দুষ্টু গার্লফ্রেন্ড । পর্ব -২৯
পরদিন ঈশা এক্সাম দিয়ে বাহিরে এলো।কলেজ থেকে বের হয়ে বাহিরে আসতেই রাফিন এসে দাঁড়ালো।ঈশার মন আজ একটু খারাপ।
রাফিনঃ এক্সাম কেমন হলো?
ঈশাঃ আলহামদুলিল্লাহ্!
রাফিনঃ চলো।
ঈশাঃ ভালো লাগছে না।একটু পর যাই?
রাফিনঃ চলো তাহলে ক্যান্টিনে বসি?
ঈশাঃ চলো।
.
রাফিন আর ঈশা গিয়ে কলেজের ক্যান্টিনে বসলো।রাফিন ওয়েটার কে ডেকে দুটো চকলেট কোল্ড কফি অর্ডার করলো।কারন ঈশা অলওয়েজ কোনো রেস্টুরেন্ট ‘বা’ কলেজের ক্যান্টিনে বসলেও কোল্ড কফি অর্ডার করে।ঈশার খুব পছন্দ চকলেট কোল্ড কফি।
রাফিনঃ মনে হচ্ছে কিছু হয়েছে তোমার।
ঈশাঃ কি হবে?
রাফিনঃ একটা পার্সোনাল কথা জিজ্ঞেস করবো তোমাকে?
ঈশাঃ রাফিন তুমি আমার থেকে ১ বছরের বড়।আমি ফার্স্ট ইয়ারে পরি।আর তুমি সেকেন্ড ইয়ারে পরো।বাট আমাদের বন্ধুত্বের মাঝে কোনো পার্সোনাল ম্যাটার আগেও ছিলো না।আর এখনো থাকবে না আশা করি।আই থিংক তোমাকে বোঝাতে পেরেছি আমি রাইট?
রাফিনঃ তাহলে সোজাসোজি বলি?
ঈশাঃ ইয়াহ্ সিয়্যর!
রাফিনঃ ডু ইউ লাভ আকাশ?
রাফিনের কথা শুনে ঈশা একটুও অবাক হলো না।এর মধ্যে চকলেট কোল্ড কফিও চলে এলো।ঈশা কফি এক ঢোক খেয়ে বললো!
.
ঈশাঃ প্রথম দিন থেকেই আকাশ’কে ভালোবাসি আমি।এটা নতুন কোনো কথা না।
রাফিনঃ আকাশ?
ঈশাঃ আকাশ আর আমার লাইফ,স্ট্যাটাস পছন্দ-অপছন্দ সবকিছুই আলাদা।আকাশ কখনোই আমাকে নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে মনে করতে পারে না।
রাফিনঃ দ্যাট মিন’স! তুমি আকাশের জন্যই ওর শর্ত মেনে! ওদের বাসায় ১ মাস কাজ করছো?
ঈশাঃ কখনো শুনেছো! মানুষ নিজের সম্মান বিসর্জন দিয়ে অন্যের কথা ভাবে?
রাফিনঃ মানে!
ঈশাঃ মানে আমি শুধু বস্তির লোকগুলোর কথা ভেবে! এত অপমান সহ্য করে ওদের বাড়িতে কাজ করছি।আর মাত্র ৯ দিন।তারপর আর আমাকে যেতে হবে না।কিন্তু…!
রাফিনঃ কিন্তু?
ঈশাঃ মানুষের ভালো করতে গিয়ে! আবারো সবার কাছে খারাপ হয়ে গেলাম আমি।
রাফিনঃ আবার কিছু হয়েছে?
ঈশাঃ হুমম।
রাফিনঃ কি হয়েছে?
.
ঈশা বললো! আকাশ সুমু’কে ভালোবাসে।আর সুমু আকাশ’কে ভালোবাসে।সেটা শুনে ঈশা নিজেই আকাশের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলো।ঈশা গতকাল পার্টি রেখেছিলো আকাশ আর সুমুর জন্য।কিন্তু সুমু এসে আকাশের সাথে ব্রেকাপ করে চলে গেলো।তাও পুরো দোষ ঈশার উপর চাঁপিয়ে দিয়ে গেলো সুমু।
ঈশাঃ সুমু ওর আর আকাশের মধ্যে থার্ড পার্সোন হিসেবে! আমার উপর সব দোষ চাঁপিয়ে দিলো।বললো আকাশ আর ওর ব্রেকাপের মেইন রিজন হলাম আমি।আমি নাকি সুমু আর আকাশের মধ্যে ঢুকে! ওদের সম্পর্ক নষ্ট করে দিয়েছি।
রাফিনঃ আকাশের এরকম করার রিজন কি? আকাশের নিশ্চয়ই দূর্বলতা আছে তোমার প্রতি।
ঈশাঃ রাফিন কি বলছো তুমি? আকাশ সুমু’কে ভালোবাসে।
রাফিনঃ আচ্ছা মানলাম আকাশ সুমু’কে ভালোবাসে।তাহলে তুমি আকাশের সাথে কথা বললে! নাকি ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলে।তাতে আকাশের কি আসে যায়? আমাকে বোঝাও তুমি।
ঈশাঃ সেটাই তো আমিও বুঝতে পারছি না।
রাফিনঃ আকাশ দো-টানায় পরে গিয়েছে।আকাশ কি করছে নিজেও বুঝতে পারছে না।
ঈশাঃ আমার একদিকে খারাপ লাগছে।আকাশ আর সুমুর ব্রেকাপ হওয়ার কারনে।আমি কখনো চাই’নি ওদের দু’জনের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাক।কিন্তু…!
রাফিনঃ কি?
.
ঈশাঃ অন্যদিকে মনে খুব খুশি লাগছে।আকাশ এখন সিঙ্গেল তাই। [আনমনে]
ঈশা শেষ কথাটা না বুঝেই বোকার মতো বলে ফেললো।রাফিন তা বুঝতে পেরে হাল্কা হেসে দিলো।ঈশা বললো!
ঈশাঃ তুমি হাসছো কেনো?
রাফিনঃ আকাশ’কে প্রপোজ করে দাও।
ঈশাঃ হুয়াট! মজা করছো আমার সাথে?
রাফিনঃ সত্যি বলছি।
ঈশাঃ তোমার মাথায় যে কচ্ছপের আত্মা ভর করেছে।সেটা আমি বুঝতে পেরেছি।চলো আমাকে পৌছে দিবে।
রাফিনঃ শেষমেষ কচ্ছপের আত্মা ভর করলো আমার উপর সিরিয়াসলি?
রাফিন আর ঈশার কথায় মাথা ঘামালো না।কারন ঈশার কথার মানে বোঝা খুব কঠিন।রাফিন ঈশা’কে নিয়ে গেলো বাইকে করে।
.
আকাশ এসে ব্যালকনি তে দাঁড়ালো।আকাশের মন আজ উষ্ক-শুষ্ক।রাফিন এসে বাইক ব্রেক করলো আকাশের বাসার সামনে।ঈশা নেমে বায় দিলো রাফিন’কে।রাফিন বাইক ঘুরিয়ে চলে গেলো।ঈশা বাড়িতে ঢুকলো।আকাশ উপর থেকে দেখলো! আগের দিনের ছেলেটি আবার ঈশা’কে বাইকে করে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিলো।
ঈশা ভেতরে ঢুকে উপরে উঠে আকাশের রুমের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।ঈশার শুধু গতকাল রাতের কথা মনে পরছে।খুব খারাপ লাগছে আকাশের সামনে যেতে।আকাশও যদি ঈশা’কে দোষ দেয়! ওর আর সুমুর সম্পর্ক ভাঙার জন্য? তখন ঈশা কি করবে? এসব ভেবেই ঈশা ভেতরে যেতে ভয় পাচ্ছে।আকাশ খেয়াল করলো! ওর রুমের বাহিরে ঈশার কলেজ ড্রেস দেখা যাচ্ছে।
আকাশঃ বাহিরে না দাঁড়িয়ে ভেতরে এসো।
ঈশাঃ না মানে!
আকাশঃ আজ এক্সাম ছিলো তোমার?
ঈশাঃ কিভাবে বুঝলে?
আকাশঃ যেদিন সিভিল ড্রেসে আসো সেদিন তোমার কোচিং থাকে।আর যেদিন কলেজ ড্রেসে আসো সেদিন তোমার এক্সাম থাকে।তুমিই তো বলেছিলে আমাকে।
ঈশাঃ ওহ্!
.
আকাশঃ কিছু বলবে?
ঈশাঃ আসলে আ’ম স্যরি।
আকাশঃ কিসের জন্য স্যরি?
ঈশাঃ গতকাল রাতের জন্য।
আকাশঃ তুমি তো কোনো ভুল করো’নি।তাহলে স্যরি কেনো বলছো?
ঈশাঃ [আজ আকাশ! এত নরম গলায় কথা বলছে আমার সাথে।]
আকাশঃ কথা বলো?
ঈশাঃ সুমু তো! আমাকে নিয়েই ভুল বুঝলো তোমাকে।
আকাশঃ ভুল আমার ছিলো।তোমার কোনো ভুল ছিলো না।তুমি আমাদের জন্য সারপ্রাইজ পার্টি এ্যারেঞ্জ করেছো।কিন্তু উল্টে সুমু তোমাকে অপমান করেছে।সুমুর হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি তোমার কাছে।
ঈশাঃ ইট’স ওকে! সুমুর জন্য তোমাকে ক্ষমা চাইতে হবে না।তাছাড়া আমি সুমুর উপর রেগে নেই।
আকাশঃ কেনো?
.
ঈশাঃ সুমুর জায়গায় আমি থাকলেও হয়তো এরকম বিহেভ করতাম।কারন কোনো মেয়েই তার ভালোবাসার মানুষের সাথে! অন্য কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারে না স্বাভাবিক।
আকাশঃ হতে পারে।কিন্তু সুমুর উচিৎ ছিলো আমাকে বিশ্বাস করা।যেটা সুমু করে’নি।
ঈশা আর কথা বড়ালো না আকাশের সাথে।ঈশা রুম থেকে বের হতে নিলে আকাশ বললো!
আকাশঃ যদি আমি বলি! তোমার জন্যই সুমুর আর আমার মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে? তোমার জন্য আমি সুমু’কে না চাইতেও ইগনোর করেছি।তোমার জন্যই আমার মন নিজের কন্ট্রোলে ছিলো না।তাই সুমু’কে আমি সময় দিতে পারিনি।তখন তুমি কি করবে?
ঈশাঃ তাহলে আজ এই মুহূর্তে! আমি এখান থেকে চলে যাবো।আর কখনো আমার চেহারাও আমি তোমাকে দেখাবো না।কারন আমি চাই না আমার জন্য! তোমার আর সুমুর সম্পর্ক নষ্ট হোক।
আকাশঃ তাহলে এখনি আমার বাসা থেকে চলে যাও। [অন্যদিকে তাকিয়ে]
ঈশাঃ ঠিক আছে।
.
ঈশা নিজের কলেজ ব্যাগ নিয়ে আকাশ’দের বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।ঈশার চোখে পানি টলমল করছে।ঈশার হৃদয় স্পন্দন দ্রুত গতিতে চলছে।ঈশা চলে গেলো বাসায়।
আকাশ নিজের মন কে শক্ত করে! ঈশা’কে নিজের বাড়ি থেকে চলে যেতে বললো।আকাশ বুঝতে পারছে! আকাশ চাচ্ছে না তবুও ঈশা ওর মনের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে।কিন্তু কেনো? তার উত্তর আকাশের জানা নেই।আকাশ নিজেও এটাই স্বীকার করে! সুমু আর আকাশের সম্পর্ক নষ্টের কারন শুধু ঈশা।
আকাশঃ বস্তির একটি বাজে মেয়ে কখনোই! আমার আর সুমুর সম্পর্ক নষ্টের কারন হতে পারে না।সামান্য বাসার সার্ভেন্ট ঈশা।আমাকে নিজের মায়াজালে ফাঁসাতে চাচ্ছিলো।বাসা থেকেই বের করে দিয়েছি।ব্লাডি রাস্কেল বাজে মেয়ে একটা। [ঈশা’কে উদ্দেশ্য করে বললো আকাশ]
.
চলবে……..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com