ভালোবাসা বারণ । পর্ব -০১
অফিসের বসের সামনে দাঁড়িয়ে বসের দেয়া চিরকুটটা খুলে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে ঈশা।
মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো মনে হচ্ছে। চিরকুট পড়তেই চোখ জোড়া ছলছল হয়ে যায় তার।
বিপরীত পাশে বসে থাকা মানুষটির দিকে তাকাতে ঘৃণা হচ্ছে ভিশন।
ঈশা এতোটা সম্মান যাকে করে এসেছে দিনের পর দিন।
আজ সেই মানুষটি নগ্ন মনে হচ্ছে। ঈশা বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে চিরকুটের দিকে।
ঈশাকে নিশ্চুপ দেখে তার বস অয়ন চৌধুরী বাঁকা হেঁসে বলল
— কি হলো? চুপ করে আছো কেনো? কিছু বলছো না যে?
ঈশা কি বলা উচিত বা কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। অতঃপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
— স্যার, আপনাকে আমি বরাবর সম্মান করে এসেছি।
আপনি আর যাই হোন একজন ভালো মানুষ।
তবে আজকের পর থেকে আপনাকে সম্মানের চোখে দেখা আমার পক্ষে সম্ভব না।
ঈশার কথা শুনে অয়ন খিল খিল করে হেসে উঠলো।
অয়নের হাসির শব্দ ঈশার মনের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করলো। এই হাসি সাধারণ নয়।
এই হাসির অর্থ রাক্ষুসে। এই হাসিটা ঈশার কাছে জঘন্য।
অয়ন তার লালসার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ঈশার দিকে। ঈশা অয়নের দিকে তাকিয়ে পারছে না।
মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
.
— আমাকে সম্মান করতে কে বলেছে? আমি বলেছি?
হাউ ফানি! শোনো ঈশা আমি যা বলেছি তাতে শুধু রাজি হয়ে যাও।
তারপর আমি দেখে নিবো সম্মান না অসম্মান।
ঈশা রাগে, ঘৃণায় হাতে রাখা চিরকুটা অয়নের মুখের উপর ছুড়ে মারলো।
ছলছল চোখ জোড়া দিয়ে গিলে ফেলছে অয়নকে।
রাগে গজগজ করতে করতে ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— এতোটা ভালো মানুষের চেহারাটা পিছনে আপনি এতোটা নিকৃষ্ট আগে জানা ছিলো না।
ছিঃ ভাবলেন কি করে আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাবো? এতোটা সস্তা ঈশা না।
মাথায় রাখবেন মিষ্টার অয়ন চৌধুরী টাকা দিয়ে সব কেনা গেলেও ঈশাকে যায় না।
আর একটা কথা আজকের পর হয়তো আমার আর এই জবটা থাকবে না।
আমার এই মুহূর্তে কাজের প্রয়োজন ঠিক। তবে নিজের চরিত্র বিক্রি করে নয়।
রেজিক্নেসন লেটারটা খুব শীঘ্রই পেয়ে যাবেন।
কথাটা শেষ করতেই এই মুহূর্তে দেরি করলো না ঈশা।
হনহন করে বেরিয়ে যায় অয়নের কেবিন থেকে।
অয়ন ঈশার এমন ব্যবহার দেখে অবাক হলো না।
বরং টেবিলের উপর হেল দিয়ে বসে ঈশার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে সে।
মৃদু হাসছে অয়ন। এই হাসির রহস্য বোধগম্য নয়।
.
* ঈশা বাড়ি ফিরে নিজের রুমে বসে কাঁন্না করছে। ঈশার কান্নার কারন চাকরি চলে যাওয়া নয়।
তার কান্নার কারন এই শহরের মানুষ গুলো এতোটা নিচে কি করে নামতে পারে?
অয়নকে শুধু মাত্র নিজের অফিসের বস না।
অয়নের ব্যক্তিত্বের প্রতি দুর্বল ছিলো ঈশা।
যাকে মনের মধ্যে কল্পনা করে দিবা রজনী কাটাতে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছিলো সে।
আজ সেই মানুষটি তাকে এমন কুৎসিত প্রস্তাব দিয়েছে
যে এক ধাক্কায় তার প্রতি সকল ভালো লাগা ঘৃণায় পতিত হলো।
ঈশা আনমনে চিরকুটটির কথা ভাবতে লাগলো।
ঐ চিরকুটের মধ্যে লিখা ছিলো অয়নের পার্সোনাল কটেজের এড্রেস। অয়নের ঘৃণ্য চাওয়া ঈশা বুঝতে পেরে যায়। কথাটা ভাবতেই ঈশার বুকটা কেঁপে উঠলো। আসলে এটা মানুষের দোষ না।
এটা এই সমাজের রোগ। একজন নারীকে বিচার করা হয় তার রূপ ও তার আকর্ষন দেখে।
এই সমাজ নারীকে কখনও তার যোগ্যতা দিয়ে বিচার করে না।
যোগ্যতার থেকে মোহে আকৃষ্ট এই সমাজ।
* ঈশাকে নিজের রুমে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে ফেললো তার মা রাহেলা বেগম।
রাহেলা বেগম ঈশার রুমে কৌতুহল নিয়ে প্রবেশ করলো।
মেয়ের মন খারাপের দেখে উনি যতটা না বিচলিত হয়েছেন।
তার থেকেও কয়েক গুণ বেশি বিচলিত এই সময়ে তার মেয়ের বাসায় উপস্থিতি দেখে।
রাহেলা বেগম ভারি কন্ঠে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
.
— এই সময় তুই বাসায় কেনো?
ঈশা রাহেলা বেগমের দিকে একবার তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। কি বলবে ঈশা তার মা কে? এই যে অফিসের বস তাকে বাজে মন্তব্য করেছে? নাকি বলে দিবে বস তাকে নোংরামি করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে? ঈশাকে নিশ্চুপ দেখে রাহেলা বেগম গম্ভীর কন্ঠে বলল
— চাকরি গেছে নাকি?
ঈশা মাথাটা নিচু করে বলল
— হুম।
ঈশার কথাটাতে রাহেলা বেগম সন্তুষ্ট হতে পারলো না। রাহেলা বেগম হুংকার দিয়ে বলল
— এই ভাবে হুট করে চাকরি কেনো ছেড়ে দিলি তুই? জানিস না তোর বাবা অসুস্থ! আমাদের কথা না ভাবতে পারিস কিন্তু তোর জন্ম দাতা বাবার কথা তো চিন্তা করতে পারতিস? এতো বড় কম্পানিতে চাকরি পেয়েছিস। মাস শেষে ভালো মাইনে। আমাদের তো আর কোনো চিন্তাই ছিলো না। ভেবেছি এই বার হয়তো অভাব ঘুচবে। কিন্তু এটা তুই কি করলি? কেনো ছেড়েছিস চাকরিটা? বল আমায়।
রাহেলা বেগমের কথা গুলো বরাবর ঈশার বুকে এসে আঘাত করে। এটা নতুন কিছু না। আসলে নিজের মা আর অন্যের মা এর মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এটাই তার প্রমান।ঈশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
— সমস্যা নেই মা। আমি নতুন চাকরি খুঁজে নিবো। এই চাকরিটা করা আমার পক্ষে আর সম্ভব না।
ঈশার কথা শুনে রাহেলা বেগম মুখ ভেংচি কেটে বলল
— ঢং দেখে আর বাঁচি না। এতো ভালো চাকরি পাবি তুই? সেই যোগ্যতা আছে তোর? কেনো ছেড়ে দিলি চাকরি? বল আমায়
.
রাহেলা বেগমের রাগের কাছে ঈশা পরাস্ত ঈশা। ভেঙ্গে যাওয়া হৃদয় নিয়ে কান্না ভেজা কন্ঠে নিজের বুকের ব্যাথা প্রকাশ করলো সে।
— মা ঐ অয়ন চৌধুরী আমাকে ওর কটেজে একা যেতে বলেছে। আমি যদি ওকে নিজের দেহ দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারি তবে আমার চাকরি থাকবে আর প্রমোশন দেয়া হবে। ওর সেই জঘন্য কথাটা আমার চোখে এখনও ভাসছে। চাকরির জন্য নিজের আত্ন সম্মান বিসর্জন আমি দিতে পারবো না। তাই ওর লেখা কাগজ ওর মুখের উপর ছুড়ে ফেলে চলে এসেছি।
ঈশা কথাটা বলার সময় নিজেকে সামলাতে পারলো না। কি করেই বা পারবে বলুন? একজন নারীর কাছে এই কথাটা সহজ নয়। ঈশার বিপরীতে অন্য কেউ থাকলেও হয়তো ঠিক এক কাজ করতো। ঈশার কথা ও চোখের জল রাহেলা বেগমের মনকে শান্ত করতে পারলো না। রাহেলা বেগম কর্কশ গলায় বলে উঠলো
— অফিসে কি যাস ঢং করতে? বসের দোষ কি? তোরাই তো নিজেদের শরীর দেখিয়ে ওদেরকে নিজের প্রতি দুর্বল করে দিস। তোর জন্যই বস তোকে এই প্রস্তাব দিয়েছে।
রাহেলা বেগমের কথা শুনে ঈশার হতবাক হয়ে যায়। বাকরুদ্ধ ঈশা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার বাবার ২য় স্ত্রী। তার সৎমা এর দিকে। আচ্ছা আমি না হয় তার নিজের মেয়ে নই। তবে তাকে তো মা বলে ডাকি। সম্পর্কের কথা বাদই দিলাম। উনিও তো একজন মেয়ে। একজন নারীর কষ্ট কি ওনার বোঝার বাহিরে? মনে মনে বলল ঈশা। কারন এখানে প্রতিবাদের সাজা বড্ড ভয়ংকর। রাহেলা বেগম ঈশার রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল
— এক সপ্তাহের মধ্যে চাকরি না ঠিক করতে পারলে অন্তত পক্ষে এই মুখটা জেনো আর না দেখা যায়।
রাহেলা বেগম রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়। ঈশা বিছানা থেকে উঠে তার মা এর ছবিটা বের করে হাতে নেয়। হুম নিজের আসল মা এর ছবি। যদিও কথাটা ভূল কারন পৃথিবীর সকল মা আর নিজের মা এর মধ্যে তফাত খোঁজা যায় না। কারন শব্দ তো একটাই মা। ঈশা আপন মনে তার মা এর সাথে কথা বলছে।
— আজ তুমি থাকলে আমার কষ্টটা বুঝতে তুমি। কেনো আমাকে ছেড়ে চলে গেলে? সাথে করে আমায় ও নিয়ে যেতে। খুব কি পাপ হতো তোমার সাথে পৃথিবী ত্যাগ করলে? হতো ন মা শান্তিতে থাকতে পারতাম আমি।
কথাটা বলতেই চোখ জোড়া বেয়ে অশ্রু পরতে থাকলো ঈশার। আপন মনের নিজের মা এর কথা ভাবতে লাগলো সে।
* অয়ন নিজের চেয়ারে বসে ঈশার কথা ভাবছে। ইশশশ মেয়েটা এতো সুন্দরী কেনো?
ওর সৌন্দর্যে মুগ্ধতা আমার মনের মধ্যে সৃষ্টি করেছে ব্যাকূলতা।
এতো সুন্দরী তুমি যে শুধু আমি না যে কোনো পুরুষেরই নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে।
ঈশার ছবিটা অয়নের ল্যাপটপের স্ক্রিনে শোভা পাচ্ছে।
হঠাৎ করে অয়নের চেম্বারে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে কেউ একজন।
অয়ন ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে তাকাতেই দেখতে পেলো……
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com