তারে ভালোবাসি বলে । পর্ব-১৯
— কথা ছিলো কেউ কখনও কাউকে ছেড়ে যাবো না। সেটা কি ভূলে গেলে?
অয়নের কথাটা শুনে ঈশা অবাক হয়ে যায়। অয়নের কথায় ঈশার দেহে প্রান ফিরে এলো। ঈশা অবাক চোখে অয়নের দিকে তাকালো। ঈশার চোখ জোড়া বলে দিচ্ছে যে সে এখন প্রচন্ড বিভ্রান্তের মধ্যে আছে। অয়ন একটু শান্ত গলায় বলল
— গাড়িতে আসো।
ঈশা এখনও অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অয়ন এবার একটু ধমকের সুরে বলে উঠলো
— এখানে আসতে বলেছি না আমি?
ঈশা বাধ্য মেয়ের মতো অয়নের কথা মতো গাড়িতে উঠে বসলো। অয়ন ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আমার মধ্যে কি নাই যে জন্য দিব্বকে দরকার পরে তোমার?
ঈশা আবারও অবাক হলো। ঈশা মাথাটা নিচু করে বলল
— বিশ্বাস করো অয়ন আমি এসবের কিছু জানি না। তুমি ছাড়া অন্য কাউকে আমি কখনও কল্পনা করতে পারি না। একটু তো ভরসা রাখো আমার উপর।
.
অয়ন এবার মুখ চেপে রাখতে পারলো না। অয়ন হেসে ফেললো। অয়নের হাসি দেখে ঈশা বুঝতে পারছে না অয়ন পাগলের মতো হাসছে কেনো? কি হয়েছে অয়নের? ঈশার অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— এভাবে হাসছো কেনো? আমি কি কোধ জোকস বলেছি?
অয়ন হাসি বন্ধ করে বলল
— উহু জোকস না। আমি তোমায় ভরসা করি। তবে একজনের নাটক দেখছিলাম আর কি।
— মানে? কার নাটক দেখছিলে তুমি?
— সেটা তোমায় কেনো বলবো?
— কেনো কেনো? আমি তোমার সব কথা জানতে পারি না! আমার কি সেই অধিকার নাই?
— আছে কিন্তু এখন বলা যাবে না। সময় আসুক সবটা বলবো তোমায়।
ঈশা এবার অভিমান নিয়ে বলল
— তবে কেবিনে আমায় অবিশ্বাস করে ছিলে সেটা কি নাটক ছিলো?
— হুম
অয়নের হ্যাঁ শুনে ঈশার প্রচন্ড রাগ উঠে যায়। ঈশা অয়নের বুকে কিল ঘুষি মারতে মারতে বলল
— কিহহহ? আমাকে কষ্ট দিতে, আমাকে কাঁদাতে খুব ভালো লাগে তোমার!
অয়ন হাস্যজ্বল চেহারায় ঈশাকে থামিয়ে বলল
— আচ্ছা আচ্ছা সরি ভূল হয়ে গেছে আমার।
— হবে না। এতো বড় অপরাধ আর সামান্য সরি। উহু আমার অন্য কিছু চাই।
— ওমা অন্য কিছু! আচ্ছা অন্য কি চাই?
— জানি না তবে চাই।
* ঈশার কথা শেষ করতেই অয়ন গাড়িটা সাইডে ব্রেক করলো। ঈশা সিট ব্যল্টটা খুলে নিলো। অয়ন ঈশার চোখ বরাবর দৃষ্টিপাত করে বলছে
— কি লাগবে তোমার?
ঈশা অয়নের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলল
— জানি না।
অয়ন ঈশার ঠোঁট বরাবর দৃষ্টিপাত করলো। থেমে থেমে মৃদু কেঁপে উঠছে ঈশার ঠোঁট। অয়ন নিঃশব্দে ঈশার ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নিলো। পরম অনুভূতির আবেশে একে অপরকে ভালোবাসা দিচ্ছে। কিছু মূহূর্ত কিস করার পর অয়ন আলতো করে ঈশার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিলো। ঈশা চোখ বন্ধ করে আছে। অয়ন ঈশার কপালে একটা লম্বা চুমু দিলো। ঈশা অয়নের ঠোঁটের পরম স্পর্শে কেঁপে উঠল আবারও। অয়ন ঈশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
.
— হয়েছে বাকিটা রাতে বাসায় গিয়ে বুঝাবো কেমন।
ঈশা অয়নের দিকে লজ্জা মাখা চোখে তাকিয়ে অয়নের কাঁধের উপর মাথা রাখলো। অয়ন গাড়িটা পুনরায় স্টার্ট করলো। অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করেছে আর ভাবছে।
— অনুর কথা যদি একমিনিটের জন্য সত্যি ভাবি আমি। তবেও প্রশ্ন থেকে যায় দিব্ব ঈশাকে কল করলো কি করে? অনুর হাত কাটা আর হাসপালে আসা পর্যন্ত সারাক্ষন ঈশা আমার সাথে ছিলো। এক সেকেন্ডের জন্য ও ঈশা কোথাও যায়নি আমাকে ছেড়ে। তা হলে কল করলো কি করে? আর দিব্বকে আসতেই বা বলল কি করে? আর ঈশা দিব্বকে পছন্দ করে না। এটা আমি খুব ভালো করেই জানি। তাছাড়া ঈশা যদি দিব্বকে ভালোবাসতো তবে আমার অনুপস্থিতিতে দিব্বর সাথে ঈশা থাকতে পারতো। আমার জন্য পাগল হয়ে যেতো না। তবে কি অনুর কথা গুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিলো? দিব্বর সাথে অনুর আগে থেকেই চেনা জানা আছে? কেনো জানি অনুর সাথে দিব্বর কোনো পরিচয় আছে সেটা মনে হচ্ছে।
* অয়নকে গভীর ভাবনায় মগ্ন থাকতে দেখে ঈশা প্রশ্ন করে বসলো অয়নকে
— অয়ন ভাবছো কি?
অয়ন একটু কেঁপে উঠল ঈশার কথায়। অয়ন ঈশা কে বলল
— উহু কিছু না তো। কি ভাববো আমি?
— হুম। জানো আমার মনে হচ্ছে এই দিব্ব আমাদের সাথে কোনো গেইম খেলছে। ও আমাদের মাঝে দূরত্ব তৈরি করতে চায়।
.
— শুধু কি তাই? দিব্ব একা না। আরো অনেকে চায় আমাদের দূরত্ব। তবে আফসোস সেটা না আমি হতে দিবো আর না তোমায় দূরে যেতে দিবো। আমি কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারছি কি হতে চলেছে।
— অয়ন কি হতে যাচ্ছে? আমায় ও বলো প্লিজ।
অয়ন একটু বিরক্ত নিয়ে ঈশা কে বলল
— ঈশা, সব কিছুতেই তোমার তারা। একটু ধৈর্য ধরো আমি তোমার থেকে কখনও কিছু লুকাইনি। আর কখনও লুকাবোও না।
— হুম। কিন্তু আমার যে তোমায় নিয়ে ভয় হয়।
— ভয় পেয়ো না। আমার কিছু হবে না। তুমি আছো তো আমার পাশে।
— হুম সব সময়।
অয়ন ঈশা কে নিয়ে বাসায় আসে। ভোর প্রায় হয়ে এসেছে। ঈশা অয়ন রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে দুজনের। অয়ন বিছানার উপর বসে ঈশার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছু সময়। ঈশা চুল গুলো ঠিক করে বাঁধছে। অয়নের কাছে বরাবরই তার স্ত্রী পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নারী। তাই নিজেকে এই সুন্দরীর থেকে দূরে রাখা বা নিজেকে কন্ট্রোল করা দায়। অয়ন ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— ভোর তো হয়ে এসেছে। এখন কি না ঘুমালে নয়?
ঈশা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল বাঁধছে। অয়নের কথার বিপরীতে চিরনি টা রেখে ঈশা অয়নের দিকে তাকিয়ে বলল
— তো না ঘুমিয়ে কি করবে?
— কি আর করবো? কিছু না ঐ এমনিই বললাম আর কি।
— ওহহহ।
.
অয়ন মুখটা ভারি করে বসে আছে। ঈশা অয়নের দিকে এগিয়ে আসতেই বুঝতে পেলো অয়ন অভিমান করেছে। ঈশা অয়নের দু গাল ধরে আলতো করে টেনে বলল
— না ঘুমালে কাল কাজ করবো কি করে হুম? কিত্তু বুঝে না!
অয়ন অভিমান করা ছেড়ে দিয়ে মৃদু হেসে ঈশাকে এক টানে কোলে বসিয়ে নিলো। ঈশা অয়নের চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আসলে পড়ার চেষ্টা করছে অয়নের চোখের ভাষা। ঈশা অয়নের চোখের ভাষা বুঝতে পারে। অয়নের চোখে স্পষ্ট। আজ ঈশাকে কাছে পেতে চায়। অয়ন ঈশার কপালে চুমু দিয়ে বলল
— জোর না করলে কি কাছে আসা যায় না? খুব কি ক্ষতি হয়ে যায় নিজের ইচ্ছেতে কাছে আসলে?
ঈশা না সূচক মাথা নাড়ল। অয়ন ঈশাকে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে ধরে রাখলো কিছু সময়। ঈশাও পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে আছে। এটাই তো ভালোবাসা। উহু পবিত্র সম্পর্ক এটা। অয়ন ঈশাকে বলল
— হয়েছে। এখন ঘুমাতে সমস্যা নাই। তবে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে হবে।
— ইশশশশরে আমার বালিশ আছে তো।
— তো? বালিশ আছে বলে কি হয়েছে?
— আচ্ছা আচ্ছা তাই হবে।
আসলে অয়নের বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকাটা ঈশার ইচ্ছে। তবে এখন এই কথাটা এড়িয়ে যেতে চাওয়ার মানে হলো বুঝতে দিতে চায় না ঈশা। ঈশা অয়নের বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পরে। অয়ন ও ঈশাকে জরিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
* অনু কেবিনে বসে আছে। আজ ডিস্টার্জ হয়ে যাবে সে। ফোনটা হাতে নিয়ে দিব্বকে কল করলো অনু। দুবার কলটা বাজতেই রিসিভ হলো। অনু দিব্বকে উদ্দেশ্য করে বলল
— হ্যালো, দিব্ব কেমন আছো?
— হ্যাঁ, ভালো। শরীরটা ব্যথা করছে এই আর কি। তুমি ঠিক আছো?
— হ্যাঁ।
.
অনু দিব্বর সাথে কিছু সময় কথা বলল। অনু দিব্বকে জানিয়ে দিলো আজকের সব কথা। অনু খুব খুশি এই ভেবে যে অয়ন আর ঈশার মাঝে আবার দূরত্ব তৈরি করতে সে সফল হয়েছে। অনুর কথা গুলো শুনে দিব্ব ও বেশ খুশি হলো। অতঃপর আরো কিছু সময় কথা বলার পর কলটা কেটে দিলো অনু। অনু আপন মনে বলছে
— অয়নকে আর কোনো সুযোগ দেয়া যাবে না। আজ অয়নকে নিজের করে নিতে হবে। যদি আজ আমি নিরব থাকি তবে এই ঈশা আবার অয়নের হয়ে যাবে। তবে আমি থাকতে তা সম্ভব হবে না। অয়নকে নিজের করার আগে ওর প্রপার্টি নিজের করে নিতে হবে। একটা বার যদি আমি সফল হতে পারি। তা হলে অয়ন সারা জীবনের মতো আমার হবে আর ঈশার আসার কোনো সুযোগ থাকবে না।
কথাটা বলতেই অনু রহস্যময়ী হাসি দিলো। এই হাসি সাধারণ হাসি নয়। অনুর ভয়ংকর কিছু পরিকল্পনা করেছে অয়নকে নিজের করতে।
* সকাল হতেই ঈশার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অয়ন এখনও ঘুমিয়ে আছে। ঈশা অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে কিছু সময়। ছেলেদের এতো সুন্দর হতে নেই। আনমনে কথা বলল ঈশা। ঈশা অয়নের মুখের উপর উড়ে আশা চুল গুলো ঠিক করে দিলো। ঈশার স্পর্শে শিহরিত অয়ন। ঈশা অয়নের কপালে চুমু দিলো। অয়ন নড়ছে না। ঈশা মৃদু হেসে বিছানা থেকে উঠে চলে যায় ফ্রেশ হতে। অয়ন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।
ঈশা ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানাচ্ছে এমন সময় হঠাৎ করে….
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com