জীবনটা অনেক কষ্টের । পর্ব -০৪
সেটাই তো রহস্য?আমার ভালোবাসার যোগ্য যেমন
তুমি ছিলে না,তেমনি তোমার বিশ্বাসের যোগ্যও ”ও
ছিলো না।ব্যাপারটা কতই না হাস্যকর তাই না
সাদিয়া?
নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সাদিয়া,মুখে তার স্পষ্ট
ফুটে উঠছে অনুতাপের ছায়া।টল-মল করতে থাকা
চোখের জল গুলো মুছে সাদিয়া বলল,
–হ্যা ভুলটা আমারি ছিল?আমি চাইলে তোমার সন্তান
কে বুকে জড়িয়ে নিয়েই অন্তীম শ্বাস অবধি যেতে
পারতাম।কিন্তু তুমিই সঠিক ছিলে,হয়তো ছিল না
অতটা গভীর তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা।তাই
তো লিপ্ত হয়ে পড়ে ছিলাম অবৈধ কোনো পাপিষ্ঠ
কাজে?কাখনো ভাবিনি হবে এমন তবে আমায় ক্ষমা
করে দিয়ো শাহরিয়ার?
.
সাদিয়ার কথা গুলোর জবাবে আমি মুচকি হেসে
বললাম,ভাবিয়া করিয়ো কাজ করিয়া ভাবিয়ো না’
কথাটা শুনো নি?এখন অনুতপ্ত হয়ে কোনো লাভ নেই
সাদিয়া?তুমি অনেক ভুল করেছো,যে ভুলের ক্ষমা
অন্তত আমার কাছে নেই?
হু হু করে কান্নায় ভেঙে পড়ে আমার সাম্মুখে বেশিক্ষণ
দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে, অতঃপর সাদিয়া দ্রুত চলে
গেলো,আশে পাশের অনেক লোক তাকিয়ে ছিল
এদিকে,তাতেও যেন কোনো ভ্রু-ক্ষেপ ছিল না আমার।
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে আসার
সময় কেউ একজন কাঁধে হাত রাখলো আমার,আশ্চর্য
হয়ে পিছনে ফিরে নয়ন জোড়া দিয়ে দেখিলাম এক
বোরকা পরিধানে থাকা এক নারীকে।মেয়েটি আমাকে
বলার কোনো সুযোগ না দিয়ে খপ করে হাত টেনে ধরে
নিয়ে আসলো এক নির্জন স্থানে এবং দেখালো,
বোরকার আড়ালে থাকা নিজের মুখ-খানি।অবাক
হয়ে আমি বললাম,
একি রাই তুমি?
–হ্যা আমি?এক কাজিনের বাসা থেকে ফেরার পথে,
পেলাম তোমার দেখা,তা কে ছিলো সেই মেয়েটা,যে
কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো তোমারি নিকট থেকে?
অতঃপর আমি কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে বললাম,
সে আমার প্রথম স্ত্রী ছিল?
আমার এমন কথা শুনে রাই কিছুটা ক্ষুব্ধ,রাগিন্বিত
হয়ে বলল,
.
— আচ্ছা তাহলে তুমি এখানে তোমার আগের স্ত্রীর
সাথে দেখা করতে এসেছিলে??
আহ!ব্যাপারটা অন্য মাইন্ডে নিয়ো না রাই?আমি
উপলব্ধি করতে সক্ষম তুমি এখন কি ভাবছো তবে
যা ভাবছো সেটা এক্ষুনি স্থগিত করো কারণ তুমি ভুল
ভাবছো?
.
–যার সাথে সম্পর্ক একবার ভেঙেই গেছে তার সাথে
আবার সামনা-সামনি হয়ে কথা বলার কি মানে?
বাসায় চলো আমার সাথে,দেখিনা যেন আর কোনো
দিন তার সাথে?অন্তিম বারের জন্য এই আমি কিন্তু
বলে দিচ্ছি তোমায়?
অতঃপর আর কিছুই বললাম না কারণ কথা না
বাড়ানোটাই এখন শ্রেয়ো।পরিশেষে বাসায় চলে
আসলাম।রাত বেশ গভীর,বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে।
সবাই এখন যার যার মতো ঘুমে মগ্ন।শুধু জেগে
রয়েছি আমি আর রাই।ঘুমে চোখ টলমল করছে
আমার কিন্তু পারছি না ঘুমাতে শুধু মাত্র রাইয়ের জন্য।না নিজে ঘুমাচ্ছে, বা আমায় ঘুমাতে দিচ্ছে,
জানিনা ঠিক কি করতে চাচ্ছে হঠাৎ হাত চেপে ধরলো
আমার,আমি চোখ বড় বড় করে তাকালে রাই বলল,
–চলো ছাঁদে যাই?বৃষ্টিতে ভিজবো দুজন একসাথে,
এই গভীর রাতে হাতে রেখে হাত?
What’ এই গভীর রাতে আমার সাথে আর মজা করার
সময় কি তুমি পেলে না?
.
–মজা নয়?চলো আমার সাথে?
আমার মাথা খারাপ হয়নি, যে এতো রাতে ছাঁদে যাবো
শুধু মাত্র বৃষ্টিতে ভিজতে?
–এতোক্ষণ না আমি ঘুমিয়েছি বা তোমায় শান্তি মতো,
ঘুমাতে দিয়েছি,জানো কেন?যাতে বাড়ির সবাই গভীর
নিদ্রায় ডুবে থাকলে আমরা দুজন যেন ছাঁদে গিয়ে
বৃষ্টিতে ভিজতে পারি?বলতে পারো এটা আমার
অনেক দিনের শখও বটে?স্বামী হিসেবে কি চাইবে না স্ত্রীর শখটা আজ পূরণ হোক?
অতঃপর কিছুটা থমকে গেলাম আমি।হয়তো মা
হওয়ার অধিকারটা রাইয়ের থেকে কেঁড়ে নেওয়া
হয়েছে,কিন্তু সত্যি বলতে রাইয়ের মনটা বেশ নরম,
সুন্দর,পবিত্র।যা কিছু দিনের মধ্যেই আমি বেশ
উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলাম।আমি চাইনা
রাইয়ের সম্মুখে এখন না উত্তর প্রকাশ করে রাইকে
কষ্ট দিতে।এমনিতেই রাইয়ের বুকে লুকায়িত অজস্র
ব্যাথা যা রাইকে ক্ষণে ক্ষণে প্রতিনিয়ত নরক যন্ত্রণা
অনুভব করায়।অতঃপর হ্যা সম্মতি প্রধান করলাম
আমি।পরিশেষে উভয় চলে আসলাম ছাঁদে।ঠান্ডায়
ছাঁদের এক-পাশে গুটি-সুটি হয়ে চুপটি মেরে দাঁড়িয়ে
রয়েছি আমি,চোখের সামনেই হাত মেলে বৃষ্টিতে
ভিজছে রাই,হঠাৎ হাত টেনে ছাঁদের মধ্য-খানে নিয়ে
আসলো আমায় এবং একটা ফুল এগিয়ে দিয়ে বলল,
–এটা তোমার জন্য?
ফুলটা নিয়ে আমি বেশ একটা অবাক হয়ে বললাম,
তুমি ফুল কখন ছিঁড়লে?আর ফুল ছেঁড়া তো তোমার
একদমই পছন্দ নয়,তাহলে?
–গাছের সবচেয়ে মুগ্ধ-কর ফুলটা আজ তোমার হাতে,
যেটা গাছের সুন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করে থাকে।
এতদিন খুব সযত্নে রেখেছিলাম এই ফুলটা কেন
জানো?বৃষ্টি ভেঁজা গভীর রাতে এমন এক যোগ্য
মানুষ কে এই ফুলটা নিজের হাতে দিতে চেয়ে ছিলাম,
যে আমায় বুঝবে,আমায় সার্বক্ষণিক উপলব্ধি করতে সক্ষম,যার ঠাই আমার,হৃদয়ে,মনের গহীন ঘরে।তুমি
হয়তো আমার কাছ থেকে কখনো পিতৃত্বের সুখ
পাবেনা কিন্তু জীবনের কোনো পরিস্থিতে ভালোবাসার
কোনো ঘাঁটতি অন্তত আমার কাছ থেকে তুমি অনুভব
করতে পারবে না।
.
কথা-গুলো বলার পরপরই আবার নিজেকে বৃষ্টিতে
ভেঁজাতে ব্যাস্ত হিসাবে সাভ্যস্ত করলো।বাচ্চাদের মতো
ভিঁজছে সে,ভেঁজা চুল গুলো বেঁধে।দেখতে মন্দ নয়
বরং লাগছে মন-মুগ্ধকর।টানিত অনুভব করলাম মনে,
কোনো এক অদৃশ্য,অদ্ভুত টান কেন যেন আজ টানছে
তার দিকে।দু-হাত বাড়িয়ে দিয়ে ডাকছে সে আমায়
তার নিকটে,ঠান্ডায় জড়-জড়িত হয়ে এগিয়ে গেলাম
রাইয়ের নিকটে।জানিনা সেদিন কতক্ষণই বা ভিঁজে
ছিলাম বৃষ্টিতে তবে আজ সকাল থেকেই জ্বর আর
সর্দি হয়ে দাঁড়ালো আমার কিছু সময় কার সঙ্গী।
অতঃপর কেটে গেলো আর কিছু দিন সেরে গেলো
জ্বর-সর্দি।দাঁড়িয়ে আছি,ছাঁদের একপাশে,চোখের
দৃষ্টি কেঁড়ে নিলো ফুল গুলো।ফুল ছেঁড়ার বাজে স্বভাব
টা হয়তো আর যাবেনা আমার।চার-পাঁচটা ফুল এক
সাথে ছিঁড়ে নাক দিয়ে মুগ্ধকর মিষ্টি ঘ্রাম নিচ্ছিলাম,
পরক্ষণেই মনে পড়লো রাইয়ের কথা,সে যদি দেখে
ফেলে আমি ফুল ছিঁড়েছি অজথায় যদিও বা হয় এত
গুলো তখন তার রাগ বা ক্রোধের মাত্রটা ঠিক কত
খানি হয়ে দাঁড়াবে?ধুর’! আমি রয়েছি রাইয়ের মনের
গহীন ঘরে,আমায় আর কিই-বা বলবে হঠাৎ কারো
উপস্থিতি অনুভব করলাম,পিছনে তাকিয়ে দেখিলাম,
আমি রাইকে?বেশ গম্ভীর তার মুখ-খানি তবে চোখ
দুটো যেন আগুনের পিন্ড।আমার নিকটে এসে শার্টের
কলারটা হাল্কা চেপে ধরে বলল,
–তুমি ফুল ছিঁড়েছো?
.
না মানে,আসলে…ফুল গুলো নিচে প…ড়া…ছি…
–শাট” আপ!অজথায় ফুল ছেঁড়া আর মিথ্যা বলা
মানুষদের আমি একদমই সয্য বলতে কিছুই করতে
পারিনা।
চোরে চুরি করে স্বাভাবিক তবে গৃহস্থের কাছে ধরা
পড়ে যাওয়ার ব্যাপারটা অস্বাভাবিক,নাই বা বললাম
বাকি কথা গুলো,লিখা আছে ইতিহাসের পাতায় পড়ে
নিয়েন চাইলে,সময় সাপেক্ষে!
১৮ তারিখ মঙ্গলবার,সারা দিন ঘুরে বেড়ানোর পর
রাস্তার এক-পাশ দিয়ে একে অপরের হাত ধরে
হাঁটছিলাম আমি আর রাই হঠাৎ সামনে পড়ে যায়
সাদিয়া।পাশ কেটে যাচ্ছিলাম,যেটা ভাবীনি সেটাই
হয়েছে,পিছন থেকে হাত টেনে ধরলো আমার।সঙ্গে
সঙ্গে রেগে গিয়ে রাইয়ের তীব্র থাপ্পড়ের আঘাতের
সম্মুখীন হতে হয় সাদিয়াকে।অতঃপর রাই বলল,
–আপনার লজ্জা-সরম,মান-সম্মান কি লোপ পেয়েছে
নাকী?কতটা না নিচু মন মানসিকতার মানুষ না হলে
আপনি এভাবে অন্যের স্বামীর হাত ধরেন?
রাইয়ের কথার উত্তরে কিছুই বলল না সাদিয়া।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আমায় কিছু বলতে গিয়েও
পারেনি বলতে হয়তো রাইয়ের রাগান্বিত চেহারা-খানি
দেখে।অতঃপর মাথা নিচু করে সামনে থেকে চলে
গেলো সাদিয়া,কিছুটা ধুর যেতেই,একটা গাড়ীর সাথে
সংঘর্ষ হয় সাদিয়ার,ফুল স্পিডে গাড়ীটা আমার
চোখের সামনে থেকে চলে যায়।
.
স্পষ্ট ভাবে দেখেছিলাম,গাড়ীর ভেতরে বসে থাকা লোকটাকে?
স্বয়ং সাদিয়ার বর্তমান স্বামীই ছিলো।তর-তাজা প্রাণ
এক নিমিষেই চোখের সামনে নিথরে পরিণত হয়ে
গেলো।নারী-ভুড়ি বেড়িয়ে গেছে,এখনো মুখ থেকে গল
গল করে পড়তে থাকা রক্ত গুলো রাস্তাটাকে রঞ্জিত
করতে সাহায্য করছে।চেখের সামনে সাদিয়ার এরুপ
নৃশংস মৃত্যুর দৃশ্য দেখেও দাঁড়িয়ে আছি স্বাভাবিক
হয়ে,মনে মনে কিছুটা আনন্দও হচ্ছে বটে,এই
সাদিয়াই আমার জন্ম-দাত্রী মাকে খুন করে ছিলো
করণ আমার মা সাদিয়ার সমস্ত কু-কির্টি গুলো হাতে-
নাতে ধরে ফেলেছিলো।চেয়ে ছিলাম নিজের হাতে
তিলে,তিলে ক্ষণে,ক্ষণে সাদিয়া কে কষ্টের শীর্ষে তুলে
মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবো কিন্ত তা হয়ে উঠলো না আর
চোখের সাম্মুখে এরুপ দৃশ্য দেখে এখনো রাই ভয়ার্থ
হয়ে জড়িয়ে ধরে আছে আমায়।নিমিষেই সাদিয়ার
লাশের আশ-পাশটায় নানান মানুষে ভরপুর হয়ে উঠে।
রাই বেশ ঘাঁবড়ে রয়েছে বারবার বলছে আমায়,চলো
এখান থেকে চলে যাই?অতঃপর বাসার উদ্দেশ্য গমন
করলাম।বাসার কিছুটা নিকটে চলে আসলেই রাই
আমাকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে বেশ খানিকটা দূরে
ঠেলে দেয়,বুঝলামনা কেনো?হঠাৎ রাইয়ের বিকট
শব্দের চিৎকার আমার শরীরটাকে এক নিমিষেই
শিউরে তুলতে বাধ্য করে,দ্রুত পিছনে ফিরে তাকাতেই
চোখ জোড়া আমার অশ্রু-সিক্তে রুপান্তর হয়ে
যায়।চোখ জোড়া বন্ধ করে রক্তাক্ত শরীরে চোখের
সামনে পড়ে রয়েছে রাই।কোনো সারা শব্দ নেই তার।
সেদিন সামান্য একটু হাত কেটে গিয়ে ছিলো বলে
রাইয়ের জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলাম আজ
কাছ থেকে রাইয়ের এত পরিমান রক্ত দু নয়নে দেখে
আমি প্রায় পাগলে পরিণত হয়ে গেছিলাম।অতএব
রাইকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো,খবর পেয়ে
সবাই উতলা হয়ে উপস্থিত হয়েছে হাসপাতালে।
অতঃপর ডাক্তার দ্রুত অপারেশন থিয়েটার থেকে
বেড়িয়ে এসে রাইয়ের বাবাকে বলল,
–আপনার মেয়ের বাঁচার চান্স বেশি তবে তার একটা
পা আজ অযোগ্যে পরিণত হলো?সেই পা’টা কেটে
ফেলতে হবে?কিচ্ছু করার নেই?সৃষ্টি কর্তার ইচ্ছা মেনে
নিতেই হবে?
কথাগুলো বলার পরপরই ডাক্তার চলে গেলো
কিছুক্ষণ পর রাইয়ের অপারেশন করা হবে।রাইয়ের
পরিবার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।হঠাৎ কেউ একজন
আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,
–বেঁচে গেলি?
খানিকটা অবাক হয়ে পিছনে ফিরে তাকাতেই স্তব্ধ
হয়ে গেলাম আমি কারণ আমার সম্মুখে সয়ং রুপা
দাঁড়িয়ে আছে………
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com