তুমি আমি । পর্ব -০২
রাগে ফুসতে ফুসতে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে তামিম এবং কিছুক্ষণের ভিতরে ঘুমিয়ে যায়।
বিকালবেলা……
:- বড় মা তামিম কোথায়?
সকালে তামিম ঐভাবে রাগ করে রেস্টুরেন্ট থেকে চলে যাওয়ায় তাঞ্জিলার খারাপ লাগে।
সে বুঝতে পারে এভাবে বলাটা উচিত হয় নাই তবুও কেন যেন
তখন রাগের মাথায় এসব বলে ফেলেছিল।
তাই ত এখন সে এসেছে তামিমের বাড়ীতে তার রাগ ভাঙানোর জন্য।
সেখানে আসার পর প্রথমেই দেখা হল তামিমের মা তনিমা বেগম এর সাথে।
এই মানুষটিকে তাঞ্জিলার খুব ভালোলাগে শুধু তাই নয় তামিমের বাবাকেও খুব পছন্দ হয় তার
কারণ তারা দুজনেই খুব ভালো মনের মানুষ এবং তাকে খুব ভালোবাসে। এজন্যই তাঞ্জিলা তাদের দুজনকে বড়বাবা এবং বড়মা বলে ডাকে।
সে মাঝে মাঝে ভাবে এত ভালো বাবা-মায়ের কোলে এমন একটা তারছিড়া যে কেন এলো?
এই তামিম এর উপরে তার মাঝে মাঝে রাগ হয় কিন্তু আবার সেই রাগ যে কোথায় চলে যায় সে নিজেও বুঝতে পারে না। আজ সকালেও ভেবেছিল রাগ করে আর তামিম এর সাথে কথা বলবে না কিন্তু এক বেলা নেই ঘুরতেই দৌড়ে এসেছে তার খোজ নিতে।
হয়ত সেও ভালোবাসে তামিম’কে কিন্তু প্রকাশ করতে পারে না অথবা বুঝতে পারে না।
তাঞ্জিলা যখন তনিমা বেগমের কাছে জানতে চাইল তামিম এর কথা তখন তিনি বললেন-
তনিমাঃ- আছে দেখ ওর ঘরে মনে হয় ঘুমিয়ে গিয়েছে।
তাঞ্জিলাঃ- ও বাসায় ফিরেছে কখন,বড়মা?
তনিমাঃ- ও ত সেই সকালে বাসা থেকে বলে গেল তোর সাথে দেখা করতে যাচ্ছে কিন্তু কিছুক্ষণ না যেতেই আবার ফিরে এলো রাগী চেহারা নিয়ে আর এসেই ঘরে দরজা দিল। এতক্ষণ উচ্চশব্দে গান বাজছিল এখন সেটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
তাঞ্জিলাঃ- তাহলে ও সকাল থেকেই ঘরের ভিতরে রয়েছে তাই না বড়মা?
তনিমাঃ- হ্যা।
তাঞ্জিলাঃ- তাহলে ত দুপুরেও কিছু খায় নাই আর সকালেও আমার সাথে কিছু খায়নি।
তনিমাঃ- হ্যা রে দুপুরে কিছু না খেয়ে রয়েছে। আর আমিও যায় নাই ওকে ডাকার জন্য তুই ত ওর রাগ সম্পর্কে জানিসই এজন্য আর বিরক্ত করিনি।
তাঞ্জিলাঃ- আচ্ছা আমি দেখছি তুমি একটু খাবার এর ব্যবস্থা কর।
তনিমাঃ- আচ্ছা তুই দেখ কিছু করতে পারিস কী না।
তাঞ্জিলাঃ- হুম আমি যাচ্ছি।
এই বলে তাঞ্জিলা পা বাড়ায় তামিম এর ঘরের উদ্দেশ্যে কিন্তু তখন আবার পিছন থেকে তাকে তনিমা বেগম ডাক দেন-
তনিমাঃ- শোন না তানজু মা।
তাঞ্জিলাঃ- হ্যা বল বড় মা?
তনিমাঃ- আচ্ছা বাবু কী কোনো কারণে তোর উপরে রেগে আছে?
তাঞ্জিলাঃ- হ্যা গো বড় মা।
তনিমাঃ- কী হয়েছিল সকালে?
তাঞ্জিলাঃ- বড় মা আমি তোমার ছেলেকে খামচি দিয়েছিলাম তাই রেগে আছে হা হা হা হা।
তনিমাঃ- পাজি মেয়ে বুঝি না তোদের কাণ্ডকারখানা, কত বড় হয়েছিস তবুও এখনও বাচ্চামী ভাবগুলো গেল না। কবে যে বড় হবি তোরা আমি এই চিন্তায় মরি।
তাঞ্জিলাঃ- আহা বড় মা তুমি এত চিন্তা করছ কেন? আমি আছি ত সব ঠিক করে দিব।
তনিমাঃ- তুই আর কত দিন থাকবি রে মা এই ত আর কয়দিন পরই তোর বিয়ে হয়ে যাবে।
এরপর ত স্বামী সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বি। এদিকে আমার বাবুটা যে কী
করবে ভেবে পাই না। কত করে বলি হয় নিজে চাকরি কর না হয় বাবার ব্যবসা সামলা
আর তা না হলে নিজে ব্যবসা
কর কিন্তু সে কিছুই করবে না সারাদিন ঐ ঘরের ভিতরে পড়ে থাকবে আর
বাইরে গেলে মানুষের সাথে ঝগড়া করে বাড়ী ফিরবে। কবে যে ও একটু ঠিক হবে
নাকি আদৌ হবে না।
আমি আর তোর বড় বাবা দুজনে সারাদিন চিন্তা করি ওকে নিয়ে। আমরা যখন
থাকব না তখন ওর কী হবে? ওকে ত দেখার আর কেউ থাকবেও না, ওর বড়
ভাইটা সেই বিদেশ গেল এরপর আর কোনো খোঁজই পেলাম না জানি না বেঁচে
আছে নাকি মরে গেছে যাদের মাধ্যমে গিয়েছিল তারা কেউ কেউ বলে ও আর
বেঁচে নেই আবার কেউ কেউ বলে বেঁচে আছে। আজ আটটি বছর বড় খোকার
কোনো খোঁজ পাই নি আমরা। আমি এক হতভাগা মা যে নিজের সন্তানের অস্তিত্বটুকুও খুঁজে পেলাম না।
এদিকে ছোটটাও ওর বড় ভাইয়ের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে কেমন যেন হয়ে
গিয়েছে। আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না আমার বুক ফেটে যায় শুধু।
তাঞ্জিলাঃ- আহা এভাবে মন খারাপ কর না বড় মা দেখও সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন।
তুমি শুধু দোয়া কর আল্লাহর কাছে বড় ভাইয়া যেখানে থাকুক যেন ভালো থাকেন।
আর তোমার ছোটটা ও ত তারছিড়া ওকে এখন বিয়ে দিয়ে দাও তাহলে দেখবে বউয়ের
হাতে তিনবেলা মার খেয়ে ঠিক হয়ে যাবে।
তনিমাঃ- বিয়ে ত দিতে চাই কিন্তু ও ত কিছুই করে না তাছাড়া কোনো কিছু নিয়ে সিরিয়াসও না।
আর ঐ যে বললি না বউয়ের মার খেয়ে ঠিক হয়ে যাবে আরে ও যে রাগী দেখা
গেল বউকে উল্টে মার শুরু করল। আমি দেখেছি একমাত্র তোকেই একটু ঠান্ডাভাবে নেয়।
তাঞ্জিলাঃ- ঠান্ডাভাবে নেয় না কচু সুযোগ পেলে আমাকেই না কবে তুলে ছুড়ে মারে।
আজকে সকালে জানো ওকে একটু বুঝাতে গিয়েছিলাম যে কিছু
একটা কর এভাবে ত জীবন চলে না। আর ও আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে ছিল
যে এই বুঝি তুলে ছুড়ে ফেলে দিবে।
তনিমাঃ- তারপর তোকে আবার কিছু বলে নাই ত?
তাঞ্জিলাঃ- নাহ বলে নাই তবে রাগ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এসেছিল
শুধু তাই নয় বার্গারের বিলটাও আমাকে দিতে হয়েছিল ও কিছুই দেয় নাই।
তনিমাঃ- আহারে তোকে তাহলে কষ্ট করে এত টাকা বিল দিতে হয়েছে। দাড়া ওকে আমি বকে দিচ্ছি।
তাঞ্জিলাঃ- থাক বড় মা আর কিছু বলতে হবে না ওকে,পরে দেখা গেল আমাকে সত্যি সত্যি তুলে ছুড়ে মারবে।
তনিমাঃ- হা হা এত ভয় পাস আমার ছেলেকে?
তাঞ্জিলাঃ- উহু মোটেও না তবে তুলে ছুড়ে মারলে বিষয়টা কেমন যেন দেখায় তাই আর কী বললাম।
এখন এসব বাদ দাও তুমি আমাকে খাবার দাও দেখি ওকে খাওয়াতে পারি নাকি আর
যদি না খায় তাহলে আমি খাব কারণ আমিও সারাদিনে কিছু খায় নাই সেই সকালে
বার্গার এ দুই কামড় দিয়েছিলাম ঐ শেষ এরপর কলেজ আর টিউশনি করে এখানে
এলাম বাসাতেও যায় নাই।
তনিমাঃ- আহারে আগে বলবি না তুই বস আমি তোকে খাওয়ায় দেই তারপর না হয় ওর কাছে যাস।
তাঞ্জিলাঃ- নাহ বড় মা ও ত সকাল থেকে না খেয়ে আছে আগে ওকে খাওয়ায় আসি তারপর আমি খাব।
তনিমাঃ- আচ্ছা যা ভালো মনে হয় কর, আমি তোকে খাবার গুছিয়ে দিচ্ছি।
তাঞ্জিলাঃ- আচ্ছা বড় মা।
এরপর তনিমা বেগম রান্নাঘরে চলে যান খাবার গুছানোর জন্য।
একটি প্লেটে ভাত তরকারি নিয়ে তাঞ্জিলা ধীর পায়ে তামিম এর ঘরের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
দরজার কাছে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ভাবার পর আস্তে করে দরজায় টোকা দেয় কিন্তু
সে দেখতে পায় দরজা খোলা।
তাঞ্জিলা ভেবেছিল হয়ত দরজা ভিতর থেকে লাগানো থাকবে কিন্তু না দরজা খুলে রাখা
তাই আর সে কোনো কথা না বলে আস্তে করে ভিতরে প্রবেশ করে।
ভিতরে প্রবেশ করার পর তার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় কারণ ঘরের ভিতরে এত
মিউজিক লাইট ঝিকিমিকি করছে যার কারণে চোখের উপর বাজে প্রভাব পড়বেই।
এই লাইটের জন্য তাঞ্জিলা কখনও তামিম এর ঘরে আসতে চায় না কারণ তার চোখে
লাগে এই লাইটের রশ্মিগুলো। শুধু তাই নয় এই ঘরের সব কিছু বন্ধ করে রাখাতে কেমন
যেন একটা বদ্ধ বদ্ধ ভাব রয়েছে যে কারও দম বন্ধ হয়ে আসবে।
তবুও এসেছে বন্ধুত্বের ক্ষাতিরে নয়ত এখানে আসত না।
ঘরে এসে কোনোভাবে টেবিলের উপরে খাবার প্লেটটি রেখে দিয়ে।
এগিয়ে যায় সুইচ বোর্ডের কাছে লাইটগুলো বন্ধ করার জন্য এবং লাইটগুলো বন্ধও করে দেয়।
এদিকে বিছানায় এখনও পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে তামিম কিন্তু তার সেই ঘুম বেশিক্ষণ স্থির হল না।
হঠাত মনে হল তার পিঠের উপর তাল পড়ছে।
১…২……৩…… এরপর খুব দ্রুত ঘুরে হাত ধরে ফেলে এবং টান দেয় তামিম। এত জোরে টান
দেওয়াতে তার মনে হল বুকের উপর ভারী কিছু এসে পড়ল। তবুও খুব শক্ত করে হাত
চেপে ধরে অন্য হাত দিয়ে রিমোট নিয়ে ঘরের আলো জ্বালিয়ে দেয়।
আলো জ্বালানোর পর সে যা দেখে তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
ঘরে ঢুকে মিউজিক লাইটগুলো বন্ধ করে খাবারের প্লেটটি টেবিলের উপর রেখে
সামনে তাকিয়ে তাঞ্জিলা দেখতে পায় তামিম বিছানায় উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে।
তামিমকে এভাবে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে তার মনে শয়তানি চিন্তা বাসা বাধে তাই
এগিয়ে গিয়ে ঘুমন্ত তামিমের পিঠের উপরে দুম দুম করে কয়েকটা ঘুসি দেয়।
কিন্তু কে জানত তার এই শয়তানি চিন্তায় তাকে ফাসিয়ে দিবে।
ঘুমের ভিতরে কারও কিল ঘুসি পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় তামিম এর এবং বিষয়টি বুঝে উঠার আগেই আবারও তার পিঠের উপর ঘুসি পড়ে তাই এবার আর চুপ করে না থাকে দ্রুত ঘুরে গিয়ে অপরাধীকে ধরে ফেলে।
কিন্তু অন্ধকার হওয়াতে সে কিছুই দেখতে পায় না এজন্য রিমোট হাতে নিয়ে ঘরের আলো জ্বালানোর পর সে রীতিমত অবাক হয়ে যায়।
কারণ চোর ভেবে এতক্ষণ যাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল সে যে অন্য কেউ নয় তাঞ্জিলা।
……
ঘটনাটি এত দ্রুত ঘটে গিয়েছিল যে এখানে তাঞ্জিলার কিছুই করার ছিল না।
এদিকে তামিমও এখন তাঞ্জিলাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে নিজেই লজ্জা পাচ্ছে। তাই আর কোনো কথা না বলে তাকে ছেড়ে দিয়ে সে দূরে সরে যায়।
ছাড়া পাওয়ার পর তাঞ্জিলা দ্রুত বিছানা থেকে উঠে এক কোণায় দাঁড়িয়ে পড়ে আর তামিমও বিছানার এক কোণায় সরে এসে শুয়া থেকে উঠে বসে।
কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ব্যপারটি এখন দুজনকেই লজ্জা দিচ্ছে কারণ তারা এত ঘনিষ্ট এবং ছোটবেলার বন্ধু হলেও এভাবে কখনও দুজনে একে অপরের কাছে আসেনি আজ যতটা কাছে এসেছিল।
পরিস্থিতি এখন দুজনকে চুপ করিয়ে দিয়েছে কারও মুখে কোনো কথা নেই।
তবুও কাউকে না কাউকে ত ব্যপারটি স্বাভাবিক করতে হবে তাই আর চুপ করে না থেকে তামিম নিজে থেকেই জিজ্ঞাসা করল-
তামিমঃ- তুই আমার ঘরে এই সময় কী করছিস?
তাঞ্জিলাঃ- তোর জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলাম।
তামিমঃ- কেন?
তাঞ্জিলাঃ- তুই ত সারাদিন কিছু খাস নাই তাই এখন এসেছি তোকে খাওয়ানোর জন্য।
তামিমঃ- আমার এখন খিদে নেই,তুই খাবার নিয়ে যা আর হ্যা আমার জন্য কাউকে ভাবতে হবে না বুঝেছিস।
তাঞ্জিলাঃ- তুই আমার উপরে এখনও রেগে আছিস? আমি sorry রে তখন এভাবে বলা উচিত হয় নাই।
তামিমঃ- sorry বলার দরকার নাই,আমি ত বেকার কোনো কাজের না আর কী যেন বলেছিলি ও হ্যা মনে পড়েছে আমি নাকি পাতি লেখক আরও কত কী, ঠিকিত বলেছিস। তাহলে এখন কেন এসেছিস sorry বলতে?
তাঞ্জিলাঃ- তখন এভাবে বলা উচিত হয় নাই আমার রাগের মাথায়। তাছাড়া তুইও ত আমাকে তখন কী বলেছিলি মনে আছে?
তামিমঃ- আমি কী কোনো অন্যায় কিছু বলেছিলাম? শুধু বলেছিলাম তোকে ভালোবাসি আর তুই আমাকে এত কথা শুনিয়ে দিলি।
তাঞ্জিলাঃ- তুই একবার আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা কর।
তামিমঃ- আমি সব বুঝে গিয়েছি আর কিছু বুঝতে চাই না নতুন করে। তুই বড়লোক ছেলে পেয়ে আমাকে ভূলে গিয়েছিস। ঠিক আছে যা ঐ বড় লোক ছেলের সাথেই বিয়ে কর আমি বা কে তোর।
তাঞ্জিলাঃ- তুই কিন্তু এবার উল্টাপাল্টা কথা বলতেছিস তামিম।
তামিমঃ- কী উল্টাপাল্টা বলছি আমি হ্যা? যা বলছি সব ঠিকই বলছি এখন উচিত কথা শুনলে গায়ে কাটা লাগে তাই না?
তাঞ্জিলাঃ- চুপ কর তুই কী সব আজেবাজে বলছিস? আচ্ছা তুই কী নেশা করেছিস দেখি আমার কাছে আয় তোর চোখ এমন লাল কেন আর এভাবে মাতালের মত নড়াচড়া করছিস কেন? একি তোর বুক পকেটে এই ঘুমের ওষুধের প্যাকেট এলো কোত্থেকে? তারমানে তুই আবারও অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়েছিস?
তামিমঃ- হ্যা মাত্র তিনটি খেয়েছি,তুই ত জানিসই আমার রাগ কেমন। এত পরিমাণ রাগ উঠেছিল যে সব ভেঙে ফেলতে ইচ্ছা করছিল তাই ঘুমের ওষুধ খেয়ে নিজেকে সামলে নিয়েছি।
তাঞ্জিলাঃ- কেন এমন করছিস তুই? জানিস না এতগুলো ঘুমের ওষুধ খেলে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। আচ্ছা তোর এই পাগলামি কী জীবনেও ঠিক হবে না?
তামিমঃ- আমি ত তোর জন্য পাগল।
তাঞ্জিলাঃ- তামিম এসব বাদ দে তুই আমার থেকে ভালো কাউকে পাবি।
তামিমঃ- কিন্তু তোকে ত পাব না আমি।
তাঞ্জিলাঃ- আরও ভালো পাবি আমার চিন্তা বাদ দে চল এখন খেয়ে নে।
তামিমঃ- নাহ আমি খাব না তুই খাবার নিয়ে যা।
তাঞ্জিলাঃ- কেন খাবি না,এই দেখ আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে এসেছি বড়মাকে বলে।
তামিমঃ- আহা বললাম ত আমি খাব না।
তাঞ্জিলাঃ- কেন খাবি না?
তামিমঃ- এমনি খাব না।
তাঞ্জিলাঃ- কেন বল আমাকে?
তামিমঃ- কিছু না।
তাঞ্জিলাঃ- বলবি না?
তামিমঃ- আরে আমার পেট ভরা।
তাঞ্জিলাঃ- মানে কীভাবে?
তামিমঃ- দুপুরে ফুড পান্ডা থেকে বিরিয়ানি অর্ডার করেছিলাম আমার ঘরের জানালা থেকে পার্সেল নিয়েছি। এই দেখ খাটের নিচে প্যাকেট পড়ে আছে।
ঠাস……ঠাস……ঠাস……
পর পর তিনটি চড় এবং ঘরের ভিতর নিরবতা।
এদিকে তাঞ্জিলার দুচোখ লাল রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে এবং দুই হাত মুখে চেপে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে তামিম।
একটু আগে তিনটি চড় তামিমের মুখেই মেরেছে তাঞ্জিলা। শুধু চড় মেরে থেমে নেই সে এখন রাগে ফুসছে।
চড় খাওয়ার কারণ এখনও অজানা রয়ে গিয়েছে তামিমের কাছে তবুও সে কিছু বলছে না চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
কিছুক্ষণ রাগে ফোস ফোস করার পর তাঞ্জিলা হাত বাড়িয়ে তামিমের শার্টের কলার শক্ত করে
টেনে ধরে বলল- ”শয়তান তুই কবে ভালো হবি নাকি সারাজীবন এমন থেকে যাবি?
মানুষের ফিলিংসও বুঝিস না সব সময় একই রকম এলোমেলো হয়ে থাকিস। তুই কী
জানিস আমি সারাদিন কিছুই খায় নাই শুধু তোর কথা ভেবে। সারাদিন সব কাজ শেষ
করে ছুটে এসেছি তোর কাছে যে তুইও কিছু না খেয়ে বসে আছিস তাই তোকে সাথে করে খাব।
আর তুই কী না ঘরে বসেই খেয়ে নিয়েছিস একটি বার আমার কথাটিও ভাবলি না যে আমাকে
এভাবে ফেলে রেখে চলে এসেছিস রেস্টুরেন্টে, আমি কীভাবে বাড়ী যাব বা ঐখানের থেকে কীভাবে
বের হব। তুই সারা জীবন নিজের মত ভেবে গিয়েছিস অন্যের প্রতি তোর কোনো দয়ামায়া নেই।
আর থাকবে কীভাবে তুই ত রোবট তোর ত কোনো মন বলে কিছু নেই। যে অন্যের ফিলিংস বুঝে
না সে আর যাই করুক কাউকে ভালোবাসতে জানে না। আজ থেকে তুই আর আমি দুজনে
সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যাব। হ্যা আমি ঠিকই বিয়ে করে নিব ঐ বড়লোক ছেলেকে কিন্তু
একটি রিকুয়েস্ট তুই আমার বিয়েতে যেন না যাস।“
এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে তামিমকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে দ্রুত বাসা থেকে
বেরিয়ে যায় তাঞ্জিলা,বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাকে পিছন থেকে বেশ কয়েকবার তনিমা
বেগম ডেকেছিলেন কিন্তু সে ডাকে সাড়া না দিয়ে সোজা বেরিয়ে আসে।
তাঞ্জিলা চায় না তার এই অশ্রুসিক্ত নয়ন কাউকে দেখাতে তাই যত দ্রুত সম্ভব
সেখান থেকে পালিয়ে এসেছে।
এদিকে ঘরের মেঝেতে বসে তাঞ্জিলার বলে যাওয়া কথাগুলো ভাবছে তামিম।
সেই ছোটবেলা থেকে কত ঝগড়া হয়েছে তাদের ভিতরে কিন্তু আজকের কথাগুলো একদম ভিন্ন ছিল। সে স্পষ্ট তাঞ্জিলার চোখে জল দেখতে পেয়েছে।
মেঝেতে বসে খাটের সাথে মাথা লাগিয়ে কিছুক্ষণ আগে তাঞ্জিলার বলে যাওয়া কথাগুলোকে মিলিয়ে নিচ্ছে।
এসব ভাবতে ভাবতে নিজের মনে মনে বলছে “কেন এমন বললে তাঞ্জিলা? তবে কী সে আমাকে ভালোবাসে? না কী অন্য কিছু?”
সব কিছু কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
.
এভাবে কিছু না বলে তাঞ্জিলার বেরিয়ে যাওয়াটা ভালোভাবে নিলেন না তনিমা বেগম তবে তিনি বাইরে দাঁড়িয়ে তাদের কথা কিছুটা শুনেছেন এবং বাকীটা বুঝে নিয়েছেন। সব দিক বিবেচনা করে তিনি এগিয়ে যান তার ছেলের ঘরে।
ঘরে প্রবেশ করার পর তনিমা বেগম দেখতে পান তার ছেলে মেঝেতে চুপ করে বসে রয়েছে। তিনি গিয়ে তার পাশে বসলেন এবং কিছুক্ষণ পরিস্থিতি বুঝে নিয়ে এরপর বলতে শুরু করলেন-
“তোদের মাঝে কিছুক্ষণ আগে কী হয়েছে আমি শুনেছি এবং বুঝতে পেরেছি। এখানে আমি তাঞ্জিলার কোনো দোষ দিব না কারণ মেয়েটা চায় তোকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে কিন্তু তোর এই জেদগুলো ওকে হারিয়ে দেয়। জানিস আজকে মেয়েটি কান্না করতে করতে বেরিয়ে গিয়েছে বাসা থেকে শুধুমাত্র তোর জন্য। আচ্ছা তুই কবে একটু সিরিয়াস হবি আমাকে বল ত, না কী এমনই থেকে যাবি? হ্যা হবি একদিন কিন্তু সেদিন তোর পাশে আর কেউ থাকবে না। তাই এখনও সময় আছে নিজেকে পরিবর্তন কর। দেখ বাবা মানুষের জীবনটা হল হাসি-কান্না,আবেগ-অভিমান এসব কিছু নিয়ে, আমি জানি তোর মাঝেও এসব আছে কিন্তু তুই প্রকাশ করিস না। তবুও এভাবে আর কতদিন চলবে? তাই একটু হলেও অন্যের ফিলিংসটি বুঝতে শিখ দেখবি সবকিছু আরও সুন্দর লাগবে।“
কথাগুলো ঠান্ডা মাথায় বলে তনিমা বেগম বেরিয়ে যান তামিম এর ঘর থেকে।
মায়ের বলে যাওয়া কথাগুলো এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে শুনছিল তামিম।
তার মা যা যা বলে গেলেন সবকিছুই ঠিকই বলেছেন,সত্যিই এভাবে জীবন চলে না।
সব কিছু ভেবে চিন্তে সে সিদ্ধান্ত নিল নিজেকে পরিবর্তন করবে আর এভাবে থাকবে না। আগের সব অভ্যাস বদলে নিজেকে সবার কাছে উপযুক্ত করে তুলবে।
এক সপ্তাহ পর……
আজ তাঞ্জিলার বিয়ে।
(এরপর কী হবে???)
চলবে..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com