ভালোবেসে ভুল করিনি । পর্ব -০২
আমি হেরে গেছি,ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছি।আমি আর
বাঁচতে চাইনা,বাঁচার ইচ্ছে আকাঙ্খা আমার মধ্যে আর
নেই।আমি বাঁচবো না,বাঁচতে চাইনা।আমি জাহান্নামি।
চিরকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলে পুড়ে মরবো….
অতঃপর আর কিছু না ভেবে আমি ছাদ থেকে লাফ
দেওয়ার জন্য যখন প্রস্তুতি গ্রহন করছিলাম।ঠিক সেই
সময় কেউ একজন আমাকে পিছন থেকে টেনে ছাঁদের
মধ্য স্থানে নিয়ে আসে।পিছনে তাকিয়ে দেখি রোহিকা
ভাবী।চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে প্রচন্ড রেগে আছেন।
আগে থেকেই যেটার পূর্বাভাস আমি পাচ্ছিলাম ঠিক
সেটাই হয়েছে।রোহিকা ভাবী ঠাঠিয়ে কয়েকটা থাপ্পর
বসিয়ে দেন,আমার সাদা চামরার নরম দুটি গালে।স্তব্ধ
হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।কারন তিনি আমার বড়
এবং এ বাড়ির মালিক।তাই চাইলেও আমি কিছুই
বলতে পারলাম না।অতঃপর রোহিকা ভাবী আমাকে বললেন…….
—-চারটা দিন রুমের ভেতরে পড়েছিলে।হাজার বার
দরজা নক করার পরেও কোনো রেস্পন্স করনি আর
আজ গভীর রাতে তুমি ছাঁদে এসেছো শুধু মাত্র এ
দুনিয়ার মায়া থেকে সর্ব কালের মতো মুক্তি পাওয়ার
জন্য কিন্তু কেনো?কি হয়েছে?
রোহিকা ভাবীর কথা গুলো শুনেও আমি না শুনার ভান
করে রয়েছি।এই মূহুর্তে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কিছুর
প্রতিই আমার ইন্টেরেস্ট নেই।কথার কোনো উত্তর না
পাওয়াতে রোহিকা ভাবী এবার তার চেয়ে আরেকটু
রেগে গিয়ে বললেন…..
.
কি হলো কথা বলছো না কেন?ওহ এখন সব বুঝতে পেরেছি।
কয়েক দিন আগে রাইকে স্মার্ট ফর্সা একটা
ছেলে যার সামনে সিনেমার নায়করাও নশ্যু।সেই
ছেলেটির সাথে খুব ক্লোজ হয়ে বসে কোথায় যেন চলে
যেতে দেখেছিলাম এবং তাদের মুখ থেকে এ কথাও
স্পষ্ট বলতে শুনেছি আমি,তারা খুব শিঘ্রই বিয়ে করে
দেশের বাহিরে চলে যাবে।আর এমনিতেও সেদিনকার
পর থেকে রাইকে তো আর দেখিইনি?তার মধ্যে আবার
তোমার এই মর্মান্তিক কান্ড।আহ কি সুন্দর,তোমাদের
সংসারটা শেষ-মেশ ভেঙ্গেই গেলো।আমি বেশ উপলব্ধি
করতে পারছি কষ্ট স্বয়ং তুমিই বেশি পেয়েছো কারন
তুমি রাইকে মন থেকে খুব ভালোবাসতে।নিয়তি যা চেয়েছে,,
তাই হয়েছে,, এখন ওসব কথা ভেবে নিজেকে
সার্বক্ষণিক কষ্ট যন্ত্রনায় রাখাটা সবচেয়ে বড় বোকামি।
যার চলে যাওয়ার কথা ছিলো,সে আজ অথবা কাল
শেষ-মেশ ঠিকি উড়াল মেরে চলে গেছে।দুঃস্বপ্ন মনে
করে সব কিছু ভুলে যাও। ইশ এই চারদিনে নিজের
শরীরের কি করুণ দশাটাই না করেছো।তোমার দিকে
ঠিক মতো তাকানোই যাচ্ছে না।আমার ফ্লাটে চলো
পেট-পুরে খাবে।না যানি কত দিন ধরে তুমি
ক্ষুদার্ত-তৃষ্ণার্ত?চলো আমার সঙ্গে?
.
—- না ভাবী আমার খিদে নেই।আমি চলে যাচ্ছি নিজের
ফ্লাটে।আর এমনিতেই এত রাতে কেউ যদি আপনার
ফ্লাটে আমাকে দেখে ফেলে,তাহলে সবাই খারাপ কিছু
ভেবে নিয়ে সমাজের সামনে বাজে মন্তব্য করে লাঞ্চনা
অপমান হেনস্তা করার চেষ্টা করবে।তাই এত রাতে
আপনার ফ্লাটে না যাওয়াটাই আমার জন্য উত্তম হবে।
অতঃএব আমি নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের ফ্লাটে
চলে আসলাম।রাত পার হচ্ছে না আমার,কষ্ট গুলো
আমার ভেতরটা ধীরে ধীরে ক্ষয় করে ফেলছে।বুকের
ভেতরটা কষ্টে সম্পূর্ণ ভরে গিয়েছে, রাখার আর কোনো
জায়গা নেই।বিষাক্ত তীরের আঘাতে আমার অন্তরটা
নীলাশায় পরিণত হচ্ছে।জানিনা কখন ঘুমিয়েছিলাম
তবে কিছুক্ষনের নিদ্রা আমাকে সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়ে
ছিলো।জানালা দিয়ে সূর্যের হাল্কা রশ্নি আমার ঘুম
ভাঙ্গার সূত্র-পাত ঘটায়।চোখের পাতা মেলে দিনের
আলো দেখতেই দুনিয়ার সব কষ্ট আমাকে চারিদিক
থেকে ঘিরে ধরছে।অতঃপর ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে
বসতে না বসতেই কলিংবেল বেজে উঠলো।এই সময়ে
কে আসতে পারে,হয়তো রোহিকা ভাবী আর না হলে
দুধ ওয়ালা দুধ দিতে এসেছেন?
.
এটাও তো হতে পারে রাই এসেছে!আহ কি বেহায়া মন আমার এখনো ও তার
অপেক্ষায় প্রহর গুনছি।অতএব দরজা খুলে দেখলাম
দুধ ওয়ালা এসেছে।দুধ ওয়ালার কাছ থেকে দুধ নিয়ে
দরজা বন্ধ করে দিলাম।অফিসে যায়নি অনেক দিন
হবে।তবে অফিসের কাজ গুলো বাসা থেকে ল্যাপটপের
সহযোগিতায় করারও ব্যাবস্থা রয়েছে।অফিসের কাজ
ঘরে বসেই ল্যাপটপে কমপ্লিট করে দুধটুকু গরম করে
খেয়ে নিলাম।আজ কেনও জানি দুধটা আগের থেকে
অন্য রকম লাগছে।রাই থাকা কালিন যখন দুধ ওয়ালা
দুধ দিয়ে যেত তখন কেনও যেন আমার কাছে একটু
তিতা তিতা লাগতো।তবে আজ লাগছে না আশ্চর্য!
প্রচুর ঘুম পাচ্ছে আমার।অবশ্য ঘুমতো পাওয়ারি কথা
কারন দুধের সাথে আমি ঘুমের ঔষুধ খেয়েছি।না জানি
এ ঘুম আবার কখন ভাঙবে। তবে ঘুমানোর আগে সৃষ্টি
কর্তার কাছে একটাই চাওয়া এ ঘুম যেন আর কখনো
না ভাঙায়।রাত সারে” ১০ ঘটিকার সময় আমার নিদ্রা
ভঙ্গ হয়।কারও কোমল স্পর্শে চোখ মেলে দেখি
রোহিকা ভাবী।আশ্চর্য সে কি করেই বা আমার রুমে
প্রবেশ করতে পারে।যেখানে দরজা তো আমি বন্ধ
করেই ঘুমিয়েছি।ভাবী আপনি এখানে এ সময়?
—-কেনও আসতে পারি না নাকী?
—-তাই বলে’ না বলে বিনা অনুমতিতে এভাবে রুমে
চলে আসবেন?আর আমি তো দরজা বন্ধ করেই রেখেছিলাম।
কিন্তু আপনি কি করে আসলেন ভেতরে?
—-তোমার দরজা খোলা দেখেই তো আমি আসলাম!
নিজের হাতে রান্না করে এনেছি,তোমার জন্য উঠে খেয়ে
নেউ?
.
—-আপনি কেনও অজথা আমার জন্য এত পরিমাণ
কষ্ট করে খাবার বানাতে গেলেন?এসবের কি কোনো
প্রয়োজন আবশ্যক ছিলো?
—-ইচ্ছে হয়ে ছিল তাই করেছি?এখন কথা না বাড়িয়ে
ফ্রেস হয়ে এসে খেয়ে নেউ?
জানিনা হঠাৎ করে রোহিকা ভাবীর ঠিক কি হয়ে গেলো
আগে তো কখনো এভাবে খাবার বানিয়ে আনা তো শত
ধুরে থাক!খেয়েছি পর্যন্ত” জিজ্ঞেস করতো কিনা বেশ
সন্দেহ।এমনিতে খিদেও অনেক লেগেছে তাই আর না
করতে পারলাম না।ফ্রেস হয়ে এসে খাবার গুলো
চেটে-পুটে শেষ করে ফেললাম।তেমন একটা মন্দ নয়
খাবার গুলো!আর যাইহোক রোহিকা ভাবী কিছু
পারুক বা না পারুক রান্নাটা কিন্তু বেশ ভালোই করতে
পারেন।আমার খাবার খাওয়া শেষ হলে রোহিকা ভাবী
খাবারের প্লেট গুলো নিয়ে চলে গেলেন।
“”জ্যোৎস্না রাত,
.
উত্তর দিক দিয়ে মন মাতানো বাতাস।আকাশে তারা
গুলো জল জল করে ফুটে উঠছে আর তাদের মাঝে
চোখের সামনে ফুট-ফুটে ছোট বাচ্চাদের চেহারার মতো
উজ্জ্বল হয়ে ভেসে উঠেছে রাইয়ের চেহারা-খানি।খুব
করে মনে পড়ছে সেই দিন গুলোর কথা,যখন আমি
আর রাই এমন রাতে পাশাপাশি হাত ধরে বসে,
আকাশের তারা গুলো একসাথে গুনতাম।জানিনা সে
এখন কেমন আছে?কি অবস্থাতে আছে,প্রিয়
ভালোবাসার মানুষটি?তবে সে যেখানেই থাকুক,যেমনি
থাকুক সে যেন সুখেই থাকে।আমিই না হয় দুঃখে পার
করে দিলাম জীবন তবুও প্রিয় মানুষটার সুখটাই
আমার কাছে সব চেয়ে বড় মুল্যবান এক রত্ন।যেই
রত্নের দাম আমার কাছে আমার জীবনের চেয়েও
অধিক।যখন আমি ভাবতে ভাবতে এক সময় বিভোর
হয়ে পড়েছিলাম তখন আমার কাঁধে কারও ছোয়া অনুভব করলাম।
পিছনে ফিরতেই দেখতে পেলাম রোহিকা ভাবী!
.
—- কি ব্যাপার শাহরিয়ার এত রাতে ছাদে
কেনো?আবার মরার ইচ্ছে মাথায় চাপলো
নাকী?
—- নাহ?এমনিই দাঁড়িয়ে জ্যোৎস্না রাতটা উপভোগ
করছি আমি?
রোহিকা ভাবী আমার পাশে গা ঘেসে দাঁড়িয়ে
আকাশের তারা গুলোর দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে
বললেন……..
—- জানো শাহরিয়ার”এক সময় আমিও রাত জেঁগে
এভাবেই কারও পাশে দাঁড়িয়ে তারা গুলো গুনতাম!
কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে এখন আর সেই মানুষটি আমার
ছায়া হয়ে পাশে নেই।বড্ড একাকি অনুভব করি আমি!
তার অভাবটা আমাকে খুব কষ্ট দেয় আজও।
জানিনা রোহিকা ভাবী এসব কথা আমাকে কেনও
বলছে?আমি রোহিকা ভাবীর থেকে নিজের দূরুত্বটা
বেশ খানিক বজায় রেখে বললাম,আজ আসি ভাবী!
আমার খুব ঘুম পেয়েছে,কথাটা বলেই আমি সেখান
থেকে নিজের ফ্লাটে চলে আসলাম।রোহিকা ভাবী
আমার চলে আসার সময় কিছু একটা বলতে গিয়েও
কেনও যেন থেমে যান।কি বলতে চেয়েছিলেন রোহিকা
ভাবী তখন?ধূর সে যাইহোক আমার ভাবার সময় নেই।
সোফায় গিয়ে ধপাস করে বসে পড়লাম।অন্তরটা
ভেতর থেকে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।কিছু অপূর্ন থাকার
বেদনা আমাকে প্রতি দিন গলা টিপে হত্যা করে।
.
চোখের জল গুলো টপ টপ করে গাল বেয়ে বেয়ে পড়ছে।আজ
আয়নাতে নিজের সামনে নিজে দাঁড়াতেই ভয়ে গা
আমার ছমছম করে।চোখের নিচের কালো দাগ গুলো
আমাকে সত্যিই শিহরিত করে তুলে।সোফা থেকে নেমে
ফ্লোরে হাটু গেরে বসে ধীরে ধীরে রাইয়ের জন্য কান্নায়
ভেঙ্গে পড়ছি।হয়তো বা ভাগ্য আমাকে কিছু সময়ের
জন্য রাইকে উপহার দিয়ে ছিলো।সময় ফুরানোর সাথে
সাথে হয়তো রাইও সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছে।হঠাৎ
আমার চোখের দৃষ্টি গিয়ে পড়লো টেবিলের নিচে এক
কোণে পড়ে থাকা ছোট্ট একটা লাল রঙের কাগজ।
লাল রঙটা রাইয়ের বেশ পছন্দের ছিলো।কেনও জানি
না চাইতেও ছোট্ট কাগজটা সেখান থেকে উদ্ধার করে
কাগজটার প্রতিটা বাজ খুলে যা দেখলাম তাতে আমি
নিমিষেই আতকে উঠি কারন লাল কাগজে লেখা ছিল,
“প্রিয় শাহরিয়ার অসীম ভালোবাসি তোমায়।তুমি
অফিসে যাওয়ার পর মা বহু দিন পর ফোন দিয়ে
বলেছিলো।বাবা আমাদের বিয়েটা মেনে নিয়েছেন।বাবা
হাসপাতালে আছেন খুব অসুস্থ শেষ বারের মতো
আমাকে দেখতে চান।খবরটা শুনে যতটা না খুশি
হয়েছি তার চেয়ে বেশি দুঃখ পেয়েছি বাবা অসুস্থ
কথাটা শুনে।এখন নিশ্চই ভাবছো কথা গুলো ফোনে না
বলে কাগজে কেনও লিখলাম।আসলে আমি বাবার
কাছে গিয়েই তোমাকে সব কিছু জানাতে চেয়েছিলাম,
কিন্তু দুঃখের বিষয়টা হচ্ছে যখন আমি ওয়াস রুমে
ছিলাম তখন কে যেন আমার ফোনটা রুম থেকে চুরি
করে নিয়ে যায়।তাই বাধ্য হয়ে কথা গুলো কাগজে তুলে
ধরতে হলো আমার।আমি বাবার কাছে যাচ্ছি। তুমিও
খুব তাড়াতাড়ি চলে এসো, বাবা তোমাকেও দেখতে
চেয়েছে…..
ইতি তোমার ‘প্রিয়তমা’ রাই……
.
লেখাগুলো পড়ে আমি সঙ্গে সঙ্গে স্তব্ধ হয়ে উঠি তাহলে
ওই নীল রঙের কাগজে ওসব কে লিখেছিল?যেটা আমি
টেবিলের উপরে পেয়ে ছিলাম।দ্রুত সেদিনকার
নীল রঙের কাগজটা খুঁজে বের করে লেখা গুলো চেক
করে দেখি,কোনও টার সাথে কোনও টাই মিলছে না?
নীল রঙের কাগজের লেখা-গুলো কার সাথে যেন ঠিক
মিলে যাচ্ছে।মনে পড়ছে না সঠিক,সে কে ছিলো?হ্যা
মনে পড়েছে!রোহিকা ভাবী মাঝে মধ্যে আমাকে দিয়ে
বাজার করাতেন এবং বাজারের লিষ্ট তিনি নিজের
হাতেই লিখে দিতেন। কেন যেন তার হ্যান্ড রাইটিং
এর সাথে লেখা গুলো মিলে যায় অতঃপর পরের
দিন সকাল বেলা কনফার্ম হওয়ার জন্য রোহিকা
ভাবী কে বাজার করে দেওয়ার বাহানা দিয়ে একটা
লিষ্ট তৈরী করিয়েই নিলাম।রোহিকা ভাবী তো আজ
খুব খুশি।বাজারে যাওয়ার নাম করে ঘুরে ফিরে
নিজের ফ্লাটেই ফিরে এসে লেখা গুলো মিলিয়ে দেখি,
সত্যিই নীল রঙের কাগজের লেখা গুলো রোহিকা
ভাবীর হ্যান্ড রাইটিং এর সাথে হুবুহু মিলে যাচ্ছে!তার
মানে সবকিছুর পিছনে……..
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com