৪র্থ ঘটনা-উসমান ইবনে আফফান রাঃ - জাহিলি যুগে
জাহিলি যুগে
জাহিলি যুগে উসমান রা.-কে সমাজের সর্বোত্তম মানুষদের মধ্যে গণ্য করা
হতাে। উঁচু মর্যাদার অধিকারী ছিলেন তিনি। সুমিষ্টভাষী, বিনয়ীর পাশাপাশি
ছিলেন বেশ ধনী। সবাই তাকে খুব ভালােবাসতাে এবং সম্মান করতাে।
জাহিলি যুগেও তিনি কোনাে মূর্তির সামনে মাথানত করেননি। কোনাে
অনৈতিক কাজ করেননি কখনাে। অজ্ঞতার যুগেও তিনি মদপান করেননি।
তার ভাষায়—এটা ব্যক্তির বুদ্ধি-বিবেককে ধ্বংস করে এবং বুদ্ধি-বিবেক হচ্ছে
ব্যক্তির জন্য আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। মানুষের উচিত, এর সদ্ব্যবহার দ্বারা
নিজের মর্যাদাকে সমুন্নত রাখা; সে যেন এটা ধ্বংসের চেষ্টা না করে।
তিনি গান-বাজনার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন না অজ্ঞতার যুগেও। যে কোনাে
পরনারীর দিকে দৃষ্টি দেওয়া থেকেও তিনি নিজেকে বিরত রাখতেন।
আল্লাহ তাআলা উসমান রা.-এর উপর করুণার বৃষ্টি বর্ষণ করুন। তিনি
নিজেই তার পরিচিতি সহজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
.
“গান-বাদ্যের ব্যাপারে আমার কোনাে আগ্রহ ছিল না। আমি
কখনাে অনৈতিক কাজ করিনি। ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয়
নেওয়ার পর আমি ডান হাতে কখনাে আমার লজ্জাস্থান স্পর্শ করিনি।
আমি ইসলামের আগে-পরে কখনাে মদ পান করিনি এবং অজ্ঞতার
যুগে বা ইসলামে প্রবেশের পর আমি কখনাে ব্যভিচারের কাছেও যাইনি।
.
উসমান রা. জাহিলি যুগে আরবের জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে সম্যক ধারণা
রাখতেন। উদ্ধৃতি, বংশবিদ্যা ও ইতিহাস সম্পর্কেও ভালােভাবে ওয়াকিফহাল
ছিলেন। তিনি সিরিয়া এবং আবিসিনিয়ায় সফর করেছেন। মিশেছেন
সেখানকার অনারব মানুষদের সঙ্গে। জ্ঞান আহরণ করেছেন তাদের
জীবনাচরণ এবং প্রচলিত প্রথা সম্পর্কে যা অন্যদের অর্জিত হয়নি ১৯
তিনি খুব ভালােভাবে ব্যবসার কাজ সামাল দিতেন। যা তিনি তাঁর পিতার কাছ
থেকে ‘মিরাস’ হিসেবে পেয়েছিলেন। তাঁর সম্পদে বরকত আসে। বনু
উমাইয়া বংশে তাকে এমন ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতাে, যে কিনা
সকল কুরাইশের সমান সামর্থ্য রাখে। জাহিলি যুগে যে সমাজে তিনি বসবাস
করতেন, সেখানে ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি ও ভাইবােনের সংখ্যাধিক্য
দিয়ে ব্যক্তির মর্যাদা নির্ধারিত হতাে। একইভাবে ব্যক্তি থেকে বংশ এবং পুরাে
জাতির সামগ্রিক শৌর্য-বীর্য বিবেচনা করা হতাে। উসমান রা.-কে তাঁর বংশের
সবচে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হতাে এবং তাকে সবাই
অত্যন্ত ভালােবাসতাে। এ সংক্রান্ত একটি চিত্তাকর্ষক ঘটনা হচ্ছে, তার যুগে
আৱৰ মহিলারা তাদের শিশুসন্তানকে শান্ত করার জন্য এইভাবে গান
গাইতাে
أحبك والرحمن “حب قريش العثمان
‘রাহমানের শপথ! আমি তােমাকে এত বেশি ভালােবাসি,
যেমন কুরাইশরা ভালােবাসে উসমানকে।
.
রেফারেন্স
১. তারিখে তাবারি : ৫/৪৪১।
২. আহমাদ শালাবি প্রণীত ‘মাওয়াত তারিখিল ইসলামি’ : ১/৬১৮।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com