গল্পের নাম | শ্বশুরবাড়ী ইদ মোবারক | পর্ব -০১
হ্যা রে মা জামাই কী সব সময় সিগারেট খায়?
বাড়ীতে ঢুকেই উপরের কথাটি আছাদ সাহেব,সামিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন।
সামিয়া হল আছাদ সাহেব এর একমাত্র মেয়ে।
আছাদ সাহেব একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা তার পরিবার বলতে স্ত্রী, এক ছেলে এবং এক মেয়ে।
ছেলে আশফাক তার বড় সন্তান এবং তারপর সামিয়া সবার ছোট।
আশাফাক পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পাওয়ার পরপরই বিয়ে করেছে পাঁচ বছর হতে চলল এবং তার একটি দুইবছরের ছেলেও রয়েছে।
সামিয়ার এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হয়ে যায় তামিমের সাথে। তবে বিয়ের পরও সে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে,তাছাড়া তার বিয়ে হয়েছে মাত্র চার মাস।
পরিবারের পছন্দেই সে বিয়ে করেছে।
.
আছাদ সাহেব যেমন নিজে একজন সৎ মানুষ তেমনই তার ছেলেমেয়েকেও তৈরি করেছেন।
যার জন্য তিনি নিজে পছন্দ করেই তার ছেলে এবং মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আর তিনি যথেষ্ঠ খুশি তার পুত্রবধু এবং জামাইয়ের প্রতি।
.
সামিয়ার বিয়ের পর এই প্রথম ইদ-উল-ফিতর পালন করছে। তাই ইদের দিন শ্বশুরবাড়ীতে কাটিয়ে পরদিন তামিম’কে সাথে নিয়ে এসেছে তার বাবার বাড়ীতে।
তামিম’কে পেয়ে সামিয়া অনেক সুখী যদিও তাদের বিয়ের আগে কোনো পরিচয় ছিল না হুট করেই বিয়েটা হয়ে যায় তারপরও দুজনের ভিতরের মিল মহব্বত এই চার মাসে অনেক ভালোভাবেই হয়ে গিয়েছে।
সামিয়া যেমনটা সারাজীবন কল্পনা করে এসেছিল তার ভবিষ্যত জীবন সঙ্গীকে নিয়ে তামিম তার ব্যতিক্রম কিছুই নয়।
এসব কিছুর জন্য সে সব সময় তার সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করে।
.
সকালে নাস্তা করার পর তামিম এর ঘরে থাকতে ভালো লাগছিল না তাই সামিয়া’কে বলে একটু বাইরে যায় ঘুরতে।
তামিম বাইরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর সামিয়ার বাবা আছাদ সাহেব বাড়ী ফিরে উপরের কথাটি বললেন।
বাবার মুখে এমন কথা শুনে সামিয়া অবাক হয়ে যায় তারপরও বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে-
সামিয়াঃ- কই বাবা ও ত সিগারেট খায় না।
আছাদ সাহেবঃ- তাহলে কী আমি ভূল দেখেছি?
সামিয়াঃ- হতে পারে!
আছাদ সাহেবঃ- আরে আমি নিজের চোখে দেখেছি জামাই আমাদের এলাকার টং দোকানে বসে সিগারেট টানছে।
সামিয়াঃ- এ কীভাবে হয় বাবা?
আছাদ সাহেবঃ- হ্যা রে মা শুধু তাই না খুব শৈল্পিকভাবে বসে বসে টানছে। পায়ের উপর পা তুলে বাম হাতে ফোন চালাচ্ছে আর ডান হাতে চায়ের কাপ আর আঙ্গুলের ভিতরে সিগারেট। এক চুমুক চা আর এক টান সিগারেট আহা মনে হচ্ছে সে স্বর্গে আছে। আচ্ছা মা সত্যি করে বল ত জামাই কী বাড়ীতেও সিগারেট খায় বা তার কী অন্য কোনো নেশা আছে?
সামিয়াঃ- আহা বাবা কী যে বল না তুমি? ওর এসব নেশা থাকবে কেন? সে বাড়ীতে এক কাপ চা পর্যন্ত পান করে না আর বলছ নেশার কথা।
.
আছাদ সাহেবঃ- আচ্ছা মা তুই কী সুখে আছিস? জামাই কেমন মানুষ?
সামিয়াঃ- বাবা আমি আল্লাহ্র অশেষ রহমতে অনেক সুখে আছি আলহামদুলিল্লাহ্। আর তোমার জামাই কেমন সেটা তুমি আমার থেকেই ভালো জানো কারণ তোমরাই তাকে আমার জন্য পছন্দ করেছিলে।
আছাদ সাহেবঃ- হ্যা ওর বাবাকে ত অনেক আগে থেকেই চিনি মাঝে কয়েকটা বছর যোগাযোগ ছিল না এই আর কী। তাছাড়া ওর বাবা খুবই ভালো একজন মানুষ আর ওরা দুইভাইও খুব ভালো ছেলে। অবশ্য জামাইকে আমি যখন দেখেছিলাম তখন সে ছোট ছিল তবুও খুব শান্ত ছিল। আর এখন পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসা করছে তাই দেখেই ভালো লেগেছে। কিন্তু আজকে এই কী দেখলাম আমি।
সামিয়াঃ- বাবা তুমি এসব নিয়ে শুধু শুধু ভাবছ আচ্ছা ও বাসায় ফিরলে আমি কথা বলব ওর সাথে।
সামিয়া এবং আছাদ সাহেব এর কথা শুনে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন সায়েদা বেগম।
তিনি এসে জিজ্ঞাসা করলেন-
সায়েদা বেগমঃ- কী হয়েছে তোমরা কী নিয়ে কথা বলছ?
আছাদ সাহেবঃ- আর বল না তোমার আদরের জামাই কী করেছে জানো?
সায়েদা বেগমঃ- কী করেছে আমার জামাই বাবা।
.
আছাদ সাহেবঃ- তাকে দেখে এসেছি আমাদের এলাকার টং দোকানে বসে সিগারেট টানছে।
সায়েদা বেগমঃ- ও কী কথা? জামাই এর মত এত ভদ্র ছেলে এই কাজ করতে পারে না তোমার ভূল হচ্ছে।
আছাদ সাহেবঃ- আরে আমি নিজের চোখে দেখেছি তাকে।
সায়েদা বেগমঃ- হয়েছে বাদ দাও পোলা মানুষ খেতেই পারে তুমিও ত এক সময় খেতে।
আছাদ সাহেবঃ- হ্যা খেতাম কিন্তু এভাবে শ্বশুরবাড়ীর এলাকায় বসে খেতাম না আড়ালে খেতাম নাহলে নিজের এলাকায় খেতাম। জামাই খাচ্ছে আমার সমস্যা নাই কিন্তু সে ত আমার এলাকায় বসে খাচ্ছে এখন লোকে দেখলে কী ভাব্বে? আর বসেছে না বসেছে ঐ মিজানের দোকানে বসেছে।
সায়েদা বেগমঃ- কী বল তোমার বন্ধু মিজান ভাইয়ের দোকানে বসেছে?
আছাদ সাহেবঃ- হ্যা তা না হলে কী আমি শুধু শুধু এভাবে রেগেছি? আর মিজানেরও দোষ আছে সে কেন আমার জামাইয়ের কাছে সিগারেট বিক্রি করবে?
সায়েদা বেগমঃ- হয়ত সে চিনতে পারে নাই?
.
আছাদ সাহেবঃ- এ্যাহ বললেই হল চিনতে পারে নাই। কেন আমার মেয়ের বিয়ের সময় ত সব থেকে বেশি মিজানই খেয়েছিল আর এখন আমার জামাইকে চিনতে পারবে না। সব হল ওর ব্যবসার ধান্দা বুঝিত কাস্টমার পাইছে আর বিক্রি করে যাচ্ছে একবারও ভাবতেছে না কাকে কী দিচ্ছে। আমি ওর একটা ব্যবস্থা নিয়েই ছাড়ব আমার জামাইয়ের কাছে সিগারেট বিক্রি করা ওকে দেখিয়ে দিব।
সায়েদা বেগমঃ- হইছে থামো,সেই অনেক্ষণ ধরে লেকচার দিয়ে যাচ্ছ কিন্তু তুমি কেন মিজান ভাইয়ের দোকানে গেছিলে সেটা আমাকে বল আগে।
আছাদ সাহেবঃ- ইয়ে মানে আমি ত একটু!
সায়েদা বেগমঃ- ইয়ে মানে কী? নিজে গেছ সিগারেট টানতে আর দোষ দিচ্ছ আমার জামাইয়ের দাড়াও আজকে তোমার ব্যবস্থা নিচ্ছি আমি। তোমার খাওয়া আজকে বন্ধ।
আছাদ সাহেবঃ- এই কী বলছ এসব খাওয়া বন্ধ করলে আমি খাব কী?
সায়েদা বেগমঃ- কেন মিজান ভাইয়ের দোকানে যা খেতে গিয়েছিলে তাই খাবে। আর কোনো কথা নয় এবার ঘরে যাও নাইলে কিন্তু ঘরেও থাকতে দিব না।
.
সায়েদা বেগম এর কথায় আর কোনো উত্তর না দিয়ে আছাদ সাহেব নিজের ঘরে চলে গেলেন।
এদিকে সামিয়াও এতক্ষণ তার মা-বাবার খুনসুটি উপভোগ করছিল কিন্তু এবার পরিস্থিতি অন্যদিকে যাচ্ছে দেখে নিজেই সেখান থেকে কেটে পড়ে।
তবে তামিম এর কর্মকান্ডে সামিয়া তার উপর রেগে আছে। সে জানে তামিম সিগারেট খায় কিন্তু তাকে কথা দিয়েছিল আর সিগারেট খাবে না কিন্তু তার আড়ালে ঠিকই খাচ্ছে আর খাবে না খাবে বাবার সামনেই পড়ে গেল এখন বাবার কাছে তার মাথা কাটা গেল।
.
এসব ভাবছে আর রাগে ফুসছে এবং মনে মনে ভাবছে একবার শুধু এখান থেকে তাদের বাড়ীতে ফিরুক এরপর তার শ্বাশুড়ী মাকে দিয়ে তামিম এর একটা ব্যবস্থা করে নিবে।
এমন সব জটলা পাকাতে পাকাতে সামিয়া নিজের ঘরে যায় তামিম’কে ফোন দেওয়ার জন্য কিন্তু ঘরে যেয়ে তার সব রাগ উধাও হয়ে যায়।
.
কারণ ঘরে গিয়ে দেখতে পায় তার ভাতিজা আয়ান বসে আছে খাটের উপরে। আয়ান’কে দেখার পর সামিয়ার মন ভালো হয়ে যায় তাই সব রাগ ভূলে গিয়ে আয়ানের সাথে দুষ্টুমিতে মেতে উঠে।
.
চলবে..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com