ধুলো জমা এই শহরে । পর্ব -০২
নুসরাতের ভাই আমাকে বার বার বলছেন,যদি বাচঁতে চাস তাহলে আমার বোন কে বিয়ে কর আর নাহলে
ফাঁসির দড়িতে জুলান্ত অবস্থায় নিজেকে নিজেই দেখার জন্য প্রস্তুত হ?
.
নুসরাত কিছু বললো না শুধু ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।দেখেই মনে হচ্ছে আমার থেকে
পাওয়া অবহেলা গুলো নুসরাত কে প্রতিদিন হত্যা করে হয়তো নুসরাত বুঝতে পারছে না আমি কেনো তার
সাথে এমন করছি।নুসরাতের ভাইয়ের কথা গুলো শুনে আমি হাসিলাম।অতঃপর তাদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে
নিলাম।পরিশেষে তারা চলে গেলেন।আর আমি জেল
খানার এক কোণে শিতল দেয়ালের সাথে নিজের পিঠ
স্পর্শ করিয়ে বসে পড়লাম।ঠান্ডা দেওয়ালটা বার বার
আমার শরীরটা শির শির করে কাপিয়ে তুলছে।চোখ
গুলো বন্ধ করতেই সেই ঘুরে ফিরে আমার কল্পনায়
একজনেরই অবস্থান আর সে হলো শান্তা।জীবনে
একজন কেই নিজের জান প্রান দিয়ে মন থেকে
ভালোবেসে ছিলাম।আমার মনে হয় না তাকে ছাড়া
আমি অন্য কাউকে দ্বিতীয় বারের মতো ভালোবাসতে
পারবো।চোখের কোণ থেকে বেয়ে বেয়ে অজস্র জল
পড়ছে আমার।ছোট বেলা থেকেই পরিবারের
অবহেলায় বড় হই আমি।মা মারা যাওয়ার পরে বাবার
হঠাৎ দ্বিতীয় বিয়ে সত্যিই আমাকে প্রচুর কাঁদিয়েছে।
.
ছোট বেলা থেকেই সৎ মায়ের অত্যাচারে তিলে তিলে
আমি অনেক কষ্টে বড় হই।পরবর্তী তে শান্তার পবিত্র
ভালোবাসা যেন আমার সব কষ্ট কে ভুলিয়ে দিয়ে
আমাকে নতুন এক জীবন প্রদান করে।সবার মতো
আমিও মনে মনে স্বপ্নের জাল বুনেছিলাম।কিন্তু কখনো
ভাবতে পারিনি আমার দেখা সব স্বপ্ন গুলো এক
নিমিষেই ভেঙ্গে চুরে ধ্বংসতে রুপান্তর হবে।সবাই তো
সুখি হতে চায় মনে মনে প্রিয় মানুষ কে নিয়ে অনেক
স্বপ্নের জাল বুনে কিন্তু সুখ তো উপার-ওয়ালা সবার
ভাগ্যে লিখে দেননি।সুখি হতে আমি পারিনি,এভাবে
ভেঙ্গে যাবে সব কিছু আমি ভাবতেও পারিনি।ব্যার্থ
প্রেমের ব্যার্থ আমার জীবন কাহিনি।আমার এটা ভেবে
ও খুব খারাপ লাগছে শুধু মাত্র আমার জন্যই রুহি ও
রুহির বৃদ্ধ বাবাকে নিজ প্রান হারাতে হলো।আমি এটা
নিশ্চিত যে রুহি ও রুহির বাবার হত্যার পিছনে একমাত্র
নুসরাতের ভাইয়ারই হাত রয়েছে।
.
রাত জানি না কিভাবে পার হয়েছে আমার কিন্তু
সকালটা আমার পুলিশের যন্ত্রণা দ্বায়ক অত্যাচার গুলো
দিয়েই শুরু হয়েছে।তবে বেশিক্ষণ তারা আমাকে
মারধর করতে পারেনি।কারণ নুসরাত সেই সময় চলে
এসেছিলো।আর নুসরাত কে দেখে পুলিশ গুলো থেমে
যায়।নুসরাত আমার খুব নিকটে চলে এসেছে, আমার
চোখে চোখ রেখে দু কাঁধে দু হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
—কেনো এরকম করছো?আগের থেকে কতটা বদলে
গেছো তুমি?কি এমন অপরাধ করেছি আমি যে তুমি
আমাকে আজ এত বড় শাস্তি দিচ্ছো।প্লিজ রাজি
হয়ে যাও।তুমি কি চাও তোমার জন্য একটা নিষ্পাপ
শিশু মৃত্যুর কুলে ঝুকে পরুক?ওর কি বা দোষ বলো?
আজ আমার খুব সন্দেহ হচ্ছে সত্যিই সেই তুমি কি
আজকের এই তুমি?তোমার মুখ মন্ডলের দিকে
দু’নয়ন দিয়ে চাহনি দিলেও কেনো যেন খুব অচেনা লাগে
তোমাকে!তুমি কি জানো আমার হাতে থাকা এই ছোট্ট
সিসিটার ভেতরে ঠিক কি আছে?
নিশ্চয়ই বিষ আছে?
.
—ছিহ তোমার কি আমার উপর একটুও মায়া হয় না?
তুমি কি এতদিন আমাার সাথে মিথ্যে ভালোবাসার
অভিনয় করে ছিলে?
হ্যা অভিনয় করেছি তো?
—ওহ তাহলে তোমার দেখানো সব স্বপ্ন গুলোই মিথ্যে
ছিলো?আমাকে মিথ্যে ভালোবাসার মায়ায় ফেলে
আমার সর্বোচ্চটা লুটে নিয়েছো।কিন্তু বিশ্বাস করো
আমি তোমাকে সত্যিই মন থেকে ভালোবেসে ছিলাম।
তোমাকে আমার মনের গহিন ঘরে খুব আদরে রেখে
ছিলাম কিন্তু এতো কিছুর যোগ্য তুমি ছিলে না।আমার
সাথে ছলোনা করেছো তুমি?আমাকে ধোঁকা দিয়েছো,
আমার ভালোবাসা আবেগ অনুভুতি গুলো নিয়ে তুমি
ক্ষণে ক্ষণে খেলা করেছো।একজন ফ্রট তুমি,নরকেও
ঠাই বলতে কিছুই মিলবে না তোমার।
চুপচাপ নুসরাতের কথা গুলো শুনছিলাম।উত্তরে
কিছুই বললাম না আমি।হঠাৎ নুসরাত তার হাতে
থাকা বিষটা আমার চোখের পলক ফেলতে না
ফেলতেই খুব দ্রুত পান করে ফেললো।বিষ পান
করার কিছু সময় পর নুসরাত লুটিয়ে পড়লো।হুঠ
করে নুসরাতের এমন কান্ড সত্যিই আমাকে খুব
হতভম্ব করে তুললো।আমি কখনো ভাবতেই পারিনি
নুসরাত এমন একটা কাজ করতেও সক্ষম হবে?নিস্তব্ধ
হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি আমি।
.
এখনো মুখে কোনো শব্দ
নেই আমার।হঠাৎ কিছু পুলিশ ছুটে আসলেন
আর নুসরাত কে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে
নিয়ে আসেন।তাদের সঙ্গে কেনো যেন আমিও চলে
আসলাম কিন্তু আশ্চর্য পুলিশ আমাকে তাতে কোনো
রকম বাধা দেয়নি।নুসরাতের ভাই খবর পেয়ে ছুটে
এসেছেন হাসপাতালে।আসা মাত্রই দুজন পুলিশ কে
ঠাঠিয়ে দুটো থাপ্পর বসিয়ে দিয়ে বললেন,তোরা
থাকতে এসব হলো কি করে?পাগলের মতো আমার
চোখের সামনে, এদিক থেকে ওদিক কিছুক্ষণ পর পর
দৌড়াচ্ছেন আর ডাক্তার কে যা তাই না উল্টা পাল্টা
বলছেন!পরিশেষে তিনি আমার কাছে এসে দু হাত
দিয়ে আমার শার্টের কলার চেপে ধরে,চোখ গুলো
অগ্নি পিন্ডের মতো গাঢ় লাল বর্ণের আকার ধারণ করে
বললেন,ইউ বাস্টার!!যদি আজ আমার বোনের
দূর্বলতা তুই না হতিস তাহলে সেই কখনি মাঝ রাস্তায়
তোকে কুকুরের মতো দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে হত্যা করতাম
আমি।প্রার্থনা কর!আমার বোনের যেন কিছু না হয়ে
যায়?যদি এমন কিছু ঘটে তাহলে পরক্ষণেই আমি
তোকে কেটে কেটে টুকরো টুকরোতে এক নিমিষেই
রুপান্তর করে ফেলবো!!
.
এই মুহূর্তেও কেনো জানি আমি তার কথা শুনে মুচকি
হাসিলাম।আমার মুখে মুচকি হাসি দেখে তিনি আরো
রেগে গেলেন কিন্তু কিছুই বলতে পারলেন না।কিছু
বলতে গিয়েও বলতে না পেরে চুপচাপ আমার চোখের
সামনে থেকে চলে গেলেন।বেশ কিছুক্ষণ পর ডাক্তার
তার কার-সাজি সম্পন্ন করে অপারেশন থিয়েটার
থেকে বের হলেন।ডাক্তারের মুখ মন্ডলটা কিছুটা
নুসরাতের ভাইয়ের চোখের দৃষ্টিতে কালো হিসেবে
চিহ্নিত হলে নুসরাতের ভাই সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কলার
চেপে ধরে কিছুটা কান্না মিশ্রিত ধমকের সুরে বললেন,
আমার বোন ঠিক আছে তো?নুসরাতের ভাইয়ের কথার
উত্তরে ডাক্তার পজিটিভ উত্তর প্রকাশ করলে,সঙ্গে সঙ্গে
নুসরাতের ভাই কলার ছেড়ে দিলেন।তাকে দেখে মনে
হচ্ছে এই মুহূর্তে তিনি যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলেন।দ্রুত
তার বোনকে দেখার জন্য ভিতরে চলে গেলেন।
পরিশেষে যখন নুসরাতের জ্ঞান ফিরে তখন নুসরাত
আমাকে দেখার জন্য ছটফট করতে লাগলো।অতএব
আমাকে নুসরাতের সাম্মুখে নিয়ে যাওয়া হলে নুসরাত
কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
.
সর্বশেষে আমি নুসরাত কে বিয়ে
করার জন্য হ্যা সম্মতি প্রকাশ করার দুদিন পর আমার
আর নুসরাতের ধুম-দাম ভাবে বিয়ে হয়।আমাদের
বাসরটা নুসরাতদের বাড়িতেই সাজানো হয় কারন
এখন থেকে আমাকে এ বাড়িতেই থাকতে হবে।কিন্তু
আমার মনে হয় না আমি,বেজি হয়ে সাপের সাথে
একদিনও ঠিক মতো এক ছাদের নিচে থাকতে
পারবো?সবাই তো প্রচুর পরিমান স্বপ্ন নিয়ে বাসর ঘরে
প্রবেশ করে কিন্তু আমি প্রবেশ করছি প্রতিশোধের এক
অদ্ভুত নেশায় নেশাক্ত হয়ে।আমার এক হাতে রয়েছে
একটা ফোন।যে ফোনে রয়েছে আমার আর নুসরাতের
অবৈধ সম্পর্কের ভিডিও যা আমি হয়তো আর কিছু
খানিক পর অনলাইনে বিসর্জন দিয়ে দিবো এবং
আমার অপর হাতে রয়েছে এমন এক বিষের সিসি
যেটা খেলে কমপক্ষে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে আমার মৃত্যু
নির্ধারিত হবে।প্রতিশোধের আগুন ধাউ ধাউ করে
জ্বলছে আমার এ বুকে।অদ্ভুত এক ভয়ঙ্কর হাসি দিয়ে
দাঁড়িয়ে আছি,ঠিক আমার বাসর ঘরের দরজার
নিকটে………
.
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com