তারে ভালোবাসি বলে । পর্ব-১২
— উফফফফ যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়। এখন ওনাদের কি করে ম্যানেজ করি?
* অনুকে বাহিরে দেখতে পেয়ে অয়নের বাবা একটু চমকে উঠলো। এই মেয়ে হসপিটাল থেকে বাহিরে কি করছে? অনু কেবিনের সামনে আসতেই অয়নের বাবা তার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো
— তুমি কোথায় ছিলে অনু? তোমায় একা একা বাহিরে যেতে না আমরা বারন করেছি। বিপদ হলে পরে?
— না আসলে আংকেল অয়নের এমন অবস্থা আমার সহ্য হচ্ছে না। তাই বাহিরে গিয়েছি একটু।
— ওহহহ
অনুর সরলতা আবারও তার অয়নের বাবা মার মন গলিয়ে দিলো। অনু তাদের উদ্দেশ্যে বলল
— আচ্ছা আংকেল আপনারা বাসায় যান। আমি অয়নের কাছে থাকি।
এখানে থেকে ওর সেবা করতে হবে তো কাউকে।
আমি না হয়!
আচ্ছা থাকো।
আর যে কোনো প্রয়োজনে আমাদের কল করো।
ঠিক আছে?
আচ্ছা আংকেল তাই হবে।
অনুকে রেখে অয়নের বাবা, মা চলে যায় বাড়িতে। ওনারা চলে যেতে অনু অয়নের কেবিনে ঢুকলো।
অয়নের অবস্থা এখনও উন্নতি হয় নাই।
পাল্স রেট এখনও ধিরে ওঠা নামা করছে। অনু অয়নের কাছে বসলো।
অয়নের হাত ধরে অনু বলল
— অয়ন আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি।
আমি ওদেরকে বলেও ছিলাম হাজার বার তোমার যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।
কিন্তু ওরা তোমাকে আঘাত করে ফেললো। কষ্ট হচ্ছে তোমার? প্লিজ সোনা একটু সহ্য করো।
আর কখনও তোমাকে কষ্ট দিবো না আমি। কষ্ট ঈশা পাবে। তুমি না।
অয়নের হাত ছেড়ে ঈশা অয়নের বুকের উপর আলতো করে মাথাটা রেখে একটু থেমে বলতে লাগলো
— ঈশাকে ভূলে আমাকে একটু ভালোবাসা দাও। আর কিছু চাই না আমি।
তুমি কি আমার চোখের ভাষা বুঝতে পারো না? আমি তো ঈশার থেকেও সুন্দরী।
তবে কেনো আমার প্রতি তুমি দূর্বল হতে পারো না?
আমি তো কম চেষ্টা করিনি বলো তোমার মন থেকে ঈশাকে দূর করতে।
তবুও কেনো ওর প্রতি তোয়ার দূর্বলতা? অয়ন একটি বারের জন্য জরিয়ে ধরো আমায়।
প্লিজ। একটু শান্তির নিশ্বাস ফেলতে দাও তোমার বুকে। প্লিজ অয়ন প্লিজ।
* ঈশা নিজের রুমে বসে আছে। অয়নের টিশার্ট টা বুকে জরিয়ে কাঁদছে সে।
কেনো অয়নের এমন হলো? এখন কি অবস্থায় আছে অয়ন? জানতে খুব ইচ্ছা করছে তার।
আনমনে ঈশা অয়নের সাথে কাটানো মধুময় সময় গুলোর কথা ভাবছে হঠাৎ করে ঈশার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনের শব্দে ঈশার ভাবনার অবকাশ ঘটলো। ঈশা ফোনের স্ক্রিনে তাকালো।
ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই ঈশার চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেলো।
ঈশার মনে পরে গেলো সে দিনের সাবধানতা বানির ফোন কলের কথা।
ঈশা বিষন্ন চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো
— সেই অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এসেছে! তার মানে কি অয়নের এক্সিডেন্ট এই কলের সাথে যুক্ত?
ঈশা প্রচন্ড ভয়ের সহিত কলটা পিক করলো। ভয়ের চোটে ঈশার ঠোঁট জোড়া কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল ঈশা
— হ্যালো!
— হ্যাঁ, মিস ঈশা কেমন চমক দিলাম? বলে ছিলাম না অয়নের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে! শুনো নি আমার কথা। এবার বুঝো। এই সবের জন্য দায়ী তুমি। আহারে অয়ন বেচারা জীবন মরন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে।
ফোন কলের জবাবে ঈশা কান্না ভেজা কন্ঠে চিৎকার করে বলে উঠলো
— কে আপনি? কেনো এমন করছেন? আমরা কি ক্ষতি করেছি আপনার? কেনো আমাদের শান্তিতে থাকতে দিচ্ছেন না? কি চাচ্ছেন আপনি?
ভিশন কর্কশ গলায় ওপার থেকে ভেসে এলো
— চুপ। কেনো করছি এসব? তা কি জানিস না? বারংবার বারন করেছি অয়নের কাছে যাস না। আমার কথা মতো কাজ না করলে এর থেকেও ভয়ংকর কিছু হবে তোর অয়নের সাথে। এ যাত্রায় বেঁচে থাকলেও পরের যাত্রায় কিন্তু বাঁচবে না। এটা একটা ট্রেলার ছিলো। পিকচার যদি না দেখতে চাস তো অয়নের থেকে দূরে থাক।
— আমি….
টু টু টু শব্দ করে ফোনটা কেটে গেলো। ঈশার কিছু বলার সুযোগ হলো না। ঈশা ফোনটা হাতের মুঠোয় নিয়ে ভাবতে লাগলো। কে এই অপরিচিত মানুষ? কন্ঠ শুনে মেয়ে মেয়ে মনে হচ্ছে। অয়নের সাথে এই মেয়ের কি সম্পর্ক? আমার থেকে কেনো এই মেয়ে অয়নকে দূরে রাখতে চাচ্ছে? এই মেয়ে অনু নয়তো? না না অনু এই মেয়ে কি করে হতে পারে? অসহায় একটা মেয়ে যাকে অয়ন নিজের সাহায্য করে ওদের বাসায় থাকতে দিয়েছে তার এতো সাহস হবে না। সেই মেয়ে অয়নের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। কৃতজ্ঞতা বোধ ও তো আছে। উহু অনু না এই মেয়ে। কিন্তু আসলে কে এই মেয়ে? এই মেয়েটার উদ্দেশ্য কি? আমি যদি এখন এই মেয়েটার কথা না শুনি তবে তো এই মেয়ে অয়নের আবার ক্ষচি করে বসবে। না আমি চাই না আমার জন্য অয়নের কোনো ক্ষতি হোক। অয়ন ভালো থাকুক। আমি আর অয়নের কাছে যাবো না।
কথাটা ভাবতেই ঈশার বুকটা কেঁপে উঠল। অয়নের থেকে নিজের দূরত্ব তৈরি করা সহজ নয়। কিন্তু এছাড়া তো কোনো উপায় ও নেই। কি করবে ঈশা? কিচ্ছু মাথায় আসছে না তার।
* সকাল হয়ে গেলো অয়নের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখনও অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে বেডে। অনু কিছু সময় পর পর অয়নের কাছে আসছে। ডক্টর অপেক্ষা করতে বলেছে কিন্তু অনু তা করতে নারাজ। কিছু সময় পর অনুকে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। অফিসে কিছু কাজ আছে তার। এই কাজটা অয়নের থেকেও বেশি ইম্পটেন্ট। অনু অয়নের কাছে গিয়ে কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলো। ফোন কলে তা বলেছি তারপর ঈশা ভূল করে হলেও তোমার কাছে আসবে না অয়ন। ঈশার দূর্বলতা আমি জেনে গেছি। অয়নের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলল
.
— অয়ন আমি এখন যাই। তুমি প্লিজ একটু রিসপন্স করো। নিজে যদি সারা না দাও তবে কি করে হবে? আর কতক্ষন কষ্ট দিবে আমায়? তোমার সাথে কথা বলার যে প্রবল তৃষ্ণা আমার। বোঝো না তুমি?
* অনু আর কিছু বললো না। এমনিতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে তার। অনু আবারও অয়নের কপালে একটা চুমু দিয়ে নিজের পার্স টা হাতে নিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। যাবার সময় নার্সকে উদ্দেশ্য করে অনু বলে যায়
— এই কেবিনে আমি ছাড়া অন্য কেউ যেনো প্রবেশ না করতে পারে। মাইন্ড ইট।
নার্স অনুর কথা শুনে হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বলে
— ঠিক আছে ম্যাডাম। তাই হবে।
অনু গাড়ি করে বেরিয়ে যায় হাসপাতাল থেকে। আজ অনেক কাজ করতে হবে অনুকে। কয়েকটা মিটিং ও আছে। অনুকে কল করে অনেক আগেই জানানো হয়েছে কি কি করতে হবে তাকে। তবুও অনুর একটু ভয় হচ্ছে। পরিস্থিতি সামলে তাকে সবটা করতে হবে। কেউ যেনো ভূল করেও টের না পায় তার উদ্দেশ্য। এখানে ভূলের কোনো ক্ষমা নেই।
.
ঈশা সারা রাত জেগে ছিলো। দুটি চোখে ঘুম ছিলো না সারা রাত। কি করেই বা ঘুম আসবে?
প্রিয়জনের বিপদে কেউ কি শান্ত থাকতে পারে? ঈশা হালকা ফ্রেশ হয়ে নিয়ে বাসা থেকে দ্রুত বেরিয়ে পরে।
মনটা প্রচন্ড ছটফট করছে। অয়নের কোনো খবর নিতে পারিনি।
ওকে দেখে আসতে হবে। লোকটার এখন কি অবস্থা কে জানে?
ঈশা কিছু মুখে না দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। অয়নের চিন্তায় সে নিজের কথা ভূলে গেছে।
ঈশা নিজেকে সবার থেকে আড়াল করতে বোরখা ও মুখোশ পরে নেয়।
যাতে করে কেউ তাকে চিনতে না পারে। ঈশা রিক্সায় করে হাসপাতালে চলে আসে।
হাসপাতালে আসতেই ঈশা দেখতে পেলো কোথায় অনু বা অয়নের মা, বাবাকে দেখা যাচ্ছে না।
ঈশা একটু অবাক হলো। অয়নকে একা রেখে তারা
কোথায় গেলো? ঈশা আর কিছু না ভেবে এগিয়ে যায় কেবিনের দিকে।
কেবিনের কাছে যেতেই ঈশা দেখতে পেলো আসেপাশে কেউ নেই বললেই চলে।
ঈশা কেবিনের ভিতর চলে আসে। অয়ন শুয়ে আছে। ঈশা অয়নের পাশে গিয়ে বসলো।
নিজে না চাইতেও চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা জল অয়নের হাতের উপর পরলো।
ঈশা চোখ জোড়া মুছতে মুছতে বলল
.
— অয়ন একটু তো চেষ্টা করো সুস্থ হওয়ার প্লিজ। একটা বার উঠে বলো তুমি ভালো আছো। প্লিজ অয়ন। তোমার এই সবের জন্য আমি দায়ী। বিশ্বাস করো অয়ন আমি জানতাম এমন কিছু হতে পারে। কিন্তু আমি ঐটা সিরিয়াসলি নেই নাই। তাই আজ এমন হলো।
ঈশা কি বলবে অয়নকে? কি বলতে অয়ন তার কথার জবাব দিবে? জানা নেই ঈশার। ঈশা অয়নের হাতের উপর নিজের হাত রেখে অয়নকে বলছে
— অয়ন আর আমি তোমার কাছে আসবো না। আমি চাই তুমি ভালো থাকো সুস্থ থাকো। আমার আর কিছু লাগবে না। জানো কাল সবাই আমাকে ভূল বুঝেছে। অনেক অপমান করেছে। সবাই বিনা অপরাধে আমার দিকে আঙ্গুল তুলেছে। আমি নাকি প্রতিশোধ নিতে এমন করেছি। জানো অয়ন অনুও সবার সামনে মিথ্যে বলেছে। আমি নাকি তোমায় বাধ্য করে নিয়ে গেছি। যে যাই বলুক সত্যিটা তো তুমি জানো। আর কিছু বলার নেই আমার ।
* কথাটা শেষ করতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো ঈশা। হঠাৎ ঈশার পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো
— কি সাহস এই মেয়ের? নার্স নার্স, এই মেয়ে এখানে কি তোমার?
ঈশা হতবাক হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভয় পেয়ে যায়। ঈশা পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো অনু রাগি লুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঈশা ঘাবড়ে গিয়ে বলল
.
— আমি কিছু করছি না। আমি আসলে…
ঈশাকে সম্পূর্ণ কথা বলার সুযোগ দিলো না অনু। অনু চেঁচিয়ে বলল
— তুমি আসলে অয়নের ক্ষতি করতে এসেছো। এতো কিছু করেও তোমার শান্তি হচ্ছে না। কি চাও অয়ন মরে যাক? আমিও পাগল হয়ে গেছি তুমি তো এটাই চাও।
অনু অয়নের বাবার দিকে কর্ণপাত করে বলছে
— আংকেল আমি আগেও বলেছি এ মেয়েকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। সুযোগ পেলে আবারও অয়নের ক্ষতি করতে চলে আসবে। আমার কথা তো আপনারা শুনেন না। এখন দেখেছেন তো!
অনুকে শান্ত গলায় বলল অয়নের বাবা
— থামো তুমি আমি এখানে আছি। ঈশা তোমাকে এখানে আসতে আমি বারন করেছি তবুও কেনো এলে?
ঈশা নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে। কেনো জানি আজ ঈশার নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। ঈশাকে নিশ্চুপ দেখে অনু বলতে লাগলো
— কি হলো চুপ কেনো? দেখেছেন আংকেল এই মেয়ের নিরবতা বলে দিচ্ছে ও অপরাধী।
ঈশা আর চুপ থাকতে পারলো না। চেঁচিয়ে বলল
— হ্যাঁ, আমাকে বারন করা হয়েছে এখানে না আসার জন্য। কিন্তু আমি না এসে থাকতে পারিনি। অয়নের কথা আমার মনে পরছে। তাই আমি ওকে দেখার জন্য, ওর খোঁজ নেয়ার জন্য এসেছি। আর অনু তোমাকে একটা কথা বলে রাখি নিজের লিমিট ক্রস করো না। ভূলে যেওনা তুমি একজন আশ্রিতা। দয়া করে থাকতে দেয়া হয়েছে এখানে। তোমার কোনো রাইট নেই অয়ন আর আমার মধ্যে কথা বলার। মাইন্ড ইট
ঈশার কথা শুনে অনু অবাক হলো ভিশন। আসলে আর কত সহ্য করা যায়? দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যে কেউ সামনে অগ্রসর হবে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। অনুর ইগোতে লাগলো ঈশার কথাটা অনু কিছু বলতে যাবে এমন সময়……
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com