বোরখাওয়ালী । পর্ব -১০
জালানার গিরিল ছুঁয়ে দাড়িয়ে আছে আবির।আকাশের চাঁদটাকে দেখছে আর নিজের মাঝে জমানো সব কথাগুলো তুলে ধরে মনকে প্রশান্ত করছে।সারাদিনের যতো অপেক্ষা,, হয়তো ওই আকাশের চাঁদটার জন্যই।যে শুধুই তাকে শুনবে।কখনও ভুল বুঝবে না, ঠকাবেও না।আর এভাবেই তার জীবনের এতোগুলো বছর পার হয়েছে।
ওদিকে আরিয়া,, গভীর রাতে তাহাজ্জুদের সিজদাহের মাঝে লুটিয়ে পরে নিজের সকল দুঃখ, কস্ট আর বেদঁনা, জমা করে রাখছে।স্রস্টার দরবারে নিজেকে সমার্পন করছে।কে যানে অপর পাশের মানুষটা কেমন আছে? হয়তো ভালোই থাকবে।
.
আচ্ছা মাম্মাম, তোমার তাহাজ্জুদের সিজদাহগুলো এতো লম্বা হয় কেন? আয়াত তার মাম্মামকে জিজ্ঞাসা করছে!
কারণ সিজদাহে আল্লাহু রাব্বুল আলামীন আমাদের অতি নিকটে থাকে।
তাহলে তো যে কোনও নামাজের সিজদাহেই আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অতি নিকটে সাক্ষাৎ পেতে পারি?
হ্যা, মামনী। তবে তাহাজ্জুদের নামাজের ফজিলত অত্যন্ত বেশী। যারা তাদের রবের জন্য সিজদাহরত ও দণ্ডায়মান হয়ে রাত্রি যাপন করে অর্থাৎ, তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে তাদের অবিচ্ছিন্ন আকাঙ্খাকে এই ইবাদতের অছিলায় মাহকাম মাহমুদে পৌঁছে দেয়।
তাহলে তো আমরা যা কিছু ইচ্ছা নিদ্বীধায় এই নামাজে চাইতে পারব রবের নিকটে!
হ্যা, পারবে! তবে সেটা তোমার জন্য হালাল আর বৈধ হতে হবে।
কথা বলতে বলতে ফজরের আজান দিয়ে দিল।দুজনের নামাজ পড়া শেষ। আয়াত এখন কোরআন তেলাওয়াত করছে, আরিয়া আয়াতের পাশে বসে মেয়ের কোরআন তেলাওয়াত শুনছে আর সকালের রুটি বেলছে।
,
চৌধুরী ভিলায়।ঘড়ির কাটায় সকাল ৬টা।লাবন্য লাউড স্পিকারে মিউজিক ছেড়ে দিয়ে রেডি হয়ে ডিজে গানে ড্যান্স করতে করতে মায়ের রুমে আসে।কারণ প্রতিদিন সকালে নেহা আর লাবন্য মনিং ওয়ালর্কে যাই।
ওহহ মম! এক্ষণও ঘুমাচ্ছো তুমি।এই দেখও আমি রেডি।তারাতারি ওঠো।শরীরকে ফিট রাখতে হবে না?
নেহা ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসে বেড ট্রি টা হাতে নিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিল,
ওহহ লাবু! মাই বেবি! আর একটু অপেক্ষা কর আমি রেডি হয়ে আসছি।বলে চায়ের কাপটা রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে পরলো।
কিছুক্ষণ পর নেহা আর লাবন্য যখন বাড়ি থেকে বের হবে তখন আবির ফজরের নামাজ পরে তাসবিহ হাতে বাড়িতে ঢুকছে।
এতো সকালে যখন মা, মেয়ে ঘুম থেকে উঠেই পড় তখন ফজরের নামাজটা পড়ে নিলে কি হয়?
নেহার কানে হেডফোন থাকায় আবিরের কথাটা শুনতে পাই নি নইয়ে কুরুক্ষেত্র লেগে যেত।লাবন্য শুনতে পেয়ে পিঁছনে ঘুরে তাকিয়ে আবিরের সামনে এসে বলল, হোহহ ড্যাড! তুমি যেটা করছো কর না! আমাদের ব্যাপারে কেন নাক গলাতে আসো? তুমি তোমার নামাজ নিয়ে জান্নাতে যেও কেমন! আর আমরা আমাদেরটা বুঝবো।আবির কিছু বলতে যাবে তার আগেই লাবন্য চলে যায়।
আবির ভাবে তার কি আর কিচ্ছু করার নেই? অসহায় হয়ে পকেট থেকে সেলফোনটা বের করে মেঘকে ফোন দেয়।
আসসালামু আলাইকুম।আংকেল।
.
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। মেঘ তোমাকে আমি যেটা বলেছিলাম সেটা মনে আছে তো?
হ্যাঁ, আংকেল। আপনি নিশ্চিত থাকুন। আপনার বাকাঁ মেয়েকে কিভাবে সোজা করতে হয় সেটা আমার উপরে ছেড়ে দিন।আপনি আমার বাবার বেস্টফ্রেন্ড।বাবা মৃত্যুর আগে মাকে বলে গিয়েছিল আপনার মেয়ের সাথেই আমার বিয়ে দেবে।আমি আমেরিকা থেকে লেখাপড়া শেষ করে আসার পর মায়ের কাছে কথাটা যানতে পারি।আপনার মেয়ের সাথে দেখা করতে চাচ্ছিলাম।কিন্তু আপনি বলেছেন আপনার মেয়ে একদম আলাদা, তাই তাকে সোজা করতে তার ভার্সিটিতেই আমি এ্যাডমিশন নিয়েছি।তবে দেখবেন আপনার মেয়েকে আমি সোজা পথে এনেই ছাড়ব।
তাই যেনো হয় বাবা! আমার মেয়েটা যে একদম ওর মায়ের মতো হয়েছে। আল্লাহ যেন তোমায় ওকে সোজা পথে আনার কাজে সহায়তা করে।
আচ্ছা আংকেল আমার এখন একটা মিটিং এ যেতে হবে।সারাদিন ভার্সিটিতে থাকবো তো তাই অফিসে যেতে পারবো না।এজন্য এখন মিটিংটা এটেন্ড করতেই হবে।পরে কথা বলব।আল্লাহ হাফেজ!
আল্লাহ হাফেজ!
সময়টা সকাল ১০টা ৪৫ এর কাছাকাছি
“ভার্সিটিতে”,,
.
মেঘ ক্লাসে ঢুকতে যাবে তখনই মানকি টুপি পরা তিনটা ছেলে এসে মেঘের নাকের কাছে একটি রুমাল ধরে আর মেঘ অজ্ঞান হয়ে যায়।তারপর মেঘের হাত, পা বেধেঁ কালো কাপড় দিয়ে মুখটা ঢেকে দেই।ছেলে তিনটা মেঘকে একটা ফাঁকা রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।আয়াত দূর থেকে ব্যাপারটা দেখে এগিয়ে আসে বিষয়টা কি বুঝতে!
লাবন্য ছেলেটাকে ধরে এনেছি কালকে আমাদের সাথে যেটা করেছে তার শাস্তি ওকে দেওয়াই লাগবে। বলেই নেহাল মুখ থেকে নিজের মানকিটা খুলে ফেলে।
আয়াত রুমের বন্ধ জানালাটা একটু ফাঁক করে বাইরে থেকে ব্যাপারটা দেখে চমকে যাই।
বল লাবু এর সাথে কি করতে চাস তুই? বলে এবার টোমি মানকি খোলে।
আয়াত ব্যাপারটা দেখছে! কিন্তু বুঝতে পারছে না, কালো কাপড়ে মোড়ানো মুখের ছেলেটা কে! যাকে এরা এভাবে ধরে এনেছে?
.
আরে কি আর করবি! ওর মুখে কালি মাখিয়ে পুরো ভার্সিটি আজ ঘুরাবি লাবু! এতে ইন্টারটেইনমেন্টও হবে আর সব স্টুডেন্টরা ফ্রীতে ফুরতিও নিতে পারবে! ঠিক বলছি না লাবু? বলেই রোজ নিজের মুখ থেকে মানকিটা খুলে ফেলে।
যাস্ট সার্ট আপ! রোজ এটা ফিল্ম নয় যে তোর এসব ফালতু আইডিয়া চলবে।এতে পিন্সিপাল যানলে আমাদেরই ক্ষতি হবে।ভালো কিছু ভাব কি করা যায় ছেলেটাকে নিয়ে? নেহাল রোজকে বলল।
লাবন্য এতোক্ষণ এদের কথাগুলো শুনছিল বেঞ্চের উপর বসে।এবার মুখ খুললো, দেখ তোরা এই ছেলেটাকে ছেড়ে দে। এত্ত কিউট আর হ্যান্ডস্যাম ছেলেকে খারাপ লাগছে শাস্তি দিতে!
তোর মাথা ঠিক আছে লাবন্য? কিসব যা তা বলছিস? কত কস্টে ছেলেটাকে সবার চোখকে এড়িয়ে এখানে এনেছি যানিস? নেহাল লাবন্যকে কথাটা বলে উল্টোদিকে ঘুরে তাকালো।
নেহাল ঘুরে তাকাতে জানালার কাছ থেকে আয়াত সরে যেতে চাইলো আর জানালাটা দপ করে শব্দ হয়ে উঠলো।মোনা আর টিনা শব্দটা শুনে দৌড়ে যায় ততোক্ষণে আয়াত ওখান থেকে পালায়।
নারে কেউ নেই এখানে, হয়তো বাতাসের শব্দে বন্ধ হয়ে গেছে জানালাটা।
লাবন্য বলতে শুরু করে, দেখ নেহাল আজ সকালে আমি একে একটা গাড়ি থেকে নামতে দেখেছি।পড়নে শুট, বুট আর টাই।চোখে ব্লাক সানগ্লাস। কত্তটা হ্যান্ডস্যাম আর কিউট লাগছিল তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।সাথে দুইজন বডিগার্ডও ছিল।তাছাড়া ছেলেটাকে দেখে বয়সের দিক থেকে মনে হয় না ও ১ম বর্ষের স্টুডেন্ট।এ যদি কোনও পাওয়ার ফুল পারসোন হয়।তখন একি আমাদের ছেড়ে দেবে বলে তোর মনে হয়? ছেলেটা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের ভার্সিটিতে এসেছে তা আগে যানতে হবে!
.
তাহলে কি করবি এখন? মোনা জিজ্ঞাসা করল!
দু’চার জন লোক ঠিক কর! যত টাকা লাগে দেব।বলিস দুই দিনের মধ্যে ছেলেটার সব ডিটেলস আমার চাই।বলেই টাকার বান্ডিল ছুড়ে মেরে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে গেল লাবন্য।
লাবন্য যাওয়ার কিছুক্ষণ পর বাকি সবাই ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে যায়।আয়াত দূর থেকে সব দেখছে।সবাই চলে গেল আয়াত কাউকে না ডেকে নিজেই ক্লাস রুমটার সামনে আসলো।ভাবছে কাউকে ডাকবে কিনা? লাবন্য বা লাবন্যর দলবল যদি যানতে পারে আয়াত সব দেখেছে তাহলে আয়াতের ক্ষতি হবে ভেবে আর কাউকে না ডেকে নিজেই ক্লাসরুমে ঢুকে পরল।
আয়াত ভাবছে হাত, পা তো বাধাঁ। ছোঁবো কি ছোঁবো না? নাহ মানুষকে বাচাঁনো ফরজ। নিজে নিজে বলছে আর হাত, পায়ের বাধঁনগুলো খুলছে।আচ্ছা ছেলেটা কে?
আয়াত মেঘের মুখ থেকে কালো কাপড়টি খুলে ফেলল,
একি! এতো মেঘ।মেঘ ওঠেন! আপনি কি শুনতে পারছেন? কি যে করি!
আয়াত মেঘের মুখের কাছে ঝুকেঁ খেয়াল করছে নিঃশ্বাস নিচ্ছে কিনা? হঠাৎ মেঘের জ্ঞান ফিরে আসে।উঠে বসে আর কিছু না ভেবেই আয়াতের দিকে রাগি দৃস্টিতে তাকালো।
তুমি! চিৎকার করে বলল।
.
হ্যাঁ, আসলে…
চুপ! একদম চুপ।কাল তোমাকে দেখে আমি ভালো মেয়ে ভেবেছিলাম।আর তুমিই আমাকে কিডন্যাপ করেছো? মেরে ফেলতে চাও আমাকে? সত্যি করে বল তুমি কে?
দেখুন আপনার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।
কিসের ভুল? এই তুমি কি একা আছো নাকি তোমার গ্যাংও আছে সাথে?
কিসের গ্যাং? কি বলছেন কি আপনি?
সাজ পোশাক দেখে তো মনে হচ্ছে জঙ্গি।
দেখুন আমি কোনও জঙ্গি নই।
তাহলে রোহিঙ্গা।
.
চলবে….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com