দুষ্টু গার্লফ্রেন্ড । পর্ব -০৭
ভিন্টুঃ যা হওয়ার হয়ে গেছে।সবকিছু ভুলে যা।
আহিরঃ ভুলে যাবো মানে কি? আমরা বস্তিতে থাকি বলে আমাদের মান-সম্মান নেই নাকি? [রেগে চিল্লিয়ে]
মোটুঃ ভাই বাদ দে।দেখ বড়লোক’দের একটু বেশি অহংকার থাকে।ওদের সাথে এসব লাফড়া-ঝামেলা করে কোনো লাভ নেই।
আহিরঃ ওদের টাকা আছে বলে,ওরা বড়লোক বলে! ওরা যা ইচ্ছে তাই করবে? গরিব’দের টাকা নেই বলে মানুষ হিসেবে গন্য করবে না।
বাম্বঃ আহির তুই প্লিজ শান্ত হো।ওদের চিন্তা ভাবনা আর আমাদের চিন্তা ভাবনা কখনো মিলবে না।
আহিরঃ ওদের মতো বড়লোক’দের টাকার বিন্দু পরিমাণ মূল্য দেয় না এই আহির।আমিও দেখবো ওরা কিভাবে আমাদের এই বস্তি থেকে বের করে।আমরা জন্ম নিয়েছি এই বস্তিতে।আর এখানেই থাকবো আমরা।দেখি কে সরায় আমাদের এখান থেকে।
ভিন্টুঃ আমরা তোর সাথে আছি।এসব নিয়ে পরে ভাবলেও চলবে।ক’টা বাজে জানিস?
আহিরঃ খেয়াল করিনি।
মোটুঃ ১১:২০ বাজে।তাড়াতাড়ি গোসল করে রেডি হয়ে নে ভাই।
আহিরঃ সিট! আমি ভুলেই গিয়েছি।আজ আমার ইন্টারভিউ।
বাম্বঃ তাড়াতাড়ি যা তুই।
আহিরঃ হুমম ওকে।
.
আহির তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে গোসল করে নিলো।তারপর শার্ট ইন করে পরলো।গলায় টাই পরে নিলো।হাতে একটা ঘড়ি পরলো।শু জুতো পরে চুল ঠিক করে নিলো।তাড়াহুড়ো করে বাসা থেকে বের হলো।যাওয়ার আগে বাবা-মা’কে একত্রে জরিয়ে ধরলো।তাদের দোয়া নিলো।বন্ধুরা সবাই পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
ঈশার মাঃ ভালোভাবে যাস কিন্তু।
ঈশার বাবাঃ ঠান্ডা মাথায় ইন্টারভিউ দিবি।একদম রাগ দেখাবি না।
আহিরঃ ঠিক আছে।তোমাদের সবার কথা মাথায় রাখবো।
ঈশার মাঃ যা তাহলে কেমন।
আহিরঃ আসছি আম্মা।আসছি আব্বা।
ঈশার বাবাঃ যা আমার বাঘের বাচ্চা।সাফল্য অর্জন করে ফিরে আয়।
ভিন্টুঃ অল দ্যা বেস্ট দোস্ত।
বাম্বঃ তোর চাকুরি আজ কনফার্ম হলে!তারপর আমার জন্য ট্রাই করবি।যাহ্ বেস্ট অফ লাক।
মোটুঃ ভাই আজ তোমার চাকুরি কনফার্ম হলে কিন্তু বড় পার্টি দিতে হবে।অনেক-অনেক খাবার খাওয়াতে হবে।
ভিন্টুঃ চুপ কর শালা।সারাদিন খালি খাই-খাই।এত খেয়েও তোর পেট ভরে না? আর ক’দিন পর পেট ফাঁটবে বোমের মতো ঠাসসস্।
বাম্বঃ এই শালা কোনোদিনও শূধ্রাবে না।
আহিরঃ অবভিয়েসলি পার্টি দিব।কিন্তু জব কনফার্ম হলে।বায় গাইজ।
মোটুঃ যা ভাই।
.
সবাই আহির’কে বিদায় দিলো হাসি মুখে।আহির সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো অফিসের দিকে।অফিসের সামনে এসে একবার উপরের দিকে তাকালো আহির।আহির ভাবতে লাগলো!
আহিরঃ [অফিস মনে হয় খুব বড়।না জানি ভেতরের মানুষ গুলো কেমন]
আহির এসব ভেবেই ভেতরে ঢুকতে গেলে!সামনে দাঁড়ানো দাড়োয়ান আটকে দিলো আহির’কে।আহির দাড়োয়ানের দিকে তাকালো জিঞ্জাসু চিহ্নতে।
দাড়োয়ানঃ আইডি কার্ড?
আহিরঃ আমি নিউ ইন্টারভিউ দিতে এসেছি।
দাড়োয়ানঃ ডকুমেন্ট?
আহিরঃ ওয়েট!
আহির নিজের সাইড ব্যাগ থেকে একটা ফাইল বের করে দাড়োয়ানের হাতে দিলো।দাড়োয়ান ফাইল দেখে আবার আহিরের হাতে ফিরিয়ে দিলো।আর গেট খুলে দিলো।আহির খুশি হয়ে অফিসের ভেতরে চলে গেলো।আহির গিয়ে লিফট এর সামনে দাঁড়ালো।তখনি টিংকু ভাই লিফট ক্রস করে যাচ্ছিলো।আর আহির’কে দেখলো লিফট এর সামনে দাঁড়িয়ে ঘড়ি দেখছে।
টিংকু ভাইঃ আরে এই “শুকনা মরিচ” এখানে কি করছে। [আহির’কে উদ্দেশ্য করে]
আহির লিফটে করে ৩ তালায় গিয়ে থামলো।টিংকু ভাইও লিফটে করে ৩ তালায় নেমে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলো আহির ডান দিকে যাচ্ছে।
.
টিংকু ভাইঃ ডান দিকে তো যারা আজ ইন্টারভিউ দিতে এসেছে! তারা ওয়েট করছে ইন্টারভিউ এর জন্য।এই “শুকনা মরিচ” ওখানে ক্যান যাচ্ছে? ওই ছেলে আবার ইন্টারভিউ দিতে আসে’নি তো আমাদের অফিসে?
টিংকু ভাই ভেবেই আবার নিজের গালের একপাশে হাত রাখলো।যে পাশে আহির চড় মেরেছিলো।টিংকু ভাই কিছু না ভেবে আহিরের পিছে-পিছে ডান দিকে গেলো।আহির গিয়ে সোফায় বসলো।যেখানে সবাই ইন্টারভিউ এর জন্য বসে আছে।আহির বসে নিজের সার্টিফিকেট গুলো চেক করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।টিংকু ভাই ‘হা’ হয়ে তাকিয়ে রইলো।কারন যদি একবার আয়রার চোখে আহির পরে! আজ আর রক্ষে নেই আহিরের।আর আয়রা আহির’কে দেখলে পুরো অফিস হাওয়ায় উড়িয়ে দিবে চিল্লিয়ে,রেগে আর চেঁচামেচি করে।
টিংকু ভাইঃ এ ব্যাটা আজ গেলো।আজ আর শেষ রক্ষে হবে না বোধয়।আয়রা আজ ছাড়বে না একে।আজ অফিসে যে “তুফান” আসবে তাতে মনে হয় না অফিসের প্রাণ থাকবে বলে। [আহির’কে উদ্দেশ্য করে]
টিংকু ভাই আয়রার কেবিনে ঢুকে গেলো।আয়রা ল্যাপটপে কাজ করছে আর কফি খাচ্ছে।টিংকু ভাই এসে গলা ঝাড়া দিলো।আয়রা অবশ্য আগেই দেখেছে টিংকু ভাই ভেতরে ঢুকেছে।
আয়রাঃ কিছু বলবে?
টিংকু ভাইঃ বলছি! তুমি কম্পিউটার সেকশন এর জন্য লোক লাগবে বলেছিলে।
আয়রাঃ আজ তারা ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। এটাই বলতে এসেছো?
টিংকু ভাইঃ হ্যাঁ মানে! ১২:০০ টায় ইন্টারভিউ শুরু হবে।তোমার বাবা নেই।আকাশ অফিসে আসে না বললেই চলে।কম্পিউটার সেকশন এর এম.ডি ছুটিতে আছে।বাকি তুমিই আছো ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য।
আয়রাঃ এখন কত বাজে? [কফি’তে চুমুক দিয়ে]
টিংকু ভাইঃ ১২:৫০ বাজে।
আয়রাঃ সবকিছু রেডি করো।আমি ইন্টারভিউ নিয়ে নিব।তুমি সার্টিফিকেট গুলো চেক করে নিও।
টিংকু ভাইঃ ঠিক আছে।তাহলে কি একজন-একজন করে ভেতরে পাঠাতে বলবো?
আয়রাঃ হ্যাঁ সিয়র।
টিংকু ভাইঃ ওকে।
.
টিংকু ভাই ফোন করলো কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা দাড়োয়ান কে।আর বললো বাহির থেকে এক-এক করে ডেকে ভেতরে আসতে দিতে।দাড়োয়ান তাই করলো।
প্রথম থেকে লাইন বাই লাইন সকলে এক-এক করে ইন্টারভিউ দিলো।আয়রা সকলের সাথে কথা বললো।টিংকু ভাই এক-এক করে সকলের সার্টিফিকেট গুলো ভালোভাবে চেক করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।সকলের ইন্টারভিউ প্রায় শেষ।আর মাত্র একজন বাহিরে আছে।সবার রেজাল্ট দিবে বিকেলে।যারা-যারা ইন্টারভিউ তে সিলেক্ট হবে! সকলের ফোনে বিকেলে ম্যাসেজ চলে যাবে।
টিংকু ভাইঃ বদমাশ “শুকনো মরিচ” গেলো কোথায়। [আনমনে]
আয়রাঃ হুয়াট! কি বললে তুমি টিংকু ভাই?
টিংকু ভাইঃ না! বলছি আর একজন মাত্র বাহিরে আছে।তারপর ইন্টারভিউ নেওয়া শেষ।
আয়রাঃ তাড়াতাড়ি উনাকে ভেতরে ডাকো।
টিংকু ভাইঃ হ্যাঁ! তুমি একটু পানি-টানি ঠিক মতো খেয়ে নেও।কারন এখনি বোধয় “তুফান সুনামি” আসবে।
আয়রাঃ কিহ্? তুফান সুনামি আসবে মানে?
টিংকু ভাইঃ কিছু না।আমি শেষের জন’কে ডাকার ব্যবস্থা করছি।
আয়রাঃ তোমার কথার আগা-মাথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।তখন থেকে উল্টো-পাল্টা বলেই চলেছো।
টিংকু ভাইঃ যখন তুফান আসবে।তখন সব বুঝতে পারবে। [আনমনে]
আয়রাঃ কি বললে?
টিংকু ভাইঃ কিছু না।আমি দেখছি।
টিংকু ভাই দাড়োয়ান কে বললো শেষের জন’কে ভেতরে পাঠিয়ে দিতে।টিংকু ভাই এসে নিজের জায়গায় দাঁড়ালো।তাও গালের একপাশে হাত রেখে ভয়ে।যদি আহির আবার থাপ্পড় মারে তখন? ওদিকে কেবিনের বাহিরে থাকা দাড়োয়ান আহির’কে বললো! কেবিনের ভেতরে যেতে।আহির উঠে আয়রার কেবিনের দিকে গেলো।
.
চলবে..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com