তারে ভালোবাসি বলে । পর্ব-২০
নাস্তা বানাচ্ছে এমন সময় হঠাৎ করে কেউ একজন ঈশাকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ঈশা একটু ভয় পেয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো তার দুষ্টু হাজব্যান্ড তাকে জড়িয়ে ধরেছে। ঈশা অয়নকে পাত্তা দিলো না। নিজের মতো কাজ করতে লাগলো সে। অয়ন ঈশার ঘাড়ে মুখ ঘসতে লাগলো। অয়নের প্রতিটা স্পর্শ ঈশাকে ব্যাকূল করে তুলছে। মনের মধ্যে জাগাচ্ছে এই অব্যক্ত শিহরণ। অয়নের স্পর্শের মাত্রা যখন বেড়ে যাচ্ছে ঈশা বুঝতে পারছে এই মুহূর্তে তাকে কিছু একটা করতে হবে। অয়নের স্পর্শ তাকে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে বাধ্য করছে। ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
.
— অয়ন কি করছো এসব? রান্নাঘর রোমান্স করার জায়গা নয়। ছাড়ো আমায়।
অয়ন ঈশার পেটের উপর আলতো করে হাত রেখে বলল
— হুম তবে জনাবা চলুন বেড রুমে। ওখানটাতো রোমান্স করার জায়গা তাই না।
ঈশা একটু বিব্রত বোধ করলো। ঈশা অয়নকে বলল
— উফফফফ অয়ন কেউ চলে আসবে তো।
— আসুক কেউ। সমস্যা নাই। আমার লজ্জা কম।
— ধূর।
ঈশা অয়নকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে একটু দূরে ঠেলে দিলো। অয়ন মিট মিট করে হাসতে লাগলো ঈশার দিকে তাকিয়ে। লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে গেছে তার। অয়ন আবারও ঈশাকে জরিয়ে ধরে। ঈশা চরম বিরক্তি নিয়ে বলে
— অয়ন ভালো লাগে না কিন্তু। অফিস আছে তোমার যাও।
— হুম যেতে পারি তবে একটা শর্ত আছে।
ঈশা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
— কি শর্ত?
অয়ন মুচকি হেসে বলল
— আমার ওই ঠোঁটের আবেশ চাই।
— কিহহহ! না। অয়ন দুষ্টুমি করবে না।
— আমি কিন্তু জোর করে আদায় করে নিতে জানি।
কথাটা শেষ করতেই অয়ন ঈশার কোমর ধরে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। ঈশা অয়নের কাঁধের উপর হাত রাখতেই অয়নের পিংকালারের ঠোঁট জোড়া ঈশার ঠোঁটকে স্পর্শ করে নিলো। পরম আবেশে বিনিময় হচ্ছে ভালোবাসা। কিছু সময় পর অয়ন নিজেই ঈশাকে ছেড়ে দিলো। ঈশার ঠোঁট জোড়া লাল হয়ে গেছে। অয়ন ঈশাকে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল
— হয়েছে আমার লেট হয়ে যাচ্ছে। তৈরি হয়ে নেই।
ঈশা লজ্জা পেয়ে হ্যা সূচক মাথা নাড়ল। অয়ন রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নিলো। অফিস যেতে হবে।
.
* অফিসে আসার সময় অয়নের মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো। কি উদ্দেশ্য ও দিন দিব্ব অনুর কেবিনে গিয়েছিলো? দিব্বর সাথে অনুর কি করে পরিচয়? অনু তো এই শহরে নতুন। না কিছু মাথায় ঢুকছে না অয়নের। অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করতে যেতে লাগলো অফিসের দিকে। পথি মধ্যে অনেক চিন্তা এসেছে তার মাথায় তবে অয়ন একটু অপেক্ষা করছে সবটা জানার।
অফিসে পৌঁছে অয়ন নিজের কেবিনে চলে আসে। কেবিনে বসে ল্যাপটপটা অপেন করতেই অয়ন চমকে যায়। একি দেখছে সে? সব কিছু কপি করা হয়েছে তার। এমনকি সব প্রপার্টির ডকুমেন্ট ও সেম করে কপি! এসবের মানে কি? কে করলো এমন কাজ? অয়ন সব ফোল্ডার অপেন করে দেখছেডডমনযোগ সহকারে। অনেক জরুরী ফাইল ডিলিট হয়ে গেছে। ওহহহহ গড! হাউ ইট’স পসিবল? অয়ন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব ফাইলের উপর নজর দিচ্ছে এমন সময় অনুর প্রবেশ ঘটে অয়নের চেম্বারে। অনু অয়নের চেম্বারে এসে অয়নের পাশের সিটে বসলো। এই দিকে অয়নের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। অনু অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অয়ন এতো মনযোগ দিয়ে কি দেখছো?
অনুর গলার কন্ঠ শুনে অয়ন একটু চমকে যায়। অপ্রস্তুত হয়ে বলল
— তুমি এখানে কেনো? তোমাকে তো হসপিটালে থাকার কথা ছিলো।
অনু একটু গম্ভীর কন্ঠে বলল
— কেনো আমাকে দেখে কি তুমি খুশি হওনি!
অয়ন শান্ত গলায় বলল
— আরে খুশি কেনো হবো না? অবশ্যই খুশি হয়েছি। আমি তো চাইতাম তুমি শিঘ্রই সুস্থ হয়ে যাও। এখন কেমন আছো?
.
অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অয়ন কে উদ্দেশ্য করে অতন্ত কোমল সুরে বলল
— তোমার মন খারাপ হলে আমি কি করে ভালো থাকি?
অয়ন মৃদু হেসে জবাব দিলো
— তাই না! আচ্ছা এসবের মানে কি? তুমি কেনো পাগলামি করছো?
অনু অয়নের চোখ বরাবর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল
— সত্যিই কি কেনো করছি বুঝো না তুমি? বুঝতে পারো না এই হৃদয়ের দহন। আমি যে তোমায় ভালোবাসি। কেনো বুঝতে চাও না।
— হুম
— ঈশার কি খবর?
অয়ন একটু বিরক্তি নিয়ে রাগি কন্ঠে বলল
— যাস্ট স্টপ অনু। ঐ মেয়েটার নাম আমার সামনে আর নিবে না। সহ্য হয় না আমার।
অয়নের কথা শুনে অনু ভিশন অবাক হয়ে গেলো। অনু অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে। তার মানে অনুর প্লান কাজ করেছে। ঈশার সাথে অয়নের দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। অনু খুশিতে আত্মহারা হয়ে অয়নকে বলল
— মানে? ঈশাকে তুমি সহ্য করতে পারছো না কেনো? ও তো তোমার স্ত্রী।
— হুম। ঈশা আমার স্ত্রী তবে তা বেশি দিনের জন্য নয়। আমি আজ ডিভোর্সের জন্য পিটিশন করে এসেছি। খুব শীঘ্রই এই অসুস্থ সম্পর্কের অবসান ঘটবে।
অনু যাস্ট অবাক হয়ে গেলো। অয়ন ডিভোর্স দিবে ঈশাকে। ইয়েস এটাই তো চেয়েছি আমি। একটা বার ডিভোর্স হয়ে গেলে অয়ন আমার আর ওর সমস্ত প্রপার্টি আমার। কিন্তু আমি কোনো রিক্স নিতে চাই না। যা করার তা আজি আমায় করতে হবে। আজকেই সুন্দর সুযোগ আছে। এই সুযোগ আমি হাত ছাড়া করতে চাই না। অনু একটু শান্ত গলায় বলল
— অয়ন মন খারাপ করো না তুমি। আমি আছি তো তোমার পাশে। খারাপ সঙ্গ পরিত্যাগ করা উত্তম। আমি সব সময় তোমার পাশে আছি।
— হুম
.
* অয়ন অনুকে বিন্দুমাত্র বুঝতে দিলো না যে অয়ন তাকে সন্দেহ করছে। অয়ন অনুর সাথে যথেষ্ট ভালো ব্যবহার করছে। আগে করতো তবে আজ একটু বেশি। অয়ন অনুকে বুঝতে বাধ্য করছে যে অয়ন তাকে চায়। অয়ন ল্যাপটপ নিয়ে কিছু কাজ করছে। অনু কাজের ফাঁকে ফাঁকে অয়নের দিকে তাকাচ্ছে। অয়ন এই সব ছোট ছোট বিষয়ে গুলো চরম বিরক্তি নিয়ে নোটিস করছে। তবে আজ অয়নকে বিরক্ত হলে চলবে না। অনুর সত্যি সামনে আনতে হবে। অনু আচমকা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অয়ন আমার ল্যাপটপটা কাজ করছে না একটু দেখবে তুমি?
অয়ন একটু বিব্রত হলো। কারন ল্যাপটপ দেখার কথা বলে অনু কিন্তু নিজের জায়গা থেকে সরে বসলো না। তার মানে অয়নের নিজে থেকে উঠতে হবে। অয়ন কিছু না ভেবে নিজের চেয়ার থেকে উঠে অনুর দিকে একটু ঝুঁকে ল্যাপটপটা চেক করতে লাগলো। অপ্রত্যাশিত ভাবে অয়নের হাত অনুকে স্পর্শ করে ফেলে। অয়নের স্পর্শ অনু অনুভব করতেই চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো পরম আবেশে। অয়ন বিষয়টা লক্ষ্য করতে পেরেই। অনুকে বলল
— আই এম সরি। আসলে আমি খেয়াল করতে পারিনি।
অনু অয়নের দিকে মৃদু হেসে জবাব দিলো
— না ঠিক আছে। আমি কিছু মনে করিনি।
* অয়ন কিছু বলার আগেই অয়নের ফোনটা বেজে উঠলো। অয়ন ফোনটা হাতে নিতেই দেখতে পেলো তার পরিচিত কেউ কল করেছে। অয়ন ফোনটা পিক করলো। তবে অয়ন নিশ্চুপ। ওপার থেকে কিছু সময় কথা ভেসে আসার পরে অয়ন জবাব দিলো
— হুম বুঝতে পেরেছি আমি। সব কিছু নষ্ট করে দাও। আমি দেখছি কি করা যায়।
কথাটা শেষ করতেই অয়ন কলটা কেটে দিলো। অনু প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অয়নকে বলল
— কে কল করেছে? আর কি নষ্ট করার কথা বললে তুমি?
অয়ন বাঁকা হেঁসে জবাব দিলো
— লয়ার কল করেছে। জানালো ঈশা আর আমার ডিভোর্স হতে সময় লাগবে। কিছু কাগজ পত্রের ঝামেলা আছে। আমি বলে দিয়েছি নষ্ট করে ফেলতে সব কাগজপত্র। আমি নিজেই ঈশাকে বাধ্য করবো ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে।
.
অনুর মুখে হাসির ঝিলিক। এই তো অয়ন একদম সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে। অয়নের পাশে শুধু আমাকে মানায়। অন্য কাউকে নয়। আনমনে কথাটা বলল অনু।
* দুপুরের দিকে অনু বেশ বিচলিত হয়ে পরে। অনু একবার না বহুবার দিব্বকে কল করেও পাচ্ছে না। ফোনটা বন্ধ পাচ্ছে অনু।
— এই দিব্বর কি হলো? ওকে বলে রেখেছি সব ব্যবস্থা করতে। কিন্তু কি করলো কে জানে? এই ছেলেটা বিরক্তিকর।
আনমনে কথা বলছে অনু। অয়ন এসে অনুকে বলল
— তোমাকে বেশ চিহ্নিত দেখাচ্ছে। কেউ কি তোমার ফোন তুলছে না? এই জন্য চিহ্নিত নাকি তুমি?
অয়নের বাঁকা হাসি অনুর মনের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করে দিলো। অয়ন কার ফোনের কথা বলছে? তবে কি অয়ন সবটা জেনে ফেলেছে? অনু আমতো আমতো করে বলল
— কে কাকে কল করছি আমি? আর আমি চিহ্নিত হবো কেনো?
অয়ন আবারও হেসে পকেট থেকে একটা ট্যিসু পেপার বের করে অনুর হাতে দিয়ে বলল
— কপালের ঘাম মুছে ফেলো। আর শোনো আমি কিছু সময়ের জন্য বাহিরে যাচ্ছি। তুমি এই দিকটার মিটিং সামলে নিবে। কেমন
অনু অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— কোথায় যাচ্ছো তুমি? আমি একা পারবো না।
— আরে পারবে। আজ আমার একটা মিটিং আছে। সো আমাকে যেতেই হবে।
— ওহহহহ। ঠিক আছে। তারাতাড়ি চলে আসবে। আজ তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
অয়ন হেসে বলল
— তাই?
— হুম
— আচ্ছা আসছি আমি।
অয়ন ব্লাক ব্লেজারটা তুলে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। অনু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অয়নের চলে যাওয়ার দিকে। অয়ন গাড়িতে বসতেই…..
চলবে….
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com