দুষ্টু গার্লফ্রেন্ড | পর্ব -২০
আকাশ গিয়ে ঈশার একদম কাছে দাঁড়ালো।ঈশা আকাশ’কে নিজের এতটা কাছে দেখে নিজেই দূরে সরে দাঁড়ালো।তাতে আকাশ খুব রেগে গেলো।
আকাশঃ আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না তুমি?
ঈশাঃ আমার কাজ মনে হয় আজকের মতো শেষ।আমি বাসায় যাচ্ছি আল্লাহ্ হাফেজ। [নিচের দিকে তাকিয়ে।]
ঈশা নিজের কথাটা বলে আকাশের সামনে থেকে যেতে নেয়! আকাশ বিরক্ত হয়ে ঈশার ডান হাতের কব্জি নিজের একহাত দিয়ে হাল্কা ভাবে চেঁপে ধরে।ঈশা এবার খুব রেগে যায়।নিজের হাত সাথে-সাথে ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে নেয়! আকাশের হাতের ভেতর থেকে।আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো!
.
ঈশাঃ সকাল থেকে কম ইনসাল্ট করো’নি।এখন আমার সম্মান নিয়ে টানাটানি না করলেই নয়? তোমার কাছে এক রাতের জন্য একটি মেয়ে কিছুই না হয়তো।লেট নাইট পার্টিতে যেসব মেয়ে থাকে হয়তো তাদের কোনো দাম নেই নিজের কাছে।ফুরতি করতে ভালোবাসে ওরা।কিন্তু আমার সম্মান আমার জীবনের চেও বেশি দামী আমার কাছে।আমি অন্যসব মেয়েদের মতো ফেলনা নই।সবার চেয়ে আলাদা মেয়ে আমি।
আকাশঃ এক মিনিট-এক মিনিট! কি বলছো এসব তুমি? আমার কাছে মেয়েদের দাম নেই।তোমার সম্মান তোমার কাছে অনেক বেশি।আই মিন! কি বোঝাতে চাচ্ছো তুমি?
ঈশাঃ আমি জানি তোমার গার্লফ্রেন্ডের অভাব নেই।সেকেন্ডে-সেকেন্ডে মেয়ে বদলাতে পছন্দ করো তুমি।লেট নাইট পার্টি,এনজয়,ড্রিংকিং,এসব পছন্দ করো তুমি।
আকাশঃ এসব কথা এখানে উঠছে কেনো? আর এখানে এসব কথা কেনো ঢুকছে সেটাই বুঝতে পারছি না আমি।
ঈশাঃ কারন তুমি আমাকে টাচ্ করেছো।আমার হাত ধরেছো তুমি।যেটা করার তোমার কোনো অধিকারের মধ্যে পরে না।কি ভেবেছিলে? আমি অন্য মেয়েদের মতো?
আকাশঃ আ’ম স্যরি! আমি এ্যাক্সিডেন্টলি তোমার হাত ধরে ফেলেছি।আমার ভুল হয়ে গেছে।আর তুমি অন্যসব মেয়েদের মতো না খুশি?
ঈশাঃ আমি বাসায় যেতে পারি?
আকাশঃ আমার কথার জবাব পাই’নি আমি এখনো।
ঈশাঃ সব প্রশ্নের উত্তর হয় না।আর সব কথার জবাবও হয় না।
আকাশঃ আমি একটু অপমান করলে! আমার উপর ঝাঁপিয়ে পরে ঝগড়া করো।আজ ওদের সাথে ঝগড়া করলে না কেনো?
ঈশাঃ আমি কখনো কথা দিয়ে কথা ভঙ্গ করি না।
আকাশঃ মিন?
.
ঈশাঃ আমাদের ডিলে তুমি বলেছিলে রাগ দেখানো যাবে না।
আকাশঃ ওহ্ নো! বাট তুমি তো সবকিছুর উল্টো করছো।তোমাকে আমি ডিলে বলেছিলাম! অনলি আমার উপর কোনো রাগ দেখানো যাবে না।তোমাকে আমি বলিনি যে! আমার বাসায় যারা আসবে সবার উপর তুমি রাগ দেখাতে পারবে না।আমি এমনটা কখনোই বলিনি।
ঈশাঃ নিজেও তো কম অপমান করো’নি।তাহলে মানুষের কথা বলছো কেনো?
আকাশঃ আমার কথা আলাদা।
ঈশাঃ কেনো তোমার কথা আলাদা? তুমি আমার লাইফে স্পেশাল কেউ? না আমি তোমার লাইফে কোনো মূল্যবান জিনিস? আমাদের মাঝে কোনো আলাদা সম্পর্ক আছে? তাহলে তুমি কেনো ওদের থেকে আলাদা হবে?
আকাশঃ তোমাকে বোঝানো ইম্পসিবল।
ঈশাঃ বুঝিও না তাহলেই হয়।
আকাশঃ লিসেন ঈশা! তুমি একজন শিক্ষিত মেয়ে।তোমার উচিৎ ছিলো ওদের প্রতিটা অপমানের জবাব দেওয়া।ওদের কথার প্রতি উত্তর জবাব দেওয়া।জাস্ট এতটুকু’ই বোঝাতে চেয়েছি তোমায় আমি দ্যাট’স ইট।বাট ইউ আর ডাম্বো।
ঈশাঃ রাস্তায় কুকুর! ভালো মানুষ দেখলেও চিল্লিয়ে ঘেউ-ঘেউ করে ডেকে উঠে।আবার খারাপ মানুষ দেখলেও চিল্লিয়ে ঘেউ-ঘেউ করে ডাকে।তাই বলে কি মানুষও কুকুরের সাথে চিল্লিয়ে ঘেউ-ঘেউ করে ডাকে? নিশ্চয়ই না! মানুষ নিজেদের মতো চলা-ফেরা করে রাস্তায়।রাস্তায় কুকুর কুকুরের মতোই ঘেউ-ঘেউ করে ডাকবে সেটাই স্বাভাবিক।তাকে পাত্তা না দেওয়াই বেটার।
.
আকাশঃ বুঝলাম না।
ঈশাঃ ভালোভাবে কথাগুলো চিন্তা করো বুঝে যাবে।আসছি আমি বায়।
ঈশা নিজের ব্যাগ নিয়ে আকাশের বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।আকাশ কিছু বলারও সুযোগ পেলো না ঈশা’কে।আয়রা আর টিংকু ভাই বাড়িতে ঢোকার সময় দেখলো ঈশা বাড়ি থেকে বের হচ্ছে।আয়রা বাসায় ঢুকে নিজের রুমে চলে গেলো।টিংকু ভাই বাসায় ঢুকতেই আকাশ বললো!
আকাশঃ তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে যাও।ঈশা’কে ওর বাসায় পৌছে দিয়ে এসো।অনেক রাত হয়েছে।একা বাসায় যাওয়া ওর জন্য ঠিক হবে না।
টিংকু ভাইঃ ঠিক আছে যাচ্ছি আমি।
আকাশঃ গাঁধা শোনো! ঈশার ফোন নাম্বার নিয়ে এসো ওর কাছ থেকে।
টিংকু ভাইঃ ঠিক আছে।
টিংকু ভাই গাড়ি নিয়ে একটু আগাতেই দেখলো! ঈশা স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে।হয়তো রিকশার অপেক্ষা করছে ঈশা।টিংকু ভাই এসে গাড়ি থামালো ঈশার সামনে।গাড়ির ডোর খুলে বললো!
টিংকু ভাইঃ ঈশা গাড়িতে উঠো।
ঈশাঃ আপনি এখন কোথায় যাচ্ছেন?
.
টিংকু ভাইঃ দেখলাম তুমি একা বাসায় যাচ্ছো।অনেক রাত হয়েছে তাই ভাবলাম তোমাকে পৌছে দি বাসায়।
ঈশা গাড়িতে উঠে বসলো।টিংকু ভাই গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।আকাশ আড়াল থেকে বের হয়ে এলো।
আকাশঃ আমি বললে ঈশা কখনো যেতে রাজি হতো না।এত ঘাড় ত্যাড়া মেয়ে আমি আমার লাইফে দেখিনি।কি একটা বলছিলো ঈশা।
আকাশ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঈশার শেষ কথাগুলো মিলানোর চেষ্টা করলো।অবশেষে আকাশ বুঝতে পারলো।
আকাশঃ তার মানে ঈশা বুঝালো! রাস্তার কুকুর আমার ফ্রেন্ড’রা।আর ওদের বাজে কথায় পাত্তা না দেওয়াই বেটার? আমিও তো ওদের সাথে মিলে ঈশার রাগ উঠানোর জন্য ঈশা’কে অপমান করেছি।মানে আমিও রাস্তার কুকুর? “ঈশা কি বাচ্চি কিশা” কাল তুমি বাসায় এসো।আমাকে রাস্তার কুকুর বলা ছুঁটাবো তোমায়।ফাজিল মেয়ে কোথাকার।
আকাশ রাগে গজগজ করতে-করতে রাস্তা পার হয়ে বাসায় ঢুকলো।
অফিসে কোনো স্টাফ নেই।শুধু ৩ জন ওয়াচম্যান রয়েছে।আহির একা বসে কম্পিউটারে কাজ করছে।একজন দাড়োয়ান এসে বললো!
দাড়োয়ানঃ আহির স্যার!
আহিরঃ তুমি? তুমি বাসায় যাও’নি?
দাড়োয়ানঃ না! আয়রা ম্যাডাম বলেছে আজ রাতে আপনার সাথে থেকে ওভার টাইম করতে।আমাকে আলাদা ভাবে ৫ হাজার টাকা দিবে বেতনের সাথে।
আহিরঃ হুয়াট?
.
দাড়োয়ানঃ জ্বি আপনার উপর খেয়াল রাখতে বলেছেন।আপনি কি কফি খাবেন?
আহিরঃ হ্যাঁ! এক মগ কফি নিয়ে এসো আমার জন্য।
দাড়োয়ানঃ ঠিক আছে।
দাড়োয়ান গেলো কফি আনতে।আহির ভেবে পাচ্ছে না।নিজেই আহির’কে শাস্তি দিতে চাইলো।তাহলে আবার খেয়াল রাখার জন্য দাড়োয়ান কে ডিউটিতে রাখার কি দরকার ছিলো? আহির ব্যাপার’টা বুঝতে পেরে খুব রেগে গেলো আয়রার উপর।মন চাচ্ছে আয়রা’কে খুন করে ফেলতে।কিন্তু কিছুই করতে পারবে না আহির।নিজের কাজে মনোযোগ দিলো আহির।
টিংকু ভাই ড্রাইভ করছে।ঈশা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো!
ঈশাঃ শুধু-শুধু কষ্ট করার দরকার ছিলো না।আমি একাই বাসায় চলে যেতে পারতাম।
টিংকু ভাইঃ হ্যাঁ জানি।কিন্তু এত রাতে তোমার একা যাওয়া ঠিক হবে না।সেটা আকা…!
ঈশাঃ আকা কি?
টিংকু ভাইয়ের এই এক সমস্যা।মুখ ফঁসকে সত্যি কথা বের হয়ে যায়।টিংকু ভাই এখন কি বলবে সেটাই ভাবছে!
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com