দুষ্টু গার্লফ্রেন্ড | পর্ব -১৮
রাফিনঃ কোনো প্রবলেম হলে আমাকে জানিও।
ঈশাঃ হুমম।
রাফিন বাইক ঘুরিয়ে চলে গেলো।ঈশা ফোনে কিছু দেখতে-দেখতে চলে গেলো বাসার ভেতরে।বাসায় আজ আকাশের সব বন্ধু বান্ধব’রা এসেছে।সাথে সুমুও এসেছে।ওরা সবাই সামনের ড্রইং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে।ঈশা কলেজ ড্রেসে কাঁধে ব্যাগ আর হাতে ফোন নিয়ে টিপতে-টিপতে ভেতরে ঢুকলো।ঈশা খেয়াল করে’নি সামনে কেউ আছে নাকি নেই।সবাই ঈশা’কে দেখে একটু অবাক হলো আকাশ আর সুমু ছাড়া।কারন কেউ আগে ঈশা’কে দেখে’নি।
আবিরঃ এই মেয়েটি কে আকাশ?
নিলয়ঃ আগে তোর বাসায় মেয়েটিকে দেখি’নি তো কখনো।
রিহানঃ হট মেয়েটা খুব।
সুমুঃ বস্তির মেয়েরা হট হয় জানতাম না আমি।
আবিরঃ মানে?
.
সুমুঃ মানে মেয়েটি এই বাসার সার্ভেন্ট।
নিলয়ঃ তাহলে কলেজ ড্রেসে ফোন হাতে কি করছে?
সুমুঃ আমিও সেটাই ভাবছি।আমি প্রথম দিন দেখে ভেবেছিলাম লেখা-পড়া জানে না।
রিহানঃ আকাশ খুলে বলবি কিছু?
আকাশ কিছু বলতে যাবে তখনি টিংকু ভাই এসে ঈশা’কে ডাকলো।আকাশ’দের সামনে নিয়ে বললো!
টিংকু ভাইঃ ঈশা শোনো!
ঈশাঃ হ্যাঁ বলুন টিংকু ভাই।
টিংকু ভাইঃ কলেজ ড্রেসে কেনো আজ?
ঈশাঃ টেস্ট এক্সাম চলছে আমার।গতকাল বাসায় গিয়ে সারারাত বই নিয়ে বসে ছিলাম।এই মাত্র এক্সাম দিয়ে এলাম।
টিংকু ভাইঃ কেমন হলো এক্সাম তোমার?
ঈশাঃ আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো হয়েছে।
টিংকু ভাইঃ এ-প্লাস থাকবে?
ঈশাঃ ইনশাহ্আল্লাহ্।
টিংকু ভাই ইচ্ছে করে ঈশার কাছে এগুলো শুনতে চাইলো।আবির,নিলয়,রিহান,সুমু আর আকাশ’কে শোনানোর জন্য।কারন ওরা ঈশার গরিব হওয়া নিয়ে মজা করছিলো।
টিংকু ভাইঃ তোমরা শুনতে পেলে? তোমাদের মতো বাবার টাকা উড়িয়ে ফুরতি করার মতো মেয়ে নয় ঈশা।একজন খুব ভালো স্টুডেন্ট ঈশা।টাকা থাকলেই বড়লোক হয় না বুঝলে।
রিহানঃ টিংকু ভাই! তুমি সামান্য একটা বস্তির মেয়ের জন্য আমাদের অপমান করছো?
টিংকু ভাইঃ তোমরা অপমান ছাড়া আর কোনো রাস্তাও তো খোলা রাখো’নি।
সুমুঃ টিংকু ভাই বাদ দাও এগুলো।এই মেয়ে তুমি কাজ করতে এসেছো তাই না?
ঈশাঃ আমি নিশ্চয়ই নিজের চেহারা দেখাতে আসি’নি।
আবিরঃ এত ভাব?
.
টিংকু ভাইঃ আবির তুই…!
ঈশাঃ টিংকু ভাই! তুমি ঝামেলা করো না আমার জন্য।তুমি অফিসে যাও।আমি সবকিছু সামলে নিবো।
টিংকু ভাইঃ দেখে কিছু শেখো মেয়েটির কাছ থেকে।একেই বসে আসল শিক্ষা।নিজের খেয়াল রেখো ঈশা।
টিংকু ভাই গাড়ি নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।ঈশা নিজের ফোন ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো।সবাই ঈশার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।
ঈশাঃ কি করতে হবে আমাকে?
আকাশঃ আমাদের সবার জন্য চকলেট কোল্ড কফি বানিয়ে আনো।
ঈশাঃ ওকে।
ঈশা সবার জন্য কফি বানিয়ে আনতে গেলো কিচেনে।সুমু পারছে না চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে ঈশা’কে।
আবিরঃ মেয়েটি টিংকু ভাইয়ের সামনে আমাদের খারাপ বানিয়ে দিলো।
নিলয়ঃ নিজে ভালো সেজে বসে আছে টিংকু ভাইয়ের কাছে।
রিহানঃ আরে ভিকিরিদের মাথায় চালাকি বুদ্ধি দিয়ে ভরপুর।টিংকু ভাইকে চালাকি করে নিজের দলে করে নিয়েছে।
আকাশঃ তোরা কি বলছিস এগুলো।
আবিরঃ তুইও দেখছি মেয়েটির উপর লাট্টু হয়ে আছিস।
আকাশঃ বাজে বকিস না আবির।
নিলয়ঃ সুমু তোর আকাশ’কে সামলে রাখ।এখনি ওই ঈশা মেয়েটির সাইড নিয়ে কথা বলছে।
আকাশঃ আমি কখন ঈশার সাইড নিয়ে কথা বললাম? শুধু-শুধু আমার আর সুমুর সুখের সংসারে আগুন লাগাচ্ছিস।
.
রিহানঃ আজ ওই মেয়েটিকে শিক্ষা দিতেই হবে। [ঈশা’কে উদ্দেশ্য করে।]
সুমুঃ আমি আজ ওই মেয়েটিকে ছাড়বো না। [রেগে]
আকাশঃ সুমু তুমি ওদের কথায় কান দিও না।আর তোরা প্লিজ চুপ করবি?
সুমুঃ তুমি চুপ করো আকাশ।আমি জাস্ট ছাড়বো না ঈশা’কে।
ঈশা সবার জন্য কোল্ড কফি বানিয়ে নিয়ে এলো।সবার সামনে ট্রে রাখলো।ঈশা চুপ করে একপাশে দাঁড়িয়ে রইলো।সবাই সবার কফির গ্লাস হাতে নিলো।সুমু ইচ্ছে করে নিজের পাঁয়ের উপর কোল্ড কফি ফেললো।তারপর চিল্লিয়ে উঠে দাঁড়ালো।সবাই সুমুর দিকে তাকালো।
সুমুঃ ওহ্ নো! আমার পাঁয়ে কফি পরে গেছে।
আবিরঃ এই মেয়ে!
ঈশাঃ কল্ড মি ঈশা।কারন আমার নাম ঈশা।
নিলয়ঃ হোয়াটএভার! সুমুর পাঁ পরিষ্কার করে দাও।
ঈশাঃ উনি ওয়াশরুমে গিয়ে পাঁ ধুয়ে নিলেই তো পারে। [সুমু’কে উদ্দেশ্য করে]
রিহানঃ তুমি এখানে কাজ করতে এসেছো? নাকি নিজের কথা শোনাতে এসেছো।
আকাশঃ ঈশা!
.
ঈশাঃ জ্বি?
আকাশঃ সুমুর পাঁ কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে দাও।ভুলে যেও না এই বাড়ির সার্ভেন্ট তুমি।
ঈশা আর কথা বাড়ালো না।কিচেন থেকে একটি কাপড় ভিজিয়ে এনে সুমুর সামনে দাঁড়ালো।সুমু নিজের চোখ দিয়ে ইশারা করলো ফ্লোরে ওর পাঁয়ের সামনে নিচে বসতে।ঈশা একবার আকাশের দিকে তাকালো।ঘৃণা করছে ঈশার! আকাশের দিকে তাকাতে।ঈশা কিছু ভাবলো না।নিচে ফ্লোরে বসে সুমুর পাঁ পরিষ্কার করে দিলো কাপড় দিয়ে।পরক্ষণেই আবির,নিলয়,রিহান ওরা ৩ জন মিলে ইচ্ছে করে ফ্লোরে সব কফি ফেলে দিলো।সাথে সবাই শয়তানি হাসি দিচ্ছে।আকাশ এখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
ঈশাঃ তোমরা সবাই ইচ্ছে করে কফি ফ্লোরে ফেললে কেনো।
আকাশঃ সেটা তোমার জানার কথা নয়।আমরা যা বলবো তুমি সার্ভেন্ট হিসেবে সব করবে।
সুমুঃ চুপচাপ ফ্লোর পরিষ্কার করো।
.
ঈশার রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে।ঈশা কি করবে বুঝতে পারছে না।সুমু হেসে-হেসে অস্থির হয়ে যাচ্ছে।ঈশা নিচে ফ্লোরে বসে কাপড় দিয়ে ফ্লোর পরিষ্কার করছে।
সুমুঃ নিজেকে খুব অহংকারী ভাবো তুমি তাই না? আসলে তোমার জায়গা আমাদের পাঁয়ের জুতোর নিচে।
আবিরঃ লজ্জা থাকলে আর আমাদের সামনে ভাব দেখতে আসবে না আজকের পর।
নিলয়ঃ লো-ক্লাস গাইয়া ভিক্কুক মেয়ে কোথাকার।
রিহানঃ জীবনে হয়তো কোনোদিন এরকম টায়েলস্ করা ফ্লোর পরিষ্কার করে’নি।
সুমুঃ পাগল নাকি তোরা? থাকে টিনের ভাঙাচুরা ঘরে।আর ওদের ফ্লোর বলতে কিছু আছে? নিচে মাটি চাঁপা দেওয়া ঘরে হয়তো।এরকম আলিশান বড় বাড়িতে ১ মাসের জন্য সার্ভেন্ট হিসেবে কাজ পেয়েছে এটাই ওর ভাগ্য। [ঈশা’কে উদ্দেশ্য করে]
আকাশঃ কাম অন গাইজ বাদ দে।চল আমরা উপরে যাই।ঈশা তুমি ফ্লোর পরিষ্কার করে আমাদের সকলের জন্য ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বানিয়ে উপরে নিয়ে আসবে ওকেহ্।
আকাশ,সুমু,আবির,নিলয় আর রিহান ইচ্ছে মতো অপমান করলো ঈশা’কে।এক কথায় সবাই মিলে ঈশা’কে অপমান করে চলে গেলো।আর ঈশা মাথা নিচু করে সব অপমান সহ্য করে নিলো।ফ্লোর পরিষ্কার করে ঈশা সবার জন্য ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বানিয়ে দিলো।আকাশ সবার সাথে আনন্দে মেতে আছে।তাই ঈশার গোপন চোখের পানি দেখতে পেলো না।
.
চলবে….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com