ভালোবাসা বারণ । পর্ব -০৩
— শরীর দেখিয়ে পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা কোন ধরনের আর্ট?
প্রশ্নটা শুনে ঈশা ভিশন অপ্রস্তুত হয়ে যায়। এটা কি ধরনের প্রশ্ন? ফারজানা ও ইফতি নিরব হয়ে আছে। অয়ন ঈশাকে অবাক দেখে কর্কশ গলায় বলল
— উত্তরটা কি জানা নাই? ওকে ফাইন নেক্সট প্রশ্ন, আপনার ফিগারটা এতো হট কেনো? কিভাবে পারেন ফিট থাকতে?
.
অয়নের প্রশ্ন শুনে বুঝতে বাকি রইলো না যে এখানে ঈশাকে ইন্টারভিউ দিতে নয়।
অপমান করতে ডাকা হয়েছে। ঈশা অয়নের কোনো কথারই প্রতিউত্তর করছেনা।
অয়নের নিচু মানসিকতার কথায় চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে তার।
ভাবছে ঈশা একটা মানুষের চেহারা, ব্যাক্তিত্ব যতটাই সুন্দর হোক না কেনো!
মনের দিক থেকে কতটা নিকৃষ্ট মানুষ হতে পারে। ঈশা বার বার হাত দিয়ে চোখের জল মুছে ফেলছে।
শরীরের বিন্দুমাত্র শক্তি নেই তার। নিজেকে এক অসহায় দূর্বল নারী মনে হচ্ছে নিজের কাছে নিজেকে।
ইচ্ছে করছে অয়নের দুই গালে কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিতে।
বুঝিয়ে দিতে নারীকে কি করে সম্মান করতে হয়। তবে তার করার জন্য একটু শক্তি প্রয়োজন।
যা আমার নেই। ঈশাকে নিশ্চুপ দেখে অয়ন হাহা করে হেসে বলল
— এতোটুকু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন না। আর চাকরি করতে এসেছেন। হাউ ফানি!
ঈশা আর নিশ্চুপ থাকতে পারলো না।
চাকরি হবে না এখানে তা নিশ্চিত তবে অয়নের করা অপমানের জবাব টা দিতেই হবে আমায়।
ঈশা আচমকাই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। সাইড ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে অয়নের দিকে দৃষ্টিপাত করলো।
অয়ন একটু বিষ্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে।
বুঝতে পারছে না পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিবে।
ঈশা অয়নের দিকে বাঁকা হাসি দিয়ে বলল
.
— অফিসে চাকরি করতে হলে বুঝি এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়? আগে জানা ছিলো না স্যার।
আসলে প্রথম শুনেছি তো তাই অবাক হয়েছি। আর জানেন সব থেকে বেশি
অবাক হয়েছে এই দেখে যে আপনি কোনো নারীর সন্তান, কোনো বোনের ভাই, কোনো স্ত্রীর স্বামী।
একটা কথা বলি স্যার যদি কোনো নারীর কাজের যোগ্যতা তার শরীরের গঠন,
মোহ দিয়ে প্রমান করতে হয়। ইন্টারভিউ বোর্ডে শারীরিক চাওয়া পূরণ করতে বলা হয়। ফিগার…..
বলতেও লজ্জা লাগছে আমার।
এই সব দিয়ে যদি চাকরি করতে হয় তবে আমি সেই চাকরি কখনও করবো না।
তবে হুম এই সব চাকরি আমার দ্বারা হবে না সত্যি তবে এই চাকরির জন্য আপনার বাড়ির
মেয়েদের কে পাঠিয়ে দিন।
সত্যি বলছি আমার যোগ্যতা না থাকলেও তাদের যোগ্যতা নিশ্চই থাকবে।
ঈশার কথাটা শেষ করতেই অয়ন নিজের চেয়ারে একটু হেলে বসে।
ঈশা চোখের জল মুছে বেরিয়ে যেতে লাগলো কেবিন থেকে।
ঈশা চলে যেতে নিলেই অয়ন পিছন থেকে ঈশাকে থামিয়ে দিয়ে বলল
— এই ওয়েট মিস ঈশা। নিজের কথা বলা শেষ হতেই চলে যেতে লাগলেন!
আমাদের ও তো কিছু কথা থাকতেই পারে তাই না?
অয়নের কথা শুনে থমকে দাঁড়ায় ঈশা। পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পায় অয়ন দাঁড়িয়ে আছে।
অয়নের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি। ঈশা দাঁড়িয়ে পরতেই অয়ন তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— অপমান করলেন আমায়? এই অয়ন চৌধুরীকে অপমান!
আচ্ছা আচ্ছা আমি না হয় খারাপ মানুষ। লজ্জা লাগে আমার সাথে কথা বলতে।
আপনি ও আপনারা বুঝি খুব ভালো?
আপনাদের চরিত্র মহান। তাই তো অন্যের সাথে রং তামাশা করে…!
আর বললাম না। শুনুন মিস ঈশা আমি যা যা করি সবার সামনে করি।
আপনার মতো লুকিয়ে কিছু করাটা আমার অভ্যেস নয়।
.
অয়নের কথা শেষ হতেই ইফতি বলে উঠলো
— এই সব কি হচ্ছে? অয়ন তুই এগুলো কি বলছিস? এই মেয়েকে তুই জানিস?
অয়ন ইফতির দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল
— হ্যাঁ, ওকে আমি চিনি আর ও আমার অফিসে কাজ করে।
— তা হলে ও এখানে কেনো ইন্টারভিউ দিতে এসেছে?
— চরিত্র খারাপ তাই বের করে দিয়েছি অফিস থেকে। নর্দমার কীট নর্দমায় শ্রেয়।
অয়নের শেষের কথাটা ঈশা বুকে এসে আঘাত করলো। একটা মানুষকে আর কত আঘাত করা যায়? একটা মানুষ কতটা আঘাত সহ্য করলে আঘাত দেয়া মানুষটি তাকে আঘাত করা বন্ধ করবে? দেহের আঘাত চলে যায়। তবে মনের আঘাত কখনও চলে যায় না। বরং তিলে তিলে নিজেকে কাঁদায়। ঈশা অয়নের অভিযোগ মাথা পেতে নিলো। তর্ক সব সময় করা যায় না। যখন আর কোনো কথা বলার না থাকে তখন মানুষ তর্ক করা ছেড়ে দেয়। নিরবতা পছন্দ করতে শুরু করে। একদম নিরবতা। ঈশা জানে এই অফিসে চাকরি করা যাবে না। তাই আর বিরক্ত করে লাভ কি? ওড়না দিয়ে চোখ মুছতেই কেবিন থেকে বেরিয়ে যায় সে। পার্সে ভাড়ার টাকা নেই। তাই বাড়ি উবদি হেটেই যেতে হবে তাকে। ঈশা পথে হাঁটছে আর অয়নের করা প্রতিটা আঘাতের কথা ভাবছে। না চাইতেও বার বার অয়নের বলা কথা গুলো তার কানে বাজচ্ছে।
.
— অয়ন এই সব কি ছিলো? এই মেয়েকে এই সব বললি কেনো? ওকে দেখে যথেষ্ট ভদ্র ঘরের মেয়ে মনে হচ্ছিলো। আর তুই কিনা সেই মেয়েকে বাজে কথা শুনিয়ে দিলি?
— ইফতি থাক তো আমি বলছি। এই অয়ন এই মেয়েটা কে? কেনো এতো জঘন্য কথা গুলো বললি? আর ওকে কেনো অফিস থেকে বের করে দিয়েছিস?
দুজনের প্রশ্নের জবাবে অয়ন একটু বিরক্তির সুরে বলল
— সব কথা তোদের জানতে হবে না। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু জানলেই চলবে। এই মেয়েকে বাজে প্রস্তাব দিয়েছিলাম সেই জন্য ও চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। আচ্ছা আমি এখন আসছি কাজ আছে আমার।
* অয়ন দৌড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। ইফতি আর ফারজানা একে অপরের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আসলে কিছুই বুঝতে পারলো না তারা। কি থেকে কি হয়ে গেলো সবটাই রয়ে গেলো অগোচরে। অয়ন দ্রুত ইফতির অফিসে থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন গাড়িতে বসেই দ্রুত বেরিয়ে যায় অফিস থেকে।
* ঈশা মুখটা মলিন করে বাসায় ফিরলো। সকাল থেকে কিছু পেটে পরেনি তার। কি করেই বা পরবে? সকাল সকাল তো অফিসে ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য বেরিয়ে যায়। এখন ফিরলো। ঈশা বাসায় ফিরতে না ফিরতেই ঈশার মা ঈশাকে জ্বিগাসা করলো
— চাকরি হয়েছে?
.
ঈশা একটু থেমে ভিশন ইতোস্ততার সাথে জবাবা দিলো
— না হয়নি।
ঈশার উত্তরটা তার কাছে মোটেও আনন্দ দায়ক হলো না। রেহেলা বেগম একটু গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন
— জানতাম হবে না। যা ঘরের সব কাজ কর গিয়ে।
— মা আমার ক্ষিদে পেয়েছে। কিছু খেতে দাও। তারপর কাজ করে দিচ্ছি আমি।
— গিলতে হবে না অত। বেশি বেশি গিলে লাভ হবে কি? সেই তো এক গতিতে কাজ করিস। আর গিলতে হলে টাকা চাই। যা তোর নাই। তাই তোর কপালে খাবারও নাই।
— আজ আমার মা নাই বলে এমন করছো তুমি! আচ্ছা তুমিও তো মা। আমি যদি তোমার পেটের সন্তান হতাম তবে কি এমন করতে পারতে আমার সাথে?
ঈশার কথা শুনে রেহেলা বেগম চুপ করে যায়। ঈশা নিজের রুমে বসে কাঁদতে লাগলো। জীবনটা এমন কেনো? ভালো কোনো কিছুই আমার জন্য নয়। পৃথিবীতে আসতেই মা কে বিদায় নিতে হলো। জীবনের প্রত্যেকটা জায়গায় আমি যাদের কে পাশে পেয়েছি তারাই দিন শেষে একা করে গেছে আমায়।
* বিছানায় বসে কথা গুলো ভাবছে ঈশা। আজ মনে পরছে তার সেই পুরনো দিনের কথা। হঠাৎ করে ঈশা অনুভব করতে পারলো তার কাঁধের উপর কারো হাত। ঈশা মুখ ঘুরিয়ে নিতেই দেখতে পেলো তার…
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com