অবেলায় ঝরে যাওয়া
আজ রাইতে যদি তুই চিৎকার করছ, তাইলে তোরে আমি তালাক দিমু !
ওই ,তুই আমার বিয়া করা বউ তোর শরিলে আমার হাত দেওয়া জায়েজ আছে ।
দ্যাহেন , আপনারে আমার ভয় লাগে । আল্লার দোহাই লাগে আমারে ছুইয়েন না।
,
:- কি কইলি , আমারে ভয় লাগে । আমার আগে কয়জনরে মধু খাওয়াইছোস ?
,
:- ছি ছি , আপনে মানুষ না একটা অমানুষ । আমারে ছাইড়া দেন আমি মায়ের কাছে যামু।
,
এই বলেই রুপ কাঁদতে লাগলো। রুপের বয়স মাত্র তেরো বছর ।
বিয়ে হয়েছে একটা পয়তিশ বছরের লোকের সাথে । রুপের বাবা দিনমজুর করে ।
অভাবের সংসার । রুপের মা বাসায় বাসায় কাজ করে ।
রুপ কে অনেক কষ্ট করে ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়িয়েছে।
রুপের বাবাকে তাঁর বন্ধু একদিন ডেকে বললো ,
,
:- কি খবর রামিজ মিয়া ?মাইয়ারে আর কতো পড়াইবা?
মাইয়াগো এতো পড়োনের কাম কি !
তাঁরে বিয়া দিয়া দাও সংসার করুক তোমার টাকা পয়সা ও বাচবো আর মাইয়া সুখে ও থাকবো ।
,
:- তুমি ঠিকই কইছো। কিন্তু ভাল পোলা কই পামু ?
আমার অবস্থা তো জানো,
নুন আনতে পান্তা ফোরায়। কেডা বিয়ে করবে ।
আর আমার যৌতুক দেওনের ও ক্ষমতা নেই।
,
:-আমার কাছে একটা ভাল পোলা আছে ।বিরাট বড়োলোক।
তোমার মাইয়া সুখে থাকবো।
কিন্তু কথা হইলো ?
,
:- কিন্তু কি কও ?
,
:- হেই পোলার বউ আছে । তিনডা মাইয়া আছে সাথে ।
কিন্তু তাগো পোলা লাগবো বংশের বাতি জ্বালানোর জন্য ।
তোমার মাইয়ারে হের লগে বিয়া দাও দেইখো রাজরানির মতো রাখবে ।
,
:- কওকি , ! আমার মাইয়া করবো সতিনের সংসার ?
না না এইডা সম্ভব না।
,
:- রামিজ মিয়া ! তুমি কি পাগল হইছো কতো বড়ো খানদানি বংশের বউ হবো তোমার মাইয়া ।
ছেলে দেখতে শুনতে ও ভাল ।
এহন তুমি ভাইবা দ্যাহ। তুমি আমার ছোট কালের বন্ধু তাই তোমারে কথাডা কইলাম।
এই বলেই সে চলে গেল । রামিজ চিন্তিত মনে বাড়িতে আসলো।
আসতেই ফুলবানু বললো ,
,
:- কি গো রুপের বাপ ! খালি হাতে বাড়িতে আইলেন ?
রুপের স্কুল ব্যাগ কই ? মাইয়াডা দুইদিন ধরে খায় না কিছু।
হ্যার স্কুল ব্যাগ লাগবো।
,
:- রুপ রে আর পড়ামু না। হ্যারে বিয়া দিমু।
,
:- কি কন এই সব। আপনের কি মাথা খারাপ হইছে । ওইটুকু মাইয়ারে বিয়া দেবেন ?
,
: - তোমার লগে আমার যহন বিয়া হয় তুমিও ওইটুকু ছিলা।
খানদানি ঘরের পোলা । আমাগো রুপ সুখী হইবো।
আইজ আমার লগে বশিরের কথা হইছে হেই বলছে পোলার কথা ।
যাও মাইয়ারে বাইরে বেশি যাইতে দিও না।
,
:- কিন্তু আমার ওইটুকু মাইয়া আরো দুইএক বছর লেহাপড়া করাইলে ভাল হইতো না।
,
:- বেশি বুঝবা না। হেই পোলার বউ আর তিনডা মাইয়া আছে ।
তাগো খানদানে পোলা দরকার আমাগো রুপের একটা পোলা হইলে ওরা মাথায় তুলে রাখবো।
,
:- হায় হায় কন কি !
আমার মাইয়া সতিনের সংসার করবো আপনি বাপ হইয়া মাইয়ারে সতিনের ঘরে দেবেন ।
,
:- বেশি বুঝবি না। তিন তালাক দিয়ে বাপের বাড়িতে পাঠায় দিমু।
যা রুপ রে ঘরে নিয়ে আয়। খেলাধুলা অনেক হইছে ।
এই বলেই হনহন করে বন্ধুর সাথে কথা বলতে চলে গেল ।
রসুলপুর গ্রাম ,
এই গ্রামের সব থেকে ধনী রাশেদ চৌধুরি। উনার সাত বোন।
সবাই শ্বশুর বাড়িতে । বংশের একমাত্র ছেলে রাশেদ একাই।
বাবা মায়ের পছন্দ করা মেয়ে কে বিয়ে করেছিল পনেরো বছর আগেই ।
পরপর তিনটি মেয়ে হয়ে তাঁর আশঙ্কা হতে লাগলো হয়তো তাদের বংশ ধরে রাখার কেউ রইলো না।
অনেক ভেবে চিন্তা করে ঠিক করলো আবার বিয়ে করবে ।
তাইতো চারিদিকে লোক পাঠিয়ে দিল। রাশেদ দেখতে শুনতে ভাল ।
ঠাণ্ডা মেজাজের ও বটে । কিন্তু রেগে গেলে খুব কঠিন রুপ ধারণ করে ।
মুখে যা আসে তাই বলে ।
রামিজ রসুলপুর গ্রামে আসলো বন্ধুর সাথে । সব কথা বার্তা ঠিক করতে ।
রাশেদের বাড়ি ঘর দেখে পছন্দ হলো। রাশেদ ও রুপের ছবি দেখে পছন্দ করলো।
যদিও মেয়েটার বয়স কম। কিন্তু এটা আজকাল কোনও ব্যাপার না।
দিন তারিখ ঠিক করে রামিজ ফিরে এলো।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো।
রাশেদ আগের থেকেই রামিজের কাছে এক লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে।
বিয়ের খরচের জন্য । গহনা শাড়ি কাপড় কোনও কিছূর কমতি নেই।
আজ বিয়ে ,
সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখে রুপ ঘরে নিয়ে ।
খুবই সাদামাঠা বিয়ে হবে এটা রাশেদের ইচ্ছে ।
তাই লোকজন তেমন যানেনা।রুপের মা মেয়ে কে খেলার মাঠে পেলেন ।
সেখান থেকে মেয়ে কে ধরে এনে ভাল করে গোসল করিয়ে সাজাতে বসলেন ,
,,
রুপ হা করে সব কিছু দেখে ফিক করে হেসে দিয়ে বললো ,
:- মা ! আইজ আমারে এতো সাজাও কেন ? আমরা বেড়াইতে যামু বুঝি ?
রুপের মা কেঁদে দিয়ে বললো ,
:- মারে , আজ তোর বিয়া ।
রুপ আরো অবাক হয়ে মাকে বললো.....
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com