Breaking News

তারে ভালোবাসি বলে । পর্ব-১০




হঠাৎ করে অয়ন ঈশার নিচের ঠোঁটের দিকে হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চেষ্টা করলো।
ঈশা অপ্রস্তুত হয়ে একটু পিছিয়ে গেলো। ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— এই কি করছো কি এসব?
— লিপস্টিক লেপ্টে গেছে কিছুটা। তাই আর কি!
ঈশা অয়নের কথা শুনে মুচকি হেসে ঠোঁট জোড়া এগিয়ে দিলো অয়নের দিকে।
অয়ন ঈশার নিচের ঠোঁটে লেপ্টে যাওয়া লিপস্টিক আলতো করে টুকু তুলে দিলো।
অয়নের স্পর্শ ঈশার মনের মধ্যে এক অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি করলো।
এ অনুভূতি পবিত্র। এ অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়। অয়ন ঈশার দিকে আড় চোখে তাকায় এবং বলে
— সামনে একটা আইসক্রিম শপ আছে। ওখানে কি গাড়িটা পার্ক করবো?
অয়নের কথা শুনে ঈশা আনন্দের সহিত বলল
— জানো না তুমি পার্ক করা উচিত কি না?
— উহু জানি না তো আমি। আচ্ছা পার্ক করবো না ঠিক আছে?
— কিহহহহ। ওই পার্ক না করলে বললে কেনো?
— কেনো? লোভ সামলাতে পারছো না বুঝি?
— উমমম! পারি না।
— ঠিক আছে আইসক্রিম পাগলি।
* দুজন মুচকি হেসে ফেলল। ঈশা অয়নের কাঁধের উপর মাথা রাখলো। অয়ন ঈশার কপালে এঁকে দিলো ভালোবাসার পরশ। অয়ন ঈশার উদ্দেশ্যে বলল
— তোমার গা এ হাত তোলা উচিৎ হয়নি আমার। আমাকে ক্ষমা করে দিও তুমি।
— উহু ঠিক আছে। আমি ওই সব মনে রাখিনি।
— হুম
 কিছু দূর গাড়ি চলার পরেই চলে আসে আইসক্রিম শপ।
অয়ন রাস্তার এক পাশে গাড়িটা পার্ক করলো। অয়ন ঈশাকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে চলে
আসে আইসক্রিম শপে। ঈশা প্রচুর পরিমাণে আইসক্রিম ভালোবাসে।
এই আইসক্রিমের জন্য অয়নের কাছে বকাও খেয়েছে অনেক। শীত কালেও আইসক্রিম খেতো ঈশা।
যা তার অসুস্থের কারন ছিলো। অয়ন ঈশাকে বকলেও লাভ হয়নি খুব একটা।
ঈশা তাও লুকিয়ে লুকিয়ে আইসক্রিম খেতো।
কথা গুলো ভাবতেই ঈশার ঠোঁটে একটু মুচকি হাসি উঁকি দিলো। অয়ন ঈশাকে বলল
— আনমনে হাসছো কেনো?
.
— পুরনো কথা মনে পরে গেছে। আচ্ছা অয়ন মনে আছে তোমার এই আইসক্রিম খাওয়া নিয়ে কত ঝগড়া তুমি করতে?
— তা কি করে ভূলে যাই? খুব মনে আছে। তবে লাভ হতো না। তুমি তো তুমিই। আমার কথা শুনতে একটুও।
— হুম, আচ্ছা চলো চলো অনেক গুলো আইসক্রিম নিতে হবে।
— হুম
* অয়ন আর ঈশা আইসক্রিম শপে গিয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে আর গল্প করছে। একবার অয়ন আর ঈশার কথা শুরু হলে শেষ হয় না। মানে কখন যে সময় চলে যায় দুজনের কারোই সে দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ থাকে না‌। ভালোবাসা বুঝি এমনি হয়!
অনেকটা সময় কথা বলার পরে অয়ন বিল চুকাতে পকেটে হাত দিলো। অয়ন অবাক হয়ে গেলো ওয়ালেটটা পকেটে ছিলো না। অয়নকে খানেকটা বিচলিত দেখে ঈশা প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— কি হয়েছে? তোমাকে এতোটা বিচলিত কেনো দেখাচ্ছে?
— আর বলো না ওয়ালেটটা পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে গাড়িতে ফেলে এসেছি।
— ওহহহহ, আচ্ছা তুমি এখানে দাঁড়াও আমি গিয়ে নিয়ে আসছি।
— এই না ঈশা, তুমি বরং আইসক্রিম খাও আমি গিয়ে নিয়ে আসি।
— আচ্ছা ঠিক আছে। তারাতাড়ি এসো প্লিজ।
— এই যাবো আর আসবো।
.
অয়ন ঈশাকে আইসক্রিম শপে রেখে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।
আইসক্রিম শপের থেকে গাড়িটার দূরত্ব বেশি দূর নয়।
ঈশা অয়নের চলে যাওয়ার পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো খানেক ক্ষন।
অয়নকে যেতে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না তার। কেনো তা বোধগম্য
হলো না ঈশার নিজের কাছে নিজের। অয়ন গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো।
ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে গাড়িটাকে। কোথায় যে রেখেছে ওয়ালেটটা?
কে জানে? অয়ন কিছু সময় খুঁজতেই বহু প্রত্যাশিত ওয়ালেটটা।
ওয়ালেট পেতেই অয়নের ঠোঁটে হাসি ফুটলো। অয়ন গাড়ি থেকে নামতে যাবে এমন সময়
একটা বিকট শব্দ হলো। বিকট শব্দে উড়ে গেলো পথের পাশে বসে থাকা অনেক পাখি।
অয়নের শরীরটা ছিটকে পরে যায় রাস্তার ওপাশে। ঈশা অয়ন বলে একটা চিৎকার করে উঠল।
হাত থেকে পরে গেলো আইসক্রিম। অয়নের গাড়িটা দুমরে গেলো এক ট্রাকের ধাক্কায়।
ঈশা ধপাস করে বসে পরলো। কি থেকে কি হয়ে গেলো তা ঈশা বুঝে উঠতে পারছে না।
অয়নের মাথা থেকে প্রচুর পরিমাণে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। আসে পাশে
মানুষ ঠিক আছে তবে কারো ভিতর দয়া নেই। সবাই ভিড় করে আছে। কেউ অপেক্ষা করছে
পুলিশের আর কেউ অপেক্ষা করছে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার দৃশ্য দেখবে বলে।
অয়নের হাত পা নড়ছে না তবে বুকের বাম পাশটা খুব ধিরে কেঁপে কেঁপে উঠছে।
ইশারা চোখে জল নেই। কথায় আছে না অতি কষ্টে মানুষ
পাথর হয়। ঈশা তার প্রমান। ঈশা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
লোকের ভিড় ঠেলে ঈশা অয়নের কাছে চলে আসে। নিথর দেহটা মাটিতে পরে আছে।
ঈশা অয়নের মাথার কাছে গিয়ে বসলো। চারিদিকে মানুষ গুলো বলছে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে
— এই আপু ধরিয়েন না পুলিশ আসুক তারপর না হয় ধরবেন।
আবার কেউ কেউ বলছে
— এম্বুলেন্সে খবর দেও কেউ। লোকটা বাঁচতে পারে।
ঈশা কোনো কথা বলছে না। চুপ করে সবার কথা শুনছে। মনে মনে ধিক্কার দিচ্ছে এই সব মানুষকে। যাদের আজ মনুষ্যত্ব হারিয়ে গেছে। ঈশা নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। তবে আজ নিজেকে শান্ত রাখতে হবে তাকে। নিজেকে কিছু করতে হবে আজ। অয়নের জন্য আজ তাকে নিজের কষ্ট আড়াল করে মাথাটা ঠান্ডা করে কিছু করতে হবে। হঠাৎ করে ঈশার বিপরীত পাশে থেকে একজন বলে উঠলো
— আপু এই লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে বেঁচে আছে। আমার একটা গাড়ি আছে। আপনি চাইলে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি। ঈশা তার দিকে দৃষ্টিপাত করতেই কয়েকজন লোক বলতে লাগলো
— আরে এক্সিডেন্ট কেস। পুলিশ আসার আগে যদি আমরা ধরি তা হলে সমস্যা হবে। নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে ঝামেলায় পরতে চাচ্ছেন কেনো?
.
লোকটি চরম বিরক্তির সুরে বলল
— তবে কি অপেক্ষা করবো পুলিশ আসার? যদি লোকটা মরে যায়? পুলিশ আসলে কি উনি বাঁচবে?
* লোকটা কারো কথার কোনো তোয়াক্কা করলো না। এই সমাজে এখনও মানবতার ছাপ বিদ্যমান আছে। অয়নকে কিছু লোক মিলে গাড়িতে তুললো। ঈশা অয়নকে নিয়ে হাসপাতালের পথে রওনা দিলো। অয়নের মাথা বেয়ে পরছে অজস্র রক্ত। চট করে ঈশা নিজের বুকের উপরে থাকা ওড়নাটা হাতে নিলো। শক্ত করে বেধে দিলো অয়নের মাথা। উদ্দেশ্য রক্ত বন্ধ করতে হবে। অয়নের কোনো সারা শব্দ নেই। ঈশা বাকরুদ্ধ। আজ ঈশার সব কথা চোখ বলছে। ভূল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে যখন তার প্রিয় মানুষ তার জীবনে ফিরে এলো। ঠিক তখনি কেনো এমন হলো? বিধাতা কি পারতো না অয়নকে ভালো রাখতে? অয়নের বিপরীতে আমায় কেনো এই আঘাতটা দিলো না? বিধাতা কি চায়‌ না আমি একটু সুখে থাকি? উনি কি চায় না আমি ভালো থাকি? কোনো পাপ তো করিনি? শুধু ভালোবেসেছি। যদি এটা পাপ হয় তবে তার প্রতি কেনো এতো ভালোবাসা বিধাতা আমায় দিলো?
.
* হাজারটা অভিযোগ ঈশার। কিছু সময় পরে অয়নকে হাসপাতালে আনা হলো। ডক্টররা অয়নকে জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলো। অয়নের অবস্থা মোটেও সুখকর নয়। অয়নকে হাসপাতালে আনার মিনিট দশেকের ভিতর সবাই চলে আসে। সবাই বলতে অয়নের বাবা, মা ও ঈশার বাবা, মা। ঈশা অপারেশন থিয়েটারের পাশে একটি টুলে বসে আছে। কোনো প্রতিক্রিয়া নেই তার ভিতর। অয়নের বাবা এসে ঈশার মাথার উপর হাত রেখে বলল
— কি করে হলো এসব মা? তুমি ঠিক আছো তো?
ঈশা নিশ্চুপ রইলো কিছু সময় অতঃপর বলল
— বাবা আমাকে একটু পানি দিবেন? গলাটা শুকিয়ে গেছে আমার।
ঈশার কথাটা সকলের বুকে গিয়ে বিধলো। পাথরের মতো বসে থাকা মেয়েটি যার প্রিয়জন মৃত্যুর মুখে। তার পানির তেষ্টা পেয়েছে? উহু তার প্রিয়জনকে দেখার তেষ্টা পেয়েছে। তা বুঝতে বাকি রইলো না কারো। ঈশার ছোট বোন একটু পানি এনে দিলো তার কাছে। ঈশা পানিটুকু পান করে বলল
— অয়ন কেমন আছে?
.
ঈশার প্রশ্নের জবাবে কেউ কিছু বলল না। কি করে বলবে? অয়নের খবর অজানা। ঈশা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। বার বার ছুটে যায় অপারেশন থিয়েটারের দিকে। মনের মধ্যে ঝড় উঠেছে তার। প্রিয়জনের কিছু হলে বুঝি এমনি হয়?
* সবাই অপেক্ষমান অনু ও এসেছে এখানে। অনুর চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। বার বার অনুর ফোনটা বেজে উঠছে। ফোনের স্ক্রিনে বিরক্তি সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কল কেটে দিচ্ছে অনু। ঈশা দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষা কোনো ভালো খবরের। ঘন্টা খানেক পর ডক্টর ভিশন হতাশা নিয়ে অপারেশন সমাপ্ত করে। ডক্টর হতাশ মুখে বেরিয়ে আসে অপারেশন কেবিন থেকে। সবাই অপেক্ষমান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ডক্টরের দিকে। ডক্টর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল
— সরি পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আপনারা হতাশ হবেন না। আল্লাহ যদি চায় তবে উনি ফিরতে পারে তবে না ফেরার সম্ভাবনা বেশি।
* ডক্টরের কথা শুনে ঈশার মাথার উপরে যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। আজ যদি অয়নকে যেতে না দিতো তবে এমনটা হতো না। আর যদি আইসক্রিমের বায়না সে না করতো তা হলে আজ অয়ন তার পাশে থাকতো। এই সব বলে নিজেকে দোষ দিচ্ছ ঈশা। ঈশা দৌড়ে ছুটে যায় অয়নের কেবিনের দিকে। কেবিনে যেতেই ঈশা দেখতে পেলো…..
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com