দুষ্টু গার্লফ্রেন্ড | পর্ব -২১
টিংকু ভাইঃ এখন হেঁটে যাবে তুমি? আমি তোমার বাড়িতেই তোমাকে পৌছে দিতে পারতাম।
ঈশাঃ আকাশ ভাইয়া বাড়ির সামনে যে চায়ের দোকান আছে।সেখানেই বসে আড্ডা দিচ্ছে।আমাকে আপনার সাথে দেখলে! ভাইয়া হাজার’টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিবে আমার দিকে।
টিংকু ভাইঃ [তোমার ভাইয়া আজ বাসায় যাবে না।সব আমার জাদু] আমার জাদুর কামাল।
ঈশাঃ কিসের জাদু?
.
টিংকু ভাইঃ কিছু না। ওহ্ একটা কথা ছিলো।
ঈশাঃ হ্যাঁ বলুন!
টিংকু ভাইঃ তোমার নাম্বার’টা দাও।
ঈশাঃ কেনো?
টিংকু ভাইঃ প্রতিদিন আমি একই সময়ে অফিস থেকে বাসায় ফিরি না।কখনো লেট হয় আবার কখনো আরো তাড়াতড়ি বাসায় এসে পরি।তোমাকে প্রতিদিন তো আর ড্রপ করতে পারবো না বাসায়।এত রাতে তুমি একা বাসায় আসো।আমাদের টেনশন হয়।তাই তোমাকে ফোন করে সিয়্যর হতে পারবো তুমি বাসায় পৌছে গিয়েছো নাকি রাস্তায় কোনো বিপদে আছো।
ঈশাঃ আকাশ বলেছে তাই না?
টিংকু ভাইঃ আকাশ কেনো বলবে?
ঈশাঃ আজকেও আকাশ বলেছে আমাকে বাসায় ড্রপ করে দিতে তাই না?
টিংকু ভাইঃ না মানে! তুমি কিভাবে বুঝলে?
ঈশাঃ আপনি যখন আকা বলেছেন।তখনি আমি বুঝে গিয়েছি।
টিংকু ভাইঃ ট্যালেন্ট আছে। [ফিসফিসিয়ে]
ঈশাঃ নাম্বার বলছি তুলে নিন।
টিংকু ভাইঃ হুমম বলো!
ঈশাঃ 019******13
টিংকু ভাইঃ ঠিক আছে।তুমি সাবধানে যেও।আমি দিয়ে আসবো?
ঈশাঃ ২-৩ মিনিট লাগবে মাঠ পার করে বাসায় যেতে।আমি একাই যেতে পারবো।আপনি সাবধানে বাসায় যাবেন।
টিংকু ভাইঃ ওকে বায়।
.
ঈশাঃ আল্লাহ্ হাফেজ।
ঈশা একা-একা হাঁটতে শুরু করলো।টিংকু ভাই গাড়ি ঘুরিয়ে বাসার দিকে গেলো।ঈশা মাঠ পেরিয়ে বাসার সামনে গিয়ে দেখলো ভিন্টু,বাম্ব আর মোটু চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছে।কিন্তু আহির নেই।ঈশা গিয়ে চায়ের দোকানে ওদের পাশে বসলো।মাথা একটু উঁচু করে বললো!
ঈশাঃ মামা! এক কাপ রং ‘চা’ দাও চিনি বেশি দিয়ে তাড়াতাড়ি।মাথা ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে আমার।
ভিন্টুঃ ইদানীং তুই এত রাত করে বাড়ি আসিস কেনো?
ঈশাঃ লম্বা কাহিনী।ভাইয়া কোথায়?
বাম্বঃ আহির আজ বাড়ি ফেরে’নি।
ঈশাঃ হুয়াট?
মোটুঃ আমরা ফোন করেছিলাম।বললো ওই বড়লোক ম্যাডাম নাকি ইচ্ছে করে আহির’কে দিয়ে ওভার টাইম করাচ্ছে।
ঈশাঃ মন চাচ্ছে ওই মেয়েটাকে খুন করে ফেলি আমি। [আয়রা’কে উদ্দেশ্য করে]
ভিন্টুঃ কোনো লাভ নেই।তুই যা করবি? তার শাস্তি আহির পাবে।আর ৬ মাসের আগে জব ছাড়তেও পাড়বে না আহির।তাহলে পুলিশ জেলে নিয়ে যাবে আহির’কে।
ঈশাঃ একদিন’ই তো? অফিসের ওভার টাইম ধরে নিলেই হলো।ওদের সাথে মুখ না নাড়ানোই বেটার।
বাম্বঃ তোর কি হয়েছে বল।
ঈশাঃ বলছি!
.
ঈশা’কে গরম-গরম রং ‘চা’ দিয়ে গেলো চা ওয়ালা মামা।ঈশা চা খেতে-খেতে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো।ইভেন আকাশ আজ যা-যা করেছে তাও খুলে বললো।
মোটুঃ তুই কাল থেকে ওই বাড়িতে যাবি না ব্যাস।
ভিন্টুঃ আমাদের জন্য তোকে এত অপমান সহ্য করতে হবে না।
বাম্বঃ বড়লোক’রা এত পরিমানে ছন্ন ছাড়া খারাপ হয়? সেটা জানতাম না এদের দুই ভাই/বোন কে না দেখলে। [আকাশ আর আয়রা’কে উদ্দেশ্য করে]
ঈশাঃ ব্যাপার না! অলরেডি ৭ দিন শেষ।আর ২৩ দিন ওই বাড়িতে যাবো।কাল ৮ দিন হবে।আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছে।চ্যালেঞ্জ আমি জিতেই ছাড়বো।
ভিন্টুঃ আহির জানতে পারলে নিজের আসল রূপে এসে! প্রথমে আকাশ’কে মারবে তারপর আয়রা’কে।
ঈশাঃ তোমরা না বললে ভাইয়া কিচ্ছু জানতে পারবে না।তাছাড়া আমি চাই না! আহির ভাইয়া আগের মতো গুন্ডা গিরি করুক আবার।
বাম্বঃ তোদের বাসায় আন্টিকে জানিয়ে দিয়েছি।আহিরের আজ ওভার টাইম আছে।তাই আসবে না রাতে।
ঈশাঃ হুমম আমি তাহলে বাসায় যাই।
মোটুঃ যা।
.
ঈশা চা খেয়ে চা ওয়ালা মামার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে বাসায় ঢুকলো।ঈশার মা খাবার দিলো ঈশা’কে।ঈশা অল্প খেয়ে পড়তে বসলো বিছানায়।
আকাশ ড্রইং রুমে বসে দাঁড়িয়ে পায়চারী করছে।এখনো টিংকু ভাই কেনো আসছে না সেটা ভেবে।এর মধ্যে টিংকু ভাই বাসায় ঢুকলো।আকাশ দৌড়ে গেলো টিংকু ভাইয়ের কাছে।
টিংকু ভাইঃ বাসার মধ্যে জাগিং করছো নাকি?
আকাশঃ নাম্বার এনেছো?
টিংকু ভাইঃ নাহ্!
আকাশঃ কেনো?
টিংকু ভাইঃ দেই’নি ঈশা ওর নাম্বার।
আকাশঃ জানতাম আমি।এত্ত ভাব ওর যে কি বলবো।নিজেকে মহারানী ভাবে।মন চায় মাঝে-মাঝে এক ঘুষি মেরে ওর নাক ফাঁটিয়ে দি।আজব টাইপের গুজব মেয়ে কোথাকার। [ঈশা’কে উদ্দেশ্য করে রেগে]
টিংকু ভাইঃ আজব টাইপের গুজব মেয়ে? দাদা এটা কোন দেশের ভাষা? আমেরিকা,অস্ট্রেলিয়া নাকি কোরিয়ার ভাষা?
আকাশঃ একদম মজা করো না গাঁধা।
টিংকু ভাইঃ আরে নাম্বার দিয়েছে।আমার মতো ভালো মানুষ নাম্বার চাইলে দিবে না? এটা হতেই পারে না বুঝলে। [ঢং দেখিয়ে]
.
আকাশঃ তুমি এতক্ষণ মজা নিচ্ছিলে আমার সাথে?
টিংকু ভাইঃ ইয়েস দাদা।
আকাশ নিজের পাঁ থেকে ঘরে পরা জুতো খুললো একটা।সেটা দেখে টিংকু ভাই দৌড় দিলো।আকাশও টিংকু ভাইয়ের পেছনে জুতো হাতে নিয়ে দৌড়ে গেলো।
আকাশঃ তুমি ভালো মানুষ? তুমি একটা নাম্বার ওয়ান গাঁধা।আজ তোমাকে ছাড়বো না আমি।
টিংকু ভাই নিজের রুমের সামনে গিয়ে বললো! টিংকু ভাইঃ ঈশার নাম্বার
তোমার ফোনে ম্যাসেজ করে দিব বায়-বায়। টিংকু ভাই কথাটা বলেই রুমের দরজা লক করে দিলো।
আকাশ হাল্কা হেসে জুতো ফ্লোরে ফেলে পাঁয়ে পরে নিলো।
আয়রার কিছুতেই ঘুম হচ্ছে না।বারবার আহিরের কথা মনে পরছে।আয়রা নিজের ফোন হাতে নিলো।দেখলো রাত ২:০০ টো বাজে।বেডে উঠে বসলো।ফোনে আহিরের নাম্বার বের করলো আয়রা।
আয়রাঃ একবার ফোন করবো আহির’কে? জেদের মাথায় রাতে আহির’কে অফিসে রাখা ঠিক হয়’নি।নিশ্চয়ই আহিরের খুব কষ্ট হচ্ছে রাত জেগে কাজ করতে।ফোন করবো একবার?
নাহ্ থাক ফোন করবো না।
আয়রা একা একাই কথা বলছিলো।হঠাৎ আয়রার আঙুলের চাপ লাগলো আহিরের নাম্বারে।ব্যাস ফোন চলে গেলো আহিরের কাছে।আয়রা দ্রুত ফোন কেটে দিলো।তাতে কি হবে? ফোন চলে গিয়েছে আহিরের কাছে।আহিরের ফোনে রং বেজে কেটে গেলো।আহির কম্পিউটারে কাজ করা বাদ দিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আয়রার নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।আহির কল ব্যাক করলো।আয়রার বুক কাঁপছে।তবুও ফোন রিসিভ করলো আয়রা।
আহিরঃ হ্যালো!
.
আয়রাঃ নিশ্চুপ…!
আহিরঃ হ্যালো মিস.বয়রা স্যরি আয়রা ম্যাডাম?
আয়রাঃ হুয়াট দ্যা হেল! আমার নাম আয়রা।এ্যান্ড ডোন্ট ফরগেট…!
আহিরঃ এ্যান্ড ডোন্ট ফরগেট আ’ম ইয়্যর বস্ রাইট?
আহিরের কথা শুনে আয়রা নিঃশব্দে হেসে দিলো ফোনের এপাশ থেকে।আয়রা বললো!
আয়রাঃ হ্যাঁ কথাটা মাথায় রেখো।
আহিরঃ আমি মাথায় রেখেছি আপনি আমার বস্।কিন্তু আপনি নিজেই মাথায় রাখেন’নি।মাঝরাতে একজন সামান্য স্টাফ’কে ফোন করে “তুমি” করে কথা বলছেন।রাত ২:০০ টোর দিকে কোন বস্ তার স্টাফ’কে ফোন করে শুনি?
আয়রাঃ আমি ফোন করিনি।অন্য কাউকে ফোন করতে গিয়ে ভুলে চাপ লেগে গিয়েছে।আর আপনার কাছে ফোন চলে গিয়েছে ওকেহ্।নিজেকে এত বড় ভাব্বার কিছু হয়’নি।
আহিরঃ আমি নিজেকে কখনোই বড় ভাবি না।
আয়রাঃ এনিওয়ে বায়।
আহিরঃ এ্যাজ ইয়্যর উইশ।
আয়রা ফোন কেটে দিলো ভাব নিয়ে।আহির তেমন একটা গুরুত্ব দিলো না।আহির নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
.
চলবে……
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com