তুমি আমার । পর্ব - ০২
ইশাঃ ভাইয়া তুমি!!!
মেয়েটাঃ ভাইয়া!!!
আমিঃ হ্যাঁ রে আমিই। কেন বিশ্বাস হচ্ছে না?? ছুঁয়ে দেখ। মজা করে।
ইশাঃ ধুর। হঠাৎ করে কিভাবে এলে?? অবাক হয়ে।
আমিঃ কেন বাসে করে হাহা। মজা করে।
ইশাঃ অাহহা তুমিও না।
আমিঃ মা-বাবা কই খুকি??
ইশাঃ বাবাতো কাজে আর মা পাশের বাসায় গেছে।
দাঁড়াও আমি এক মিনিটে ডেকে নিয়ে আসছি।
আমিঃ আররে দাঁড়…
আমি কিছু বলার আগেই বোন এক দৌড়ে চলে গেল।
এবার আমি সেই রূপসী কন্যার দিকে তাকালাম।
তার চোখে চোখ পরতেই বুঝলাম সে প্রচন্ড লজ্জা পাচ্ছে।
আমি কিছু বলতে যাবো ওমনি সেও ভিতরে চলে গেল।
কি ব্যাপার সবাই খালি পালিয়ে যাচ্ছে কেন! আমি উঠানে গিয়ে বসলাম।
পাশে ব্যাগটা রাখা মাত্রই মা জোরে বলল,
মাঃ বাবা আদ্রিয়ান নাজমুল!!
আমি পাশে তাকিয়ে দেখি মা। আজ প্রায় ৬/৭ মাস পর মায়ের পবিত্র মুখখানা দেখছি।
মায়ের মুখখানা দেখে যেন প্রাণে শান্তি লাগছে।
সত্যি এটাই মা। আমি তাড়াতাড়ি উঠে মায়ের কাছে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরি।
আমি একটু স্বভাবতই বেশি ইমোশনাল।
তাই খুশীতে চোখের জল আটকে রাখতে পারলাম না।
মা আর বোনের চোখতো সেই কবে থেকেই ভিজা।
মাঃ কেমন আছিস বাবা?? আজ কতদিন পর দেখলাম তোকে। বলে আসিস নি ক্যান??
কান্নাসিক্ত কণ্ঠে।
আমিঃ ভালো আছি মা। আর বলে আসলে বুঝি তোমাদের এভাবে সারপ্রাইজ দিতে পারলাম??
এই যে তোমাদের চোখে মুখে অমূল্য খুশীখানা কি আর দেখতে পেতাম।
তাই বলি নাই। ভাবলাম একটা সারপ্রাইজ দিয়েই দি।
ইশাঃ খুব ভালো করছ ভাইয়া। তোমাকে খুব মিস করছিলাম।
আমিঃ এহহ আসছে। সব বুঝি সব বুঝি। আমাকে না বল,
ঢাকা থেকে তোর জন্য আনা গিফটকে মিস করছিলি। মজা করে।
কথাটা বলা মাত্রই মায়ের সাথে পিছন থেকে কার যেন মিষ্টি হাসির শব্দ কানে ভেসে আসলো।
পিছনে তাকিয়ে দেখি সেই রূপসী। আমি তাকাতেই সে লজ্জায় বোধহয় আড়ালে চলে গেল।
ইশাঃ দেখছ মা ভাইয়া কি বলে। অভিমানী কণ্ঠে।
মাঃ আহরে তোরা এখনই শুরু করলি! নাজমুল আয় বাবা ভিতরে আয়। ফ্রেশ হয়ে নে।
আমাদের বাসাটা একতলা বিল্ডিং। বাবা নিজ অর্থে তৈরি করেছেন।
আমি মা আর বোনের সাথে ভিতরে গেলাম।
কিন্তু আমার চোখ যাকে খুঁজছে তার আর কোনো খোঁজ পেলাম না।
আমি আমার রুমে গেলাম। সাথে বোনটাও আসলো।
আমিঃ বস এখানে।
ইশাঃ ভাইয়া আমার গিফট??
আমিঃ ক্যান তুই না আমাকে মিস করছিল?? তাহলে গিফট কেন হুম??
ইশাঃ আহহা ভাইয়া প্লিজ দেও তো। অসহায় ভাবে।
আমিঃ আচ্ছা দিব। তবে আগে আমাকে একজনের সম্পর্কে কিছু বলতে হবে।
ইশা অবাক হয়ে বলে,
ইশাঃ কার ভাইয়া??
আমিঃ ওই যে তখন একটা মেয়েকে দেখলাম না ওর সম্পর্কে। ও কে?? আমাদের বাড়িতে ক্যান??
ইশাঃ ওও…বুঝলাম। কিন্তু তুমি জেনে কি করবা হুম?? মজা করে।
আমিঃ বলবি নাকি গিফট কিন্তু দিব না।
ইশাঃ আচ্ছা বাবা বলছি শোনো।
আমি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিলাম ইশার দিকে।
আমিঃ হ্যাঁ বল বল।
ইশাঃ আপুর নাম হলো নাতাশা।
আমিঃ নাতাশা। বাহ কি সুন্দর নাম। মনে মনে।
ইশাঃ আপু এবার কলেজে ১ম বর্ষে পড়ে। এখন আপুর কলেজ বন্ধ তাই বাসায়।
আমিঃ ওও…ওর বাবা মা??
ইশাঃ আপুর শুধু বাবা আছে। মা গত বছর কি যেন একটা রোগে মারা গেছে।
আপুর কোনো ভাই বোনও নাই। আর আপুর বাবা আমাদের আব্বুর সাথেই কাজ করে।
তার সাথেই থাকে সবসময়। তাই আপু সারাদিন একা থাকে বলে আমাদের বাসায়ই থাকে।
আম্মুকে কাজে সাহায্য করে। জানো ভাইয়া আপু যে কি সুন্দর রান্না করে না।
খুব মজা লাগে খেতে।
আমিঃ কি বলিস আমিও খাবো।
ইশাঃ কি কিকক বললা??
আমিঃ কিছু না। তোর এই আপুটার সাথে আমাকে পরিচিত করে দিস।
ইশাঃ কেন আপুকে ভালো লাগছে বুঝি?? মজা করে।
আমিঃ তুইতো দেখি অনেক পেকে গিয়েছিস।
ইশাঃ বুঝি ভাইয়া সব বুঝি। এখন আমার গিফটটা দেও।
আমিঃ আচ্ছা দাঁড়া।
আমি উঠে ব্যাগ থেকে একটা শপিং ব্যাগ বের করে ওর হাতে দিলাম।
ইশাঃ এতে কি আছে ভাইয়া??
আমিঃ তুই খুলে দেখ না।
ইশা শপিং ব্যাগ থেকে একে একে সব বের করে পুরো অবাক।
কারণ আমি ওর জন্য মেকাপ কিট, চুড়ি, লিপস্টিক আরো অনেক কিছ এনেছি।
মানে সাজুগুজু করতে যা যা লাগে আর কি। ইশাতো খুশীতে আটখানা হয়ে গিয়েছে।
আমিঃ কি পছন্দ হয়েছে??
ইশাঃ অনেক অনেক বেশি পছন্দ হয়েছে ভাইয়া।
থ্যাঙ্কিউ সো মাচ ভাইয়া। ইশা আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল।
আমিঃ আচ্ছা হইছে। এখন যা। আমি একটু রেস্ট নি।
ইশাঃ হ্যাঁ নাতাশা আপুকে এগুলো দেখিয়ে আসি। আপু অনেক হিংসা করবে হি হি।
আমিঃ হ্যাঁ হ্যাঁ যা দেখা। আর প্লিজ বইনা আমার,
আমার নামে খারাপ কিছু বলিস না। ভালো বলবি।
বললে তোকে আরো অনেক কিছু কিনে দিব তাহলে।
ইশাঃ সত্যি??
আমিঃ তিন সত্যি।
ইশাঃ ইয়েএএ। আচ্ছা বলব।
আমিঃ আচ্ছা যা।
ইশা চলে গেল। আমি হাসছি।
ইশার রুমে,
ইশাঃ আপু আপু দেখো ভাইয়া আমার জন্য কত্তো কিছু আনছে।
নাতাশাঃ কই কই দেখি।
ইশা একে একে নাতাশাকে সব কিছু বের করে দেখালো। নাতাশাতো দেখে অবাক।
ওর অনেক হিংসা হচ্ছে। ইশা দুষ্টামি করে বলল,
ইশাঃ কি আপু এসব দেখে হিংসা হচ্ছে বুঝি?? হিহি।
নাতাশাঃ যাহ দুষ্ট। মোটেও না।
(হিংসা মানে, আমিতো শেষ হয়ে যাচ্ছি। বেটা আমার জন্য কিছু আনলো না কেন।
ধুর, আমিও না। আমার জন্য আনবে কেন! আমাকেতো চিনেই না।
আমিও তো ভালো মতো চিনি না।) মনে মনে বলল নাতাশা।
ইশাঃ ও তাই নাকি?? মজা করে।
নাতাশাঃ হুম তাই। অসহায় ভাবে।
ইশা নাতাশার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
ইশাঃ আরে কষ্ট পেয়েও না অাপু। ভাইয়া বলছে,
তুমি চাইলে আমার সাথে তুমিও এগুলো ব্যাবহার করতে পারবে।
আমার ভাইয়া অনেক ভালো বুঝলা।
নাতাশা অবাক হয়ে বলল,
নাতাশাঃ তোমার ভাইয়া তা বলছে??
ইশাঃ হ্যাঁ। নাহলে তো আমি তোমাকে দিতামই না। হিহি।
নাতাশাঃ নাহ লোকটা ভালো আছে তাহলে। মনে মনে বলল।
ইশাঃ কই হারালা??
নাতাশাঃ এই তো। আরে লাগবে না আমার এগুলো। তুমি সেজো তাতেই হবে।
ইশাঃ না না। তা হবে না। আমি তোমাকে সাজিয়ে দিব তুমি আমাকে সাজিয়ে দিবা।
তারপর দুজন মিলে পুরো গ্রামে ঘুরে বেড়াবো। হিহি।
নাতাশাঃ হ্যাঁ। তারপর গ্রামের সবাই আমাদের বাবার কাছে এসে নালিশ দিবে।
ইশাঃ দিলে দেক। সাজুগুজু না করলে এগুলো দিয়ে কি করবো বলো??
নাতাশাঃ আচ্ছা। দুষ্ট। এখন তোমার ভাইয়ার সম্পর্কে কিছু বলো। সে কি করে??
ইশাঃ ভাইয়া BBA তে ডিপার্টমেন্ট-English নিয়ে পরছে।
নাতাশাঃ ওও..সেতো অনেক বড়।
ইশাঃ হুম। আমার ভাইয়াটা অনেক ভালো। আমাদের অনেক ভালোবাসে।
নাতাশাঃ বাহ।
এরপর ইশা আর নাতাশা অনেক কথা বলে।
এদিকে আমি ফ্রেশ হয়ে এসে মায়ের কাছে যাই।
আমি আসছি বলে মা জমপেশ রান্না বসিয়ে দিয়েছে। আমি মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম।
অার বললাম,
আমিঃ মা তুমি ভালো আছোতো?? তোমার শরীর ভালো আছেতো??
মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
মাঃ মা যতই অসুস্থ থাক কিংবা খারাপ থাক,
সন্তানের মুখে মা ডাকটা শুনলে সে এমনিই ভালো হয়ে যায় খোকা।
আর তুইতো আমার মানিক। তুই আসছিস আমি ভালো না থেকে থাকতে পারি বল।
আমিঃ তুমিও না। তোমার আর বাবার জন্য কিছু এনেছি।
মাঃ তোর বাবাকে ফোন দিয়ে বলেছি তুই এসেছিস।
সে খুশীতে বাজারে চলে গেছে তোর পছন্দের সব আনতে। একটু পরেই এসে পরবে নে। তখন দিস।
আমিঃ আহহা আবার বাবা এসব করছে কেন! আমি কি মেহমান নাকি??
মাঃ তা নয়তো কি?? তুইতো হলি ঢাকায়া বাবু। আমাদের সবচেয়ে বড় মেহমান। মজা করে।
আমিঃ তুমিও না কি যে বলো।
হঠাৎই নাতাশা এসে বলল,
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com