দুষ্টু গার্লফ্রেন্ড । পর্ব -০১
—: ম্যাডাম উই উইল ট্রাই আওয়ার বেস্ট।
আয়রাঃ আই ডোন্ট ওয়ান্ট এনি এ্যাক্সকিউজ।আই ওয়ান্ট মাই আন্সার।
—: ম্যাডাম আমেরিকা থেকে যে বিজনেস অফার এসেছে।সেটা কি করবো?
আয়রাঃ অবভিয়েসলি এ্যাপ্রুভ করবে।আমেরিকার ওই কোম্পানি টেক ওভার করুন।অনলি ওয়ান উইক এর মধ্যে অ্যান্ডারস্ট্যান্ড?
—: ওকে ম্যাডাম।
.
আয়রাঃ নাউ ইউ ক্যান লিভ।এ্যান্ড ডু ইয়র ওয়ার্ক।
—: ইয়েস ম্যাডাম।
লোকটি আয়রার কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো।আয়রা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে টেবিলের দু পাশে জোরে বারি দিলো রেগে।নিজের দু হাত দিয়ে।সমস্ত স্টাফ ভয়ে কেঁপে উঠলো।একজন বললো!
—: ম্যাডাম আমরা সব জায়গায় খবর নিয়েছি।শহরে কোথাও খালি জায়গা নেই।শপিং কমপ্লেক্স তৈরি করার মতো।
আয়রাঃ আমার বিজনেস এভাবে ডাউন হতে পারে না।নো-নেভার-এভার।
—: ম্যাডাম আমরা তবুও চেষ্টা করবো।
সবাই জায়গা-জমির ব্যাপারে কথা বলছিলো।তখনি আয়রার কেবিনে ওর পার্সোনাল এ্যাসিস্ট্যান্ট ঢুকলো।আয়রার কাছে গিয়ে বললো!
টিংকু ভাইঃ একটা গুড নিউজ আছে।
আয়রাঃ কি গুড নিউজ?
টিংকু ভাইঃ তিনশো ফিট বড় মাঠের পেছনে যে বস্তি আছে।দশ একর জমির উপর।সেই জমি তোমাদের।
আয়রাঃ হুয়াট?
টিংকু ভাইঃ ইয়েস মাই ডেয়ার।
আয়রাঃ তুমি কি করে জানলে টিংকু ভাই।
টিংকু ভাইঃ এই যে দলিল দেখো।তোমার বাবার নামে রয়েছে।সাথে আরোও একজন লোকের নামও রয়েছে।
আয়রা জমির দলিল হাতে নিয়ে দেখলো কাগজ গুলো।তারপর শয়তানি হাসি দিয়ে বললো টিংকু ভাই কে!
আয়রাঃ কাল থেকেই এই জমির উপর কাজ শুরু করো।এখানেই আমার শপিং কমপ্লেক্স তৈরি হবে।এই প্রজেক্ট কমপ্লিট হওয়া চাই দু দিনের মধ্যে।
—: সিয়র ম্যাডাম।
.
আয়রাঃ এখন সবাই আসুন প্লিজ।
টিংকু ভাইঃ এই জনের অবস্থা হাই টেম্পারেচার।অন্য জনের কি অবস্থা কে জানে। [আনমনে]
আয়রাঃ টিংকু ভাই চলো?
টিংকু ভাইঃ হ্যাঁ-হ্যাঁ চলো।
ওদিকে বি.এম.ডাব্লু কার চলছে।ভেতরে গান বাজছে ফুল সাউন্ডে।সবাই আনন্দ করছে।গাড়ি ড্রাইভ করছে মোস্ট ওয়ান্টেড বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া ছেলে “আকাশ ইসলাম”।গাড়িতে রয়েছে ৪ জন ছেলে।আকাশ , আবির , নিলয় আর রিহান।
আবিরঃ গাইজ আজকে কিন্তু ফাঁটিয়ে দিয়েছে আকাশ।
নিলয়ঃ মেয়েটি ভেবেছিলো সত্যি-সত্যি হয়তো আকাশ ওকে ভসলোবাসে।
রিহানঃ দোস্ত শ্যাম্পেন পার্টি দিবি না? [আকাশ’কে উদ্দেশ্য করে]
আবিরঃ ওয়েট আমাদের সবার টাকা মিলিয়ে হচ্ছে না।
নিলয়ঃ শর্ট হচ্ছে টাকা।
রিহানঃ মেয়ে পটিয়েছে আকাশ।পার্টিও দিবে আকাশ।আমরা কোনো টাকা দিচ্ছি না এবার।
আকাশঃ কত টাকা হলে পার্টি হবে বল? [ড্রাইভ করতে-করতে]
আবিরঃ টু-লাক্স’স এনাফ।
আকাশঃ ডান।
নিলয়ঃ ইয়েহ্।
সবাই একসাথে চেঁচিয়ে “ইয়েহ্” বলে উঠলো।আকাশ গাড়ি ড্রাইভ করে এগিয়ে গেলো মুচকি হেসে।
আকাশ বাড়ি এসে সোফায় লাফিয়ে বসলো।আয়রা ল্যাপটপে কাজ করছে।আকাশ একবার আয়রার দিকে তাকিয়ে এক গভীর নিঃশ্বাস ছাড়লো।পাশ থেকে টিংকু ভাই আকাশের কানে-কানে বললো!
টিংকু ভাইঃ আজ আর কথা বাড়িও না আকাশ।
আকাশঃ রোজ-রোজ এক ডায়লগ আমার কানে ক্যান বাজাও বলো তো?
টিংকু ভাইঃ আমি আর কিছু বলবো না ভাই।
টিংকু ভাই আকাশের কাছ থেকে সরে ওর সোফার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো।আকাশ সোজা হয়ে বসে বিরক্ত হয়ে আয়রা’কে বললো!
.
আকাশঃ আপু তুই সারাদিন কাজ নিয়ে বসে থাকিস।একটু সময় দে আমাকে।
আয়রাঃ কি দরকার সেটা বল। [ল্যাপটপে কাজ করতে-করতে]
আকাশঃ আই নিড সাম মানি।
আয়রাঃ কত টাকা লাগবে?
আকাশঃ বেশি না অনলি টু-লাক্স।
আয়রাঃ কাল ব্যাংক থেকে নিয়ে নিস।
আকাশঃ বায়।
আকাশ সোফা থেকে উঠে নিজের রুমের দিকে যাবে।টিংকু ভাই আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।আকাশ চোখ টিপ দিলো টিংকু ভাই’কে।তারপর নিজের রুমে চলে গেলো।
টিংকু ভাইঃ এদের ভাই-বোন’কে আজও বুঝতে পারলাম না আমি।
আকাশঃ গাধার মাথায় কি অংক ঢুকে?
আকাশ আবার চলে গেলো।টিংকু ভাইও নিজের কাজে মনযোগ দিলো আয়রার সাথে।
রাতে আয়রা নিজেই আকাশের রুমে এলো।আকাশ তখন ভিডিও গেম খেলতে ব্যস্ত।আকাশ আয়রা’কে দেখে ভিডিও গেম রেখে বসলো।
আকাশঃ আমার রুমে ক্যান তুই?
আয়রাঃ কথা আছে।
আকাশঃ কি কথা?
আয়রাঃ তিনশো ফিট বড় মাঠের পেছনে যে বস্তি আছে।সেটা আমাদের জমি।
আকাশঃ তো?
আয়রাঃ ওখানেই ভাবছি শপিং কমপ্লেক্স তৈরি করবো।
আকাশঃ গুড।
আয়রাঃ দশ একর জমির উপর রয়েছে বস্তি।
আকাশঃ বস্তির লোকগুলো?
আয়রাঃ মানে?
.
আকাশঃ মানে ত্রিশ বছর যাবত ওই জমিতে বস্তির লোকগুলো রয়েছে।ওরা কি জায়গা ছাড়বে?
আয়রাঃ আমার জায়গা ওটা।ওরা যদি ভালো কথায় না শোনে।তাহলে সোজা বুলড্রেজার দিয়ে ওদের ঘর ভেঙে দিব।
আকাশঃ ক্যারি অন।
আয়রাঃ তুই কিছু বলবি না?
আকাশঃ তুই আগে কাল গিয়ে দেখ কি হয়।বস্তির লোকেরা কি বলে তোকে।
আয়রাঃ ওকে।
আকাশঃ গুড নাইট।
আয়রাঃ সেম টু ইউ।
আয়রা নিজের রুমে চলে গেলো।আকাশ শুয়ে পরলো আর আরামে ঘুমিয়েও গেলো।
কথায় আছে “কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ”।একদিকে বড় লোকেরা আনন্দে কোনো টেনশন ছাড়াই ঘুমিয়ে যায়।ওদিকে নিম্নবিক্ত মানুষের চোখের ঘুম হারাম।তাদের চিন্তা কখনো ফুঁরিয়ে যায় না।রাত পোহালে পরদিন তাদের কি হবে সেটা ভেবেই তাদের রুহু কেঁপে ওঠে।
মাটিতে কলম , খাতা , বই বের করে বসে আছে ঈশা।কাল তার কলেজের বেতন পরিশোধ না করলে তাকে পরীক্ষার এডমিট-কার্ড দিবে না বলে জানিয়েছে টিচার’রা।তাও ১-২ হাজার টাকা নয়।পুরো ২০ হাজার টাকা লাগবে কলেজে।ঈশা কি করবে এখন সেটাই ভাবছে।তখনি ঘরে ওর ভাই আহির এলো।এসে ঈশার পাশে বসলো।
আহিরঃ কলেজের বেতন নিয়ে ভাবছিস?
ঈশাঃ পরীক্ষা দিতে দিবে না।
আহিরঃ তোর ভাই আছে কেনো? আমি কাল সকালে কিছু না কিছু ব্যবস্থা করে দিব তোকে।
ঈশাঃ বাবা-মা’কে যেনো কিছু বলিস না।টেনশন করবে।তাছাড়া এত টাকা পাবে কোথায় বাবা-মা।
আহিরঃ তোকে কিচ্ছু ভাবতে হবে না পাগলি।আমি সবকিছু ঠিক করে দিব কাল।
ঈশাঃ হুমম।
আহিরঃ ঘুমিয়ে পর।
ঈশাঃ ঘুম আসবে না আজ রাতে আমার।
আহিরঃ তোকে আমি কি বললাম?
ঈশাঃ তুমি সব ঠিক করে দিবে।
আহিরঃ বুঝেছি তোর ভরসা নেই নিজের ভাইয়ের উপর।
ঈশাঃ আমি সেটা একবারও বলিনি ভাইয়া।
আহিরঃ তাহলে?
ঈশাঃ ঠিক আছে আমি ঘুমানোর চেষ্টা করছি।
আহিরঃ গুড গার্ল।গিয়ে শুয়ে পর।
আহির উঠে চলে গেলো বাড়ির বাহিরে টেনশন করতে-করতে।বাহিরে গিয়ে চায়ের দোকানে বসে একটা সিগারেট ধরালো আর সিগারেট টেনে কালো ধোঁয়া উড়াতে লাগলো।
আহিরঃ [কাল কিছু না কিছু একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।নয়তো ঈশার পরীক্ষা আটকে যাবে।কিন্তু কি করবো আমি এখন? এই মুহূর্তে ২০ হাজার টাকা কোথায় পাবো আমি।মাথায় কিচ্ছু কাজ করছে না আমার]
ঈশা ছোট্টো খাঁটে একটা চাদর বিছিয়ে শুয়ে পরলো।জানে ওর আহির ভাই একটা ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবেই।কিন্তু কিভাবে করবে সেই চিন্তা করছে ঈশা।
ঈশাঃ [হে আল্লাহ্ কাল সকালে একটা ব্যবস্থা করে দিও প্লিজ।নয়তো পরশু আমি পরীক্ষা দিতে পারবো না।আমাকে সাহায্য করো আল্লাহ্।সবকিছু ঠিক করে দাও।আহির ভাইয়াকে একটা চাকুরির ব্যবস্থা করে দাও।]
আহির সিগারেট টেনে কালো ধোঁয়া আকাশে উড়াচ্ছে।আর ঈশা বিছানায় শুয়ে চিন্তা করছে কাল সকালে কি হবে।”এই হলো গরিবের জীবন”।
.
চলবে……….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com