এমন সময় আলি এসে দরজায় পা রেখেই বলে হুম সারিম তুমি মেনে নিচ্ছ না কেন এটা
যে তোমার আর কখনো বিয়ে হবে না।
আলিকে দেখে সারিম মুখ গোমড়া করে বলে আরপ আলি তুমি এতো জলদি কিভাবে চলে এলে,,,
— আরে আমি তো অফিসেই যাইনি কিছু দুর গিয়ে ভাবলাম
তোমরা এসেছো আর আমি চলে যাই এটা হয়না তাই ফিরে আসলাম।
রুবি চলো টেবিলে খাবার লাগাও,, এটা বলে সবাইকে নিয়ে খাবার টেবিলের দিকে যায়।
খাওয়া শেষ করে, কিছু সময় কথা বলে,, সারা উঠে এসে রুবির
হাতে নিজের হাতের বালা খুলে পড়িয়ে দেয়।
.
এটা দেখে আলি বুঝে যায় রুবির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, অভি আলির কানে কানে সব বলে দেয়,,,
সারিম এটা দেখে বুঝে যায় আলি কিছু করবে তাই জলদি সামনে এসে আলির হাত জোর করে চোখের পানি ছেড়ে দেয়,।
আলি সারিমের হাসি খুশি থাকা চেহারায় কান্না দেখে টান মেরে বুকে জরিয়ে নেয়।
ওরা সবাই বিয়ে ঠিক ঠাক করে বিদায় নিয়ে চলে আসে, সারিম সবার আড়ালে রুবির কাছে গিয়ে বলে,, রেডি থেকো বিয়ের পর শোধে আসলে সব ওসল করবো,,
রুবিও সাথে সাথে জবাব দেয়, প্রবলেম নাই আমি সাথে করে আমার ছুরি নিয়ে আসবো।
সারিম এটা শুনে আস্তাগফিরুল্লাহ বলে চলে আসে।
পরদিন সকালে সামিয়া খালা সারা বেগমের পাশে বসে গল্প করছে,,
অনু এসে সালাম দিয়ে সালমা খালাকে কেমন আছে জিগ্যেস করতেই সালমা মুখ ঘুরিয়ে ভালো আছি বলে সারাকে নিয়ে সারার রুমে চলে যায়।
রুমে গিয়ে সামিয়া সারাকে বলে, বইন আমার আমি যে এখানে এসেছি এই কথা নেহাকে বইলো না, নেহা শুনলে আমাকে অনেক বকাবকি করবে, সে তোমাদের কারো নাম শুনতে পারে না।
সারা — আমাকে মাফ করিস বোন, আমি একটু ঝামেলার কারণে তোর বাসায় যেতে পারিনি, আর নেহা আমার ফোন রিসিভ করে না কেন, তাকে বলিস সে যেন আমার সাথে কথা বলে।
সামিয়া — সেটা তো হবে আগে বলো তুমি এই মেয়েকে আর কতো দিন ঘরে জায়গা দিয়ে রাখবে, বের করে দাওনা কেন এখনো।
.
সারা ;- তুমি এসব নিয়ে টেনশন কইরো না, এবার আমার মাথায় যে প্ল্যান এসেছে এটা করতে পারলে অভি জীবন ভর যদি অনুকে খুজে বেড়ায় তারপরেও অনুর কোন নাম নিশানা খুজে পাবে না।
তুমি নেহাকে বলে দিও – বউ হয়ে রেডি থাকতে………….
চলবে…..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com