Breaking News

দুষ্টু গার্লফ্রেন্ড | পর্ব -১৭



আহির ঘরে ঢুকে কেঁশে গলা ঝাড়া দিলো।ঈশা তাকিয়ে দেখলো আহির এসেছে।নিজের চোখ মুছে বসলো।আহির খাবারের প্লেট নিয়ে ঈশার পাশে বসলো।
আহিরঃ কান্না করছিস কেনো তুই?
ঈশাঃ জানি না। [কাঁদতে-কাঁদতে]
আহিরঃ কোনো ভুল কাজ করেছিস তুই আমাদের না জানিয়ে?
ঈশাঃ না।
আহিরঃ তাহলে কেনো কাঁদছিস তুই?
ঈশাঃ আব্বা বকলো তাই।
আহিরঃ আব্বা বকেছে কারন এটা তার দায়িত্ব।সন্তান কোনো ভুল কাজ করলে তাকে সঠিক পথ দেখানো প্রতিটা বাবা-মায়ের নিজ দায়িত্ব।তাই আব্বা তোকে বকেছে।এতে কান্না করার কি আছে? তুই আর তোর মন তো জানে! তুই কোনো খারাপ ‘বা’ বাজে কাজ করিস’নি।তাহলে তুই কেনো কাঁদছিস বল?
আহিরের যতটুকু বোঝানোর দরকার ছিলো।আহির ঠিক ততোটুকু’ই বোঝালো ঈশা’কে।ঈশা বুঝতে পারলো আহির কি বলতে চায় ঈশা’কে।ঈশা নিজের চোখের পানি মুছে ফেললো।তারপর মাথা নিচু করে বসে রইলো।
আহিরঃ কি হলো ক্ষুদা লাগে’নি তোর?
ঈশাঃ জানি না।
.
আহিরঃ সারাদিন মনে হয় না কিছু খেয়েছিস।
ঈশাঃ খেতে ইচ্ছে করছে না আমার।
আহিরঃ উফফফ্ কি টেস্টি খাবার।মিষ্টি কুমড়ার সবজি আর ছোটো চিংড়ি মাছ ভুনা।আমি রাতে খেয়েছি তবুও আবার খেতে ইচ্ছে করছে।তুই তো ভালো করেই জানিস আম্মার হাতের মিষ্টি কুমড়ার সবজি আর চিংড়ি মাছ ভুনা বেস্ট ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।এখন তুই যদি খেতে না চাস তাহলে তোকে জোর করবো না।আমিই নাহয় খেয়ে নিচ্ছি।
আহিরের কথা শুনে ঈশার জিভে লোল চলে এসেছে।আহির খাবারের সুগন্ধ নিচ্ছে।যেই আহির খেতে যাবে! তখনি ঈশা রেগে আহিরের পিঠে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।নাক-মুখ ফুঁলিয়ে আহিরের দিকে তাকালো।
আহিরঃ নিজে খাবি না ভালো কথা।আমাকে অন্তত খেতে দে।
ঈশাঃ তুই মার খেয়ে পেট ভর।তোর খাবার খেতে হবে না বজ্জাত ছেলে।
ঈশা কথাটা বলে আহিরের পিঠে আরো ৩-৪ টা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।আহিরের হাতে খাবারের প্লেট বলে! আহির সহ্য করে নিলো ঈশার মার গুলো।
আহিরঃ হাতে খাবারের প্লেট বলে বেঁচে গেলি তুই।
ঈশাঃ তুই আমাকে খাওয়াবি? নাকি আমার হাতে আরো মার খাবি কোনটা?
আহিরঃ বজ্জাতনী মেয়ে।রাক্ষসী মেয়ে তুই।
ঈশাঃ তুই রাক্ষস আর তোর ভবিষ্যৎ বউ রাক্ষসী।তোর ভবিষ্যৎ বাচ্চারা রাক্ষস আর রাক্ষসনী হবে।
আহিরঃ নিজে-নিজে খা।
ঈশাঃ এই ভাইয়া খাইয়ে দে না প্লিজ। [অভিমানী সুরে আহিরের হাত ধরে]
আহির মজা করেই বলেছিলো একা খেতে ঈশা’কে।আহির নিজের হাতে ঈশা’কে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিলো।খাওয়া শেষে আহির প্লেট ধুয়ে রেখে পানি এনে খাওয়ালো ঈশা’কে।ঈশা পানি খেয়ে বিছানায় বই নিয়ে বসলো।
আহিরঃ ফেল করার চিন্তা আছে নাকি?
.
ঈশাঃ আহির ভাইয়া ভলো হচ্ছে না কিন্তু।আমার ঘর থেকে তুই যা এখনি।
আহিরঃ তুই ফেল করলে আমি পুরো পাড়ার সবাইকে চমচম মিষ্টি খাওয়াবো। [ফাজলামো করে]
ঈশাঃ তোর মনের আশার উপর জোরে ঠাডা পরুক আমিন।
আহির হাসতে-হাসতে নিজের ঘরে গেলো।ঈশা বই খুলে বসে আছে মাথায় হাত দিয়ে।কারন কাল পরীক্ষা কিন্তু ঈশা আজ সত্যিই কিছু পড়ে’নি।দু দিনে একটুও বই নিয়ে বসতে পারে’নি।শুধু রাজিৎ স্যারের কোচিং-এ যতটুকু পরেছে সে টুকুই।কিভাবে পড়বে সারাদিন আকাশ’দের বাসায় কাজ করলে? তাছাড়া আকাশ নামে ছেলেটি ঈশার মাথার ভেতরে বসে আছে পাঁয়ের উপর পাঁ তুলে।ঈশা মাথা থেকে সরাতে পারছে না আকাশ’কে।
অবশ্য ঈশার বই আগে থেকেই পড়া আছে।এখন শুধু পুরো বই রিভিশন দিতে হবে।তাহলেই ঈশার সব পড়া মনে পরে যাবে।ঈশা আর সময় নষ্ট করলো না।আল্লাহর নাম নিয়ে পুরো বই রিভিশন দিতে শুরু করলো।ঈশার পড়া রিভাইস দিতে-দিতে সকাল হয়ে গেলো।ঈশা পুরো বই রিভাইস দিয়ে উঠে নামায পরে নিলো ফজরের।তারপর মুখ ধুয়ে চোখে-মুখে ভালো করে পানি দিলো।বিছানায় এসে ফোনে এলার্ম দিলো ১০:০০ টার।কারন ঈশার এক্সাম সকাল ১১:০০ টা থেকে।ঈশা ঘুমিয়ে গেলো।১০:০০ টায় এলার্ম বেজে উঠতেই ঈশার ঘুম ভেঙে গেলো।ঈশা উঠে ফ্রেস হয়ে কলেজ ড্রেস পরে নিলো।উঁচু করে একটা ঝুঁটি বেঁধে নিলো।আইডি কার্ড গলায় পরে নিলো।ফোন সাইলেন্ট করে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো।ঈশার মা ওর জন্য গরম ‘চা’ নিয়ে এলো।
.
ঈশার মাঃ নাস্তা খাবি না?
ঈশাঃ আম্মা তুমি জানো আমি কখনো এক্সাম দিতে যাওয়ার আগে কিছু খাই না।এক্সাম দিয়ে বেরিয়ে তারপর কিছু খেয়ে নেই।
ঈশার মাঃ তাহলে এক মগ গরম ‘চা’ খেয়ে যা।
ঈশাঃ হুমম ‘চা’ খাওয়া যায়।
ঈশা এক মগ পুরো গরম ‘চা’ খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো ব্যাগ নিয়ে এক্সাম দেওয়ার জন্য।আহির সকাল ৯:০০ টায় বাসা থেকে বের হয়ে গেছে অফিসের জন্য।এক্সাম শেষে সবাই একসাথে বের হলো কলেজ থেকে।ঈশা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে সাইলেন্ট মুড অফ করলো।সবাই কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বের হয়ে গেলো কলেজ থেকে।যারা-যার বাসার উদ্দেশ্যে।রাফিন আর ঈশা রয়েছে এখন।
রাফিনঃ এসো আমি ড্রপ করে দিচ্ছি তোমাকে।
.
ঈশাঃ ওকেহ্।
রাফিনঃ বাসায় যাবে তো তুমি?
ঈশাঃ উঁহু।
রাফিনঃ তাহলে?
ঈশাঃ গতকাল যেখানে গিয়েছি।সেখানেই যাবো আজও।
রাফিনঃ মানে কি?
রাফিন বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।ঈশা ফোন রেখে রাফিনের দিকে তাকালো।রাফিন খুব রাগি ভাবে বললো!
রাফিনঃ তুমি কিছু লুকাচ্ছো তাই না?
ঈশাঃ বাদ দাও চলো।
রাফিনঃ আজ আমাকে সত্যিটা বলবে।তারপর আমি যাবো এখান থেকে আর তুমিও।নয়তো আমি নিজেও যাবো না।তোমাকেও যেতে দিব না স্যরি।
ঈশাঃ বাচ্চামো করো না রাফিন।
রাফিনঃ নিশ্চুপ…..!
ঈশাঃ রাফিন প্লিজ।
রাফিনঃ নিশ্চুপ…..!
ঈশাঃ ফাইন বলছি আমি।
ঈশা প্রথম দিন থেকে সবকিছু খুলে বললো রাফিন’কে।কিভাবে আকাশের সাথে রাস্তায় দেখা হয়।আকাশের পিছে ডাকাত পরে।কিভাবে ঈশা ডাকাত’দের ভাগিয়ে আকাশের ব্যাগ থেকে বিশ হাজার টাকা নেয়।তারপর ডাকাত গুলো ঈশার ক্ষতি করার চেষ্টা করে।তখন আকাশ বাঁচায় ওকে।ওদের বস্তিতে আকাশের বোন আয়রা গিয়ে কি-কি বলে! আহির’কে কিভাবে আয়রা অপমান করে পরপর দু দিন।তারপর ঈশা রেগে আকাশ’দের বাড়ি যায়।তখন আকাশ কিভাবে ঈশা’কে অপমান করে।অবশেষে আকাশ আর ঈশার মধ্যে যে ডিল হয়! সেই ডিলের ব্যাপারেও বললো রাফিন’কে ঈশা।এখন রাফিন বুঝলো ঈশা কেনো প্রতিদিন ওই বাড়িতে যায়।
রাফিনঃ এতকিছু হয়ে গেছে আমাকে একবারও বলো’নি তুমি? তোমার ফ্যামিলি আর আহির ভাইয়া জানে এসব কিছু?
.
ঈশাঃ আহির ভাইয়া জানতে পারলে! নিজেও ওই অফিসে জব করবে না।আর আমাকে এই বাড়িতে আসতেও দিবে না।উল্টে আকাশ’কে মেরেই ফেলবে ভাইয়া।
রাফিনঃ আমার নিজের’ই সহ্য হচ্ছে না।
ঈশাঃ ১ মাস দেখতে-দেখতে চলে যাবে।
রাফিনঃ ফাইন! আমি প্রতিদিন তোমাকে দিয়ে আসবো ওখানে।আমি চাই না ওই বাড়িতে তুমি যাও।কিন্তু তুমি বস্তির প্রতিটা মানুষের কথা ভেবে এত বড় ডিসিশন নিয়েছো।আমার মনে হয় তোমাকে হেল্প করা উচিৎ।কিন্তু শুধু ১ মাস।তারপর আমি আর এই কাজ করতে দিব না তোমাকে।
ঈশাঃ আমি নিজেও করবো না ১ মাস পর এই কাজ।তাছাড়া পৃথিবীতে কোনো কাজ কে ছোটো করে দেখতে নেই।আমার কাছে কিছুই মনে হচ্ছে না।
রাফিনঃ তাছাড়া আকাশ তোমাকে কাজের মেয়ের চোখে দেখলেই! তুমি কাজের মেয়ে হয়ে যাবে এমন টাও তো নয়।
ঈশাঃ রাইট! এখন আমরা যাই?
রাফিনঃ চলো।
ঈশাঃ রাফিন!
রাফিনঃ বলো?
ঈশাঃ থ্যাংক ইউ সো মাচ।আমাকে এভাবে সবকিছু তে সাপোর্ট করার জন্য।
রাফিনঃ ফ্রেন্ডশিপে নো থ্যাংক’স “অর” নো স্যরি ওকে।
রাফিন আর ঈশা বাইকে করে চলে গেলো কলেজ থেকে বের হয়ে আকাশের বাসার উদ্দেশ্যে।
.
চলবে….

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com