দুষ্টু গার্লফ্রেন্ড । পর্ব - ৩৪
আয়রা অফিসে এসে দেখলো আহির কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে কিছু করছে।
আয়রা তেমন একটা গুরুত্ব দিলো না।আয়রা গিয়ে নিজের কেবিনে বসলো।
নিজের ফোনে কথা বলছিলো আয়রা।আহির জিজ্ঞেস না করে আয়রার কেবিনে ঢুকে গেলো।
আয়রা তাকিয়ে দেখলো! আহির কিছু না বলে আয়রার কেবিনে ঢুকলো।
আয়রা ফোন রেখে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো।
ওদিকে টিংকু ভাই একটি ফাইল নিয়ে আয়রার কেবিনে ঢুকে দেখলো আহির দাঁড়িয়ে আছে।
আয়রা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহির! টেবিলের পাশ থেকে পানি ভরা কাঁচের গ্লাস হাতে নিলো।
গ্লাসে থাকা পুরো পানি আয়রার মুখে ছুঁড়ে মারলো।আয়রা পুরো শকড হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
আহিরের দিকে তাকাতেই! আহির ঠাসসস্ করে কাঁচের গ্লাস টেবিলে বারি মারলো।
কাঁচের গ্লাস ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে ছড়িয়ে গেলো আয়রার টেবিলে।
আয়রা ভয়ে রীতিমতো কেঁপে উঠলো।
টিংকু ভাই তাড়াতাড়ি করে টেবিল থেকে আয়রার ল্যাপটপ আর ফোন সরিয়ে সোফায় রাখলো।
টিংকু ভাই আহিরের কাছে যেতে নিবে!
তখনি টিংকু ভাইয়ের ফোন এলো।ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আকাশ ফোন দিয়েছে।
.
টিংকু ভাইঃ আকাশ যদি এখন চেঁচামেচি শুনতে পায়।
আহির আর আয়রার ঝগড়া শুনতে পায়।অফিসে এসে তুলকালাম শুরু করে দিবে।
আবার আহির আর আকাশের মধ্যে ঝামেলা হবে।আর ফল স্বরূপ দু’জনেই হসপিটালে ভর্তি থাকবে।
এমনি তেই আহির খুব রেগে আছে আকাশের উপরে।আর আকাশ তো দেখতেই পারে না আহির’কে।
টিংকু ভাই বিড়বিড় করে একা একাই কথাগুলো বললো।
এসব ভেবেই টিংকু ভাই ফোন রিসিভ করে আয়রার কেবিনের বাহিরে চলে গেলো।আয়রা রেগে বললো!
আয়রাঃ হাউ ডেয়ার ইউ? তোমাকে অলওয়েজ ছাড় দেই বলে!
মাথায় উঠে বাদর নাচ নাচতে শুরু করেছো?
তোমার কোনো আইডিয়া আছে কত টাকার জিনিস নষ্ট করলে তুমি?
এত টাকা কখনো হয়তো একসাথে চোখেও দেখো’নি তুমি।তোমার…!
.
আয়রা আরো কিছু বলার আগে আহির আয়রা’কে টেনে দেয়ালে চেঁপে ধরলো।আয়রা আহিরের চোখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে কেঁপে উঠলো।
আহিরঃ আমার বোন কে তোমাদের বাড়ির সার্ভেন্ট বানানোর সাহস কে দিলো তোমাদের?
আয়রাঃ আমি কিছু জানি না।
আহিরঃ ওহ্ তুমি কিচ্ছু জানো না?
আয়রাঃ না।
আহিরঃ তোমার ভাই কে আমি জ্যান্ত কবর দিব।
নিজের ভাই কে বলে দিও।আমার সামনে যেনো না আসে কখনো।
আয়রাঃ আহির এনাফ ইজ এনাফ।আমার ভাই জোর করে’নি তোমার বোন কে।
তোমার বোন নিজের ইচ্ছেতে আমাদের বাড়ির সার্ভেন্ট হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আহিরঃ তোমার ভাই শর্ত রাখে’নি?
আয়রাঃ রেখেছে কারন! তিনশো ফিট বস্তির জমি’ আমাদের।
আহিরঃ আমার বোন কে কোনোদিন এতটুকু কষ্ট দেই’নি আমি।আর তোমরা দু ভাই-বোন মিলে আমার বোন কে ইমশোনাল ব্ল্যাকমেইল করে বাড়ির সার্ভেন্ট বানিয়েছো।
আমি তোমাদের দু ভাই-বোন কে ছাড়বো না মাইন্ড ইট।
আয়রাঃ অফিসের সামান্য স্টাফ হয়ে আমাকে টাচ্ করার সাহস তোমাকে কে দিলো?
আমি চাইলে এখন তোমাকে জেলে আটকে রাখতে পারি।
অফিসের বস্-এর সাথে জবরদস্তি করার অপরাধে।
আহিরঃ আমি ভয় পাই না কাউকে।তোমার ভাই এবার আমার হাত থেকে কিছুতেই বাঁচতে পারবে না।
এটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও তুমি।তোমার মতো বাজে মেয়েকে আমি আগেও ঘৃণা করতাম।
এখন আমি আরো বেশি ঘৃণা করি।আমি বড়লোক’দের ঘৃণা করি।
বিশেষ করে তোমাদের মতো লো-ক্লাস মেন্টালিটির বড়লোক’দের বেশি ঘৃণা করি আমি।
ইচ্ছে হলে অফিস থেকে বের করে দিবেন ম্যাডাম।
আই ডোন্ট কেয়ার।আর ভাই কে সামলে রাখবেন।আমার হাতে পড়লে “টপকে” দিব ওকে।
.
আহির জোরে ধাক্কা দিলো আয়রার হাতের বাহু ধরে।
আয়রা তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে নিলো!
কিন্তু টেবিলের উপর ভর করে দাঁড়ালো।নিজেকে সামলে নিলো।
আহির বের হয়ে গেলো আয়রার কেবিন থেকে।টিংকু ভাই কেবিনের গেটের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলো।
সবকিছু শুনে নিলো টিংকু ভাই।টিংকু ভাই ভেতরে ঢুকলো।
আয়রার হাতে কিছু বিঁধছে।আয়রা তাকিয়ে দেখলো!
কিছু ছোটো কাঁচের টুকরো আয়রার ডান হাতের তালুতে ঢুকে গিয়েছে।
আয়রার হাতের তালু পুরো রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছে।
আয়রার ব্যাথায় শুধু পানি পরলো দু চোখ থেকে।
টিংকু ভাই দ্রুত কাছে এলো আয়রার।এসে আয়রার হাতের অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেলো।
টিংকু ভাইঃ আয়রা এখনি ডক্টরের কাছে যেতে হবে।
আয়রাঃ আমি বাসায় যাবো।
টিংকু ভাইঃ তুমি চলো এখান থেকে।আহির’কে অফিস থেকে বের করে দিব আমি আজকেই।
আয়রাঃ না! আহির’কে কিছু বলার দরকার নেই।
টিংকু ভাইঃ মানে কি? তোমাকে আই মিন! অফিসের বস্-এর সাথে যা নয় তা ব্যবহার করলো ও।
আয়রাঃ বাদ দাও।
.
টিংকু ভাইঃ তুমি আহির’কে অফিস থেকে বের করে দিতে চাচ্ছো না কেনো আয়রা?
আয়রাঃ জানি না।
টিংকু ভাই অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলো।
আয়রা পছন্দ করতে শুরু করেছে আহির’কে।
টিংকু ভাই আর কথা বাড়ালো না।টিংকু ভাই আয়রার হাত ধরে টেনে অফিসের বাহিরে নিয়ে গেলো।
অফিসের সকল স্টাফ আয়রা আর টিংকু ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।
কারন টিংকু ভাই টানতে-টানতে আয়রা’কে অফিসের বাহিরে নিয়ে গেলো।
সবাই বেশ কানাঘোষাও করছে।
প্রকৃতি এসে আহিরের পাশে বসলো।আহির’কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো!
প্রকৃতিঃ ওদিকে কি দেখছো আহির?
আহিরঃ কিছু না।
প্রকৃতিঃ কিছু শুনেছো?
আহিরঃ কি শুনবো?
প্রকৃতিঃ একটু আগে নাকি আয়রা ম্যাডামের কেবিনে গ্লাস ভেঙে যায়।
আর আয়রা ম্যামের হাতের তালুতে কাঁচের টুকরো ঢুকে গিয়েছে।
তাই টিংকু ভাই হসপিটালে নিয়ে গেলো আয়রা ম্যাডাম কে।খুব ব্যাথা পেয়েছে নাকি শুনলাম।
এসব নিয়েই কানাঘোষা হচ্ছে।
আহিরের মনে পরলো।একটু আগে কাঁচের গ্লাস আহির নিজের হাতে ভেঙেছে।
আহিরের এটাও মনে পরলো।আয়রার দু হাতের বাহু ধরে জোরে ধাক্কা দিয়েছিলো আয়রা’কে।
ধাক্কা লেগে আয়রার হাতে কাঁচ ঢুকে যায়’নি তো? আহির মনে-মনে এটাই ভাবছে।
.
সন্ধ্যার দিকে টিংকু ভাই একা এলো অফিসে।
আহির দেখলো টিংকু ভাই অফিসে এসে আয়রার কেবিনে ঢুকলো।
আহির ভাবলো টিংকু ভাইয়ের কাছ থেকে আয়রার কি অবস্থা জিজ্ঞেস করে নিবে।
তাই ভেবে আহির কমপ্লিট করা ফাইল গুলো নিয়ে আয়রার কেবিনে গেলো।
টিংকু ভাই আজ আয়রার চেয়ারে বসে আছে।
বসে আছে বললে ভুল হবে।
কিছু ফাইল চেক করছে।টিংকু ভাই তাকিয়ে দেখলো আহির দাঁড়িয়ে আছে।
আহির কিছু জিজ্ঞেস করতে নিবে আয়রার ব্যাপারে! তার আগেই টিংকু ভাই বললো।
টিংকু ভাইঃ ফাইল কমপ্লিট করে এনেছেন? [গম্ভির ভাবে]
.
আহির পুরো অবাক হয়ে গেলো।টিংকু ভাই কে গম্ভির ভাবে একদম বস্-এর মতো কথা বলতে দেখে।
কারন টিংকু ভাই খুব মজার মানুষ।সবার সাথে হাসি মুখ ছাড়া কথা বলে না।
আর কাজেও তেমন একটি গুরুত্ব দেয় না বললেই চলে।আয়রার বকা শুনে তারপর কাজ করে।
একদম বাচ্চাদের মতো টিংকু ভাই।
সেই টিংকু ভাই একদম বড় বস্’দের মতো কথা বলছে আজ আহিরের সাথে।
আহির তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ টিংকু ভাইয়ের দিকে।
আহির আরো অবাক হলো যখন টিংকু ভাই আহির’কে “আপনি” করে বললো।
কারন প্রথম দিন থেকে টিংকু ভাই কোনোদিন আহির’কে তুমি আর তুই ছাড়া কথা বলে’নি।
আজ সোজা আপনি করে কথা বলছে টিংকু ভাই আহিরের সাথে।
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com