Breaking News

আগন্তুকের আসক্তি । পর্ব -০২

দুপুরের রোদ জানালার কাঁচ ভেদ করে তীর্যক ভাবে ইনানের চোখে লাগে।
সহসা চোখ মুখ কুচকে আড়মোড়া কাটিয়ে উঠে বসে সে।
দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সকাল সাড়ে বারোটা বাজতে দেখে আবার ধপাশ করে বিছানায় শুয়ে যায়।
পাশে ফিরে তাকাতেই গুটিয়ে শুয়ে থাকা লাল শাড়ি পড়া একটি মেয়েকে দেখে ভরকে যায়।
সহসা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে-নিতে রুমের পরিবেশটা
পরখ করে বুঝতে পারে, আরে মেয়েটা তার বিবাহিত স্ত্রী।গতকাল মেয়েটার সাথে কথা
কাটাকাটির একপর্যায়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে যায়।তারপর আর মনে নেই।
হয়তো ক্লান্ত শরীরে মেয়েটি দুরুক্তি না করে গুটিয়ে শুয়ে যায় ইনানের পাশে।
আয়নায় নিজেকে ভালোভাবে দেখে নেয় ইনান।গতকালের সাজ পোশাক এখনো
আগের মতো আছে।রুম থেকে বের হয়ে সোজা লিভিং রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ায়।
অলীদ আর সুফিয়া সেখানেই বসে আছে।ইনানকে আসতে দেখে
অলীদ ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।তার সন্দেহভাজন দৃষ্টি দেখে ভ্রু কুচকায় ইনান।
– তোর সমস্যা কি, এইভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস?
– তোর সাজপোশাক এখনো আগের মতো মানে রাতে কিছু হয়নি?
– কি হবে?
– ইয়ে আই মিন…
.
অলীদ কথা শেষ করার আগেই তার পিঠে কিল বসায় ইনান।
– আমাকে কি তোর পাগল মনে হয়?ভুলে যাবি না মেয়েটার আঠারো হয়নি তাছাড়া মেয়েটার ভালো
মন্দ সব দায়িত্ব আমার।তাই সব দিক বিবেচনা করা একান্ত জরুরি।
ইনানের কথায় তাল মিলায় সুফিয়া।
– ঠিক বলেছিস তবে তোর পাঞ্জাবি পুড়লো কি করে?
– তেমন কিছু না।দুপুর হয়ে এসেছে তোরা তোদের পছন্দ মতো খাবার অর্ডার দে ডেলিভারি
ম্যান খাওয়ার দিয়ে যাবে।
– ওকে তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।
ইনান উপরে উঠে আবারো নিজের রুমে চলে যায়।ইতিকা এখনো ঘুমিয়ে আছে আগের
মতো।ইনান আগে ফ্রেশ হয়ে এসে ইতিকার পাশে বসে।,
– এই যে শুনছেন।এই মেয়ে,এই যে।
ইতিকার হুশ নেই।সে এখনো গভীর ঘুমে মগ্ন।সূর্যের আলো তার মুখের সৌন্দর্য
যেন বাড়িয়ে দিয়েছে।চেহারার মাঝে সরলতা গ্রাম্য ভাব তার মাঝে বৃদ্ধমান।
কিন্তু কে বলবে এই মেয়ের ঘুম ভাঙ্গলে বাঘিনী রূপ ধারন করবে।
ইনান মেয়েটির হাত আলতো ছুয়ে দেয়।নরম তুলতুলে হাতটা নিজেও ইনানের হাত আঁকড়ে ধরে।
ইনান দোটানায় পড়ে যায়।নিজের মাঝে তৈরি হয় ইতস্ত বোধ।সঙ্গে সঙ্গে সে চিটকে সরিয়ে দেয় ইতিকার হাত।আকস্মিক ঝাকরায় ঘুম ভেঙ্গে যায় ইতকার।তার সামনে ইনানকে দেখে লাফিয়ে উঠে বসে।
– আপনি?
– আমার রুমে আমি ছাড়া, এই রুমে কাউকে দেখবেন না।যাই হোক ফ্রেশ হয়ে
আসুন।ব্যাগে আপনার জামা কাপড় রাখা আছে আর বিকেলের মধ্যে আপনার
প্রয়োজনীয় সব চলে আসবে।
ইনান চলে যায়।ইতিকা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকায় মনের ঘোর কাটলে আবার চোখ সরিয়ে নেয়।
বেশ কিছুক্ষণ পর ইতিকা ডাইনিং টেবিলের সামনে আসে।তার জন্য এতক্ষণ খাওয়ার
টেবিলে অপেক্ষা করছিল সবাই।সুফিয়া ইতিকাকে টেনে ইনানের পাশে বসায়।ইনান
আড় চোখে একবার মেয়েটিকে পরখ করে নেয়।আসমানি আর নীল রঙের মিশ্রণে
শাড়িটিতে মেয়েটিকে অন্যরকম সৌন্দর্যে আবৃত করে রেখেছে।কোমরের নিচে
চুলগুলো চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ছে।
সুফিয়া সবার খাবার সার্ভ করে নিজেও বসে যায়।ইতিকার দিকে তাকিয়ে তার
ভ্রু-যুগল কিঞ্চিৎ কুচকে যায়।সবাই হাতে চামচ নিয়ে সহজে খাবার খাচ্ছে কিন্তু
ইতিকা এইসবে অভ্যস্ত নয় তাই সবার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আবার নিজের
প্লেটের দিকে একবার তাকাচ্ছে তার অবস্থা বুঝতে পেরে সুফিয়া স্মিথ হেসে বলে,
– ইতিকা তুমি হাত দিয়ে খাও আমিও হাত দিয়েই খাবো।
– ঠিক আছে আপু।
মেয়েটির চোখে ভয়ের ছাপ কেটে গেছে।মুচকি হেসে নিজেও খাওয়া শুরু করে।
অপর দিকে অলীদ একবার ইনান আরেকবার ইতিকার দিকে তাকাচ্ছে।তার সবকিছু
গোজামিল লাগছে।ইনান বরাবরি স্টাইল,ফ্যাশন সচেতন ছেলে।তার সঙ্গে সব
ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়া মেয়েদের চলাফেরা তার মাঝে এই গ্রাম্য মেয়েকে বিয়ে করার
কারন সে খুঁজে পেলনা।
.
দুপুরের পর সুফিয়া তার নিজের বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায়।সুফিয়া,অলীদ এবং ইনান তিনজনের বন্ধুত্ব একটু বেশি গভীর।অলীদের বাড়ি ঢাকার বাইরে হওয়ায় ভার্সিটিতে আসা যাওয়ার সমস্যা হওয়ায় মেসে থাকতে শুরু করে কিন্তু গত একবছর ইনান তার বাবা-মাকে ছেড়ে এই ফ্লাটে উঠেছে তারপর থেকে ইনানের সঙ্গে এই ফ্লাটে আছে আলীদ।
বসার রুমে অলীদ এবং ইনান একসঙ্গে বসে আছে তখনি নিরিবিলি পরিবেশটার ছেদ ঘটায় ইনানের ফোনের ভাইব্রেটর। বাড়ির দারোয়ানের নাম্বার দেখে তার মনে সন্দেহের বাতি জ্বলে উঠে।
– আসসালামু আলাইকুম চাচা বলুন।
– তুমি নাকি বিয়া করছো?তোমার আব্বা আম্মা আসছে।গেটের সামমে দাঁড়াইয়া আমারে জিগাইলো ইফতিহার ইনান থাহে কোন হানে আমিও দেখাই দিলাম।গত এক বছরে তাদের দেহা পাইলাম না আর আইজগা আইসা পড়ছে তোমার বিয়ার খবর পাইলো কেমনে?
– তারা এখন কোথায় চাচা?
– বাগান সাইড পার হইয়া গেসে লিফটে উঠে যাবে যেকোন সময়।
ইনান আর দেরি করলো না দ্রুত মোবাইলটা ছুড়ে মারে সোফার উপর।অলীদকে বুঝিয়ে দেয় কেউ আসলে দরজা যেন দেরিতে খোলে।
.
ইনান ঝটপট নিজের রুমে গিয়ে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দেয়।এদিকে বিছানায় উপড় হয়ে কাঁদছে ইতিকা।লেখনীতে পলি আনান
হুট করেই তাকে টেনে দাঁড় করায় ছেলেটি।তার শাড়ির ঠিক নেই এদিক সেদিক হয়ে আছে।দ্রুত দুহাতে শাড়ি ঠিক করে ইনানের হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে।কিন্তু ফালাফল ব্যার্থ।
কান্নার ফলে রক্তিম ডালিমের মতো চোখ দুটো দেখে বেশ রেগে যায় ইনান কিন্তু তা প্রকাশ করলো না।দ্রুত ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে পাউডার নিয়ে ইতিকার মুখে লাগাতে থাকে।লিপস্টিক দিয়ে রাঙাতে থাকে মেয়েটির ঠোঁট যুগল।
.
– এই যে কি করছেন আপনি?পাগল হয়ে গেছেন নাকি?
ইতিকার ধমক ইনান শুনলো না বরং বডি স্প্রে নিয়ে তার সারা শরীরে স্প্রে করলো।হাতে মোটা মোটা বালাগুলো পড়িয়ে, গলায় চোকার সঙ্গে লম্বা মোটা চেইন পড়িয়ে ক্ষান্ত হলো সে।
ইতিকা ইনানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে কিছুটা দূরে দাঁড়ায়।কিন্তু ইনান তাকে তার কাছে টেনে এনে ভেজা চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলে,
– শুনছেন, আমার মা-বাবা আসবে মানে আপনার শশুড়-শাশুড়ী।নিশ্চিই তাদের দেখে আমার নামে নালিশ দেওয়া শুরু করবেন?
– অবশ্যই আপনি যে আমায় জোর করে বিয়ে করেছেন তা তাদের জানানো একান্ত জরুরি।
– এমনটা আপনি ভুলেও করবেন না ফলাফল বেশি ভালো হবে না বলে দিলাম।
ইনানের ধমকে ইতিকা ভয় পাওয়ার পরিবর্তে আরো ক্ষিপ্ত হলো,
– আমাকে আপনি চিনতে পারেননি,কলিজা টেনে ছিড়ে ফেলবো আপনার।আমাকে বিয়ে করার স্বাদ মিটিতে তবেই আমি ক্ষান্ত হবো।
.
ইনান মাথায় হাত দিয়ে পাইচারি করছে।কিছুক্ষণ আগে অলীদের কথা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সে।অলীদ বলেছিল, গ্রামের মেয়েরা দেখতে সহজ সরল হলেও মোটেও তারা সহজ সরল নয় বরং তাদের মাঝে আলাদা একটি ভাব ধারা আছে।তারা ঝগড়া করতে পটু ইনানের জীবন যে এই মেয়েটা অতিষ্ঠ করে তুলবে তার আগাম বার্তা অলীদ তাকে কয়েক মিনিট আগে দিয়েছে।কিন্তু তার ফলাফল যেন খুব শীঘ্রই পেতে চলেছে ইনান।
যখন কোন ভাবে ইতিকাকে কবজা করতে পারলো না তখন মিথ্যার আশ্রয়টা নিলো ইনান।
– একটা কথা বলবো আপনাকে?আমার বাবার হাটে একটা ফুটো আছে।তিনি যদি জানেন তার ছেলে এইভাবে বিয়ে করেছে তবে তার হার্টের অসুখ বাড়বে যদি তিনি এট্রাক করে বসেন আমার বাবার অসুস্থতার দায় কিন্তু আপনাকে নিতে হবে।”
ইনানের আফসোস ভঙ্গিমার কথায় দমে গেলো ইতিকা।তীর্যক ভাবে তাকিয়ে ইনানকে বলে,
– তবে কি করতে হবে আমায়?”
-বেশি কিছু না শুধু বলবেন আমার আর আপনার রিলেশনের বিয়ে ছিল ব্যস এইটুকুই।
– রিলেশনে করবো আমি তাও আপনার সাথে?
ইতিকার ব্যঙ্গ সুরের কথায় হাত মুঠিবদ্ধ করে নিলো ইনান।দাঁতে দাঁত চেপে আরক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো ইতিকার উদ্দেশ্য,
– এর আগে বুঝি প্রেম করেন নি?
.
প্রশ্নটা যেন একপ্রকার খোঁচা দেওয়া হলো ইতিকাকে।বুকের বাম পাশটায় আবারো অসহ্য ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।
ইতিকাকে অন্যমনষ্ক দেখে তার দু’গাল আলতো ভাবে ছুঁয়ে দেয় ইনান।
– একটা চুমু খেলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে?
ইনানের প্রশ্নে সূক্ষ্ম ভাজ পড়ে ইতিকার কপালে।রাগান্বিত স্বরে কিছু বলার আগেই ইনান তার গালে অধর ছোঁয়ায়।হঠাৎ স্পর্শে অন্যরকম শিহরণ বয়ে যায় ইতিকার মাঝে।
ইনান সরে আসে তার সামনে থেকে আবার কি মনে করে এগিয়ে যায়।মেয়েটিকে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে আয়নার দিকে ইশারা করে,
.
– ডানে বামে অতিতে কি হয়েছে ভুলে যান ইতিকা।আর সামনে কি হবে তাও ভাবতে হবে না আপনার।আপনি আজকের পর থেকে মাথায় এটাই ঢুকিয়ে নিন আপনি আমার ‘ইতি বউ’।’
ইতিকা’ নামটায় ডাকতে পারবো না।তার থেকে ভালো আমি আপনাকে ছোট নামে ডাকি ‘ইতি’ আর আপনি আমার একমাত্র বউ তাই আপনি আমার ‘ইতি বউ’।
ইতিকা শিউরে উঠলো আয়নার দিকে তাকিয়ে ছেলেটিকে একবার দেখে নিলো কপালের দিকটায় কাটা দাগ, গালের বাম পাশেও কিছু কাটা দাগের চিহ্ন।অদ্ভুত একটা মানুষের বিক্ষিপ্ত এতটা কাটা দাগ কি করে?আর জখম পেলো কি করে সে? ইতিকার ভাবনার ছেদ ঘটে ইনানের আবেগী সুরে কন্ঠের।
– ইতিবউ আপনি কি আমার বাবা’মাকে নিজের বাবা’মায়ের আসনে বসাতে পারবেন?
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com