দুষ্টু গার্লফ্রেন্ড | পর্ব -২৪
ঈশা রাতে আর কারো সাথে কথা বললো না।
ইনফ্যাক্ট নিজের কাজ কমপ্লিট করে আকাশ’কে না বলেই চলে এসেছে বাসায়।
আকাশ নিচে এসে খুঁজলো ঈশা’কে।কিন্তু ঈশা’কে কোথাও পেলো না।
আকাশ উপরে রুমে গিয়ে ঈশা’কে ফোন করলো।
ঈশা রুমে বই খুলে বসে ছিলো।
তখনি আননোন নাম্বার থেকে ঈশার ফোনে কল এলো।ঈশা ফোন রিসিভ করলো।
ঈশাঃ হ্যা…!
আকাশঃ তোমার মাথায় কি সেন্স বলতে কিছু আছে আদৌও?
আমাকে না বলে তুমি বাসায় কেনো গেলে?
তুমি জানো আমি কোথায়-কোথায় তোমাকে খুঁজেছি? ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া?
এখন চুপ করে আছো কেনো? তুমি সত্যিই আজব একটা মেয়ে।
ঈশা হ্যালো বলতে গিয়েও থেমে গেলো আকাশের গলা শুনে।
আকাশ নিজের পুরো রাগ ঝাড়লো ঈশার উপর।ঈশা সমস্ত বকা চুপ করে শুনে নিলো।
অবশেষে ঈশা আকাশের কথার মাঝে ফোন কেটে দিলো।আকাশ খুব বিরক্ত হয়ে গেলো।
একে তো কোনো কথা বলছে না।তার উপর ফোনও কেটে দিলো ঈশা।
আকাশ আবার ফোন দিলো।ঈশা এবার ফোন কেটে দিলো।আকাশের রাগ বেড়ে চলেছে।
আকাশ আবার ফোন দিলো।ঈশা এবারও ফোন কেটে দিলো।
আকাশ তৃতীয় বার ফোন দিলে ঈশা এবার ফোন রিসিভ করলো।
ঈশাঃ প্রবলেম কি তোমার? এমন তো নয় আমি কোনো কাজ অর্ধেক করে চলে এসেছি।
আমি সবগুলো কাজ সম্পূর্ন ভাবে কমপ্লিট করে নিজের বাসায় এসেছি।
তাতে তোমার কি প্রবলেম হচ্ছে।সিরিয়াসলি বলছি!
তুমি আর একবার যদি আমার নাম্বারে ফোন করো!
তাহলে আমি তোমার নাম্বার ব্লক করে দিব।আল্লাহ্ হাফেজ বায়।
ঈশা এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ফোন কেটে দিলো আকাশের।
ঈশার এরকম ব্যবহারের কারন হলো আকাশ নিজে।
ঈশা আর নিজের মায়া বাড়াতে চায় না আকাশের প্রতি।যতটুকু ভালোবেসে
ফেলেছে আকাশ’কে ঈশা।এতটুকু এনাফ অন্য কোনো ছেলের থেকে দূরে থাকার জন্য।
হয়তো ঈশা অন্য কোনো ছেলেকে ভালোবাসতে পারবে না।
কিন্তু আকাশের মায়ায়ও নিজেকে আর জড়াতে চায় না ঈশা।ঈশা বুঝে গেছে।
ঈশা কখনোই আকাশ’কে পাবে না।তাহলে শুধু-শুধু আকাশের প্রতি মায়া বাড়িয়ে কি লাভ?
তাই ঈশা ঠিক করেছে যতটুকু পারবে আকাশের থেকে নিজের দূরে রাখার চেষ্টা করবে।
এদিকে আকাশ রাগে চুপ করে সোফায় বসে আছে।ঈশা ওর ফোন বারবার কেটে দিচ্ছিলো?
ঈশা ওকে ইগনোর করলো? এতে ওর কিছুই যায় আসে না।কিন্তু আকাশের ইগো হার্ট হয়েছে।আকাশ’কে একমাত্র সুমু ছাড়া কোনো মেয়ে এতটা রিফিউজ করে’নি।
সুমুর কথা আলাদা।কারন সুমু ওর গার্লফ্রেন্ড।কিন্তু ঈশা ওকে রিফিউজ করার কে?
আকাশ এবার রেগে নিজের ফোন ফ্লোরে আছাড় মারলো।
আকাশঃ হু ইজ সি? আমার ইগো হার্ট করেছো ঈশা তুমি।
আই ডোন্ট এক্সপেয়ার ইউ।জাস্ট ওয়েট এ্যান্ড সি।
দেখতে-দেখতে এক দিন পার হয়ে গেলো।
আহির অফিসে বসে কাজ করছে।তখনি প্রকৃতি এসে আহিরের পাশে বসলো।
প্রকৃতিঃ হাই!
আহিরঃ হাই!
প্রকৃতিঃ আমি এখানে তোমার সাথে বসে কাজ করি? বোরিং ফিল হচ্ছে একা-একা ওখানে।
আহিরঃ সিয়্যর!
প্রকৃতিঃ কি করছো?
আহিরঃ একটা ফাইল ইন-কমপ্লিট ছিলো।সেটাই কমপ্লিট করছি।
প্রকৃতিঃ আমি হেল্প করবো?
আহিরঃ তার কোনো প্রয়োজন হবে না।আমি একাই করতে পারবো।
প্রকৃতিঃ ফাইন! তাহলে আমি আমার কাজ করি।
আহিরঃ ক্যারি অন!
প্রকৃতি আর আহির তাদের কাজের ফাঁকে-ফাঁকে হাসা-হাসি করছে।
একটু কথা বলছে।আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিচ্ছে।
আয়রা ল্যাপটপ বন্ধ করে কাঁচের গ্লাসের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো।
প্রকৃতি আর আহির একে অপরের পাশাপাশি বসে গল্প করছে।
আয়রা রেগে ঘেমে যাচ্ছে।টিংকু ভাই এবার আয়রার অনুসরণ খেয়াল করে সেদিকে তাকিয়ে দেখলো আহির।টিংকু ভাই সাথে-সাথে নিজের গালের দু পাশে হাত রাখলো ভয়ে।
টিংকু ভাইঃ আগেই বুঝেছিলাম ডাল মে কুঁছ কালা হ্যায়।না বাবা আমি যাবো না আহিরের কাছে।নয়তো এবার আমাকে আহির থাপড়িয়ে উগান্ডায় ডেলিভারি করে দিবে।টিংকু তুই চেঁপে যা।
আয়রা নিজের চেয়ার থেকে উঠে সোজা নিজের কেবিন থেকে বের হয়ে আহিরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।বুকে দু হাত বটে।আয়রা’কে দেখে প্রকৃতি উঠে দাঁড়ালো।আবার নিজেদের সিটে বসে পরলো।আহির আগে থেকেই বসে ছিলো।
আয়রাঃ মিস.প্রকৃতি আপনি এখানে কি করছেন?
প্রকৃতিঃ ম্যাম কাজ করছি আমি।
আয়রাঃ নিজের জায়গা ছেড়ে এখানে বসে কি কাজ করছেন আপনি?
আহিরঃ ওয়েট এ মিনিট! এটা কি ছোটো বাচ্চাদের স্কুল? আর আপনি কি স্কুলের টিচার? [আয়রা’কে উদ্দেশ্য করে]
আয়রাঃ হুয়াট ডু ইউ মিন? আর কি বোঝাতে চাচ্ছেন আপনি আমাকে?
আহিরঃ এটাই বোঝাতে চাচ্ছি যে! না এটা কোনো স্কুল।আর না আপনি স্কুলের টিচার।
এটি একটি অফিস।আর অফিসের মালিক আপনি রাইট?
আপনি আমাদের প্রজেক্ট কমপ্লিট করতে বলেছেন।
আমরা সময় মতো আপনার প্রজেক্ট কমপ্লিট করে দিলেই তো হলো।
আপনি এভাবে কেনো কথা বলছেন? অফিসের ২-৩ জন স্টাফ একদিন একসাথে কাজ
করতেই পারে স্বাভাবিক।আপনি এভাবে কেনো রিয়্যাক্ট করছেন?
স্যরি যদি কোনো ভুল কথা বলে থাকি আমাকে মাফ করে দিবেন।
প্রকৃতিঃ স্যরি ম্যাম! আমি নিজের জায়গায় যাচ্ছি।
আয়রাঃ যদি সত্যিই নিজের কাজ করে থাকেন! তাহলে করতে পারেন।
বাট কাজ বাদ রেখে কথা বলা নট এ্যালাও।
প্রকৃতিঃ এগেইন স্যরি ম্যাম।
আহির একবারও আয়রার দিকে তাকালো না।আহির নিজের কাজ করছে।
প্রকৃতিও নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।আয়রা চলে এলো নিজের কেবিনে।
এসে নিজের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে রইলো চোখ বন্ধ করে।
আয়রাঃ [আহির এভাবে সবার সামনে আমাকে অপমান করলো।
আর প্রকৃতি’কে সাপোর্ট করলো? আমি কি সত্যিই এতটা খারাপ?
আমার দিকে তাকাতেও আহিরের…!]
আয়রা আর কিছু ভাবতে পারলো না।আয়রা আর এক বারের জন্যও বাহিরে তাকায়’নি কাঁচের গ্লাস দিয়ে।আয়রার কথা হলো! আহির যা ইচ্ছে তা করুক।তাতে আয়রার কিচ্ছু যায় আসে না।
একবার শুধু কোনো ফাইলে ভুল কিছু পেলেই হলো।আহিরের ১২টা বাজিয়ে দিবে আয়রা।
রাতে অফিস থেকে বের হয়ে আয়রা গাড়িতে উঠবে! দেখলো আহির প্রকৃতির গাড়িতে উঠছে।
আয়রা রেগে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে! গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিলো।
আয়রাঃ [আহির আর প্রকৃতির মধ্যে কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়’নি তো?]
আয়রার মাথায় যত উদ্ভত-উদ্ভত প্রশ্ন নাড়া দিচ্ছে।
আয়রা আহির’কে নিয়েই ‘বা’ কেনো এত ভাবছে।সেটাও আয়রা বুঝতে পারছে না।
আয়রার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
ঈশার সব কাজ শেষ।ঈশা নিজের ব্যাগ নিয়ে আকাশ’দের বাসা থেকে বের হবে!
তখন আকাশ ঈশার সামনে ৩ জোড়া জুতো ফ্লোরে ছুঁড়ে মারলো।
ঈশা আকাশের দিকে তাকালো।আকাশ বললো!
আকাশঃ আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছো?
জুতো গুলো সব ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে বারান্দায় শুখাতে দিয়ে তারপর যাবে বাসায়।
আর হ্যাঁ! জুতোয় যেনো এক কণা বালির দানাও না থাকে।নয়তো আজ তোমায় বাসায়
যেতে দেওয়া হবে না।সো, কাজের মেয়ের মতো মাজায় ওড়না বেঁধে জুতো
পরিষ্কার করতে বসে পরো।
চলবে…..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com