বোরখাওয়ালী । পর্ব -০৯
চৌধুরী ভিলা।।
আপনে খুব ভালা চাচা।সত্যি খুব ক্ষুদা লাগছিলো বলে খুব তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে ছেলেটা।
চিৎকার করে উঠে, আবির!!!
তোমার সাহশ কি করে হয় এইসব রাস্তার ফকিরদের আমার বাড়িতে এনে খাওয়ানোর?
কি হচ্ছে কি নেহা! করুন গলায় বলে।
ছেলেটা খাওয়া বন্ধ করে নেহার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
তোমাকে আমি আগেও বলেছি এসব রাস্তার যল-যান আমার বাড়িতে ঢুকাবা না।আমার একটা স্ট্রাটার্স আছে।এক্ষুণি আমার একজন বড় ক্লাইন্টকে বাড়িতে আসতে বলেছি।সে যদি এসে এমন নোংরা, বস্তির ছেলেকে এখানে দেখে তাহলে আমার প্রেজটিজের কি অবস্থা হবে তুমি বুঝতে পারছো?
ছেলেটার খুব ক্ষুধা লেগেছিল। ২দিন ধরে কিছু খাই নি।তাই আমি….
কথা শেষ করার আগেই বলল, তাই তুমি ছেলেটাকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসবে? চেয়ারটাই নোংরা করে ফেলেছো।এই ছেলেটাকে এক্ষুণি এখান থেকে বিদায় কর।সখিনা ছেলেটি চলে গেলে চেয়ারটা ভালো করে ধুঁয়ে পরিষ্কার করে দিস তো।
জ্বি বড় ম্যাডাম! সখিনা এবাড়িতে দীর্ঘ দিন যাবৎ কাজ করছে।
ছেলেটি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে।আমি অহন যাই চাচা।আমার জন্য আপনারে অনেক কথা হুনতে হইলো তার জন্য ক্ষমা কইরেন।বলে চলে গেল।
আবিরের আর সহ্য হচ্ছে না।রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে।বলেই ফেলে, বাহ্ নেহা বাহ্ ছেলেটা চেয়ারটাই বসেছিল বলে তুমি চেয়ারটাই ধুঁয়ে ফেলতে চাও।অথচ নিজের মনের মধ্যে বসে থাকা ময়লা? সেটা তুমি পরিষ্কার করবে কিভাবে?
মুখ সামলে কথা বল আবির।ভুলে যেও না আমি তোমার স্ত্রী।
স্ত্রী? হা হা হা। স্ত্রী শব্দটার মানে বোঝ তুমি? না তুমি বোঝ না। তুমি বোঝ শুধু অহংকার আর তোমার নিজের স্বার্থ।
তাই বুঝি? স্বার্থপর কি শুধু আমি একা তুমি নও? আজ পর্যন্ত নিয়েছো ছাড়া কি দিয়েছো তুমি আমায় আবার বড় বড় লেকচার দিচ্ছ?
কি দেই নি তোমায় আমি? আমার পরিবার, ভালোবাসা সব ছেড়েছি তোমার জন্য আমি।
ভালোবাসা!! তোমার ভালোবাসা মানেই তো ওই ধ্যারধ্যারে গেও মেয়েটা।কি পেয়েছিলে মেয়েটার থেকে তুমি বলতো? আমাকে দেখও, আজ তুমি যা তার সবই আমি তোমাকে দিয়েছি।তোমার টাকা, গাড়ি, বাড়ি, সম্পদ, ঐতিয্য সব! সব! আমার টাকায় কেনা। ভুলে যেও না মি.আবির খান ও ছরি আবির চৌধুরী। তোমার নামের সাথে যেই পদবীটা এখন ব্যাবহার কর ওটাও কিন্তু আমারই দেওয়া।
ব্যাস! অনেক বলেছ তুমি। কোনও কিছুর লোভই আমার নেই।আর কাকে তুমি গেও মেয়ে বলছো?আমিতো আমার আগের জীবনটাতেই ভালো ছিলাম। আজ আমি তোমার সাথে এখানে আছি সেটা শুধুই লাবন্যর জন্য।সেই দিনটা তোমার মনে আছে নেহা? তোমার জন্মদিনের পার্টিতে সরবতের সাথে আমাকে তুমি ঘুমের ঔষুধ মিষিয়ে দিয়েছিলে?
আমাকে পাওয়ার জেদে তুমি আমার সাথে যেই নোংরা খেলাটা খেলেছিলে সেদিন রাতে।তোমার সেই রাতের নোংরা খেলার ফসল আমাদের মেয়ে লাবন্য।আমি তো কিছুই যানতাম না।আমি আমার আর আরি, যাকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম তাকে আর আমাদের সন্তানকে দেখতে গিয়েছিলাম।কিন্তু তুমি আমার আগেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলে ১বছর বয়সের লাবন্যকে নিয়ে।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই নি।আরি বলেছে ইসলামে ২য় বিয়ে যায়েজ আছে।আমি তোমায় বিয়ে না করলে লাবন্য হবে সমাজের অবৈধ সন্তান।তার কথাই আমি তোমায় বিয়ে করেছি।আর তুমি বিয়ের পর নানান ভাবে লাবন্যকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আমার পরিবারের কাছ থেকে আমাকে আলাদা করেছ।আমাকে বাধ্য করেছো আমার পরিবারের কাছে ঘৃণার পাত্র হতে।
আমি কোনও নোংরা খেলা খেলি নি আবির।আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম।তোমার অফিসের বস ছিলাম আমি।আমার রূপ, সৌন্দর্য সব দিয়েই আমি তোমায় ধরে রাখতে চেয়েছি কিন্তু তুমি কখনও আমাকে পাত্তা দাও নি।আমি তোমায় আরও আগে পেতে পারতাম।কিন্তু তখন বাবার অসুস্থতার জন্য লন্ডনে গিয়ে ভিসার সমস্যাই আটকে পরি।আমি নিশ্চিত ছিলাম নেক্সট ৫বছরে আমার অফিস তুমি ছাড়বে না।কারণ তোমার কন্ট্যাক্ট পেপারে সিগনেচার করা ছিল যদি তুমি জব ছাড়ার চেস্টাও কর তাহলে তোমার জেল হতে পারে। আমি লন্ডনেই তোমার সন্তানকে ভূমিষ্ঠ করি।যখন ফিরে আসি, শুনি তোমার বিয়ে হয়ে গেছে! একটা মেয়েও হয়েছে! তখন আমার খুব কস্ট হয়।আর তাই তোমাকে নিজের করে নিই।কে চায় সতীনের ঘড় করতে? তাছাড়া আমার তো কোনও কিছুর অভাব নেই! তাহলে কেন আমি আমার স্বামীর ভাগ অন্য কারও সাথে শেয়ার করব? এজন্য আমি তোমাকে তোমার সব মায়াজাল থেকে
দূরে সরিয়ে এনেছি।কিন্তু তার বিনিময়ে তোমাকেও আমি অনেককিছু দিয়েছি!
কিচ্ছু দেও নি তুমি আমায়! তুমি শুধুই আমাকে চেয়েছ, কিন্তু কখনও ভালোবাসতে পারোনি! তুমি তোমার জেদ আর অহংকারে অনেকগুলো জীবনকে নস্ট করে ফেলেছো।এমনকি নিজের মেয়েটাকেও বিগড়ে দিয়েছ!
লাবন্য বাড়িতে ঢুকছে হঠাৎই দরজার কাছ থেকে আবিরের শেষর কথাটি শুনে ফেলে, ওহহ ড্যাড তুমি মময়ের সাথে কিভাবে কথা বলছো? চিৎকার দিয়ে বলে।
দেখ না লাবু তখন থেকে তোর ড্যাড আমার সাথে কি খারাপ ব্যবহারটাই না করছে।বলছে আমি নাকি তোকে বিগড়ে দিয়েছি! কাঁদো কাঁদো কন্ঠে কলছে নেহা!
তোমার এসব নাটক বন্ধ কর নেহা।এই নাটকগুলো করেই তুমি আমার চোখে এতো নিচে নেমে যাচ্ছ।
দেখও ড্যাড আমার মমের সাথে তুমি এমন ভাবে কথা বলতে পারো না! আর মম আমার ২লাখ টাকা লাগবে দাও তো!
এতো টাকা দিয়ে তুমি কি করবে লাবন্য? কালই তো তোমার মায়ের থেকে ৪লাখ নিলে! আবির কথাটা বলে রাগি দৃস্টিতে তাকালো লাবন্যর দিকে!
তুমি চুপ কর! আমার টাকা আমার মেয়ে যেভাবে ইচ্ছে হয় খরচ করবে।যত লাগবে ততো নেবে।আমার যা আছে সবই তো ওর! লাবন্যর মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে নেহা।
তাই বলে এই বয়সে এতো টাকা উঁড়াবে? কখনও জিজ্ঞাসা করেছো তোমার মেয়ে করে কি এতো টাকা নিয়ে?
না আমার যানার কোনও প্রয়োজন নেই।আর একটা কথা তুমিও শুনে রাখ।আমার মেয়ের ব্যাপারে নাক গলাতে আসবে না।আবিরের মুখের সামনে আঙুল তুলে নেহা কথাটা বলে।
আবির নেহার আঙুলটা নামিয়ে দিয়ে, একদিন বুঝবে তুমি নেহা! তুমি কত বড় ভুল করছো।কিন্তু সেদিন খুব দেরি করে ফেলবে।
আর তুমি যদি ভেবে থাকো মেয়েকে দিয়ে আমাকে দূর্বল করতে পেরেছ? তাহলে সেটা ভুল ভাবছো।কারণ তুমি এটা বোঝ না মেয়েটা তোমার সেই চেস্টাকেই কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থ পূরণ করে! হাজার হোক তোমারই তো মেয়ে।হয়েছেও তোমার মতোন।বলেই চলে যাই ওখান থেকে।
,
ওদিকে আয়াত তার দাদুর সাথে ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরেছে।
মাম্মাম কোথায় তুমি? খুব ক্ষুধা লাগছে তারাতারি এসো না, কিছু খেতে দাও!
দাদুভাই ভার্সিটির প্রথম দিনটা তোমার কেমন গেল? আয়াতের দাদি একটু মুচকি হেসে আয়াতের পাশে বসে জিজ্ঞেসা করল।
আর বলো না দাদি আসলে আজ….আয়াত আজকের সব ঘটনা খুলে বলল তার দাদিকে।
কি বলছো কি দাদুভাই তাহলে তো ওরা তোমাদের পিঁছনে আবার লাগবে! আমি কত্তবার বলেছি মেয়েটা বড় হয়েছে বিয়ে দিয়ে দিতে।কিন্তু শুনলো না, এরা লেখাপড়া করাবে।যদি কোনও বিপদ আপদ হয় তাহলে সেই দায়িত্ব কে নেবে?
আহহা রেহেনা! তুমি এতো চিন্তা কেন করছো! আমাদের দাদুভাই খুবই বুদ্ধমতী মেয়ে।তুমি অযথাই চিন্তা করছো।ওর কিচ্ছু হবে না! ওসব ছেলেমেয়েদের তিনবেলা মেরে সোজা করতে হয়।বাবার টাকায় আসকারা পেয়ে পেয়ে এমন হয়েছে।
এমনভাবে বলছো যেন তুমি ওদের মারার ক্ষমতা রাখো! একটা কথা শুনে রাখো আমার দাদুভাইয়ের যদি কিছু হয় তাহলে তোমার খবর আছে!
ঠিক আছে আমার খবর বানিয়ে তুমি টেলিভিশনের পর্দায় দেখিয়ে দিও।
কি বললে তুমি?
আয়াত দেখছে দাদা-দাদির ঝগড়া।আহহ থামবে তোমরা!
আর দাদি লেখাপড়াটা আমার স্বপ্ন। আমি কি খারাপ ভাবে চলি বল? আমি যদি আমার ইসলামে উল্লেখিত নির্দেশনাগুলো মেনে লেখাপড়া করি তাহলে দোষ কোথায়? তুমি অন্য কারও আচারণের উপর ভিত্তি করে আমাকে কেন লেখাপড়া ছাড়তে বলছো?
কিন্তু দাদুভাই?
কোনও কিন্তু না! এই ছোট্ট একটা বিষয়কে তোমরা এতো বড় কেন করছো? দেখছো তো আমার ক্ষুধা লাগছে মাম্মামকে বল না খাবার দিতে!
আরিয়া এসে, মামনী খাবার টেবিলে গুছিয়ে রেখে এসেছি খাবে চলো।আসলে চোখটা লেগে গিয়েছিলো তাই উঠে রান্না করতে একটু দেরি হয়ে গেল।
ঠিক আছে মাম্মাম চলো!
আর তোমরা! একটুও ঝগড়া করবে না এই বলে দিয়ে গেলাম।নইলে তোমাদের সাথে আজ সারাদিন আমার কথা বলা বন্ধ!
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com