নেশাগ্রস্ত ভালোবাসা । পর্ব -০১
রুমে মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে আছে মিশকা,
ভয়ে তার শরীর অসার হয়ে আসছে,মুখ ফুটে এই মুহূর্তে কাওকে কিছু বলতে পারছেনা মেয়ে টা।
ওদিকে আর একজন পায়ের ওপরে পা তুলে বসে আছে,
কফির কাপে চুমুক দিয়ে হুংকার ছেড়ে কর্কস গলায় বললো,
– “আমার ঘরে আসতে না করেছি না? দিনের মধ্যে একটা কথা কত বার বলতে হবে,হুমম…!
একবার একটা বললে আপনার কানে যাচ্ছে নাহ?” মিশকা আমতা আমতা করে বললো,
– “ক্ষ ক্ষ ক্ষ ক্ষমা করে দিন…! আর কখনো এমন টা হ হ হ হবে ন ন নাহ।।” ভদ্রলোক উঠে দাঁড়িয়ে এক বার আড়চোখে তাকিয়ে মিশকা কে উদ্দেশ্য করে বললো,
– “নতুন কিছু বলুন…! প্রতিদিন আপনার এই এক ডায়লগ শুনতে একটু ও ভালো লাগছে না।।” মিশকা একটু সাহস জুটিয়ে বললো,
– “ভুল করে ঢুকে পরেছিলাম,তবে এই ভুল আবার হবে না।”
– “ওহ তাই বুঝি? তা রোজ রোজ এক নাটক করতে আপনার বিরক্ত লাগেনা?” মিশকা আপন মনেমনে বিড়বিড় করতে করতে বললো,
– “আচ্ছা…! এই “আপদ” টা কি বাড়িতে ফেরার সময় দেখে না?
আজব…! যার জন্যে চুরি করি সেই বলে চোরররর? ধুরর,ভাল্লাগে না।” ইমান হঠাৎ মিশকার সামনে এসে তুড়ি মে’রে বললো,
.
– “আই ওয়ান্ট এ স্ট্রেইট আনসার…! মিসস জঞ্জাল, কাজেই এভাবে মুখে কুলুপ এঁটে থাকলে তো হবে না।।” রিজওয়ান সাহেব ছেলের হম্বিতম্বি দেখে বিরক্ত হয়ে বললেন,
– “মানুষ মাএই ভুল হয়,ভুল মানুষ করে আর কেউ না…।।
শুধু শুধু মেয়ে টার সাথে চোটপাট করছিস,মিশকা মা? দাঁড়িয়ে থাকিস না,যা তো এবার এ ঘর থেকে যাহ।।” ইমান একহ্রাস বিরক্তি নিয়ে রিজওয়ান সাহেব কে বললো,
– “বাবা তুমি কি ওর অন্যায় গুলো দেখতে পাও না? যখন’ই দেখি সেভিয়ার হয়ে বাঁচাতে চলে আসো এটা কিন্তু ঠিক না।।” ইউভান নিজের চশমা ঠিক করতে করতে ছোটো ভাই কে উদ্দেশ্য করে বললো,
– “মেয়ে টা কিন্তু বাবার বন্ধু’র মেয়ে,
কাজেই সমঝে কথা বল ভাই এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।” ইমান উত্তেজিত হয়ে বললো,
– “বাবার বন্ধু’র মেয়ে বলে তো আর আমাদের মাথা কিনে নেয়নি, তাই না?” তখন ইমানের গার্লফ্রেন্ড আশকারা এসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
– “ওহ বেবি প্লিজ এতো টা রাগ করে না…।।” ইমান ভ্রু কুঁচকে বললো,
– “এই ছাড়তো…! সকাল সকাল আমার এতো ন্যাকামি দেখতে ভালো লাগছে না।” মিশকা নিজের ঘরে এসে ইমান কে গালি দিতে দিতে বললো,
.
– “শালার খচ্চরের বংশধর খচ্চর…!
রোজার দিনে অন্তত মুখ টা কে একটু সংযত রাখতে দিবে না।।
সারাদিন কানের কাছে খচর খচর করে বেড়াবে ভাংগা টেপরেকর্ডার একটা সাথে আবার জুটিয়েছে আর ও একটা মাশাআল্লাহ্ মাশাআল্লাহ্।।” পেছন থেকে ইমা এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “ঠিক বলেছিস মিশি হা হা হা…! যাগগে,একটু সামলে থাকিস।
আমার ভাইয়ের মতিগতি কিন্তু ভালো ঠেকছে না।” মিশি মুচকি মুচকি হেসে মনেমনে বললো,
– “আরেহ ধুরর…! ওনার কথা আমি কখনো গায়ে মাখিনা…।।
এতো বড় ছেলে হওয়া স্বত্বেও যার দশ দশ জন বর্ডিগার্ড সে এলিয়েন ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই নাহ।।” ইশি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
– “আরে ভাই প্লিজ…! এভাবে বলিস না।।” মিশকা বিড়বিড় করে বললো,
– “হুমম…!
তা বলবো কেন? তা বলবো কেন? আমি তো অন্তর জামি তাই না?” ইমা হাসতে হাসতে ইশি কে বললো,
– “থাক…!! ওকে বুঝিয়ে লাভ নেই,তুই এখন এখান থেকে যা।” দুপুরে মিশকা ইমান কে ওয়ার্ক আউট করতে দেখে মনেমনে বললো,
– “রোজা রাখতে পারে না আধ দামড়া অদ্ভুত ছেলে একটা।” মিমের মুখের অবয়ব দেখে ইমান কৌতুক করে বললো,
– “এই যে মিসস জঞ্জাল, আপনি কি আমাকে মনেমনে গালিগালাজ না করে সামনাসামনি গালি দিতে পারেননা?” মিম বাদাম ছিলতে ছিলতে বললো,
– “আমার এতো কারেন্ট নেই গো পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য লোক একটা।।” ইমান চোখ পাকিয়ে বললো,
– “আপনি একটা জঞ্জাল,
.
এই পৃথিবীর বুকে বোঝা একটা।” মিশকা হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস
– “তা ভাই আপনি কোথাকার সু-পুরুষ? আপদ ইসলাম ঢেঁড়স একটা…!”
– “কে ঢেঁড়স? কোথায় ঢেঁড়স? আপনার মাথায় কি কোনো সমস্যা আছে খালাম্মা?” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “আজ্ঞে আপনার মতো লোকের পাল্লায় পরে হয়ে যাবে শিওর,সে নিয়ে এতো ভাবতে হবে না…।” ইমান গোলগাল চোখ করে মিমের দিকে তাকিয়ে রইলো,রেনু ছেলের চেহারা দেখে হাসতে হাসতে স্বামী রিজওয়ান সাহেব কে বললেন,
– “দু’টিতে এক মুহূর্তে এক জায়গায় পরে না।” রিজওয়ান সাহেব স্ত্রী’র কথায় মুচকি হেসে বললেন,
– “সে না পড়া-ই উওম,সবাই যে আমার ছেলের জন্য পাগল হবে তা কিন্তু না…!” ইমান পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় রিজওয়ান সাহেব কে বললো,
– “বাবা আমাকে এভাবে অপমান না করলে হচ্ছিল না? তারপর এসে জুটেছে তোমার ওই বন্ধুর মেয়ে….!
ওটা কি মেয়ে না এলিয়েন আমি তো সেটাই বুঝতে পারছিনা? এর মধ্যে আবার তুমি আমার সেফটির কথা চিন্তা করে একজন সিক্রেট এজেন্ট নিয়োগ করেছ,
তবে আমাকে তার ব্যাপারে কিছুই বলছ না,বুঝতে পারছি বাবা আমাদের অনেক আমার অনেক রাইভেল’স তাই বলে আমি এ রকম বাঁধাধরা জীবন কাটাতে চাই না।
কতবার বলেছি এসব এজেন্ট ফেজেন্ট নিয়োগ দেওয়া বাদদেও,আমার এসব চাই না,জীবন টা আমার যেন প্রিজার্বড হয়ে গেছে কারো নজরে নজরে থাকতে ভালো লাগছে নাহ…! ” রিজওয়ান সাহেব ছেলের কথা শুনে তাচ্ছিল্য করে বললেন,
.
– “তা কাটাবে কেন? সং একটা জুটিয়ে বসে আছো যাও ক্লাবে যাও,পার্টি করো কিচ্ছু বলবো না।” ইমান রিজওয়ান সাহেবের হাত চেপে ধরে বললো,
– “প্লিজ বাবা আমাকে ভুল বুঝো না।” মিশকা দোতলার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বললো,
– “আহা…! ঢং দেখে আর বাঁচি না?” ইমান রিজওয়ান সাহেব কে শান্ত করতে বললো,
– “বাবা প্রয়োজনে তোমার মিশি কে নিয়ে যাবো প্লিজ এতো ভেবো না।” মিশকা এসে ইমান কে উদ্দেশ্য করে বললো,
– “ক্ষমা করুণ প্লিজ…! আমি ওসব আজেবাজে জায়গায় যাই না।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “তা কেন যাবেন?
অঢেল টাকা-পয়সার একটা ব্যাপার-স্যাপার আছে না?” মিশকা ইমান কে পাত্তা না দিয়ে বললো,
– “শুনুন মিস্টার…! আমার বাবা-মায়ের শিক্ষা আমাকে নেশাগ্রস্ত হয়ে গা ঢলাঢলি করা শেখায় না,হবে এটা আপনাদের শিক্ষা তবে দয়া করে নিজের সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলবেন না।।” কথা গুলো শুনে ইমান শরীর রাগে রি রি করে উঠলো,মনেমনে বললো,
.
– “আচ্ছা এই মেয়েটির মুখে কি কিচ্ছু আটকায় নাহ?” রাতে ইফতারি শেষ করে ইমান সবাই কে নিয়ে ক্লাবে এলো,মিম এসে চুপচাপ এক কোণে বসে রইলো যেন সে কাওকে চেনেই নাহ..!
ইমান আশকারার সাথে ডান্স করতে ব্যস্ত আশকারা ইমান কে বললো,
– “ওমন রোবটের মতো বসে আছে কেন মেয়ে টা? এখানে কত সুদর্শন ছেলে বসে আছে ওর কি কাওকে মনে ধরছে না?” ইমান বিরক্ত হয়ে বললো,
– “বাদদেও…! চলন্ত জঞ্জাল একটা।।” তখন ওদের বান্ধবী নেহা বললো,
– “ইমান আশু তোদের আজকে ফাস্ট কিস টা হয়ে যাওয়াই উচিত তাই না?” আশকারা ইমান কে অভিমান করে বললো,
.
– “প্লিজ বেবি…! কাম অন কিস মিহ,আজ আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না।।” ইমান সবার জোরাজোরি তে অতি উৎসাহী হয়ে আশকারার ঠোঁটের কাছে এগিয়ে এলো,কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে পরে গেলো মিশকার বলা কথাটা।
ও আশকারা কে ছেড়ে দিলো,মুচকি হেসে বললো,
– “দেখো আশু,আমাদের বিয়ের আগে কিছুই হচ্ছে না…! প্লিজ রাগ করো না।।
কিন্তু তোমার জন্য আমি একটা ডায়মন্ড নেকপিস কিনেছি দেখো কেমন হয়েছে এটা?” আশু খুশি মনে বললো,
– “ইউ আর দ্যা বেস্ট মাই বেবি…! তোমার কোনো তুলো না হয়না।।” মিশকা আশকারা কথা শুনে মুচকি হেসে বললো,
.
– “আহ…! কত কষ্ট করে জুটিয়েছে এতো বড় বাচ্চা টা।।” কিছুক্ষণ পর ইমান মিশি কে খুঁজতে খুঁজতে বাহিরে এসে দেখলে প্রচণ্ড রেগে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে মেয়ে টা,
কোনো সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে,মিশি চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে,
– “I want my papers right now and It’s not a joke,It’s really confidential so…!
এটা কোনো মজার বিষয় না আর হ্যাঁ নেক্সট টাইম আমি এ ধরনের কোনো গাফিলতি বরদাস্ত করবো না মাইন্ট ইট।।
আমার কাজে এমন আনপ্রফেশনাল লোক এট লিস্ট আমার চাই নাহ…!” অপর পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো,
.
– “মিম আমার কথা শুনুন প্লিজ…! আমাদের ভুল বুঝবেন না।।” মিম কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইমান রেড ওয়াইনের বোতল টা এগিয়ে দিয়ে বললো,
– “কাম অন মিশকা…! ট্রাই ইট, মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে প্লিজ এভাবে কারো সাথে সিনক্রিয়েট করবেন না।” মিম ইমান কে ঝাড়ি মেরে বললো,
.
– “ও হ্যালো,দ্যাটস নান অফ ইওর বিজনেস।তাই দয়া করে নিজের ওই লম্বা নাক টা আমার ব্যাপারে ঢোকাবেন না…।” ইমান মিমের হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে ওর মুখ টা চেপে ধরে একদম নিজের ঠোঁটের কাছে নিয়ে বললো,
– “আপনি আমার সাথে এভাবে গলা উচিয়ে কথা বলবেন না মিশকা (মিম)”
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com