Breaking News

তারে ভালোবাসি বলে । পর্ব-১৮



অয়ন দেখতে পেলো অনুর কেবিনে অনুর সাথে দিব্ব।
দিব্বর উপস্থিতি অয়নের মনের মধ্যে অনেক গুলো প্রশ্ন সৃষ্টি করলো।
অয়ন কেবিনের ভিতর দ্রুত প্রবেশ করলো। অয়নের উপস্থিতে অনু আর দিব্ব ভিশন চমকে যায়।
দিব্ব অয়নকে দেখে চোখ বড় করে ফেলে। অয়ন অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে দিব্বকে উদ্দেশ্য করে বলল
— তুই এখানে কেনো? অনুর কেবিনে তুই কেনো এসেছিস?
দিব্ব ভয়ে কাঁপছে। অয়নের অগ্নি দৃষ্টি দেখে দিব্ব আঁচ করে ফেলেছে খুব খারাপ কিছু তার জন্য অপেক্ষা করছে। দিব্ব অয়নকে উদ্দেশ্য করে আমতো আমতো করে বলতে লাগলো
— অয়ন ভাইয়া আমি ভূল করে….
অয়ন দিব্বকে কোনো কথা বলার সুযোগ দিলো না। অয়ন দিব্বর শার্টের
কলার চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল
— তোর মতো নির্লজ্জ লোক আমি দুটো দেখিনি। তোকে সাবধান করে দিয়েছিলাম
যে তোর এই নির্লজ্জ বেহায়া চেহারাটা আমায় দেখাবি না। আমি চাই না আমার আশে পাশে তোর ছায়া পরুক।
তুই শুনিসনাই। কত সাহস তোর আজ দেখবো আমি।
অয়ন দিব্বকে মারতে লাগলো। থাপ্পড়ের পর থাপ্পড় দিয়ে যাচ্ছে অয়ন। দিব্ব কিছু বুঝতে পারছে না।
মার খাওয়া ছাড়া তার কোনো উপায় নেই। কারন বিপরিত আঘাত করতে একটা সুযোগ প্রয়োজন।
অয়ন দিব্বকে সেই সুযোগ দিচ্ছে না। ঈশা অনেকটা সময় চুপচাপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
আসলে অয়নের রাগ সম্পর্কে ঈশার ধারনা অনেক আগে থেকেই আছে।
রাগ শান্ত না হলে ও থামবে না‌। দিব্বর অবস্থা ভিশন খারাপ। ঈশা এসে অয়নের হাত ধরে চিৎকার করে বলতে লাগলো
.
— অয়ন প্লিজ ছেড়ে দাও ওকে। একটা অমানুষকে মেরে হাত নষ্ট করো না তুমি। প্লিজ
অয়ন অগ্নি দৃষ্টিতে ঈশার দিকে তাকিয়ে কাঁপা গলায় বলল
— ঈশা তুমি জানো না ও একটা নর্দমার কীট। ওকে তো আজ আমি মেরেই ফেলবো।
ঈশা করুন কন্ঠ স্বর নিয়ে বলল
— অয়ন আমি চাই না এসব। আমি চাই না আর কোনো ঝামেলার মাঝে তুমি জড়িয়ে পরো। একটু শান্তিতে থাকতে চাই আমরা। প্লিজ অয়ন ছেড়ে দাও ওকে। আমার জন্য ছেড়ে দাও প্লিজ।
অয়ন দিব্বর কলার ছেড়ে দিলো। দিব্ব মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যায়। অয়ন ঈশার দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো আর রাগি কন্ঠে বলে উঠল
— ড্যাম ইট। শোন দিব্ব বার বার ঈশা তোকে বাঁচাতে আসবে না। ফার্দার যদি আমি তোকে আমাদের আশে পাশে দেখি তবে সেই দিন হবে তোর শেষ দিন। মাইন্ড ইট
দিব্ব মুখ ফেটে রক্ত পরছে। দিব্ব ফ্লোর থেকে মাথাটা তুলে অনুর দিকে তাকালো। অনু দিব্বর দিকে তাকিয়ে না সূচক মাথা নাড়ল। অয়নের দৃষ্টির আড়ালে। দিব্ব বাঁকা হেঁসে অনেকটা কষ্ট করে ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ালো। অয়ন চিৎকার করে বলতে লাগলো
— নাউ গেইট লস্ট।
দিব্ব বাঁকা হাসি দিয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— মিস্টার অয়ন চৌধুরী খুব শীঘ্রই আমাদের দেখা হবে। আর তখন না হয় আমি নিজের শরীরের আঘাতের জবাবটা নিয়ে নিবো।
.
দিব্বর রহস্য জনক কথার মানে অয়ন বুঝতে পারলো না। অয়ন দিব্বর দিকে অগ্রসর হতেই অয়নকে বাধা দিলো ঈশা আর অনু। অনু অয়নের হাত ধরে রেখেছে। অনু আনমনে ভাবছে
— দিব্ব যদি নিজেকে বাঁচানো জন্যর আমার নাম বলে দিতো! তবে আমার সব শেষ হয়ে যেতো। এতো কষ্ট করে যে প্লান আমি তৈরি করেছি তা এক মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে যেতো। আর অয়নকে আমার পাওয়া হতো না। ধন্যবাদ দিব্ব। আমাকে এই সময়ে সাহায্য করার জন্য।
অনু আনমনে কথা গুলো বলছে অয়ন এক ঝটকায় অনুর হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে দিলো। অনু অয়নের এমন ব্যবহারে বিব্রত হয়ে যায়। তবে কি অয়ন সবটা বুঝতে পেরে গেছে? ভাবছে অনু। অনু অয়নের থেকে কয়েক পা পিছিয়ে গেলো। অয়ন অনুর দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। অনুকে এই দৃষ্টি ভয় পেতে বাধ্য করছে। অয়ন অনুর দিকে এগিয়ে এসে চাপা গলায় বলে উঠলো
— এই রাস্কেলটা এখানে কেনো আসলো? আর ওর সাথে তোমার কি সম্পর্ক? কোন উদ্দেশ্যে দিব্ব তোমার কাছে এসেছে? তবে কি তোমার সাথে দিব্বর অনেক আগে থেকে পরিচয় ছিলো? তোমরা দুজন এক হয়ে এসব করেছো?
অনু চোখ বড় বড় করে আছে। তবে কি কয়ন আঁচ করে ফেলেছে অনুর প্লান? কি করে এখন অয়নকে ম্যানেজ করবো? সত্যি তো বলা যাবেই না। অয়নের কথাতে বোঝা যাচ্ছে আমার আর দিব্বর কোনো কথাই ও শুনতে পায়নি। কিছু একটা করতে হবে আমায়। কথা গুলো মাথার ভিতর ঘুরছে অনুর। অনুর এমন নিরবতা অয়নের রাগকে আরো কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিলো। অয়ন চিৎকার করে অনু কে উদ্দেশ্য করে বলল
— এই স্টুপিট গার্ল। আন্স্যার মি। কি সম্পর্ক তোমাদের।
অনু অয়নকে আর রাগাতে চাচ্ছে না। অয়নের রাগ সম্পর্কে অনুর কিছুটা ধারনা তৈরি হয়ে গেছে এই কয় দিনে। অনু ভাবছে এখনি সময় পরিস্থিতি বিগরে যাওয়ার আগে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। অনু ভয় না পেয়ে একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে। নিজের মুখে একটু হতাশা এনে তার বিদ্যমান নাটক শুরু করলো আবার অনু অয়নকে বলল
— সত্যিটা জানতে চাও তুমি?
অয়ন চরম বিরক্তি নিয়ে বলল
— আমি মিথ্যে পছন্দ করি না। আর তোমার সাথে কোনো মজা আমি করছি না। যাস্ট টেলমি ট্রুথ রাইট নাউ।
অনু আবারও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর‌ বলল
— সত্যিটা বলতে চাচ্ছি না আমি।
— সত্যিটা বলতেই হবে তোমায়।
.
— আমি চাই না ঈশা আর তোমার মাঝে আবার দূরত্ব তৈরি হোক। বিশ্বাস করো অয়ন আমি দিব্বকে এখানে ডেকেছি আর দিব্বকে বলেছি আমার সাথে দেখা করতে। আমাদের মাঝে এখনও গভীর কোনো সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্বাস করো আমায় সব দোষ আমার। তুমি প্লিজ আমার কথা বিশ্বাস করো।
অনুর কথা শুনে এটা স্পষ্ট যে অনু দিব্বকে এখানে আসতে বলেনি। তবে কি অনু ঈশার দোষ নিজের কাঁধে নিচ্ছে? থ হয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে অয়ন। অনুর কথা শুনে ঈশার মাথার উপর যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ঈশা অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল
— মানে? কি বলতে চাচ্ছো তুমি? পরিস্কার করে বলো।
অনু একটু মুচকি হেসে বলল
— আমি কি বলবো? বলে দিলাম তো সব। আমি চাই তোমরা সুখি হও। অয়ন আমি ভিশন খারাপ একটা মেয়ে। তোমাদের সাথে আমি থাকতে চাই না। আমি চলে যাবো অনেক দূরে। প্লিজ অয়ন আমাকে ভূল বুঝেছো না। আমি সত্যি চাই না তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষের থেকে আবার দূরে থাকো।
অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে
— অনু প্লিজ সব টা বলো আমায় প্লিজ।
— পারবে তো সহ্য করতে?
— হুম
— তবে শোনো ঈশা দিব্বকে এখানে ডেকেছে। এই কথা আমি না দিব্ব আমাকে বলেছে। আমি তো এই ছেলেকে চিনি না পর্যন্ত। আর আমার চেনার কথাও না সেটা তুমি ভালো করেই জানো। ঈশা তোমাকে বাড়ি পাঠিয়ে একান্তে দিব্বর সাথে সময় কাটাতে চেয়েছে। তাই তোমাকে ঈশা বাড়িতে চলে যেতে বলেছে। অয়ন দিব্বর কোনো দোষ ছিলো না। তুমি অকারণেই দিব্বকে আঘাত করেছো।
অনুর কথা শেষ হতেই ঈশা অবাক চোখে তাকালো অনুর দিকে। এসব কি বলেছ অনু? ঈশার মাথায় ঢুকছে না কিছু। ঈশা অনুর দিকে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— অনু এসব কি বলছো তুমি? আমি‌ দিব্বকে এখানে আসতে বলেছি মানে কি? অয়ন বিশ্বাস করো এই মেয়েটা মিথ্যে বলছে সব। আমি কাউকে এখানে আসতে বলিনি। ট্রাস্ট মি
অনু কর্কশ গলায় বলল
.
— আমি মিথ্যে বলছি না। এসব কথা দিব্বি এসে আমায় বলেছে। তাও তোমাকে খুঁজে না পেয়ে। আমার মিথ্যে বলে লাভ কি?
ঈশা অয়নের দিকে তাকালো। অয়ন পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অয়ন বিশ্বাস করো দিব্ব মিথ্যে বলছে। আমি দিব্বকে এখানে আসতে বলি নাই। এমনকি আমার সাথে ওর কোনো যোগাযোগ কখনও ছিলো না‌। অয়ন প্লিজ আমাকে বিশ্বাস……..
অয়ন কান্না ভেজা কন্ঠে ঈশাকে আকুতিতে সুরে বলল
— ব্যাস ঈশা। চুপ করো। এই পৃথিবীতে সবাই তোমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলছে। একা তুমি যে সত্যি বলছো। তাই না? আচ্ছা দিব্ব কি করে জানলো তুমি এখানে আছো? একটুকু বলে দাও আমায়। বিশ্বাস করো আমার আর কোনো কথা থাকবে না‌।
— বিশ্বাস করো অয়ন আমি এসবের কিছুই জানি না।
— ঠিক আছে।
* অয়ন কেবিন থেকে হনহন করে বেরিয়ে যায়। ঈশা ফ্লোরে উপর হাঁটু গেড়ে বসে পরে। প্রচুর কান্না পাচ্ছে তার। কেনো বার বার অয়নের কাছে সে ভূল‌ প্রমানিত হয়? অয়ন কি করবে? যা দেখেছে তাই বিশ্বাস করেছে। আমি কি করবো এখন?
.
* ঈশা কিছু ভেবে পাচ্ছে না। অনু মনে মনে হাসছে। অনু ভাবছে
— পরিস্থিতি এমন ভাবে সামলে নিয়েছি যে সাপ ও মরবে লাঠিও ভাঙবে না।
এই বার ঈশা তোমার কি হবে? অয়নের মনে এই বার আমি জায়গা তৈরি করবো।
ওর স্ত্রী হয়ে অয়নকে নিজের করে নিবো। ইশশশশ কত দিনের স্বপ্ন আমার।
তবে ঈশা এসে নষ্ট করে দিতে চাইলেও পারেনি। এই স্বপ্ন পূরণ হবেই।
ঈশা ফ্লোর থেকে উঠে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। ঈশা কেবিন থেকে বেরোতেই দেখতে পায় অয়ন গাড়িতে বসে আছে। ঈশা অয়নের গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। অয়ন চুপ করে তাকিয়ে আছে গাড়ির সামনের দিকে। ঈশা কান্না করছে আর বলছে
— অয়ন আমাকে বিশ্বাস করো তুমি আমি এই সবের কিছুই জানি না। তারপরেও যদি বিশ্বাস না হয় তো আমার আর কিছু‌ বলার নেই। আমি চলে যাচ্ছি আর কখনও এই মুখ তোমায় দেখাবো না।
ঈশা চোখ মুছে ফেললো। অয়নের ভিতর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। মুখ ভার করে বসে আছে অয়ন। ঈশা অয়নকে নিরভ থাকতে দেখে বুঝে নিলো অয়ন এবার ও তাকে ভূল বুঝেছে। ঈশা গাড়ির দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে চলে আসলে লাগলো। অয়ন ঈশার চলে যাওয়া উপলব্ধি করে বাঁকা হাসলো। অয়ন পিছন থেকে ঈশাকে…..
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com